অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ, ২০২৪
বাংলা ও ওয়াশিংটন ডি সি - জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

লাস ভেগাসের সার্কাস সার্কাস হোটেলে গলা পর্য্যন্ত প্রাতঃরাস ঠুসে আমরা যখন এয়ারপোর্টের পথে বাসে করে আসছি তখন দেখি দূর থেকে সোনালী রঙের ট্রাম্প টাওয়ার রৌদ্রালোকে ঝলমল করছে।"সিন সিটি" বা এই পাপপুরী লাস ভেগাসে অন্য কিছু পাপ  করতে না পেরে দুদিন ধরে গলা পর্য্যন্ত গিলে সত্যি অনেক পাপ করেছি।বাঙালির তো আবার গ্যাস-অম্বলের রোগ লেগেই আছে।আজ সকাল থেকেই সেই গলার্ধকরণের পাপের ঠেলা বুকে অনুভব করছি। বুকটা চাপ চাপ লাগছে।পুরো হোটেলটি এক বার ঘুরে আসাতে চাপটা যেন একটু কমলো।দুপুরে একটার সময় আমাদের আবার এখান থেকে ওয়াশিংটন ডি সি যাবার ফ্লাইট ।এগারোটার মধ্যেই আমাদের তিরিশ জন বাঙালি টুরিস্টের দল এয়ারপোর্টে হাজির হলাম।আমাদের  দলের দুজন বরিষ্ট সদস্যের আবার গন্তব্যস্থল মেরিল্যান্ড।বিপ্লবদা আর ওনার স্ত্রী মেরিল্যান্ডে ওনার এক ছাত্রীর বাড়ি কয়েকদিন জন্য যাবেন।গত সাতদিন আমরা দারুন হৈচৈ করে কাটিয়েছি।এবার ওনাদের থেকে বিদায় নেবার সময় আসন্ন।মনটা ভীষণই খারাপ হয়ে গেল।পৃথিবীর এই অনন্ত যাত্রাপথে কত মানুষের সাথে পরিচয় হয়,তাঁদের ভালো লাগে আবার কিছুদিন পর আমাদের যাত্রাপথ ভিন্ন হয়ে যায়।
বিপ্লবদাদের অন্য টার্মিনালে নামিয়ে আমাদের বাস তিন নম্বর টার্মিনালে থামতেই বাসের পেট থেকে জিনিস পত্তর নামাতে হুড়োহুড়ি পড়ে গেলো।সাহেবপুলিশ হম্বিতম্বি করে বাস সরাতে বলছে, কিন্তু মাল না নামিয়ে ড্রাইভার পেড্রো যেতেও পারছে না।সেও আমাদের সাথে মাল নামাতে হাত লাগলো।আমাদের ম্যানেজার ভয়ে আকুল;এই না বাসটা পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

আমরা ছাড়া পুরো এয়ারপোর্ট ধু ধু ফাঁকা।এরকম জনমানব শূন্য এয়ারপোর্ট আগে দেখিনি।জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে আমেরিকার পশ্চিমাংশের গরমে আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি।এই গরম থেকেই ছ ঘন্টা পরে আমরা ঠান্ডার রাজত্বে প্রবেশ করব। 
পৃথিবীর বড় বড় শহরের এয়ারপোর্ট  আর তার বিধিব্যবস্থা মোটামুটি একই রকম।সেই মাল জমা দেওয়া, বোর্ডিং পাস নেওয়ার পর্ব শেষ করে আমরা যখন নির্ধারিত গেটের সামনে এসে দাঁড়ালাম তখন দেখি গোটা দশেক বয়স্ক সাহেব-মেম চুপচাপ বসে আছেন।এনারাও ওয়াশিংটন ডি সি যাচ্ছেন।নিস্তব্ধ এয়ারপোর্ট এর 35 নম্বর গেটে বাংলা কলকাকলিতে ওনারা বেশ চমকে উঠলেন।আমরা বাঙালিরা জোরে জোরে কথা বলি(সবাই নয় হয়তো), হো হো করে হাসি, কে কি ভাবলো তাতে আমাদের মতো টুরিস্ট পার্টিরা কিছু ভাবি না।মাঝে মাঝে অবশ্য আমাদের ম্যানেজার বাবু আমাদের দেশের সম্মানের দোহাই দিয়ে আস্তে কথা বলতে বলেন। আমাদের গ্রূপের কিছু বয়স্ক মহিলাদের চকচকে শাড়ি দেখে আর আমাদের বিচিত্র কলরব শুনে সেই বসে থাকা সাহেব-মেমরা কেমন যেন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠলেন।

