বাদাইম্যা (৩) –কবির চৌধুরী
বাদাইম্যা এক(১) দুই(২) পড়তে ক্লিক করুন
বিলি কিচেনে তার এবং হানিফের জন্য খাবার বানাচ্ছে। হানিফের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। সে হাবার মত মেয়েটির কোমলতামাখা শিহরন জাগানো মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির মুখে পরিস্কার শুদ্ধ ভাষার বাংলা শুনে সে কমপ্লিটলি স্টোনড। সে চিন্তাই করতে পারেনি মেয়েটি বাংলাদেশি।
-হ্যালো, হানিফ সাহেব। কি হয়েছে? শকড?
-জ্বী- না, তেমন কিছু না। একটু অন্যমনস্ক হয়েছিলাম-এই যা।
-আই নো। আপনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
-আপনি বাঙালি?
-না_ পুরো না। অর্ধেক। মিক্সড।
-মানে? হোয়াট ডু ই’মিন?
-মা স্প্যানিশ, বাবা বাঙালি। আপনার সাথে পরিচিত হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।
-ইউ আর সারপ্রাইজিং মি। আমার সাথে পরিচিত হবেন! আমি কী আপনার পরিচিত কাউকে চিনি?
-না। গত সপ্তাহে কাজের জন্য ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় ববির কাছে আপনার কথা শুনেছি। সে যখন জানতে পারে আমার বাবা বাংলাদেশি তখন সে আপনার কথা বলে। তার একটি ইন্টারেস্টিং কথায় আমি আপনার সাথে পরিচিত হতে আগ্রহী ছিলাম।
-সে কী বলেছে?
-আপনার ধারেকাছে না ঘেষতে- আপনি নাকি খুব রিস্কি পার্সন!
-ওহ, তাই!
বিলি দুহাতে করে দুটি খাবারের প্লেট নিয়ে আসে,
-হানিফ লেটস হ্যাভ ইট। ইউ উইল লাভ মাই কুকিং।
হানিফ দেখে, বিলি সুন্দর করে চিকেন ফেতসিনি আলফ্রেডো বানিয়েছে।
-পাওলা হ্যাভ সাম_ গেট দ্যা প্লেইট।
-নো বস, থ্যাঙ্কু। আই এম ফুল।
-সামান্য নেন। একটা প্লেইট আনেন। আপনি ভাগ্যবতী! বিলি আপনাকে খাবার অপার করছে। এছাড়া খাবারকে রিফিউজ করতে নাই।
পাওলার সাথে আলাপ শেষ করার পরে হানিফ ফোনের পজড করা বাটনে চাপ দেয় আর ভাবতে থাকে- ২০০৬ সালা থেকে ২০১৯ সাল। অনেক লম্বা সময়। এক যুগের উপরে। আইফোনে একটার পর একটা গান বাজছে আর সে হাঁটছে। বিন্দু কনার গাওয়া জনপ্রিয় গান- “ডুবিয়া মরিলাম, মরিয়া ডুবিলাম তোমারই প্রেমে পড়িয়া, ইন্দুবালাগো- ইন্দুবালা-” শুনতে শুনতে হানিফ মন্ট্রিয়ল রোডে তার বাসার সামনে চলে আসে। হাঁটাটা কাজ দিয়েছে। এখন তাকে রিলাক্সড মনে হচ্ছে। হানিফ ঘরে এসে লম্বা একটি হট শাওয়ার নেয়। শাওয়ারের পর মনের আনন্দে নীচে গিয়ে চায়ের কাপটি নিয়ে আসে। চা হানিফের খুবই প্রিয়। শুধু চা পান করেই হানিফ ২/১ দিন কাটিয়ে দিতে পারে। আর সেটি জানে বলেই ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শিফা তার জন্য চা বানিয়ে টেবিলের উপর রেখে দেয়। দিন রাতের সব সময়ই পাথরের তৈরি ডাইনিং টেবিলের উপর চায়ে পরিপূর্ণ একটি কাপ রেডি থাকে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মেইল দেখার জন্য ফোনটা হাতে নিতেই পাওলার ফোন আসে,
-এখনও হাঁটাহাঁটিতে না বাসায়?
-বাসায়। অনেক্ষণ হয় এসেছি।
-রেডি হন, আমি আসছি।
-কয়টা বাজে খেয়াল আছে?
-সমস্যা না। আপনি রেডি হন।-ওকে_
শান্ত, খুবই শান্ত। কোন সাড়াশব্দ নেই। আশপাশের টেবিলগুলোতে বসে কেউ যে খাওয়া দাওয়া করছে তা বুঝারই কোন উপায় নাই। অথচ সবাই খাচ্ছে, পান করছে, আলাপ করছে। হানিফের এইসব পরিবেশ একদম পছন্দ নয়। তার কোলাহল ভাল লাগে। এই বয়সেও সে হার্ডরকের মত রেস্টুরেন্টে যেতে পছন্দ করে। কিন্তু পাওলার সাথে তা সম্ভব নয়।
ডেভিড গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে জিজ্ঞেস করে,
-মিস্টার হানিফ, এনি ড্রিংক টুডে?
