অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
সবুজ বনায়নের মাধ্যমে ধরিত্রীকে বাঁচান - রতন কুমার তুরী

রুষ্ট হচ্ছে ধরিত্রী, কখনও বন্যা, কখনও খড়া আবার কখনও বা সাইক্লোন -সুনামিতে জর্জরিত হচ্ছে গ্রহবাসি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় যে দেশে যতোটুকু সবুজ বনায়ন দরকার তা না থাকার ফলে এমন বিরূপ আচরণ করছে প্রকৃতি। তাছাড়া উন্নত দেশ সমূহে যেহারে কলকারখানা গড়ে ওঠেছে তা থেকে নির্গত অধিক মাত্রায়  কালো ধোঁয়া পৃথিবীর ওপরিভাগকে উত্তপ্ত করে তুলছে এতে করে পৃথিবীর সবুজ বেষ্টনী সমূহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক গতি হারাচ্ছে অন্য দিকে উত্তর মেরুর বেশিরভাগ বরফ গলে পৃথিবীর নদী এবং সমূদ্র সমূহের পানি বাড়তে শুরু করেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবী নামক গ্রহটির অস্তিত্ব যে সংকটের মুখে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এক সময় সব দেশের ঋতুগুলো চক্রাকারে যেভাবে প্রকৃতিতে আসার কথা সেভাবে আসতো, বর্তমানে ঋতু প্রকৃতিও বদলাতে শুরু করেছে। এখন দেখা যায় শীতকাল এসে পড়েছে অনেক আগে আবার গ্রীষ্মকালে মুসলধারে বৃষ্টি পড়ছে, বর্ষাকালে অনেক সময় বৃষ্টিরই দেখা নেই। কখনও কখনও বর্ষা মৌসুম মানুষের জন্য ডেকে আনে নিষ্ঠুর পরিণতি। বন্যায় দেশজুড়ে মানুষ ঘর বাড়ি হারায় এবং জীবন হানিও ঘটে।  বর্ষার নির্মম আঘাতে অনেক মানুষ তাদের ভিটে বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অথচ বর্ষার এমন ভয়াল রূপ মানুষ কখনও দেখেনি। এটি মূলতঃ হয়েছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হীনতার কারণে। অন্য দিকে বাংলাদেশের অন্যান্য ঋতুগুলোর মধ্যে বসন্ত, হেমন্ত কখন আসে আর কখন যায় মানুষ টেরও পায়না। অন্যান্য দেশের ঋতুগুলোর অবস্থাও এমন ওলট পালট হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আজ পৃথিবীর অনেক দেশের প্রকৃতি রুষ্ট হয়ে বৈরি আচরণ করতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে মানুষ অসহায় হয়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করে চলেছে।  এমন প্রকৃতির বৈরি আচরণ কম বেশি প্রতিটি দেশে লক্ষ করা যাচ্ছে। 

প্রশ্ন হলো কেনো প্রকৃতি এমন বৈরি আচরণ করছে, দূর অতীতে তো এমন আচরণ দেখা যায়নি। মূলত পৃথিবীতে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে সবুজ বনায়ন, যেমন- বৃক্ষ, পাহাড়, বন,সবুজ ঘাস, লতা- পাতা, সবুজ অরণ্য ইত্যাদি। বর্তমানে মানুষের বসতির জন্য এসমস্ত সবুজ অরণ্য, বৃক্ষ ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় প্রকৃতি তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলেছে এমনকি শুধু মানুষের নানা ভুল পদক্ষেপের কারণে অরণ্য বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় অরণ্যচারি পশু পাখিদেরও আবাস স্থল হারিয়ে যাচ্ছে এতে করে অনেক পশু পাখিও আজ বিলুপ্তির পথে। এসমস্ত পশু পাখিদের আবাস স্থল রক্ষার জরুরি পদক্ষেপ না নিলে প্রকৃতি আরো ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। প্রকৃতপক্ষে কোনো দেশের প্রকৃতি সুরক্ষার জন্য সেদেশের বন, পাহাড় এবং সেখানে বসবাসরত পশু পাখিদের সুরক্ষা করা রাষ্ট্র এবং জনগণের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা সকলের কর্তব্য।  পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে আমরা যদি সবাই বিরত থাকি এবং অন্যদেরও এ বিষয়ে সচেতন করি তাহলে প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখা অসম্ভব নয়। আমাদের সবার মনে রাখা দরকার মানুষের বসবাসের জন্যই এই পৃথিবী তাই এই পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখা আমাদের সবার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এই দায়িত্ব থেকে আমরা কেউ পিছপা হতে পারিনা। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই এখন সংরক্ষিত বনাঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে সবুজ বনায়নকে সুরক্ষিত করা হয়েছে। এশিয়ার অনেক দেশেও তা করা হয়েছে।  আমাদের দেশেও কিছু পাহাড়, অরণ্যকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা জরুরি। এতে করে আমাদের সবুজ অঞ্চলগুলো বেঁচে যাবে এবং  প্রকৃতিও সুরক্ষিত থাকবে। বিশেষ করে  সবুজ বনায়ন কমে যাওয়ার কারণে প্রকৃতি পৃথিবীর সমস্ত কার্বন ডাই অক্সাইড শোষন করতে পারছেনা যার ফলে ধরিত্রী ক্রমেই উষ্ণ হয়ে তার রুদ্র মূর্তি রূপ ধারণ করে পৃথিবীর মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে।

আমরা পৃথিবীবাসী যদি এখনই সতর্ক না হই এবং প্রকৃতিকে মানুষ এবং আগামি প্রজন্মের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা না করি তাহলে এই পৃথিবীই একদিন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমরা মানুষ, পৃথিবীতে একমাত্র আমাদেরই হিতাহিত জ্ঞান রয়েছে এবং আমরাই পারবো পৃথিবীকে পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্ত করে পৃথিবীতে বসবাসরত সব প্রাণীদের বাঁচাতে।  সৃষ্টিকর্তা মানুষকে মেধাশক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছে শুধুমাত্র ভালো খারাপ বিচার বিবেচনা করে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য, তাই সময় এসেছে আমাদের সবার পৃথিবীতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার। 

পৃথিবীর সব মানুষদের আজ সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রকৃতিকে বাঁচাবার তা’নাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের অভিসম্পাত দেবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের এখন থেকেই শপথ নিতে হবে প্রত্যেকেই প্রতিবছর বাড়ির আশেপাশে সবুজ বনায়ন করবো। প্রয়োজনে সবাই মিলে গ্রামে গ্রামে সবুজ বনায়নের বিপ্লব গড়ে তুলবো।  এদেশের প্রতিটি শহরে বিভিন্ন জায়গায় সবুজ বনায়ন গড়ে তুললে শহরবাসীরাও নিরাপদ প্রকৃতিতে বসবাস করতে পারবে। এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে হবে। সরকারের উচিত হবে পরিবেশ বাঁচাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া কারণ যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রকৃতি রুষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে দেশের বনাঞ্চলগুলোও বিভিন্ন কারণে উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এমন বন এবং বৃক্ষ উজাড় ঠেকাতে নাপারলে পরিবেশ সুরক্ষা সম্ভব নয়। তাই সরকারের উচিত এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া।                                                  

প্রকৃতির এমন বৈরি এবং রুষ্ট আচরণ থেকে ধরিত্রীকে বাঁচাতে হলে আসুন সবাই সবুজ বনাঞ্চল গড়ে তুলি  নিজে বাঁচি এবং  ধরিত্রীকে বাঁচাই।

রতন কুমার তুরী । চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