অটোয়া, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
পরম প্রাপ্তি - ডঃ সুবীর মণ্ডল

   হাসনাবাদ  লোকাল ট্রেনে ফিরছিলাম। গিয়েছিলাম  হাসনাবাদের  কাছে  বসিরহাটের জোড়াপুকুরের কাছেই  এক আত্মীয়ের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য। সঙ্গে আমার সহধর্মিণী গিয়েছিল। সামনের মাসেই আমার  ভাইয়ের একমাত্র মেয়ের বিয়ে। আমার অবশ্য  একটি ছেলে আছে, এখনো  বিয়ে করেনি। বছর ছয়েক বাদে আমিও রিটায়ার করবো। ভাইয়ের একমাত্র আদরের মেয়ের ইচ্ছে বিয়ের সমস্ত গয়না কলকাতার সেনকো জুয়েলার্স থেকে  জেঠু  কিনবে, আর আমাকে সঙ্গে যেতেই হবে।আমি তবুও বললাম,
-আমি গয়নার কি বুঝি বল তো!তোর দাদা আর জেঠিমাকে  নিয়ে যা‌।
     মেয়ে বলে কিনা, জেঠু
-তোমাকে যেতেই হবে।তুমি বোঝো আর নাই বোঝো, আমি কোনো কথাই শুনব না।
     তবে এ -ব্যাপারে আমার  ছোটভাই আগে থেকেই বলেছিল,
 আমার  একমাত্র মেয়ের বিয়ের সমস্ত গয়না কলকাতা থেকেই নিও। গয়না কেনার পুরো দায়িত্ব তোমার। তাহলে ,আমি নিশ্চিতভাবে অন্য কাজে মন দিতে  পারব। ওর কথা  ফেলতে পারলাম না। নিজের মেয়ে নেই বলে মনে হল,ওই তো আমার  মেয়ে! আমার  আত্মজা। তাছাড়া  দায় স্বীকার  না করে  উপায় নেই।  কারণ সামাজিক  দায়বদ্ধতা বলে একটা  কথা আছে।  এটাকেই আমি আজীবন  গুরুত্ব  দিয়ে  এসেছি। না করতে  পারলাম না,   অবশেষে যেতে  রাজি হলাম। ঠিক  হলো  কলকাতার  বিরাটিতে এক রাত  থেকে কাজটা করবো।সঙ্গে যাওয়ার বায়না ধরেছে   সহধর্মিণী ।
     আমার  একটি ছোট্ট   ফ্ল্যাট  আছে   বিরাটিতে । আমি আর আমার  ভাইঝি,  সঙ্গে  সহধর্মিণীকে  নিয়ে  তাই আগের দিন সন্ধ্যেয় চলে এসেছিলাম    বিরাটিতে । পরের দিন কবজি ডুবিয়ে  দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে  ভাইঝি আর  সহধর্মিণীকে  নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কেনাকাটা করতে।প্রথমে গড়িয়াহাট গিয়ে বিয়ের বেনারসীটা কেনা হলো ।তারপর ওখান থেকে চলে গেলাম গোলপার্কের কাছে  সেনকো জুয়েলার্সে।গয়না   পছন্দ করতে বেশ  সময়  লাগলো, অবশেষে গয়নাগাটি   কিনে দোকান থেকে যখন বের হলাম তখন সাড়ে আটটা বেজে গেছে।।আমি, আমার  সহধর্মিণী  আর  ভাইয়ের মেয়ে ওখান থেকে তাড়াতাড়ি  ট্যাক্সি ধরে  শিয়ালদহে   চলে আসি। এসে দেখি  দশটা  বিয়াল্লিশের হাসনাবাদ লোকাল   ট্রেনটা বেরিয়ে গেছে।পরের ট্রেন  এগারোটায়    । ওয়েট করা ছাড়া উপায় নেই।