-ইয়েস মাই ফ্রেন্ড। সেইম। আমার্যালো।
ডেভিড ড্রিংকের অর্ডার নিয়ে চলে যাবার পর হানিফ পাওলাকে জিজ্ঞেস করে,
-গাড়ীতে তো বলেননি। এখন বলেন জরুরী তলবের কারণ কী?
-বললাম না জরুরী কথা আছে। অনেক সময় আছে। আস্তে আস্তে বলছি।
-আজ দুইবার ফোন করলেন। ফোনেই তো তা বলতে পারতেন। আসলে জরুরী কোন কথাটথা না। আপনি বুঝতে পারছেন আমি মানসিকভাবে কষ্টে আছি। আপনি সেই মানসিক কষ্ট দূর করার চেষ্টা করছেন।
ডেভিড দুটো গ্লাস আর আমার্যালোর বোতল নিয়ে আসে। সময় নিয়ে বোতলের কর্ক খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করে,
-মিস পাওলা। হাউ ইজ ফ্যামিলি। লং টাইম আই ডিডনট সি ই’র মাদার। সী স্টীল প্র্যাকটিস?
-ও’ইয়া।
ডেভিড হানিফের গ্লাসে সামান্য ওয়াইন ঢেলে দেয় টেস্ট করার জন্য। হানিফ মিনিট খানেকের মত সময় নিয়ে গ্লাসের ওয়াইনকে নাড়াছাড়া করে ছোট একটি চুমুক দেয়।
-গুড_ ভেরি গুড ডেভিড।
ডেভিড পাওলা এবং হানিফের গ্লাসে ওয়াইন ঢালতে ঢালতে কি খাবে জিজ্ঞেস করে।
পাওলা তার জন্য ফিলেমেনিয়াম মিডিয়াম ইউথ বেকড পটেটো এবং হানিফের জন্য লবস্টার স্পেশালের কথা বলে। কিন্তু ডেভিডকে এক ঘণ্টা পর খাবার আনতে অনুরোধ করে।
ওয়াইনের গ্লাসে ছোট একটি চুমুক দিয়ে পাওলা বলে,
-আপনি যদি জানেনই যে, আমি আপনার মানসিক কষ্ট দূর করার জন্য আপনাকে নিয়ে বের হয়েছি তাহলে জিজ্ঞাসা করছেন কেন_ হঠাৎ কি কাজ পড়েছে।
-সরি।
পাওলা হেসে দেয়- আপনার কি হয়েছে। তর্ক না করে সাথে সাথেই এপোলজি স্বীকার করে নিলেন।
হানিফ ওয়াইনের গ্লাসে লম্বা একটি চুমুক দেয়। খালি গ্লাসটি টেবিলের উপর রেখে বলে,
-তেমন কিছু না। গত কয়েকদিন থেকে মাথার মধ্যে একটি চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
-আবার চিন্তা। এবার কিসে ভর করেছে। এতসব চিন্তা আসে কোথা থেকে! এইসব চিন্তাটিন্তা বাদ দিয়ে কাজ খুঁজেন।
-আখড়ার ভূতে ভর করেছে পাওলা আখড়ার ভূতে ভর করেছে। আর আমি তো কামকাজ-ই করছি। চিন্তাটা কি কাজ নয়? তবে এবারের চিন্তাটা ভিন্ন-একেবারে ভিন্ন। অনেকের কাছে উদ্ভট মনে হবে। কিন্তু কাজটা করা খুবই দরকারি। বাদ দেন এসব। আপনার কথা বলেন-এত দেরীতে খাবার আনতে বলার কারণটা কী? কোন প্ল্যান?
-আজ সারারাত আপনাকে নিয়ে আপনার প্রিয় জোনাকি দেখবো!
-ওয়াও! আগেই খাওয়া উচিত ছিল।
-ওয়েদার ফোরকাস্ট অনুযায়ী জোনাকিরা রাত দুটোর পর থেকে উড়া শুরু করবে। তাই এত দেরী।
হানিফ পাওলার মেহেদীমাখা রঙিন হাতগুলো নিয়ে খেলা করতে করতে জিজ্ঞাসা করে,
–পাওলা আপনি আমার কস্টগুলো এত তাড়াতাড়ি বুঝেন কিভাবে...চলবে।
কবির চৌধুরী
অটোয়া, কানাডা।
-
গাল-গল্প//সাক্ষাৎকার
-
17-02-2019
-
-