মহাকাল - ঝন্টু চন্দ্র ওঝা
সময় বয়ে চলে নীরবে:
কালের যাত্রায় মহাকাল এসে হাজির হয়
মহাকালী সেই মহাকালকে নিয়ে খেলা করে,
কখনো ভবানী কখনো চণ্ডীরূপে অট্টহাসি দেয় বারংবার;
কখনো ছিন্নমস্তা রূপ ধারণ করে তরবারী নাচিয়ে অভিনব নৃত্য করে, আর
রক্তিম পায়ে সমুখে এগিয়ে চলে। ঘর্মাক্ত দেহে অসুর-দলনী পার্বতী
তরবারী চালায় দোর্দণ্ড প্রতাপে, ঊর্ধ্ব শিরে গিরিশৃঙ্গে।
কখনো ত্রিশূল হাতে, কখনো বজ্রনিনাদে রণ-রঙ্গিণীরূপে
বাণ ছোড়ে উমা-ভৈরবী।
সময় বয়ে চলে নীরবে:
তবুও রক্তবীজের দল ক্রমশ বেড়ে ওঠে চৌদিকে।
অসুররাজ পুনরায় ধেয়ে আসে;
আবার মাতঙ্গী দুর্গা অমৃত পান করে
প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।
ত্রিভুবন কাঁপে ত্রাসে।
কিন্তু ডরায় না অসুরকুল;
তরবারি হাতে মহিষাসুর নাচে
কচি ঘাসের শীষে।
রক্তবীজের রক্ত চামুণ্ডা নিজ করে ধরে
আকণ্ঠ পান করে;
এক ফোঁটা রক্ত যেন না পড়ে ভূমিতে,
তাহলে আবার জন্ম নেবে অসুরের দল;
বেড়ে যাবে দেবতা ও মনুষ্যের অসীম উৎপাত।
হায়রে মাতঙ্গী, হায়রে জগদীশ্বরী মহামায়া:
কৈলাশ ত্যাজিয়া নীলকণ্ঠের সঙ্গ ছাড়ি’
ছন্নছাড়া বেশে এলোকেশে রুদাণ্রীরূপ ধরি’
ত্যাজিলে ভৈরবের অমিয় সান্নিধ্য ;
টিকাইতে দেবতা ও মানব সংসার, ত্যাজিলে নিজ অন্তঃপুর;
অতঃপর রণরঙ্গিণী বেশে সংহারিলে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসুরকুল।
সেই থেকে দেবতা ও মানব লভিল স্বস্তির অপূর্ব আস্বাদ।
সময় বয়ে চলে নীরবে:
কত যুদ্ধ হয় নিষ্পাদন,
অসুরকুল স্ববংশে হয় নিধন;
কিন্তু আবার যুগের আবর্তনে দিকে দিকে বেড়ে ওঠে রক্তবীজের দল।
সুযোগ পেলেই ওরা আবার মরণ কামড় দেয়; আর
ওই হায়েনার বিষাক্ত কালো থাবায় ক্ষত-বিক্ষত হয়
প্রকৃতি তনু।
তাই মহাকাল বারবার ফিরে আসে ধরিত্রী মাঝে।
মানবের ভেতরের অসুরত্বকে বধ করার জন্যে
প্রকৃতি ক্ষণে ক্ষণে প্রয়োগ করে মহাকালের শাণিত অস্ত্র;
প্রয়োগ করে মহা-প্রকৃতির অপ্রতিরোধ্য দিব্যাস্ত্র।
ধেয়ে আসে জরা-ব্যাধি, মহামারীর বিপন্ন তাণ্ডব;
নেমে আসে কালের করাল গ্রাস।
কিন্তু তবুও আমরা কতটুকু এসব বুঝতে পারি?
ঝন্টু চন্দ্র ওঝা
ঢাকা, বাংলাদেশ।
[email protected]
-
ছড়া ও কবিতা
-
22-10-2020
-
-