বৈপরীত্য - ইকবাল কবীর রনজু
ও নাকি আমার অপেক্ষায় থাকে; এমন কথা শুনে আমি অবাক না হয়ে পারি না। শুধু অবাকই নয় রীতিমতো বিস্মিতও হই। বিষয়টি যেন ও আঁচ করতে না পারে এ জন্য আমি যতটা সম্ভব চেপে যাওয়ার চেষ্টা করি। ঈষৎ অন্ধকারে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি কিছুক্ষণ। যৌবনে এমনকি মধ্য বয়সেও তেজস্বী যে নারী চোখ বন্ধ করেও আমার ভেতরটা পর্যন্ত দেখতে পেতো এখন ষাটোর্ধ বয়সে তার তীব্রতা কি আরো বেশী হয়েছে? হতেও পারে। পাঠ্য পুস্তক ছাড়া দর্শন, সাহিত্য, বাহ্য জগতের জ্ঞান, উপযোজনের ক্ষমতা বিহীন একজন মানুষ যে পূর্ণ হতে পারে না তার উৎকৃষ্ঠ দৃষ্টান্ত ও। মানবিক মূল্যবোধ, পূর্ণতাবাদের ধারণা যার মধ্যে নেই এমন মানুষের সাথে সুদীর্ঘকাল বসবাস যে কতটা বেদনার কতটা কষ্টের সে কথা আমি ছাড়া খুব কম মানুষই জানে বলে আমার বিশ্বাস। আমার এ বিশ্বাস কতটা সত্য কতটা মিথ্যা তা যাঁচাই করতে যাইনি কখনো। ছোট থেকেই যে ধ্যান ধারণা পোষণ করতাম, লালন করতাম তার মূল বক্তব্যটা এমন যে কেউ যদি তোমাকে অবহেলা করে, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তার সঙ্গ এড়িয়ে চল। এ মূল্য বোধ থেকেই কোন রকম হৈ হুল্লোর না করে পঞ্চাশ বছর বয়সে নিরবে নিভৃতে অনুর সাথে আলাদা হয়ে যাই। ডিভোর্স না হলেও সেই থেকে বারো বছর হয়ে গেল আমাদের পৃথক থাকা।
জীবন থেকে এই বারোটি বছর কি নষ্ট করেছি? আমার অন্তত তা মনে হয় না। মনের মধ্যে কষ্ট জিইয়ে রাখলেও এই বারোটি বছর তো আমি আমার মতো পার করেছি। কৈফিয়ত দিতে হয়নি কারো কাছে। মাথা নত করতে হয়নি কারো কাছে। চাঁদের মতো। আলো পেতে চাঁদকে যেমন করে সূর্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। আমি অন্ধকারে থাকলেও অন্যের আলোয় আলোকিত হতে চাইনি। চাঁদের রূপোলী আলোয় ঔজ্জ্বল্য থাকলেও, মধ্যবয়সে; পূর্ণিমায় চাঁদ আমাদের আলোর ছটায় উদ্ভাসিত করলেও চাদের ব্যাপ্তিকাল খুব বেশি দিনের হয় না। নতুন চাঁদ ওঠে একথা যেমন ঠিক তেমনি আবার ক্ষয়েও যায়। যে মধ্য বয়সে আমাদের আলোর ছটায়, আমাদের ভালবাসায় কানায় কানায় পূর্ণ থাকার কথা সেই সময়টাতেই অনুর সাথে আমার দূরত্ব চরম আকার ধারণ করে। তাই কেবল চাঁদকেই নয় মধ্য বয়সটাকেও যে আমি ভূলতে চাই। তবে হ্যাঁ, সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে, আমার প্রতি অনুর নূন্যতম কৃতজ্ঞতাবোধ থাকলে, অনু আত্মসুখে বিভোর না থাকলে গত বারোটি বছরসহ অনাগত দিনগুলো হয়তো আমাদের পৃথক থাকতে হতো না। তখন জীবন হয়তোবা আরো সুন্দর হতে পারতো।
অনুকে বিয়ে না করে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে পারতাম। তা করিনি। বিয়ের আগে সাত বছরে আমি যেমন অনুকে, অনুর পরিবারকে চিনেছিলাম তেমনি অনুও আমাকে, আমার পরিবারকে চিনেছিল। প্রেমের সম্পর্কের যবনিকাপাত করতে অনুকে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছিলাম। চুটিয়ে প্রেম করার সময়েই কোন কিছুর তোয়াক্কা করতাম না। কমতি ছিল না ভালবাসার। প্রথম দিকে