রাত তখন অনেকটাই হয়ে গেছে। ভাবছি বেশ রাত হয়ে যাচ্ছে । আমরা  হয়তো  বাড়ির সবার চিন্তার বিষয় হয়ে  উঠবো।মনে একটা অজানা আশঙ্কা জাগতে  লাগলো, সঙ্গে এত টাকার গয়না, দুই জনই  মহিলা। সীমান্ত বাংলার  শেষ প্রান্তে এত রাতে পৌঁছোনর একটা  ঝুঁকি তো আছেই!  দিন- কাল খুুব খারাপ।এই ভাবে ফেরার  ঝুুঁকি না নিলে মনে হয়  ভালো হতো। অজানা একটা  ভয় তাড়া করছে।      মন দ্বিধা- দ্বন্দ্বের  দোলায় দুলছে। কাউকে  কিছু বলতে পারছিনা। হঠাৎ    ছেলের ফোন-- ফোনে জানতে  চাইছে কোথায়  আমরা? গাড়ি ছাড়ার সময় হলো-- 
     যাইহোক এগারোটার শেষ    ট্রেনটা ধরি। ট্রেনের মাঝামাঝি  একটা জেনারেল কামড়ায় উঠি।যখন ট্রেনে উঠি তখন ভালোই লোক জন ছিল।যাব  ঘণ্টার দুয়েকের   রাস্তা।  লোকাল ট্রেনে  আস্তে আস্তে ভীড়টা কমতে লাগলো।বারাসাতে  বেশ কিছুটা খালি হলো। হাড়োয়া - মালতীপুর    একটার পর একটা স্টেশন যত আসছে ততই কামরা ফাঁকা হতে লাগলো।অনেক ক্ষণ থেকে লক্ষ্য করছি কিছুটা দূরে বসে আছে দুটি ছেলে।তার মধ্যে একজনের পেশি বহুল  চেহারা।বয়স ত্রিশ পঁয়ত্রিশ হবে।  অনেকটা  ছিনতাই  বাজদের  মতো দেখতে।হাতে একটা বালা।মুখে রুমালটা বেঁধে রেখেছে।আমাদের দিকে বার বার তাকাচ্ছে।এই তাকানোটা আমার ঠিক ভালো ঠেকছিল না। দেহ-মনে  কুু-ডাকছে। ভাবছি ' মানুষের প্রতি   বিশ্বাস হারানো পাপ ' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কথা  তখন     মন জুড়ে  বিরাজমান।  স্কুলের  ছেলে- মেয়েদের  পড়াতে পড়াতে  এই কথা  বলতাম সব সময়ই।    ততক্ষণ   ট্রেনের কামরা  ফাঁকা হয়ে গেল,তারপর থেকে ভয়টা আরো বেশি করতে লাগলো।ওদের তাকানো দেখে আমার মনে  একটা সন্দেহ হতে লাগলো ।যাইহোক গয়নার ব্যাগটা আমি কোলের ওপর রেখে চেপে ধরে বসে আছি।মনে-মনে আমি অদম্য সাহস দেখানোর চেষ্টা করছি।ওদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে আমি ভয় পাই না।এদিকে আমার ভাইয়ের মেয়ে,  সহধর্মিণী  পাশে বসে আছে।আমার   সহধর্মিণী  ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমাকে ফিস ফিস করে বলে,
- খুব একটা ভালো দেখছি না।ভয় করছে ভীষণ!    ছেলের  কথা শুনলে ভালো হত। আজকের দিনটা  বিরাটিতে থেকে যেতে বলেছিল,আর তুমি শুনলে না।চলো পরের কামরায় চলে যাই।এই কামরাতে একটাও লোক নেই।প্রাণে বাঁচতে পারব না না'হলে।
-তাই করতে হবে।পরের স্টেশনটা আসতে দাও।ভয়  পেয় না। ভাইয়ের  মেয়ে ,আমার  ভাইঝিকে কিছুুই বুঝতেই  দিলাম  না,পাছে ভয় পেয়ে যায়! 