প্রায় ছ ঘন্টার উড়ান।দুপুর একটায় ছেড়ে আমাদের বিমান যখন আমার ঘড়ির সময় অনুসারে সাতটায়  ওয়াশিংটন ডি সির ডুলেস ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে নামছে তখন নক্ষত্র খচিত কালো আকাশ আর ওয়াশিংটন শহরের আলো মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।গত সাত দিন ধরে ওয়েস্ট কোস্টে এই সময় ফুটফুটে রোদ্দুর দেখেছি।কিন্তু এখানে এখন রাত দশটা।আমেরিকার পশ্চিমভাগ থেকে এখানে সময় তিন ঘন্টা এগিয়ে।বিমান ল্যান্ড করার আগেই ঘোষিকা আমাদের ঘড়ির কাঁটাদুটো ঠিক করে নিতে বললেন।

পূর্বনির্ধারিত হোটেলে বাসে করে যখন পৌঁছলাম তখন রাত সাড়ে এগারোটা।রুমে রুমেই খাবার প্যাকেটে  দেওয়া হয়েছে।এই বাসটিই আগামী সাতদিন আমাদের সাথে থাকবে।হোটেলটি মূল শহরের বাইরে অবস্থিত।জানালার পর্দা সরিয়ে নিকসকালো অন্ধকারের মধ্যে বেশ দূরে মিটিমিটি কিছু আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে।হাইওয়ের পাশেই হোটেল।রাত্রে খাওয়া শেষ হতে নীচে নেমে এলাম।বেশ ঠান্ডা।স্থানীয় লোকেদের হয়তো এই ঠান্ডায় একটা জামাতেই হয়ে যায় তবে আমাদের সোয়েটার ছাড়া চলে না।আজ আকাশ তারায় তারায় ভরা।মনটা হঠাৎই ভালো হয়ে গেল।শন শন করা বাতাসে হোটেল চত্বরের সাইপ্রাস আর কিছু নাম না জানা গাছগুলো যেন অন্ধকারে খুনসুটি করছে।তারা নড়ছে,নাচছে আর একে অপরের গায়ে ঢলে পড়ছে।পাশের হাইওয়েতে  গাড়ির সারি দুটো লেন দিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে।আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ও রাজধানী ওয়াশিংটন ডি সি পৌঁছে গেছি।আগামীকাল আবার আমাদের শহর ভ্রমণ।

পরের দিন সকালে উঠে দেখি আকাশের মনখারাপ।আকাশের বুক জুড়ে মেঘের ঘনঘটা।গত রাত্রেও তারাদের দল আমার সাথে লুকোচুরি খেলেছে।আজও ওরা ওদের জায়গায় আছে কিন্তু দিনের আলো আর মেঘের আনাগোনা আমাদের মধ্যের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।প্রাতঃরাশ খেয়ে বাস ছাড়ল সকাল সোয়া নটায়।টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে।মনে মনে ভাবলাম আজ বেড়ানোর দফা রফা হবে।বাস হাইওয়ে দিয়ে মূল শহরের পানে এগিয়ে চললো।আজ আমাদের কাজ সারা দিন ধরে শহরের প্রধান দ্রষ্টব্য স্থান দেখা।প্রথমে শহরে ঢোকার মুখে আমাদের স্থানীয় গাইড আমাদের সাথে যোগ দেবেন।তারপর আমাদের আসল যাত্রা শুরু হবে।

