ভালোর পথে, আলোর সাথে - রাহিমা আক্তার
সুমন এবছর দশম শ্রেণির ছাত্র। লেখাপড়ার প্রতি ওর আগ্রহ কম। তবে টেকনোলজি খুব ভালো বুঝে। সারাদিন ওর ইচ্ছা করে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে। কম্পিউটারে বসে বসে সারাদিন এনিমেশন, কার্টুন, গ্রাফিক্স তৈরি করে। এগুলো করে ও খুব মজা পায়। একবার ওর বাবা এ নিয়ে প্রাইভেট মাস্টারের কাছে নালিশও করেছে।
নজরুল ইসলাম স্যার, যার কাছে সুমন গণিত পড়ে। ওর আবার গণিতের মাথা খুব ভালো। এজন্য নজরুল স্যার ওকে খুব আদর করে। একবার, নজরুল স্যার নতুন একটা স্মার্টফোন কিনেছে। কয়েকদিন পরে মোবাইলের কি একটা সমস্যা হলে নজরুল স্যার সুমনকে ডেকে বলল, ‘দেখতো সুমন, আমার মোবাইলে কী সমস্যা হয়েছে?’ সুমন কি যেন একটু ঘাটাঘাটি করে মোবাইলটা ঠিক করে দিল। সেই থেকে নজরুল স্যার সুমনকে একটু বেশি আদর করে।
সুমনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার রেজাল্ট শুনে ওর বাবা ভীষণ রেগে আছে। এবারও সুমন ভালো করতে পারেনি। সব বিষয়ে অনেক কম নম্বর পেয়ে কোনো রকমে টেনেটুনে পাশ করেছে। এজন্য ওর বাবা দুই দিন ওর সাথে কোনো কথাই বলেনি।
করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে সুমনের স্কুল বন্ধ। একদিন সুমনের শিক্ষক সুমনের বাবাকে ফোন দিয়ে বললেন, ‘এখন থেকে অনলাইনে সুমনের ক্লাশ হবে। সুমন যেন ফেসবুকে লাইভ ক্লাশে অংশগ্রহণ করে।’ সুমনের বাবা ব্যাপারটা সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। ‘একেতো নাচুনি বুড়ি, তার উপর ঢোলের বাড়ি।’ সুমন সারাক্ষণ কম্পিউটারে বসে থাকে। আবার অনলাইনে মোবাইলে ক্লাশ করতে হবে। মোবাইল হাতে পেলে সে যে কী পড়াশুনা করবে সেটাই ভাবছে, দুশ্চিন্তায় পরে গেল সুমনের বাবা। তারপরও স্কুল থেকে মাস্টার মশাই বলেছে, তাঁর কথা তো রাখতেই হবে। সুমনের বাবা কথাটা সরাসরি সুমনকে না বলে সুমনের মাকে ডেকে বলল,
‘সুমনের মা, স্কুলের রফিক মাস্টার ফোন দিয়েছিল। সুমনকে অনলাইনে ক্লাশ করতে হবে, মোবাইলে বা কম্পিউটারে ফেসবুকে লাইভ ক্লাশ করতে বলেছে সুমনকে।’
একথা শুনে সুমনের মাও চিন্তায় পড়ে গেল। নিজে হাসপাতালে নার্সের কাজ করে। সুমনের বাবাও একটা কর্পোরেট অফিসে চাকরি করে। দুজনকেই অফিসে চলে যেতে হয়। ঘরে সুমন একা একা থাকে। কীভাবে ডিভাইসের হাতে ছেলেকে তুলে দিবে সেটাই আনমনে ভাবছে সুমনের মা।
অনেক ভেবে সাহস করে সুমনের কাছে গিয়ে সুমনের মা বলল, ‘বাবা সুমন, এখন তো স্কুল বন্ধ, স্কুলে যেতে পারছ না, তাই রফিক স্যার ফোন দিয়ে বলল, ফেসবুকে লাইভ ক্লাশ হবে, তুমি যেন ক্লাশ করো।’
একথা শুনে সুমন তো মহাখুশি! সেটাইতো সুমন চেয়েছিল। রোজ রোজ স্কুলে যাওয়া-আসা ওর ভালো লাগে না। স্কুল খোলা থাকলে তেমন সময়ও পাওয়া যায় না। এখন স্কুল বন্ধ থাকায় সুমনের হাতে অফুরন্ত সময় আছে। তাছাড়া একেকটা প্রজেক্ট শেষ করতে প্রচুর সময়ও লাগে, মনে মনে ভাবল সুমন।
