পাথর – ফরিদ তালুকদার
চতুরঙ্গের খেলাটা আমি ঠিক বুঝি না
কিন্তু তোমাকে তো আমি চিনেছি শতদিন শত রূপে
কষ্ট-
তুমি আর কতোটা কষ্ট দেবে?
আমিতো পানপাত্রে শেষ চুমুক দিয়ে উল্টো করে রেখেছি জীবন
তার নিঃশেষিত তলানিতে হিমবাহের মতো
এখন জমাট হয়ে আছে এক আদিগন্ত নিঃসঙ্গতা
প্রবল বাতাসে ধসে পড়া দুয়ারের খোলা পথে,
ধেয়ে আসে সুসজ্জিত সভ্যতার দাবদাহ
অরক্ষিত এখনো বুকের সবটাই চড়াই-উতরাই
কষ্ট-
তুমি আরও কতোটা পোড়াবে খসে পড়া আমার বোধ!?
এক মূর্ত আর্তনাদের মানচিত্র এই পৃথিবী, মুহ্যমান মনুষ্য পদভারে
অতি বাঁচার অমোঘ নেশার শোকার্ত নিশান ওড়ে তার গোটা অবয়ব জুড়ে
সভ্যতার রঙিন দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার হয়ে আছে
অকালে নিঃশেষিত লক্ষ প্রাণের অবিন্যস্ত আর্তনাদ
বর্বরতা তবু খোলেনা তার মুখোশ!
কপালে লাল কাপড় বেঁধে ৭৮৩ বছর লাগামহীন-
আমিও ছুটিয়েছিলাম চাহিদার কালো ঘোড়া
দাঁড়িয়ে তবু ঠায় এখনো,
পরাভূত শান্তির কফিনে ফেলে ক্লান্ত বুটের ছাপ!
সুখের অলীক আবর্তে ঘূর্ণায়মান নীলিমাদের স্বপ্ন,
পথ খুঁজে পায় অচেনা আত্মহননে
বিভ্রান্ত জনপদ, পথ হারায় নিত্য, তার নিজস্ব গতিপথে
এক শিশু, মাথার পরে ধরে রেখে আকাশের মাপে ছাঁদ
এখনো খোঁজে ঈশ্বর অবিরত সরল পেটের ক্ষুধায়!
আমাদের ইতিহাস, গর্ব, আতশবাজি উৎসব…
শুধু নিরেট উপহাসের এক উজ্জ্বল প্রহসন, তার কোঠরাগত অক্ষি রেটিনায়
কান পেতে তবুও সে শোনে,
প্রলোভনের সুনিপুণ গল্পের ফাঁদ, মিথ্যের মহান বাণীতে!
লজ্জিত, শঙ্কিত পাখিরা, মরা বৃক্ষের ডালে ডালে ডেকে উঠে মুহুর্মুহু
বেদনার বিউগলে!
তোমার সমন পত্রের ভাষা রপ্ত করে বসে আছি আমি বহুকাল কষ্ট-
আমার বোধ আর বুকের সবটা জমিনে এখন ঘুণ পোকার বসতি
হাতের তালুতে প্রতিদিন পড়ে থাকে অনাকাঙ্খিত অজস্র মৃত্যুর নামহীন এপিটাফ
আমি আর হিসাব রাখি না!
এক ভুল সাম্রাজ্যের অধিবাসীর খাতায় নাম লিখে
প্রতি নিশীথের অন্ধকারে আমি প্রতীক্ষায় থাকি
কখন মুখোমুখি হবে সেই ঈশ্বর-
কষ্ট-
তুমি আরও কতোটা কষ্ট দেবে?
আরও কতোটা দহনে শুদ্ধ হবে এ ঘর?
আমি যে মানুষ হতে পারিনি কোনদিন--!
ফরিদ তালুকদার। টরন্টো
-
ছড়া ও কবিতা
-
26-11-2020
-
-