     হঠাৎ ট্রেনটা সিগন্যাল না পেয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে যায়।ধূ ধূ মাঠ।    বাইরের আলোকিত  চাঁদের আলোয়  দেখলাম চাঁপাপুকুর  স্টেশান। কেউ কোত্থাও নেই।এদিকে আমার কাছে তিন  লাখ টাকার মতো গয়না, তিন খানা  ঘড়ি, দামি ফোন , বিয়ের দামী -দামী শাড়ি।মনের ভিতর যে, কি হচ্ছে বলে বোঝাতে পারব না।তারপর দেখি ওই দুটি ছেলের মধ্যে ওই মোটাসোটা চেহারার ছেলেটি উঠে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকেই তখন এগিয়ে আসছে। চাউনির মধ্যে কু-মতলবের চিহ্ন লেশমাত্র দেখতে  পেলাম না! বাস্তবে  আমাদের কামরায় একটা লোকও নেই যে,  আমাদের বিপদে সাহায্য করতে পারে।আমার  ভাইয়ের মেয়ে ও সহধর্মিণী  ততক্ষণে ভয়ে জড়ো হয়ে আমার গা ঘেঁষে এসে বসেছে।চিৎকার করব না, কি করব বুঝে উঠতে পারছি না।যা হয় হবে ,মনে সাহসটুকু রাখি অন্তত।তারপর ছেলেটি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে আমার পা দুটো ছুঁয়ে প্রণাম করে বলে,
-স্যার চিনতে পারছেন?
-স্যার বলতেই তো আমি অবাক।আমি তখন মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি।
-স্যার চিনতে পারছেন না? আসলে না চিনতে পারারই কথা।আজ কত দিন হলো স্কুল ছেড়েছি।আমাদের মনে রাখার মতো কোনো বৈশিষ্ট্যই তো নেই। তবে স্যার একটু মনে করুন আমাকে চিনতে পারবেন হয়তো।আমার ডাক নাম  পচেন গায়েন। আপনি  পচা বলে ডাকতেন। এক সময়  আপনার  বাবা  ছিলেন ওই স্কুলের জনপ্রিয় প্রাক্তন  প্রধান   শিক্ষক, স্কুলের  নাম, সন্দেশখালি  রাধারাণী হাই স্কুল। আপনি তখন  সবে ঢুুকেছেন।
- পচা? পচা মানে তুই সেই  পচেন‌।দেখেছো কি কাণ্ড।একদম চিনতে পারিনি‌।
-আমি স্যার আপনাকে দেখেই চিনতে পেরেছি।তখন অনেক লোকজন ছিল বলে কাছে আসতে পারিনি।
আপনাকে কি করে ভুলি স্যার। স্যার মনে আছে আমি একটা খুব খারাপ কাজ করেছিলাম। রামুর  ব্যাগ থেকে একদিন দশটাকা চুরি করি।আমি চুরি করেছি এটা জেনেও সবার সামনে আপনি আমার নামটা বলে দেন নি।পরে আমাকে আলাদা করে ডেকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আমি ওই কাজটা ঠিক করিনি।আমাকে শুধরে দিয়ে ছিলেন।আপনি সৎ হতে শিখিয়েছিলেন‌।মানুষ হতে বলে ছিলেন।পড়াশোনায় ভালো ছিলাম না।তাই লেখা পড়া বেশি দূর এগোয় নি।কিন্তু সেদিন আপনার সেই শিক্ষা ভুলিনি।
     পচাই -এর কথা গুলো শুনতে শুনতে সেই  ত্রিশ বছর আগে স্কুলের স্বপ্নসন্ধানী     ছাত্র- ছাত্রীদের মুখ গুলো যেন আবার একবার মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে গেল পচেন ঠিকই বলছে। আমি ওকে  পচা  বলেই ডাকতাম‌।  পচা  নামটা শুনে ও নিজে ফিকফিক করে হাসত তখন।সেদিনের সেই পচেন আজ কত বড়ো! অথচ আমি চিনতে পারিনি।আমি নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলাম,
-কি করছিস এখন?
-স্যার একটা মারুতি ভ্যান কিনেছি।এখন ওই গাড়িটাই চালাই।
-বিয়ে করেছিস তো?
