ইলিশের স্বাদ আর শীতের অনুভূতি পেতে ঘুরে আসুন মাওয়া ঘাট থেকে
তৌফিক সুলতান, শেরে বাংলা নগর, ঢাকাঃ মাওয়া ফেরি ঘাট (Mawa Feri Ghat) পর্যটকদের জন্যে নদী ভ্রমণ এবং ইলিশ ভোজন এর জন্যে জনপ্রিয় একটি জায়গা। মাওয়া ফেরি ঘাটের পাড়ে রয়েছে বেশকিছু খাবার হোটেল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইলিশ খাওয়ার জন্য অনেকেই মাওয়া ঘাটে ছুটে আসেন। এখানকার মাছের বাজারে ইলিশ ছাড়াও অনেক বাহারি প্রজাতির তাজা মাছ পাওয়া যায়। মাওয়ার এই ফেরিঘাট সব সময় মেতে থাকে মেলার আমেজে।
ঢাকার কাছে অবস্থান হওয়ায় চট করে পদ্মা পাড়ের এই মাওয়া ফেরি ঘাট হতে দিনে গিয়ে দিনেই ঘুরে আসা যায়। তাই একদিনের ভ্রমণ করার জায়গা হিশেবে অনেকের কাছে মাওয়া ঘাট অনেক জনপ্রিয় একটি স্থান। রুপালী জলের ঝিকিমিকি দেখতে দেখতে পাড় ধরে দূরে হেটে যাওয়া কিংবা পদ্মা পাড়ের শান্ত সবুজ গ্রামের যান্ত্রিকতা ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশ আপনাকে আছন্ন করে রাখবে। নৌকায় ঘুরে দেখতে পারবেন পদ্মার বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য। তাছাড়া ধোঁয়া উঠা গরম ভাতের সাথে পদ্মার ইলিশের স্বাদ কি আর অন্য কিছুতে মেটানো সম্ভব! আরও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে পদ্মার বুকে ১৫০ টাকা ভাড়ায় স্পীড বোটে এপার থেকে ওপারে যেতে পারেন।
যুগ যুগ ধরেই মাওয়া ঘাটের (Mawa Feri Ghat) ইলিশের চাহিদা সর্বত্র। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে ইলিশ খেতে আসেন ভোজন রসিকরা। এই বিশাল চাহিদা পূরণে মাওয়া ঘাটের পাড়ে গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় হোটেল। রয়েছে মৌসুমি ফলসহ অন্যান্য পণ্যের বিশাল সমারোহের দোকান। এছাড়াও রয়েছে খণ্ড-খণ্ড মাছের বাজার। এ মাছের বাজার গুলোতে বিক্রি হচ্ছে পদ্মা নদীর তাজা ইলিশ সহ ছোট-বড় মাছ। চাহিদাও ব্যাপক।
ঢাকার খুব কাছে হওয়ার কারনে একদিনে ঘুরে আসতে পারবেন পদ্মা ঘাট থেকে আর দুপুরে পদ্মা ঘাটে বসে ধোয়া ওঠা গরম ভাতের সাথে পদ্মার ভাজা ইলিশ দিয়ে ভুড়ি ভোজ করুন। চাইলে স্পীডবোটে করে ওপার যেতে পারেন। ওখানেও ভালো কিছু খাবার হোটেল হয়েছে। সন্ধ্যার পরে ফেরিতে ফিরতে পারেন। ফেরির তিন তলা থেকে রাতের পদ্মা অপার্থিব লাগবে।
যদি জেলেদের কাছ থেকে তাজা মাছ কিনে খেতে চান তবে আপনাকে অন্তত এক দিনের জন্য সকালের কাঁচা ঘুম ত্যাগ করে মাওয়া পৌঁছাতে হবে সকাল ৯টার মধ্যে। আর শুধু ইলিশ খেয়ে চলে আসা নেহায়েত বোকামি হবে যদি নদীর পাড়ে বসে পদ্মার বিশাল জলের একটু উন্মাদনা না দেখেন। তার জন্য বেস্ট প্ল্যান হবে, মাওয়া ঘাট থেকে জন প্রতি ২৫/= টাকা করে ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সায় লোহজং যেতে পারেন। সম্পূর্ণ অটো রিক্সায় রিজার্ভ নিলে ১৫০/= টাকা নিবে। সেখান থেকে নৌকায় যাবেন পদ্মা রিসোর্ট। রিসোর্ট ও দেখা হবে নৌকা ভ্রমণ ও হয়ে যাবে। ইচ্ছা করলে সারা দিন অথবা রাত দিন থাকার ব্যবস্থা আছে রিসোর্টে। না থাকতে চাইলেও অসুবিধা নেই শুধু এক্সট্রা ৫০ টাকা দিলেই ঘুরে দেখা যাবে সম্পূর্ণ রিসোর্ট।
মাওয়া ঘাট যাওয়ার উপায়ঃ
সকালে গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী থেকে বাস এ মাওয়া ঘাটে চলে যাবেন। ভাড়া ৭০/- বি আর টি সি/ইলিশ পরিবহন। মিরপুর ১০, ফার্মগেট, শাহবাগ থেকে যেতে পারেন স্বাধীন পরিবহনে। গুলিস্তান থেকে বি আর টি সি এসি পাবেন। ঘন্টা খানেকের একটু বেশি সময় লাগতে পারে ঘাট এ পৌছাতে। চাইলে পদ্মা পারি দিতে পারেন লঞ্চ, ফেরি কিম্বা স্পীডবোটে। ভাড়া পড়বে ৩৫/২০/১৫০ টাকা যথাক্রমে। সময় লাগতে পারে ২ ঘন্টা, ১:৩০ ঘন্টা অথবা ৩০ মিনিট যথাক্রমে।
