অটোয়া, সোমবার ৭ অক্টোবর, ২০২৪
পিকাসোর দেশে পরিক্রমায় – চিরঞ্জীব সরকার

ঢাকার হেডকোয়ার্টাস থেকে স্পেনের মাদ্রিদে আসি ২০১০-এ এবং ২০১৩ পর্যন্ত এখানে থাকি কর্মসূত্রে। স্পেনে আসার আগে ঢাকাস্থ স্পেনিশ দূতাবাসের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মিঃ আর্তুোরো পেরেজ আমাকে তাঁর দূতাবাসে এক কাপ কফির আমন্ত্রণ জানাল। তাঁর আমন্ত্রণে সারা দিয়ে গুলশানের স্পেন দূতাবাসে হাজির হলে রাষ্ট্রদূত মহোদয় আন্তরিকতার সাথে আমাকে এক কাপ কফি খাওয়ালেন ও ফেরার সময় বিখ্যাত স্পেনিস লেখক মিগুইল ডি সার্ভেন্টাসের ডন কুহিতোর (Don Quixote) উপর লিখিত একটি বাংলা বই আমাকে উপহার হিসাবে দিলেন। তিনি স্পেনের সিয়েস্তা (দিনের বেলার হালকা মাত্রার ঘুম) ও ফিয়েস্তা (উৎসব) সম্বন্ধে আমাকে একটু ধারনা দেন। এছাড়াও তিনি বললেন স্প্যানিস খাবার তর্তিয়া ও পাইয়ার অসাধারণ স্বাদের কথা এবং রাজধানী মাদ্রিদে নাকি কয়েক মিনিট হাঁটলেই ক্যাফে বা কফি শপের দোকান মেলে। মাদ্রিদে আসার পর তাঁর এ কথার সত্যতা পেয়েছি। এর আগে শুধু স্প্যানিস অলিভ অয়েলের সুনাম শুনেছি। স্প্যানিস লা লিগ্যার কল্যাণে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সিলোনার ফুটবল খেলোয়ারদের নাম বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমিকরা ভাল করেই জানে। আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না।

আকাশযানে চড়ে অবতরণ করলাম মাদ্রিদের বাদাখাস এয়ারপোর্টে। এয়ারপোর্টে দেখি স্পেনের জাতীয় বিমানবহর আইবেরিয়ান এয়ারলাইন্সের বহু বিমান। আবহাওয়া বেশ ঠান্ডাই মনে হল। দূতাবাসের ফিলিপিনো ড্রাইভার এন্থনিকে দেখি গাড়ির সিডি প্লেয়ারে শাহ আব্দুল করিমের ‘বন্ধে মায়া লাগাইছে’ নামক জনপ্রিয় বাংলা গানটি চালিয়ে দিয়ে বেশ খুশিমনে গাড়ি চালাচ্ছে। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না এন্থনি কি ইতোমধ্যে বাংলা গানের সমঝদার হয়ে গেছে না সঙ্গীতের সুরের যে বিশ্বজনীন আবেদন আছে তার কারনে আনন্দে গাড়ি চালাতে চালাতে মাথা দোলাচ্ছে। এয়ারপোর্ট থেকে মিনিট চল্লিশের ভিতর পৌঁছে গেলাম টরে ল্যাগুনার একটি বহুতল ভবনে। পনের তলার ব্যালকনি থেকে বার্ডস আই ভিয়্যুতে মাদ্রিদকে দেখছি। সবকিছু ঝকঝকে পরিস্কার, গাছপালাও প্রচুর। পরের দিন বাসা সংলগ্ন মেট্রোতে চড়ে দিয়োগো দ্যা লিয়নে অবস্থিত তৎকালীন বাংলাদেশ দূতাবাসে যাই। সে সময়ে রাষ্ট্রদূত ছিলেন ডঃ সাইফুল আমিন খান স্যার। স্যারের একটি কথা এখনো আমার মনে আছে। একদিন পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা প্রসংগে ওনার সাথে কথা হচ্ছিল। স্যার বললেন যখন কেউ তাঁর মন যে চিন্তা করছে বা ভাবছে সেটা যদি সে সঠিকভাবে কোন ভাষায় লিখতে পারে তবে বুঝবে সে ওই ভাষায় বুৎপত্তি অর্জন করেছে। নিজেকে মনে মনে যাচাই করে দেখছি আমার অবস্থানটা কোন জায়গায় এ ভাষাগত জগতে। আবার একদিন অফিসের একজন লোকাল কর্মচারীর শৃংখলা জনিত সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আমাকে গাইডলাইন দিলেন ‘হি ইজ নট অ্যান অ্যাঞ্জেল, অ্যাট দ্যা সেইম টাইম হি ইজ নট এ ডেভিল, সো ডিল দ্যা ইস্যু ইন দিজ লাইন’। 