-না স্যার। বিয়ে করিনি। স্কুল ছাড়ার বছর তিনেক পর আমার বাবাও  মারা গেল।আমার দুই বোন। আমি নিজে বোনেদের বিয়ে দিয়েছি। আর আপনি তো জানেন আমার মা যখন মারা গেল আমি তখন সিক্সে পড়ি মা বিনাচিকিৎসায় মারা গেল।
     সত্যিই তো  পচেনের এর মা, পচেন  তখন খুব   ছোটো।   ওকে  আর দুু  মেয়ে রেখে  অকালে মারা গিয়েছিল।   সব কিছু যেন ছবির মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।কত দিনের কথা  !আজ সব মনে পড়ে গেল।
-তাহলে এখন বাড়িতে কে কে আছেন?
-আমি আর আমার বিধবা নিঃসন্তান  মাসি  ।জানেন স্যার কখনো মনে হয়নি উনি আমার  মায়ের বোন। আমাকে  খুব ভালোবাসে।আমি যত রাতেই বাড়ি ফিরি আমার জন্য জেগে বসে থাকবেই ।আমি  বারণ করি কিন্তু শুনবেই না।বলে ,তুই ছাড়া আমার কে আছে? তুই  আমার  নয়নেরমণি। আমিও আমার মাসিকে খুব ভালোবাসি।পরের মাসে মাসিকে নিয়ে হরিদ্বার যাচ্ছি।আপনারাও চলুন না আমাদের সাথে!   পচার আহ্ববানে  একটা  আন্তরিকতার সুর ছিল, কখনো  মেকি  বলে মনে হয় নি। এই  যুগে  একটি  প্রাক্তন ছাত্র এইভাবে বলবে! নিজের  কানকে বিশ্বাস  করতে  পারছিলাম না। একটা  ভাবনার ঠাণ্ডা  স্রোত বয়ে গেল, কত কথা  মন জুড়ে জেগে উঠতে  লাগলো ।একবার  এই সময়ের  ছাত্র ছাত্রীদের     মুখ গুলো  ভেসে  উঠছে।  চলনে- বলনে কত তফাত। এগুলো নিয়ে  এক শিক্ষকের  জীবন।      হঠাৎ  সম্বিৎ ফিরে ,কিছুটা  দ্বিধা  নিয়েই বললাম---  
-  হ্যাঁ  নিশ্চয়ই যাব।আমার ছাত্র বলছে ,যখন তখন তো যেতেই হবে।
     দূর থেকে মানুষকে দেখে অনেক কিছু ভুলভাল চিন্তা করে ফেলি।তারপর ভাবনা গুলো এলোমেলো হয়ে যায়। আজকের এই   পচেন ফার্স্ট,সেকেণ্ড, থার্ড কখনো হতে পারেনি,এক থেকে দশের মধ্যেও আসতে পারেনি।তার দায়িত্ব বোধ, কর্তব্য বোধ,শ্রদ্ধা, সম্মান,মায়ের বোনের প্রতি ভালোবাসায় প্রথম সারির অনেক ছেলেকেই পিছনে ফেলে   সামনে এগিয়েছে।সব শিক্ষা কি বইয়ের পাতায় থাকে?জীবনের পাতায় অনেক শিক্ষা লুকিয়ে থাকে।কথা গুলো মনে মনে ভাবতে থাকি।এদিকে  বসিরহাট   স্টেশন চলে আসতে দেখে পচাই বলে,
-স্যার নামবেন তো?