পরিবারের সদস্যদের দ্বিমত থাকলেও আমার সুখের কথা ভেবেই হয়তো তারা অনুর সাথে আমার বিয়েতে মত দেয়। বাবার জমি বিক্রি করে লাখ টাকা ডোনেশন দিয়ে আমি তখন সবে চাকুরীতে যোগ দেই। কলেজে পড়াই। হাজার চারেক টাকা বেতন। বিয়ের পরপরই পাল্টে যেতে থাকে অনু। সাধ সাধ্যের সমন্বয়হীনতার সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকি আমি। তখন ভাবতেই পারিনি শেষ পর্যন্ত আমাদের সম্পর্কটা এ পর্যায়ে এসে দাড়াবে। দয়া বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য নয় সত্যিকারের ভালবেসেই অনুকে বিয়ে করেছিলাম। তুচ্ছ কারণে, অকারণে পরিবারের সাথে যেন আমার দূরত্ব বাড়ে অনুর এহেন প্রচেষ্টায় বাবা মায়ের ইচ্ছেতেই আমি অনুকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে উঠি। অনুর মতে, আমি ইচ্ছে করে নয় বাধ্য হয়ে এহেন কার্য্য সম্পাদন করেছি।
ও ওর পেটে আমাদের বড় ছেলেটার অস্তিত্ব যখন টের পায় তখন আমাদের নিজের সংসার হয়েছে। নিজের সংসার বলতে বাবা মা ভাই বোন থেকে পৃথক হওয়া। গ্রাম ছেড়ে মফস্বল শহর চাটমোহরের ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু। পৃথক বসবাস হলেই কি শিকড়কে ভুলে থাকা যায়? তাকি উচিত? ঔচিত্য-অনৌচিত্যের প্রশ্নে আমি যখন বিবেকাশ্রয়ী হয়েছি তখন বার বার পরাজিত হয়েছি। অনু সন্তান সম্ভবা হওয়ায় তার কাছে কেবল ভবিষ্যতটাই প্রাধান্য পেয়েছে। আমি যেন শিকড় ভুলে ভবিষ্যতের কথা, নিজের কথা, নিজের অনাগত সন্তানের কথা ভাবি সেকথা অনু আমাকে প্রায়শই স্মরণ করিয়ে দিলেও আমিও যে কারো সন্তান কারো ভাই একথা বেমালুম ভুলে যেতে পারি না। সীমিত রোজগাড়ে নিজ পরিবার চালাতে আমি যখন গলদ ঘর্ম এমন সময় অন্যান্য কর্তব্য পালনে আমি যখন প্রায় অপারগ এমন সময়েও অনু কেবল নিজের অপ্রাপ্তির কথাই শোনাতো। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ওকে বিলাসী জীবন যাপন করাতে পারিনি কিন্তু প্রয়োজনটুকুতো মিটিয়েছি। বিবেকবোধ থেকে বাবা মায়ের জন্য যতসামান্য যতটুকুই করতাম তাতে ওর সায় ছিল না কোনদিনই। অনুর সাথে সম্পর্কের তিক্ততা শুরু এ নিয়েই।
আমি রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। রান্না বলতে প্রায়শই আলু সেদ্ধ অর ভাত। কখনো কখনো কালে ভদ্রে তরকারী রান্না করতাম। সেদিন যখন সবেমাত্র ভাত চড়িয়ে দিয়েছি আকস্মিক আমার বড় ছেলে নিলয় হাজির। আগে থেকেই ছুটিতে বাড়ি আসলে মায়ের দৃষ্টি এড়িয়ে শহরের অপর প্রান্তের এ বাড়িতে রাতের বেলায় কিছু সময়ের জন্য আসতো নিলয়। আমার সাথে দেখা করতো। ছোট ছেলেটাও মাঝেমধ্যে স্কুল ফাঁকি দিয়ে আমার সাথে দেখা করে যেত। অনু এগুলো জানতো কিনা অথবা এতে অনুর কোন অনুমতি বা বাঁধা ছিল কিনা ছেলেদের এমন প্রশ্ন কখনো করিনি। ওরাও মুখ ফুটে কিছু বলেনি। কিন্তু ভালবাসার কাঙাল আমিও যে ওদের পথ চেয়ে থাকি এটা আর কেউ না বুঝুক ওরা বুঝতো। শুধু আজ নয় জ্ঞান হওয়ার পর থেকে; বোঝার মতো বয়স হওয়ার পর থেকে ওদের মায়ের সাথে যতদিন আমার ঝগড়া হয়েছে, কথাকাটাকাটি