সারা মাদ্রিদের মাটির তলায় বিশাল মেট্রোরেলের নেটওয়ার্ক। মেট্রোতে চড়েই মাদ্রিদের জনজীবন আবর্তিত। এখানে কিছুদূর পরপর পার্ক করে রাখা হয়েছে এবং শিশুদের খেলাধুলার জন্য নানারকম রাইডের ব্যবস্থা আছে। একটু পর পর বিনের দেখা মেলে যাতে সবার যেন ময়লা ফেলতে কোন অসুবিধার সন্মুখীন হতে না হয়। এখানকার পার্কে প্রচুর বৃদ্ধ বৃদ্ধার দেখা মেলে। এদের অনেকেরি জীবনের একমাত্র সাথী সংগের কুকুরটি। বিশুদ্ধ আলো বাতাস,ভেজালবিহীন খাদ্য ও সুচিকিৎসার জন্য স্পেনীশদের গড় আয়ু বেশ বেশি। আয়ুর এ কারনে এদের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ সিনিয়র সিটিজেন বা বয়স্ক নাগরিক। পশ্চিমা সভ্যতার অন্যতম ম্যালাডি হল ছেলেমেয়েরা স্বাবলম্বী হলে তাঁরা তাদের বয়স্ক মাবাবাকে ত্যাগ করে তাদের আপন ভুবন তৈরী করে নেয়। আদরের সন্তানেরা খোঁজ রাখে না তাদের পিতামাতাদের যারা তাদের একদিন কত স্নেহ মমতায় তিল তিল করে বড় করেছে। এ ছেলেমেয়েরাও যেদিন বৃদ্ধ হবে সেদিন তাঁরাও তাদের ছেলেমেয়ে দ্বারা নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী পরিত্যক্ত হবে। স্পেনীশ তথা ইউরোপীয় তথা পশ্চিমা সভ্যতা এটাই মেনে নিয়েছে। একদিন আমার অফিসের কাছে একাকী হাঁটতে থাকা অসীতিপর এক বৃদ্ধাকে দেখলাম হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে রাস্তাতে পড়ে যেতে। অ্যাম্বুলেন্স এসে তাকে তুলে নিল, রাষ্ট্র সে ব্যাবস্থা করে রেখেছে কিন্তু সন্তান হয়ত জানবে না যে তার মা মৃত্যু শয্যায় শায়িত। ভোগবাদী সমাজব্যবস্থার এ কদর্য ঢেউ এদিকেও আছড়ে পড়ছে। নচিকেতার ‘ছেলে আমার মস্ত বড়’ গানটির বাস্তবতা একটু একটু করে আমাদের সমাজও বুঝতে পারছে। পত্রিকাতে পড়লাম বিশ্ব প্রবীন দিবস উপলক্ষে ঢাকার একটি বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিতা একজন বৃদ্ধা মা আক্ষেপ করে বলছে সমাজে উচ্চ প্রতিষ্ঠিত তাঁর ছেলেমেয়েদের ঘরে অনেক কাজের লোক কাজ করে। তারাও তো ওখানে আশ্রয় পেয়েছে আর আমি মা হয়েও ওদের ঘরের ছোট্ট একটু কোনেতে থাকার ঠাঁই হল না। এই বলে মহিলা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই- ছোটো সে তরী, আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি’।