-এক্ষুণি চলে এলাম।দ্যাখ তোর সাথে কথা বলতে বলতে বুঝতেই পারিনি সময় কীভাবে কেটে যায়।
-স্যার ভারী ব্যাগটা আমার হাতে দিন।আমি নিচ্ছি ওটা।
     ট্রেন থেকে নামি। বাড়ি  ১৫  মিনিটের হাঁটা পথ। রাত একটার কাছাকাছি। সীমান্ত অঞ্চল। একটু দূরে বাংলাদেশের  সাতক্ষীরা,  খুলনা জেলা, । ভারত-বাংলাদেশের শেষ স্টেশন  হাসনাবাদ।এত রাতে   অটোরিকশা  নেই।  গভীর রাতে  ছিনতাই  হয় এইসব  জায়গায়।  তবু  পরিচিত  জায়গা, মানুষের  প্রতি  বিশ্বাস  হারিয়ে  যায় নি।  এইটুকুই পথ--      তো হেঁটেই চলে যাব আমরা।,
     পচা বলে -স্যার দু মিনিট দাঁড়ান। স্টেশনের কাছেই আমার গাড়ি রাখা আছে,  আমি বাড়ি পৌঁছে দেব আপনাদের।
-না না হেঁটেই চলে যাব‌।
-না স্যার আমার গাড়ি থাকতে হাঁটবেন কেন?
      ভয় ভীতি দূরে সরে গিয়ে মনের ভিতর এক অন্য রকম আনন্দ হচ্ছে তখন।তারপর পচা বাড়ি পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দেয়।বাড়িতে ভিতরে আসতে বললে পচা বলে,
-স্যার বাড়ি তো দেখে গেলাম‌। পরে একদিন আসব। রাত অনেক খানি  হয়েছে। সারাদিন বেশ কষ্ট হয়েছে আপনার,    মাসি আমার অপেক্ষায় রাত জেগে বসে আছে, আমি গেলে  দু- জনে মিলে খাব  ---
     পচা  গাড়িতে স্টার্ট দিতে শুরু করলে,আমার   ভাইঝি বলে,
-দাদা একটু দাঁড়াও।
তারপর বাড়ির ভিতর থেকে বিয়ের কার্ডটা নিয়ে এসে পচার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
-বিয়ের দিন সকাল থেকেই চলে এসো।আর তোমার মাসিমাকে সঙ্গে নিয়েই এসো।তোমার মতো আমার একটা দাদা থাকলে আমার আর চিন্তা কি? আজ থেকে তুমি আমার দাদা।
-নিশ্চয়ই আসবো।বোনের বিয়ে বলে কথা।জীবনে এও এক অনেক বড়ো প্রাপ্তি ।এমন সৌভাগ্য কত জনের হয়!
     পচাইয়ের চোখে মুখে তখন একরাশ আনন্দের আলো। পড়াশোনায় হয়তো পচা  কোন দিন  ভালো ছিল না। মূল্যবোধের ও জীবনাচরণের শিক্ষায় সে শিক্ষিত। আমাদের চারপাশে   এমন কতো পচাই আছে!। যারা শিক্ষক  হৃদয়ের মানচিত্রে  উপেক্ষিতও ছিল  বরাবরই। কিন্তু    ,তারা আজও শ্রদ্ধায়- সম্মানে,বিপদে- আপদে  মাস্টারমশাই- দিদিমণিদের অন্তর ভরিয়ে তোলে।ভিতরটাকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।ভালো লাগায় নয়,ভালোবাসায় মনটা ভরে যায়।আমরা হয়তো ছাত্র -ছাত্রীদের সব সময় চিনতে পারি না।ছাত্র- ছাত্রীরা কখনো ভুলে যায় না স্যার -ম্যাডামদের। মনে হল  সারা  জীবন  পুঁথি পাঠের শিক্ষা দিয়ে সমাজ বদলানো যায় না।  মূল্যবোধের শিক্ষা নাহলে প্রকৃত মানুষ  হওয়া  যায় না।  মনে হল  পচা  জীবনের  শিক্ষায়,  মানুষের  মতোই  মানুষ  হতে   পেরেছে।গর্বে বুকটা ভরে উঠল। জীবনের অপরাহ্ন বেলায়  এ-এক পরমপ্রাপ্তি ।   গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে পচা আপনমনে   সামনের দিকে এগোতে থাকে।বাড়ির গেটের কাছে  গন্ধরাজ ফুলের গাছটা তখন সুবাসে ভরিয়ে তুলেছে চারিদিক ----। 

ডঃসুবীর মণ্ডল। পশ্চিমবঙ্গ