হয়েছে ওরা নিরব থাকলেও পরে আমাকে বুঝিয়েছে হুট করে রেগে যাওয়া, বাক সংযমী হতে না পারাটা মায়ের স্বভাব। মাঝে মধ্যে আমিও চরম উত্তেজিত হয়ে পড়লেও; অনুর সাথে পৃথক থাকার কথা ভাবলেও পিছপা হয়েছি সন্তানদের ভবিষ্যত চিন্তা করে। কিন্তু ধৈর্য্যরেও তো একটা সীমা থাকে। হয়তো আমি শেষ পর্যন্ত আমাকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। সেসব অনেক দিন আগের কথা। তবু নিলয় যখন ওর বিয়ের কথা জানালো এবং ওর মায়ের সাথে আমার যতই দূরত্ব থাকুক না কেন অন্তত বিয়ের দিনটা যেন আমি ওদের সাথে কাটাই আশির্বাদ করি বারংবার এ অনুরোধ জানায় তখন আমি ওকে না করতে পারিনি।
স্বল্প বেতনে চাকুরী করায় বিলাসী জীবন না দিতে পারলেও শুরু থেকেই সংসারের সকল প্রয়োজন মিটিয়েছি আমি। চাকুরী করা, নিজে উপার্জন করা, বড়া হওয়ার স্বপ্নে বিভোর অনু যখন চাকুরী করতে চায় আমি না করিনি। চাকুরীর জন্য অনুকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। অবশেষে স্থানীয় একটি কলেজে প্রভাষক পদে চাকুরী হয় ওর। আমার সঞ্চয় না থাকায় কলেজের ডোনেশনের টাকা অনুর বাবাই দেয়। পরে মাসে মাসে অনু তার বাবার টাকাটা শোধ করে দিলেও অদ্যাবধি আমি আমার বাবার টাকা শোধ করতে পারিনি। অনুর মতে ওটা আমার বাবার দায়িত্ব। বাবার দায়িত্ব ঠিকঠাক বুঝলেও বাবা মায়ের প্রতি ছেলেরও যে কিছু দায়িত্ব থাকে এটুকু ও বুঝতো না কখনোই।
কলেজে ওর চাকুরী হয়ে যাওয়ার অনেক দিনপর পর্যন্তও ও যখন সংসারে একটি টাকাও খরচ করে না বরং কলেজে যাওয়ার টাকাটাও আমাকে দিতে হয় তখন আমাদের এ নিয়ে অনেক মতানৈক্য হয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় নিকটাত্মীয়রা হস্তক্ষেপ করলে সেই থেকে মাসে ও ছয়-সাতশো টাকা খরচ করতো। কিছুদিন যাবার পর ওর বাবা অসুস্থ্য হলে আমরা ভাড়া বাড়ি থেকে ওর বাবাকে দেখতে যাই। বেশ কিছুদিন সেখানে অবস্থান করি। অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাকে আমি চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাই। অনুর মায়ের উপস্থিতিতে অনুর বাবার মৃত্যু হয়। অনুর ছোটবোন তখন অনার্সে পড়ে। সব ছোট বোনটির বয়স সবেমাত্র বছর খানেক। বাবাকে চিরনিদ্রায় সমাহিত করার কয়েকদিন পর অনুর ছোটবোন কলেজে চলে যায়। ততদিনে আমাদের নিলয় ও তিন বছরে পা রেখেছে। দুজন ঋণ করে পৌর সদরে একটি জায়গা কিনি। অনুর বিধবা মা এক বছরের একটি বাচ্চাকে নিয়ে কিভাবে অনাগত দিন কাটাবে এবং আমরা দুজনেই যেহেতু কর্মজীবি নিলয়েরও একটা নিরাপদ থাকার যায়গা চাই এ চিন্তা থেকে অনু আর ভাড়া বাড়িতে আসেনি। বাসা ছেড়ে দিয়ে আমরা অনুর বাবার বাড়িতেই থাকতে শুরু করি।
অনু মাসে যে ছয়-সাতশো টাকা খরচ করতো বাবার বাড়িতে ওঠার পর থেকে তাকে আর তা করতে হয়নি। মাসে নিলয়ের চার কৌটা দুধ কিনতেই আমার বেতনের এক তৃতীয়াংশ চলে যেত। ঋণের কিস্তি দিতে হতো। মাঝে মধ্যে বাজারও করতাম। কলেজে যাতায়াত, অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে বেতনের সব টাকা শেষ হয়ে যেত। কৈফিয়ত দিতে দিতে আমিও নিঃশেষ হতে থাকি। এরি মধ্যে আমাদের ছোট ছেলেটা হয়ে যায়। দিনে দিনে বড় হতে থাকে ওরা। এর মধ্যে বেতন যে বাড়েনি তা নয়। বেতন যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে খরচও।
