অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪
সুকুমার সরকার-এর কবিতা

সাংকেতিক পাখি
পাখির ডানায় গজেছে ঘাস
আমরা মানুষেরা প্রতিদিন উড়ে যাচ্ছি আকাশে।

মাটিতে আদার খুঁটে খেতে খেতে একদিন
পাখিদের কেউ কেউ হয়ে গেল সবুজ বৃক্ষ
কেউ কেউ রঙিন পাথর, প্রাসাদ, অট্টালিকা।
আর উড়তে উড়তে আমরা মানুষেরা হয়ে গেলাম
দূর আকাশের এক একটি ভাসমান তারা।

আমাদের ডানা নেই তাই
অনেক দূরের আকাশ থেকে
আমরা ফিরে আসতে পারলাম না আর।

আমাদের অট্টালিকায় এখন শুধুই পাখিদের বাস
আর পাখিদের কিচিরমিচির কিচিরমিচির কিচিরমিচির!

বৃষ্টি ও রাজকন্যা
বৃষ্টিতে ভিজে গেছে পুরোনো দেওয়াল
এখন সমস্ত দেওয়াল জুড়ে সবুজ শ্যাওলা
আর ফাটলের হা মুখ বিমূর্ত ঘোড়া।

নিরাশ্রয় আমি এই ফাটলের হা মুখ
স্যাৎসেতে দেওয়ালের ঘরেই নিয়েছি আশ্রয়
আর বিমূর্ত ঘোড়ার পিঠে চড়ে পাড়ি দেই
সাত সমুদ্র তের নদী পার রাজার দেশে।

সেখানেও ভাঙা পালঙ্কে রাজকন্যার তামাটে চুল
এক একটি জীয়নকাঠি মরণকাঠির বিষাক্ত সাপ!
মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে তবু আমি বিমূর্ত ঘোড়ার পিঠে
তুলে নিয়ে আসি হাজার বছরের ঘুমন্ত রাজকন্যাকে।

প্রতিবাদহীন আমার ভাঙা স্যাৎসেতে ঘরে
রাজকন্যা হা করে চেয়ে থাকে ভাঙা দেওয়ালের দিকে
সারারাত অজস্র বর্ষণেও বন্ধ হয় না সেই হা

স্বপ্নের রাজপুত্র আমি বিমূর্ত ঘোড়ার পিঠে
দৌড়াতে থাকি দেওয়াল জুড়ে তেপান্তরের মাঠে
আর নিঃশেষ হতে থাকি ভেতরে ভেতরে।

রাজকন্যার নীল বিষ তামাটে চুলের বিষাক্ত ছোবলে!

ভাঙা চশমার গল্প
যান্ত্রিক অভিজ্ঞতার এই অদ্ভুত সমীকরণের দিনে
ঘরে বসে কেউ কেউ দেখাচ্ছেন শাড়ির বাহার
কেউ কেউ রঙবেরঙের বাহারি পাঞ্জাবি আর
কেউ কেউ শোনাচ্ছে ভাঙা চশমার গল্প ।

অল্প অল্প আমারও আছে কিছু
জানালার কার্ণিশে পাখ-পাখালির গল্প
পৃথিবীর হৃদপিণ্ডে বরফ পাহাড়ের ছবি
ফুসফুসের নিঃশ্বাসে গভীর ক্ষতের প্রলেপ

অরণ্য প্রকৃতিই আমার শেষ ঠিকানা ।

তোমরা যে যেভাবেই সাজো
এভাবেই আমি করোনাকে করবো জয়
পশু, পাখি ও প্রকৃতির ক্ষয় রোধ করে ।

সুকুমার সরকার
কালদিঘি, গঙ্গারামপুর
দক্ষিণ দিনাজপুর