অটোয়া, শনিবার ২৭ জুলাই, ২০২৪
আমাদের প্রেরণা - ফারজানা পারভীন

"বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর 
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর"

এই সমাজ-সংসারের কাছে কোন রকম আপোস করেননি বলেই তারা আজ আমাদের গোটা বিশ্বের প্রেরণা । আর আমি সেই প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়েই লিখছি। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ছোট ক্ষুদিরাম, বেগম রোকেয়া, সুবর্ণলতা দের কথা জীবনে প্রথমবার যখন শুনি তখন ভাবতাম এত কিছু কি করে সম্ভব?যখন নিজের চোখে বইয়ের পাতায় পড়লাম আর ওনাদের ছবিতে তাকিয়ে থেকে ওনাদের মর্মস্পর্শী সব কাহিনী পড়ে চোখের পাতা ভিজে যেতে। যেমনটা এখনো হয়। ক্ষুদিরামের ফাঁসির গান (একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি)। শুনে ছোটবেলায় কোমলমতি প্রীতিলতা ও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন বিপ্লবের প্রতিচ্ছায়া হয়ে। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তির জন্য প্রথম শহীদ নারী।

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। আর এ বছরই ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন ওনারই নেতৃত্বে। অপারেশন সফল হল। এবার ফেরার পালা। কিন্তু হঠাৎ গুলির শব্দ। দল যোদ্ধারা পেছনে তাকিয়ে দেখেন প্রীতিলতা (দলনেতা) ততক্ষণে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রক্তে রাঙ্গা প্রীতিলতার অবয়ব।তখনো এই সাহসিনী দল নেতার মুখ থেকে শুধু একটি কথাই উচ্চারিত হলো- "একজনের জন্য সব কর্মসূচি শেষ হতে পারেনা। তোমরা চলে যাও"। এটাই ছিল সহযোদ্ধাদের প্রতি প্রীতিলতার শেষ নির্দেশ।

আর বেগম রোকেয়ার"অবরোধবাসিনী"পড়ে তো আমার বাক অবরুদ্ধ প্রায়। আর আসলে আমরা ভাবি "পৈচাশিক তাই বর্বরতা"কিন্তু অবরুদ্ধ তাও এক ধরনের বর্বরতা। যেমন:-জমিদারবাড়ির অন্দরমহল, গভীররাত সবাই ঘুমে অচেতন। এদিকে বেগম সাহেবার রুমে চোর ঢুকে মালপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। চোরের টুকটাক শব্দে বেগম সাহেবার ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি চোরটি কে দেখে ফেললেন। আরেক পরক্ষণেই বেগম সাহেবার মনে হলো তিনি মনে হয় পাপ করেছেন এই ভেবে তিনি আরো দ্বিগুন ঘোমটা টেনে লেপ মুড়ি দিলেন যেন চোর উনার নিঃশ্বাস টুকু ও শুনতে না পায়। এই ছিল আমাদের রোকেয়ার আমল‌। আমরা কি ভাবতে পারি যে এই অবরুদ্ধ কারাবাস থেকে একজন নারী মুক্তির আলোকবর্তিকা হাতে নারী জাগরণের অগ্রদূত হয়ে নারীদের আলোর পথ দেখাতে সাহায্য করেছেন বলেই দেশে আজ বড় বড় প্রতিষ্ঠানে  নারীরা আজ প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে। যার প্রমাণ আমরা পেলাম বর্তমান বিশ্বের বুকে পাকিস্তানের ছোট আফগান কন্যা যে কিনা নারী ও শিক্ষার অধিকার আদায়ের সৈনিক "মালালা ইউসুফজাই" এর মধ্যে । জানিনা এই ছোট মালালা ওকি বেগম রোকেয়া এবং প্রীতিলতা উনাদের কাহিনী পড়েছিলেন কিনা?

আমাদের দেশের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান নারীর ক্ষমতায়নে চলছে। আবার তার পাশাপাশি নারী নির্যাতন বাড়ছে। এর থেকে মুক্তির উপায় কি? দেশের সম্মানিত নারী সংগঠন গুলি যদি আরো বলিষ্ঠভাবে নারীদের সব ব্যাপারে পদক্ষেপ নেন তাহলে হয়তো আমাদের সমাজে চারপাশে বাতাস এতো ভারি  ও নোংরা হতো না।

সেই অবরোদ্ধ আমল থেকে বের হয়ে আজকের আলোকিত ব্যক্তি শ্রদ্ধেয় আবদুল্লাহ আবু স্যায়ীদ স্যারের আলোচিত বক্তব্যটি যেন আমাদের সবার জীবনের চলার পথে পথ ও পাথেয় হয়ে থাকে।
      "একজন আলোকিত মানুষ চাই "।
তাহলে যদি আমাদের সমাজটা বিশেষ করে নারী সমাজ আলোকিত হতো।। 

বিশ্বের  সকল নারীর  প্রতি  শ্রদ্ধা  ও ভালোআমারবাসা রইলো

ফারজানা পারভীন
বাংলাদেশ