সুমন নিয়মিত ফেসবুকে লাইভ ক্লাশ করে। ক্লাশের ফাঁকে ফাঁকে সুমন কম্পিউটারে কার্টুন এনিমেশন তৈরি করে। বিভিন্ন সচেতনতামূলক ভিডিও তৈরি করে। এছাড়া সুমন নিজের নামে একটা ইউটিউব চ্যানেলও খুলেছে, যেখানে সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক ভিডিও তৈরি করে আপলোড করে। ঘরে বসে থাকলেও সুমন সবসময় চিন্তা করে কীভাবে মানুষকে সচেতন করা যায়।
সমাজের মানুষগুলো কেমন যেন বদলে যাচ্ছে, জীবনের উদ্দেশ্য হারিয়ে যাচ্ছে নানা জরা-প্রতিবন্ধকতায়। ক্লান্তি-অবসাদ, জীবনযন্ত্রণা, কষ্ট ঘিরে রাখছে; মানুষের বেঁচে থাকার আশা ম্লান করে দিচ্ছে। অসচেতনতা গুমরে গুমরে অন্ধকারের পথে ঠেলে দিচ্ছে। সমাজের যারা মাথা তারাও সমাজকে আলোর পথে নেয়ার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সবাই নিজেকে নিয়ে এত ব্যস্ত যে, তাদের পরিবেশ, পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ পৃথিবী নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। সবাইকে সচেতন হতে হবে, আলোর পথের দিশারী হয়ে চলতে হবে। মাথা খাটিয়ে কাজে অগ্রসর হতে হবে। সকলকে সচেতন করাই হলো সুমনের একমাত্র উদ্দেশ্য।
কার্টুন এনিমেশন ভিডিওগুলো দিনদিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ওর চ্যানেল যত ভিউ হয় ওর ডিভাইসে আসক্তি তত বেড়ে যায়, মানে আরো নতুন নতুন ভিডিও তৈরির আগ্রহ বাড়ে। সেই সাথে সুমনের বাবা-মার চিন্তাও দ্বিগুণ বাড়ে।
সুমনের বাবা সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় ফিরে ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে। সুমনের মাও হসপিটাল থেকে ফিরে ভালো করে কাপড় কেঁচে, গোসল সেরে না দাঁড়াতেই সুমনের বাবা বলল, ‘এক কাপ চা করে দিবে?’ দিচ্ছি বলে রান্না ঘরে চলে গেল সুমনের মা। গরুর খাঁটি দুধের চা ও বিস্কুট নিয়ে ফিরে এল।
দু’জনে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সুমনের বাবা বলতে লাগল, ‘সুমনকে এত করে ডাকলাম, ওর রুম থেকে আসলোই না। আজকাল ছেলেটার সাথে আর পারছি না। বাসায় একা একা থাকে। সারাক্ষণ কম্পিউটারে কী যে করে?...’ সুমনের মাও চিন্তা করতে লাগল। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। ‘আজকে দুপুরে সুমনের ক্লাশটিচার ফোন দিয়েছিল, ও নাকি আজকাল ঠিকমতো পড়া দিতে পারছে না, হোমওয়ার্ক জমা দিচ্ছে না।’- এ কথা বলে সুমনের বাবা সুমনের রুমের দিকে গেল।