দশ মিনিট চলার পর আমাদের বাস রাস্তার ডানদিকে ঘেঁষে দাঁড়ালো।বৃষ্টিভেজা নীল ছাতা হাতে ,সাদা চুল, দুধেআলতা গায়ের রং,ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক, কানে ঝোলা দুল পরিহিতা এক প্রৌঢ়া বাসে উঠে এলেন।বাসে উঠে ছাতাটা বন্ধ করে একগাল হেসে আমাদের সুপ্রভাত জানিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন।
" আমি মার্থা।মিসেস মার্থা গার্সিয়া।অবসরপ্রাপ্ত  হাই স্কুল শিক্ষিকা।ইতিহাসের শিক্ষিকা ছিলাম আমি। পঁয়ত্রিশ বছর  ধরে ওয়াশিংটন ডি সির বাসিন্দা।আমার ঠাকুর্দার বাবা স্পেন থেকে আমেরিকায় ভাগ্য অনুসন্ধানে আসেন।আগে আমি দক্ষিণে ছিলাম।গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে এই শহরেই আছি।আজকে আমিই আপনাদের গাইড।"
আমরাও হই হই করে ওনাকে সুপ্রভাত জানালাম।
" আমাকে এজেন্সি থেকে বলা হয়েছিল কিছু ইন্ডিয়ানদের গাইড হতে।আমি ইন্ডিয়ান দের খুব ভালোবাসি।আপনারা ইন্ডিয়ার কোন জায়গায় লোক।ইন্ডিয়া তো বহুভাষাভাষী, বহুধর্মের দেশ।বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সভ্যতা আপনাদের।আমাদের তো নতুন দেশ।"
আমরা সবাই বলে উঠলাম "আমরা ইন্ডিয়ার পূর্বদিকে অবস্থিত ওয়েস্ট বেঙ্গল থেকে আসছি।"
বেঙ্গল এর নাম শুনেই মেমের লাল লিপস্টিক মাখা ঠোঁট ফাঁক হয়ে সুন্দর চকচকে মুক্তোর মতো দাঁতগুলো বেরিয়ে এলো।
" তাহলে তো আপনাদের সঙ্গে ওয়াশিংটন ডি সির পুরোনো সম্পর্ক।"
আমরা অবাক।মেমসাহেব বলেন কি?ইতিহাস কি নতুন করে লেখা হচ্ছে।আমাদের হতবাক মুখগুলো দেখে উনি বোধহয় কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন।
" আমি অবিভক্ত বেঙ্গল এর কথা বলছি।ওয়েস্ট বেঙ্গল, বাংলাদেশ ও আপনাদের বিহারের কিছু জায়গা নিয়ে আজ আপনাদের একটা গল্প শোনাবো।"
আমি চিন্তিত হলাম।গল্প না ইতিহাস।মেমসাহেব আমাদের ধন্দে ফেলে দিলেন।আমাদের সাথে ওয়াশিংটন ডি সির উনি যে কি যোগসূত্র বার করতে চলেছেন সেটা কিছুতেই আন্দাজ করে উঠতে পারছি না।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি থেমে গেছে।মেঘের ভিতর দিয়ে নীলাকাশ উঁকি মারছে।বাস একটু ধীর গতিতে চলেছে।কোথাও কোনো সুউচ্চ বাড়ি নজরে আসে না।আমাদের প্রথম গন্তব্যস্থল ন্যাশনাল মল এবং হোয়াইট হাউস।আবার গাইডের দিকে নজর দিলাম।
" ব্রিটিশ ভারতের লর্ড কর্নওয়ালিশ এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা নিশ্চয়ই আপনারা ইতিহাসে পড়েছেন।"
আমরা চমকিত ।সুদূর ওয়াশিংটন ডি সির রাস্তায় বাসের ভিতর হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে মিসেস মার্থা এরপর যে গল্পটা শোনালেন তা আমার সম্পূর্ণ অজানা ছিল।

