মাফ করে দে না ভাইচাষা ছিলাম-চাষাই থাকিপোয়াতি মাটির সোঁদা গন্ধ ছাড়া আমার চলেই না!ঐ মাটির ভেজা শরীর আমার মায়ের ছায়াচোদ্দপুরুষের পায়ের ছাপ!বয়সী আঙুলের ফাঁকে জল ভেজাপঙ্কিল মৃত্তিকায় মাখানো দগদগে ঘন ঘায়ের গন্ধআমাকে আমার পূর্বপুরুষ চিনতে শেখায়ঐ যে ঈশানের ভাঙ্গা জানালাএখানে আমার পূর্বপুরুষের লাঙ্গল, জোয়ালআর মই - বাঁশের নিড়ানিপাশেই খড়ো ঘর-ঢেঁকির চাতালচারপাশে কেমন এক মনকাড়া অহংকারী গন্ধআমার মায়ের!আমি চাষার পোলা!পেঁকো-কাদায় মাখামাখি জীবন খুঁজিছন-নেড়ার চবুতরেকুয়াশায় ভেজা শিশিরে কিংবা মসৃণ দুর্বাঘাসের শরীরেনারকেলের ছোবড়ায় পাকানো দড়ির ঝুলানো কুর্তায়আমার সেই কিষাণী চোদ্দপুরুষের ছায়া!আমি চাষার পোলা!আমি আমার পূর্বপুরুষের সাথে থাকতে চাইযখন দিবসের প্রথম আলো ফজরের আজান মাখে গায়কুয়াশায় ভিজেভিজে উঁকি মারে পুবের দিগন্তেতখন নামাজ শেষে রক্তে স্পন্দিত হয়সুরমাই রঙের আঠালো মাটির গন্ধআমাকে করে বিমুগ্ধ-বিভোর!আর দলেদলে চাষারা ছুটেজল বিছানো খানাখন্দভরা অমসৃণ আলপথেযেনো মাঠ তাঁর জীবিকার পালকিবুক তাঁর মাটির দলা!আমি চাষার পোলা!নগর সভ্যতা আমাকে টানে নাএখানে গাঁয়ের মানুষের মতো আমাকেকেউ চেনে না!এ নগরে মানুষের চেয়ে কুকুরের মূল্য বেশিহাভাতে মানুষ মরে-কুকুর মরে না!আমিতো দেখেছি উজান সকালেকুকুরের মুখে ছিটিয়ে দেয়া খাদ্যদেখেছি নিরন্ন-বিবস্ত্র বঞ্চিত মানুষের হাহাকার!খাবার চেয়ে ধনাত্মক আশ্বাস মেলেনি কখনোবলতে পারিনি গাঁয়ের কোথাও কি তোমার বাড়ি?এ নগরে -কিষাণের গন্ধ নেইগাঁয়ের গন্ধ নেইসকাল থেকে দুপুর,দুপুর থেকে সন্ধ্যাসন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের উরসে মমতার চাদরেউজাগর মায়ের গন্ধ নেই!নেই আজন্ম মাটির সাথে আমার চির সখ্যতারসেই সোঁদা গন্ধ!কোথাও পাইনি চাষার হৃদয় কুঁড়েফলানো ফসলের গন্ধ !এ নগর মাটি ছেড়ে উচ্চতায় গিয়েছে বহুদূরআমি রোজ ভোরে কিংবা দিনের শেষেমাটির সানকিতে আমার মনোরম পূর্বপুরুষের অহংকারী ছায়া দেখিআত্মচেতনায় তীব্র অনুপ্রাণনে।মুতাকাব্বির মাসুদ । শ্রীমঙ্গল, বাংলাদেশ
Ashram Bengali Magazine, Ottawa