সুমন ওর রুমের দরজা বন্ধ করে ক্লাশ করে। বাবার ডাক শুনে, তাড়াতাড়ি কম্পিউটার স্কিন চেঞ্জ করে দরজা খুলে দিল। খাতা-কলম বের করে কিছু একটা লিখতে শুরু করে দিল। সুমনের বাবা কিছুক্ষণ রুমে থেকে তারপর চলে আসলো। মূলত তখন সুমন নতুন একটা ভিডিও বানাচ্ছিল। ভিডিওটিতে দেখা যাবে, হাসপাতালে একজন স্বেচ্ছাসেবী সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। একজন ক্লিনার কীভাবে কোভিড হাসপাতালে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করবে? কীভাবে কাজ করলে সুস্থ থাকতে পারবে?... এসব বিষয়ে। যারা নিজের জীবন সংগ্রামে মৃত্যুর সাথে লড়ে যাচ্ছে, তারা কীভাবে সুস্থভাবে কাজ করবে সেই বিষয়ে সচেতন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য। এই সংগ্রামী মানুষদের প্রতি আমাদের সকলের দায়িত্ব সচেতন হতে হবে। আমাদের সকলের মূল দায়িত্ব; জীবন দিয়ে জীবন নয়, জীবনের তরে জীবন বাজি রেখে চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হয়ে সকলের মুখে হাসি ফুটানো। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার নামই ভালো থাকা।
সুমনের মামা বুয়েটের শিক্ষক। সুমন ওর মামাকে খুব ভয় পায়। একদিন ভয়ে ভয়ে সুমন ওর মামাকে কিছু এনিমেশন কার্টুন ইনবক্স করে। সুমনের মামা চমৎকার সতর্কতামূলক কার্টুন এনিমেশন ভিডিও দেখে রীতিমতো অবাক হয় এবং অনেক খুশিও হয়। সুমনের মামা সুমনের সেই ভিডিও আন্তর্জাতিক শিশু কার্টুন এনিমেশন প্রতিযোগিতায় মনোনয়নের জন্য পাঠায়।
এদিকে সুমনের কার্টুন তৈরির নেশা বাড়তে থাকে। সুমনের বাবা এ নিয়ে সকাল সন্ধ্যা সুমন ও সুমনের মাকে কথা শুনায়। এই কারণে সংসারে অশান্তি লেগেই থাকে। সুমনের মা সুমনকে পাশে বসিয়ে অনেক করে বুঝায়। ‘বাবা, শুধু ক্লাশ করবে, অন্য সময় কম্পিউটারে বসে থাকবে না। একটু বুঝার চেষ্টা কর। তোমার জন্য আমাকেও গালমন্দ শুনতে হয়।’ সুমন মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ‘মা, তুমি বিশ্বাস রাখো, তোমার ছেলে কখনো খারাপ কিছু করবে না, যা কিছু ভালো তাই করবে, আলোর পথেই আমি হাঁটব, তুমি কোনো চিন্তা কোরো না, মা।’ এ কথা শুনে মা বুকভরা আশা নিয়ে ছেলেকে আদর করে দেন, ছেলেকে আশীর্বাদ করে দেন।
একদিন সকালবেলা সুমনের বাবা সুমনকে নিয়ে ছাদে যাবে। ছাদে কনকচাঁপা, ক্যাট্রাস, অলকনন্দা, বাহারি রঙের পাতাবাহার ফুল গাছ। আছে পেয়ারা, আমড়া, পেঁপে ইত্যাদি নানা রকম ফলের গাছ। আরও কিছু শাক-সবজির গাছও লাগিয়েছে। ফুল, ফল, সবজির রঙে রঙিন হয়ে আছে ছাদের আকাশ। শুধু রং নেই মনের আকাশে।
পৃথিবীতে ‘কোভিড-১৯ বা করোনা’ নামক ভাইরাস আক্রমণ করেছে। করোনার ভয়াল ছোবলে থমকে গেছে পুরো পৃথিবী। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। কর্মহীন বেকারের সংখ্যা বেড়ে গেছে, অর্থনীতি থমকে দাঁড়িয়েছে। গৃহবন্দি মানুষ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকান-পাট, মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সবাইকে মুখে মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে; সংক্রমণের মাত্রা লাগাম ছাড়া। ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা যাচ্ছে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট আরো শক্তিশালী হয়ে মানুষের শরীরকে অচল করে দিচ্ছে। ভাইরাসের তাণ্ডবে যেন মানুষের জীবনে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসছে। করোনার লাগাম টেনে ধরতে সরকার কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। এসময় আত্মরক্ষার জন্য, করোনার ছোবল থেকে বাঁচার জন্য সুমন ও তার বাবা-মা বাড়ির বাইরে যায় না। অনেকদিন একসাথে চাইনিজ খাওয়া হয় না। ঘুরাঘুরি করা হয় না। এই ফাঁকে বাড়ির ছাদটাকে নানা ফুল-ফলে সাজিয়ে কিছুটা আনন্দ সঞ্চার করার চেষ্টা করেছে। তাদের ছাদ বাগানটা দেখতে বেশ সুন্দর, নানা রঙে রঙিন হয়ে সেজেছে।
ডুপ্লেক্স বাসাটিতে সুমনের মা-বাবা ও সুমনই থাকে। সুমনের নানার একমাত্র মেয়ে সুমা। এই বাড়িটা সুমনের নানার কাছ থেকেই পেয়েছে ওরা। সুমনের মা যখন ক্লাশ টেন এ পড়ে তখন সুমনের নানী মারা যায়। মা মরা মেয়েকে নিয়ে সুমনের নানা কত কষ্টই না করেছে। মা বেঁচে না থাকার কারণে সুমনের মায়ের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নার্সে গিয়ে ঠেকেছে। মা ছাড়া সংসারের দায়িত্ব ছিল সুমার কাঁধে। বাবার অফিসে যাওয়া, ভাইয়ের স্কুলে যাওয়া, সংসার গুছিয়ে তারপর নিজের পড়াশুনা। যা হবার তাই হয়েছে। তবে আশা ছাড়েনি সুমা। নার্সিং কলেজ থেকে পাশ করে সরকারি হাসপাতালে চাকরি করে। নিজের আত্মমর্যাদা নিয়ে থাকতে পারে, অন্যের দ্বারস্থ হয়ে থাকা তার কোনোদিনই পছন্দ ছিল না। মেয়েদের শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হতে হবে। আত্মনির্ভরশীলতাই মেয়েদের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়।
সুমনের নানা সন্তানদের কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি। ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পেনশনের টাকা দিয়ে বাপ-বেটির পছন্দমতো এই ডুপ্লেক্স বাসাটি বানিয়েছে। এই বাসায় এখন ভালো আছে সুমনের পরিবার। সব আছে; নেই শুধু সুমনের নানা। করোনার প্রথম ঢেউয়ে হারিয়ে গেছে সুমনের নানা।
সুমনের বাবা চাকরি করে। অফিস আর বাসা, বাইরে যেহেতু যাওয়া হয় না, তাই ছাদে বাগানের কাজে বেশি সময় দেয়। এছাড়া ছোটবেলা থেকে সুমনের বাগান করার প্রতি ঝোঁক বেশি ছিল। সুমনও বাবার সাথেই বাগান পরিচর্যা করত। যখনই সময় পেত বাগানের যত্ন নিত। প্রায় প্রতিদিনই বাগানের ফুল-ফল গাছের কাছে যেত। বাগান করা একরকম নেশা হয়ে গিয়েছিল।
ইদানিং সুমন যেন কেমন পরিবর্তন হয়ে গেছে। এসবের কোনো নেশা নেই। শুধু মোবাইল আর কম্পিউটার। শুক্রবার বন্ধের দিন, সকালের নাস্তা করে সুমনকে সুমনের বাবা ডাকছে, ‘সুমন, আসো, আজ ছাদে বাগান পরিচর্যা করব।’
