অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪
সুকুমার সরকার-এর কবিতা

রাজ আদেশের ঘন্টা ধ্বনি
ভাঙা থালা নিয়ে ঘন্টা বাজাতে বাজাতে
চির নিদ্রায় ঘুমিয়ে গেছেন এক ভিখারি মা!

রাজার কাছ থেকে এসেছিল ঘণ্টা বাজানোর আদেশ
ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে ভিখারি মা ভেবেছিলেন
তাঁর জন্য খাবার আসবে, কাপড় আসবে, ওষুধ আসবে।

সেসব কিছুই আসেনি! এসেছে করোনার করুণা!

ঝড়-জলে আগে থেকেই বুকে তাঁর নিউমোনিয়া ছিল
শীতের ফুটপাতে ল্যাম্পপোস্টের নীচে শুয়ে থেকে থেকে
জীবনীশক্তি কবেই মরে গিয়েছিল! তবু বেঁচেছিলেন বোধহয়
ওই রাজ আদেশের ঘন্টা পেটানোর অপেক্ষায়
ঘণ্টা পেটাতে পেটাতে তাঁর অর্ধেক ভাঙা থালাটা
পৃথিবীর মানচিত্রের মতো পুরোটাই ভেঙে গেছে
ভাঙা মানচিত্র আর ভাঙা থালার পাশে
তিনিও পড়ে আছেন করোনার করুণায়।

করোনার ভয়ে সবাই যখন পালাচ্ছিলেন তাঁর কাছ থেকে
সবার অবহেলার হাত থেকে বাঁচাতে করোনা তাঁকেই করুণা করলো!

তবে ভাঙা থালা বাজাতে বাজাতে তিনি যে কথাগুলো বলে গিয়েছিলেন
পথের ধারের ওই ভাঙা থালার প্রতিটি টুকরো
সে কথাই বলে চলেছে বারবার করে।
বলে চলেছে, রাজা মিথ্যে তোমার অহংকার!
মিথ্যে দেশপ্রেম! মিথ্যে ঘণ্টা ধ্বনি!
মিথ্যে আমাদের জন্য হাজারো প্রতিশ্রুতির বন্যা!

ঠিকানা- 
ভুল ঠিকানায় চিঠি লিখেছিলাম
চিঠিটা ফিরে এসেছে।

মলিন ধুলার ডাকবাক্স বলে গেল
আজকাল কেউ চিঠি লেখে নাকি?
ইথারে ছড়িয়ে দাও সৃষ্টির বীজ
অঙ্কুরিত বৃক্ষের ফুল ও ফল
সরীসৃপ ডানা মেলে উড়ে যাবে
চন্দ্র অথবা ভেনাসে অথবা অন্য কোনো গ্রহে
যেখানে বুড়ো ঈশ্বরের বাস।

হয়তো সেটাই তোমার আসল ঠিকানা
অন্য সব ঠিকানা ভুল ঠিকানার সিল মোহর নিয়ে
বারবার ফিরে আসবে তোমার কাছে।

সুকুমার সরকার
কালদিঘি, গঙ্গারামপুর
দক্ষিণ দিনাজপুর