ফ্রান্সের পর আয়তনের দিক থেকে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ দেশটিতে রয়েছে বছরে তিন হাজার ঘন্টার সূর্যালোক, অতলান্তিক ও ভূমধ্যসাগরীয় সমূদ্র সৈকত, বুল ফাইটিং ও ফ্লেমেন্কো ড্যান্সের ঐতিহ্য। মাদ্রিদ শহরে রয়েছে প্রাদো ও রেনে সোফিয়া নামে দুটি বিশ্বখ্যাত আর্ট মিউজিয়াম। মাদ্রিদের কাছাকাছি টলেডো একটি পুরাতন সিটি। কর্ডোভার গ্রান্ড মস্ক, গ্রানাডার আল হামরা প্রাসাদ ও বাগান, বার্সিলোনার লা সাগরাডা ফ্যামিলিয়া ও গৌডিস সাইটস সহ অসংখ্য দর্শনীয় জায়গাসমূহ দেখতে সারাবছর স্পেন পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। পৃথিবীর দ্বিতীয় কথিত ভাষা স্প্যানীশ। স্প্যানীশ সাম্রাজ্যের বিস্তার ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফিলিপাইন্স পর্যন্ত ছিল। ১৫৮৮ সালে ১৩৩টি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে স্পেন যখন ইংল্যান্ড আক্রমণ করে তখন তাঁরা প্রায় তাদের অর্ধেক যুদ্ধজাহাজ ঝড়ো হাওয়া ও বৃটিশ নৌবাহিনীর সাথে যুদ্ধে হারায় এবং সেই সাথে স্প্যানীশ সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা ঘটে। বিশ্ববিখ্যাত মাস্টার আর্টিস্ট পাবলো পিকাসো, সালভাদর ডালি, ফ্রান্সিসকো দ্য গয়্যার দেশ স্পেন। মাদ্রিদের রেনে সোফিয়া মিয়ুজিয়ামে পিকাসোর আঁকা বিখ্যাত ছবি গুয়ার্নিকার দিকে একদিন তাঁকিয়ে ছিলাম অপলক দৃষ্টিতে। লিওনর্দো দ্যা ভিঞ্চির মোনালিসা যেমন বিখ্যাত চিত্রকর্ম পিকাসোর ক্ষেত্রে গুয়ার্নিকা হল সেরকম। স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় বাস্ক অঞ্চলের গুয়ার্নিকা নামক শহরটি এলোপাতারি বোমাবাজির শিকার হয়ে তাঁর অসহায় নাগরিকগন সহ এক ধ্বংসস্তুপের জীবনে যে নিপতিত হয় তারি প্রতিবাদে কালজয়ী শিল্পী পিকাসো আঁকেন এ মাস্টারপিস গুয়ার্নিকা। কেউ কেউ এটাকে পলিটিক্যাল ছবিও বলে। যুদ্ধ যে কত অসহায় নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুর কারন হয় গুয়ার্নিকা যেন সেকথা সবাইকে স্মরন করে দেয়।