অনেক ডাকাডাকি করার পরও সুমন ওর রুম থেকে বের হলো না। সুমনের বাবা তো রেগে আগুন। আজ সুমনকে বাসা থেকে বের করে দিবে। কথা শুনে না এমন ছেলে তার দরকার নাই। বাসায় খুব গণ্ডগোল, হৈচৈ শুরু হয়ে গেল।
এমন সময় দরজার বেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই সুমনের মামা একটা ফুলের তোড়া নিয়ে হাজির। সুমনের বাবা রীতিমতো থ বনে গেল। সুমনের মামা খুব কমই আসে এ বাড়িতে। কারণ বাড়ির জায়গা ও বাড়ি বানানোর সময় সুমনের মামার মত ছিল না। কিন্তু ভাগিনার প্রতি আবার তার টান প্রচুর। জন্মদিন, ইদ উপলক্ষে ভাগিনাকে উপহার দিতে কখনো ভুলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক; মনটা অনেক বড়, হয়তো ব্যস্ততার কারণে অনেক কিছু হয়ে উঠে না। না চাইলেও সময়ের অভাবে অনেক ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়। সুমনের মামী আবার তার বাবার দেয়া ফ্ল্যাটেই থাকেন। ওখানে সুমনের মামা সুখে-শান্তিতেই আছে।
সুমনের বাবা চোখ ছানাবড়া করে বলল, ফুলের তোড়া! কোনো উপলক্ষ্য তো মনে পরছে না।
সুমনের মামা হেসে দিয়ে বলল, ‘ভাগিনার সাফল্য আর তোড়া থাকবে না।’ এদিকে মামার গলার আওয়াজ পেয়ে ভয়ে ভয়ে ওর রুম থেকে বের হয়ে আসলো সুমন।
‘আরে সুমন, তুই সারাদিন কম্পিউটারে বসে এগুলো তৈরি করিস! সুমনের মা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আর বলিস না- ওর জন্যইতো আমার সংসারে এত অশান্তি।’
‘আরে আপা! এ তুমি কী বললে?’
পাশ থেকে সুমনের বাবা বলে উঠল, ‘ছেলেটা আমার ভরাডুবি করে ছাড়বে। ও আর আমার মুখ রাখবে না। মনে হচ্ছে ওর জন্য আমি কাউকে মুখই দেখাতে পারব না।’
দুলাভাই, আপা শুনেন - ‘সুমন তো আন্তর্জাতিক কার্টুন প্রতিযোগিতায় সেরা কার্টুনিস্ট পদক পেয়েছে। আমাদের সম্মান অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে সুমন। কম্পিউটারের সাহায্যে ঘরে বসে ও এগুলো তৈরি করেছে। বই পড়ার ফাঁকে ওর সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়েছে। এজন্য আজ এ সাফল্য ও জয়ের মুকুট ছিনিয়ে এনে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে ওর কাজের স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য অনেক বড় সুসংবাদ!’
আমাদের শিশুকে ওর মতো করে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। প্রতিটি শিশুর নিজস্ব জগৎ আছে, নিজস্ব সৃজনশীলতা, প্রতিভা আছে। তাদেরকে সুযোগ দিলে ও সহযোগিতা করলে ওরাই অনেক বড় কিছু করে দেখাতে পারে। শুধু বই পড়লেই হবে না, বইয়ের জ্ঞানকে ভালো কাজে লাগাতে হবে। নিজের মেধাকে ভালো কাজে ব্যয় করতে হবে। অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। সর্বোপরি ভালোর সাথে আলোর পথে জীবনকে পরিচালিত করতে হবে।
রাহিমা আক্তার
এম. ফিল গবেষক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
গাজীপুর, বাংলাদেশ
-
গল্প//উপন্যাস
-
05-01-2022
-
-