প্রায় কুড়ি বছর বয়সে ভাগ্য অন্বেষনে থমাস ল এক শীতের দুপুরে যখন ইংল্যান্ড থেকে কলকাতা বন্দরে পা দেন তখন লর্ড কর্নওয়ালিসের হাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের চাবিকাঠি।ধর্মনিষ্ট পরিবারের বহু ভাইয়ের ভিতর থমাস অন্যদের থেকে আলাদা ছিলেন।খানিকটা একরোখা আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী।রাইটার(যে নামে রাইটার্স বিলডিং) বা সামান্য কেরানির চাকরি নিয়ে কলকাতায় পদার্পন করেন থমাস ল।বেশ কিছুদিন চাকরির পর ওনার পরিচিতি বাড়লে লর্ড কর্নওয়ালিশের অক্ষবলয়ে ঢুকে পড়েন।চৌখস লোক বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে বিহারে যান।কিন্তু কিছুমাস পরে সেই কাজ ভালো না লাগায় উনি অবিভক্ত বাংলার ট্যাক্স কলেক্টর পদে আসীন হন।তখন সবে 'চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত' শুরু হয়েছে।বিভিন্ন জমিদার ও জোতদার দের কাছ থেকে কোম্পানির এবং ব্রিটিশ সরকারের ট্যাক্স আদায়ে টমাস ল ও অন্যান্য বহু কর্মচারী নিযুক্ত হন।এখানেই টমাস সাহেব নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে অন্য সাহেবদের থেকে এগিয়ে যান।উৎকোচ গ্রহণ বা ঘুষ নিতে উনি বড়ো ভালোবাসতেন।এ ব্যাপারে উনি ওনার সমসাময়িক লোকেদের ছাপিয়ে বহুদূর এগিয়ে  যান।যা ট্যাক্স আসতো তার অধিকাংশ ওনার পকেটেই যেত।কিছু জমিদার ট্যাক্স না দিয়ে ওনাকে ঘুষ দিয়ে সন্তুষ্ট করাতে উনি কাগজে কলমে সব মিলিয়ে কোম্পানি বাহাদুরকেও ফাঁকি দিতেন।হটাৎ বড়লোক হওয়া লোকের মতো উনি উপপত্নীও রাখলেন।তবে টাকা খরচের ব্যাপারে টনটনে নজর।সহজে ওনার হাত দিয়ে টাকা গলত না।তিনটি অবৈধ পুত্র সন্তান জন্মানোর পর এবং প্রচুর টাকাকড়ি হাতে আসাতে উনি ওনার সমসাময়িক সাহেবদের চক্ষুশূল হলেন।ওনারা ক্ষেপে গিয়ে ইংল্যান্ডে কোম্পানির অফিসে টমাস ল-এর বিরুদ্ধে নালিশ জানালেন।
লন্ডনের কাগজে ও কোম্পানির অফিসে হইচই পড়ে গেলো।কোম্পানি নতুন রুল তৈরি করলেন যে নতুন সাহেবরা ভারতে যাবার আগে তাদের সম্পত্তির হিসেব জমা দিয়ে যেতে হবে এবং ফেরত আসার সময় আবার সম্পত্তির হিসেব দাখিল করা প্রয়োজন।আয়-ব্যয়ের গরমিল দেখা গেলেই ফৌজদারি মামলা শুরু করা হবে।টমাস ল প্রমাদ গুনলেন।কিন্তু একটাই সান্ত্বনা যে উনি আসার সময় কোনো মুচলেকা দিয়ে আসেননি।কিন্তু সহকর্মীরা ওনার পিছনে লাগায় মনের দুঃখে উনি কোম্পানির চাকরি ছাড়ার পরিকল্পনা করলেন।