এ মাদ্রিদেই থাকেন বাংলাদেশের বিখ্যাত আর্টিস্ট মনিরুল ইসলাম। উনি তার শিল্পকর্মের জন্য স্পেনের সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছেন। ব্যাক্তিগত ভাবে উনি আমাকে খুব স্নেহ করেন। আমরা যেদিন স্পেন থেকে চলে আসব তার আগের রাতে উনি দুটি ছবি এঁকে আমাকে উপহার দেন। মনির ভাই আর্ট প্রসঙ্গে একদিন আমাকে বললেন তুলি দিয়ে কোন কিছুর উপর টান দাও সেটাও একটা আর্ট হবে। আমি মনির ভাইকে বলি আপনি টান দিলে নিশ্চয়ই সেটা আর্ট হবে, আর আমি দিলে সেটা কি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ প্রসঙ্গে জাপানীজ জেন আর্চারীর একজন মাস্টার (Guru), শিক্ষক (Teacher) ও ছাত্রের (Disciple/Student) পার্থক্য বুঝাতে বলা হয় আকাশের একটা উড়ন্ত পাখিকে জেন আর্চারীতে একজন ছাত্র তীরবিদ্ধ করতে পারবে অনেক কসরত করে, একজন শিক্ষক সেটা করতে পারবে সাবলীলভাবে, আর একজন মাস্টারকে পাখিটির দিকে তীর ছূড়তে হবে না পাখিটির দিকে তাঁকালেই সেটি ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়বে। মনির ভাইর মত মাস্টার আর্টিস্ট হয়ত তুলি হাতে ধরলেই সুন্দর একটা ছবি তৈরী হয়ে যাবে।

মনির ভাইর বাসাতেই একদিন অতিথি হয়ে আসেন ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ ফজলে হোসেন আবেদ স্যার। ওনার মুখে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনলাম ব্রাক প্রতিষ্ঠার গল্প যা আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও। অহংকারহীন এ মানুষটির সাথে বহুক্ষণ আলাপ করে মনে হয়েছে প্রকৃত বড় মানুষেরা যথার্থই বিনয়ী। মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষ ঊনত্রিশ হাজার ঊনত্রিশ ফুট হলেও আকাশ থেকে নেমে আসা বারিবিন্দুর করুনারাশি সে কিন্তু ধারন করতে পারে না কারন সে সোজা, এ্যাডাম্যান্ট কিন্তু তারি কোলঘেষে নীচে থাকা নরম মাটি তা ধারন করতে পারে কারন সে নরম, তাঁর উদ্ধত এ্যাটিচুড নেই। 

স্পেনের মাহবুব আলম চাকলাদার ভাই যিনি একটা সময়ে ডেইলি স্টারে ‘ইউরোপের ডাইরি’ নামক একটি কলাম লিখতেন তিনি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছেন। সঠিক চিকিৎসা যথাসময়ে নিতে পারলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ঘাতক ব্যাধিটিকে হয়ত হারিয়ে দেয়া যায়, চাকলাদার ভাইকে দেখে অন্তত তাই আমার মনে হয়েছে। প্রাইস ওয়াটার এ্যান্ড কুপার হাউসের এক সময়ের চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রায় আশি বছরের কাছাকাছি চাকলাদার ভাই নিজেই ড্রাইভ করে কাউন্টিতে চলে যান লন টেনিশ খেলতে। নিজের রান্না নিজেই করেন। একদিন মাদ্রিদ থেকে দূরে যেখানে উনি টেনিশ খেলতে যান সেখানে আমাদের নিয়ে যান। উনি বললেন যাদের সাথে উনি একটা সময় টেনিশ খেলতেন তাদের বেশিরভাগই আজ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। এখন তাদের বাচ্চাদের সাথে খেলেন। আসা যাওয়ার এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই মনে হয় সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়।



দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর ভাষা সৈনিক প্রয়াত গাজিউল হকের জামাতা মাহমুদুল ইসলাম ভাই যাকে আমি সিনিয়র নামে ডাকি আমরা দুজনে একটি ক্যাফেতে যেতাম কফি খেতে প্রায়শই। তিনজন বৃদ্ধ যারা আবার তিন ভাই এটি চালাত।যতবারই কাপে চুমুক দিয়ে এ তিন ভাইয়ের দিকে তাঁকাতাম ততবারই কেন জানি আমি ভাবতাম প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে প্রথমে এদের এক ভাই একদিন এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে, বাকি দুভাই তখনও হয়ত এটা চালাবে কিন্তু এরপর-সূর্য ডোবার পালা। স্পেনের তিন ভাইয়ের কফি হাউজের এ সমাগম কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে চিরতরে। নদীভাঙ্গনে এক সময়ের জনবসতি যেভাবে জলরাশির স্রোতে তলিয়ে যায়, মৃত্যু নামক কালের এক নির্মম স্রোত বৃদ্ধ এ তিন ভাইকে একে একে ভাসিয়ে নিবে তার স্বাভাবিক গতিপথে তাদের সাজানো আজকের এ জমজমাট ক্যাফে থেকে।

স্পেনে এসে যদি ফুটবল খেলা না দেখা হয় তবে এ সফরের বৃত্ততো পূরন হবে না। তাই সিনিয়র মাহমুদ ভাইকে নিয়ে একদিন খেলা দেখতে গেলাম রিয়াল মাদ্রিদ স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামটির ভিতর মনে হল ফাইভস্টার হোটেলের মত পরিচ্ছন্ন। এপ্রনপরা ওয়েটার এসে হালকা খাবার পরিবেশন করছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো সেদিনের খেলাতে তিনটি গোল করেছিল। স্পেনে থাকাকালীন সময়ে কয়েকবার বার্সিলোনাতেও গিয়েছিলাম। কিন্তু বার্সিলোনা স্টেডিয়ামে আর ঢোকা হয় নাই। ইতালীর জেনোয়াতে জন্মগ্রহনকারী আমেরিকার আবিস্কারক ক্রিস্টোফর কলম্বাস যিনি স্পেন থেকে সমূদ্র যাত্রা শুরু করেছিলেন তাঁর স্মৃতিকে ধারন করে বার্সিলোনাতে কলম্বাসের একটি স্ট্যাচু আছে।

আমরা যে বাসার কম্পাউন্ডে থাকতাম তার ভিতরেই একটা পার্ক ছিল। অনেক ছেলেমেয়েরা ছোটাছুটি দৌড়াদৌড়ি করত। একজন বয়স্ক লোককে দেখতাম পার্কটির একটি নির্দিষ্ট বেঞ্চে বসে বই পড়তে। বইয়ের পাতা ছাড়া কোনদিকে সে তাঁকাত না। বাচ্চাকাচ্চারা এত হই হুল্লোর দৌড়াদৌড়ি করত কিন্তু সে একবার ভুলেও এদিকে চোঁখ ফিরাত না। জীবন বইয়ের এ পৃষ্ঠাগুলি সে হয়ত ইতোমধ্যে পড়ে ফেলেছে তাই এ পার্কের তাঁর চারপার্শ্বের জনজীবনের প্রবাহমানতা তাকে আর আকৃষ্ট করছে না। আমাদের বিল্ডিংয়ের কোনায় কিছু ঝোপঝাড়ের গাছ ছিল। আমার মা প্রতিদিন ওখানে পাখিদের জন্য কিছু খাবার দিত। অনেক পাখি আসত ওখানে। কিচিরমিচির করে ওরা মহাআনন্দে মায়ের দেয়া এ খাবারগুলি খুঁটে খুঁটে খেত। যেদিন আমরা স্পেন থেকে চলে আসব তার আগেরদিন আমি এ গাছগুলির কাছে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে পাখিগুলির কথা ভাবছিলাম। ওরা হয়ত আগামীকাল এসে খাবার খুঁজবে। না পেয়ে চলে যাবে। আরও দুএক দিন এসে বুঝতে পারবে গৃহকোনের সবুজ ঝোপের এ আনন্দ মিলনমেলার ছোট্ট হাটটি তাদের অজান্তে ইতোমধ্যে ভেঙ্গে গেছে।

চিরঞ্জীব সরকার । অটোয়া, কানাডা