কোথায় খাবেনঃ
পদ্মার ওপাড়ে কাওড়াকান্দি ঘাটে হোটেলগুলোতে ইলিশ আর গরম ভাত দিয়া ভুড়ি ভোজ করতে পারেন। তবে খাবার আগে ইলিশ এর ফেনা ওঠা গরম তেল আর শুকনা মড়িচ দিয়া ভাত মাখিয়ে নিতে ভুলবেন না। ইলিশ ভাজা ৭০/- থেকে ৯০/- সাইজ ভেদে, ভাত ১০/- শুকনা মড়িচ ফ্রি। তৃপ্তির ঢেকুড় তুলে আবার একই রাস্তায় ফেরত আসবেন ঢাকায়।
আমাদের ভ্রমণ গল্পঃ
মৃদুল ও মেহেদী অনেক দিন যাবত তাদের চাকরি পাওয়া উপলক্ষে ট্রিট-দিতে চাচ্ছিলো। তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছিলো সবার সময় মিল ছিলো না এই জন্য। শুক্রবার রাত বাছাই করা হলো মাওয়া টুর দেওয়ার জন্য। বাজেট ছিলো ৬ হাজার টাকা। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবাইকে বলা হয়েছিলো ঢাকা সংসদ ভবনের সামনে রাজধানী স্কুলের এখানে মামার চায়ের দোকানে যেখানে নিয়মিত আড্ডা দেওয়া হতো সবাই ৯ টার মধ্যে যেন এখানে চলে আসে। কিন্তু চাইলে এমনটা হয় না। এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে ওমর চলে গেলো আর্মী স্টেডিয়ামে কোঁকা কলা আয়োজিত কন্সার্টে। সেখান থেকে ফিরতে সাড়ে দশটা। সবাই অপেক্ষা করছে ওমরের জন্য। বাকি সবাই মোটামুটি চলে আসছে। আমাদের চারটা মোটরসাইকেলে- আট জন যাওয়ার পরিকল্পনা নাহিদ, ইমরান, ওমর এবং এক বড় ভাইয়ার মোট চার বাইক। আট যাবো, যাইহোক, রাজধানী স্কুলের সামনে সবাই চা আড্ডার মাধ্যমে সময় পার করছিলাম কিন্তু তা আর কী হয়? মাওয়া যাওয়ার অপেক্ষায় আড্ডা ও ঠিক জমছিল না। সবার মধ্যে মাওয়া যাওয়ার আমেজে কাজ করেছিলো। যাই হউক অবশেষে ওমর আসলো। আমরা মোটরসাইকেলে পেট্রোল পাম্প থেকে পেট্রোল নিয়ে রওনা দিলাম মাওয়া উদ্দেশে! এর মধ্যে আজমপুর থেকে আমাদের সাথে যুক্ত হলো আরেক ভাই। রাতের শহর অন্য রকম একটা অনুভূতি! ঢাকায় গরম থাকলেও মাওয়াতে আমরা শীতকালের শীতের উপলব্ধি করেছি। মাওয়া পৌঁছে আমরা প্রথমে রুপশি বাংলা হোটেল থেকে ইলশ বাজা, ইলিশ মাছের বর্তা, বেগুন ভাজি দিয়ে রাতের খাবার শেষ করে মাওয়া ঘাটে গিয়ে চা স্টল থেকে চেয়ার ম্যানেজ করে গুল হয়ে বসে আগুন জ্বালিয়েছি। তারপর রাত ভর আড্ডা গান আর ঘুরাঘুরি! কিছু বিষয় দেখে বিস্মিত হয়েছি। এখানে যে আমরাই এসেছি তা কিন্তু নয়, অনেক মানুষের সমাগম এখানে। অনেকটা মেলার মতো, সব কিছুই আছে যেমন, চড়কি, মেয়েদের বিভিন্ন জিনিস পত্র নিয়ে বসে থাকা অস্থায়ী দোকান, যেমন চুড়ি, টিপ, আরও অনেক কিছু। কিছু ছেলে মেয়েদেরকে দেখা গেলো যারা বসিয়েছে আড্ডা গান।
পাশে নৌকা আছে ঐ গুলোতেও অনকে যাচ্ছে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিকে থেকে ঐদিকে। নদীর মাঝে উপভোগ করছে নদীর সুন্দরর্য রাত; কিন্তু তবুও নেই মানুষের অভাব। দেখে মনে হবে রাত্রপুরী যেখানে সবাই রাতে জেগে থাকে। ফেরার পথেও চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সকাল ছয়টায় বাসায় পৌঁছায় আমরা এতো সুন্দর একটা ভ্রমণ উপহার দেওয়ার জন্য বন্ধু মৃদুল ও মেহেদীকে ধন্যবাদ জানাই। যারা ঢাকায় আছেন শীতকাল খুব মিস করছেন- তারা ঘুরে আসতে পারেন মাওয়া ঘাট। যদিও এখন ঢাকায় ও শীত পড়েছে তবে শীতের তীব্র অনুভূতি উপভোগ করতে আপনাকে যেতে হবে মাওয়া ঘাট।
তৌফিক সুলতান, প্রাবন্ধিক & কলামিস্ট
শেরে বাংলা নগর, ঢাকা
বাংলাদেশ
-
গ্রন্থালোচনা // ভ্রমণ
-
04-02-2024
-
-