যথাসময়ে উপপত্নীকে পরিত্যাগ করে, নিজের তিন অবৈধ পুত্র সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এবং অপরিসীম টাকাকড়ি, সোনাদানা ভালো করে বেঁধেছেঁদে টমাস সাহেব ইংল্যান্ড যাবার জাহাজে চড়ে বসলেন।সেটা 1791 সাল।প্রায় ছ-মাস জাহাজে চড়ে ইংল্যান্ডের বন্দরে নামার আগে টমাস সাহেব নিদারুণ দুঃসংবাদ পেলেন যে বন্দরে কোম্পানির গোয়েন্দারা পুলিশ নিয়ে ওনাকে তল্লাশি করার জন্য অপেক্ষা করছে।
কিন্তু টাকার ক্ষমতা অসীম।এতদিন উনি দু হাত ভরে লুটেছেন, এবার খরচ করা শুরু করলেন।জাহাজের লোকজনকে বশ করে বিশাল সম্পত্তি লুকিয়ে ফেললেন।জাহাজ বন্দরে নামার পর কোম্পানির লোক প্রচুর তল্লাশি করেও কিছু পেলো না।সচতুর টমাস ল বহুদিন পর মাতৃভূমিতে তিন ছেলেকে নিয়ে পদার্পন করলেন।কিছুদিনের মধ্যেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লোকের সাথে ওনার চাকরিপরবর্তী  পাওয়া সুযোগ সুবিধা নিয়ে গণ্ডগোলে শুরু হলো।আসলে কোম্পানি ওনাকে শাস্তি দিতে চাইছিল কিন্তু হাতে কোনো প্রমাণ নেই।ওনার কিছু বৈধ পাওনা গন্ডার টাকা কোম্পানি দিতে অস্বীকার করায় টমাস সাহেব রেগেমেগে আমেরিকা যাওয়া ঠিক করলেন।তার আগেই উনি ভারতের বঙ্গভূমি থেকে তোলা লুটের এবং ঘুষের মাল ঠিকঠাক জায়গায় সরিয়ে রেখেছিলেন।তিন পুত্র ও সেই অগুনতি টাকা ও সোনা গয়না নিয়ে 1794 সালে আটলান্টিক পেরিয়ে নতুন বিশ্ব আমেরিকায় এক গরমকালে হাজির হলেন।পটোমাক নদীর ধারে তখন সবে 1790 সালে ছোট্ট ওয়াশিংটন ডি সি শহরের পত্তন হয়েছে।টমাস ল সাহেব এবার ওনার অবৈধ ধন দৌলত দিয়ে পটোমাক এবং অনাকস্টিয়া নদীর সংগমস্থলে শয়ে শয়ে একর জমি কিনতে শুরু করলেন ।নদীর ধারে এক চিনির কলও খুললেন।এর ঠিক দু বছর পর, যখন বড়লোক হিসেবে ওনার নামডাক হওয়া শুরু হয়েছে তখনই বিয়ে করলেন জর্জ ওয়াশিংটনের সৎ নাতনিকে এবং 
' হানিমুন হাউস ' বলে ওয়াশিংটন শহরের উপকণ্ঠে এক দেখার মতো বিশাল বাড়ি বানালেন।ধীরে ধীরে লোকজন বাড়াতে ওয়াশিংটন শহর টমাস ল এর কেনা জমি অধিগ্রহণ করে বিশাল শহরে পরিণত হলো।বাংলার কৃষকদের রক্ত জল করা টাকায় কেনা জমিতে আমেরিকার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ওয়াশিংটন ডি সি তৈরি হলো।

আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো মার্থার গল্প শুনছি আর প্রায় আড়াইশো বছর পিছিয়ে চলে গেছি।হটাৎ বাস থেমে গেলো।দেখি এক বিশাল সুসজ্জিত এলাকা।অনেক লোকের ভিড়।মার্থা নিজের সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে ফিরে ঘোষণা করলেন " বন্ধুরা, আমরা আমাদের প্রথম দেখার জায়গা হোয়াইট  হাউসে পৌঁছে গেছি।সবাই বাস থেকে নেমে আমার পিছন পিছন এসো।"
আমরা টমাস ল এর শহর দেখতে মার্থাকে অনুসরণ করলাম।
      সমাপ্ত

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। কলকাতা