শেষ দিকে আমি সংসারের চাল ডাল মাছ মাংস সবজী কাপর-চোপর ওষুধপত্র নুন তেল ছেলেদের পড়ালেখার খরচ যোগানোসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কিনতে যখন গলদঘর্ম হতাম তখন অনুও তিরিশ হাজার টাকা বেতন পায়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিল ও গ্যাসের টাকাটা অনু দিত। এছাড়া সংসারে একটি টাকা ও খরচ করেনি সে। ওর সাহায্য চাইলে ওকে সংসারের পেছনে সামান্য কিছু টাকা খরচ করতে বললে এ নিয়ে ঝগড়া ঝাটি হতো বিধায় আমি আর কখনো ওর কাছে টাকা চাইনি। খুব প্রয়োজনে দু এক হাজার টাকা নিলেও বেতন পাওয়ার সাথে সাথে আগে ওর টাকাটাই শোধ করতাম। ওর বেতন পাওয়ার শুরু থেকে অদ্যাবধি এক মাসের বেতনও আমার হাতে দিয়ে বলেনি তুমি সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছ এ টাকাটুকু সংসারে খরচ করো। ও ওর টাকা কেবল জুগিয়েই গেছে। ও একটি টাকাও নষ্ট করেনি। বিলাসীতাও করেনি কখনো। কিন্তু সমাজ সংসার যে সহযোগিতা সহমর্মিতা নির্ভর এ বোধটুকু হয়তো কখনো ওকে ভাবায়নি। কেবল ভবিষ্যত-ভবিষ্যত করে বর্তমানটাকে ও প্রকারান্তরে স্বীকারই করতে চায়নি। পরে আমরা অনুর পিতৃপ্রদত্ত জায়গায় পৃথক বাড়ি করি। অনুর মতে এটা আমাদের নয় অনুর বাড়ি। অনুর সঞ্চয়ের টাকায় করা এ বাড়ির প্রতিটা ইট পাথরে আমার হাতের ছাপ থাকলেও এ ইট পাথরের ভারে আমি পিষ্ট হতে থাকি। শেষ দিকে আমার বেতন যখন হাজার তিরিশেক টাকা তখন কেবল নিলয়ের পেছনেই আমাকে প্রায় পনেরো হাজার টাকা খরচ করতে হতো। এতে আমার বিন্দু মাত্র মানসিক কষ্ট ছিল না। এখনও নাই। ছোট ছেলেটার পেছনে মাসে হাজার দুয়েক টাকা খরচ। পাশাপাশি সংসারের অন্যান্য খরচ তো আছেই। মাস শেষ হওয়ার আগেই আমার সব টাকা শেষ হয়ে যেত। কোন রকমে সংসারটাতো চালিয়ে নিচ্ছিলাম। ছেলেদের ভাল ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াচ্ছিলাম। আমি এগুলো চালিয়ে নিয়েছি বলেই তো অনু ওর টাকাটা জমাতে পেরেছে। একথা কখনো স্বীকার করেনি অনু। ওর মতে ছেলেরা আমার তাই ওদের সব দায়িত্ব আমারই। আমিও ছেলেদের বলেছি তোমাদের যা কিছু প্রয়োজন আমাকে বলবে। যেভাবে পারি তোমাদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করবো। অনুর সাথে আলাদা থাকাকালীন দীর্ঘ সময়েও ছেলেদের পড়া লেখার খরচ চালিয়ে গেছি আমি।
শুরু থেকেই দিনের পর দিন যাওয়ার সাথে সাথে ক্রমশই অনুর সাথে আমার দূরত্বও বাড়তে থাকে। নিজে মনের সঙ্গোপনে সেসব চাপা দিয়ে পার করেছি দিনের পর দিন। রাতের পর রাত। ওর প্রতি ক্রমশই আমি নিরাসক্ত হয়ে পরি। ভালবাসা কমতে কমতে তলানীতে গিয়ে ঠেকে। ওর কোন কিছুই আমার পছন্দ হচ্ছিল না। হয়তো আমার কোন কিছুই ওর ও পছন্দ হচ্ছিল না। এমনি এক সময়ে একদিন সামান্য কথাতেই অনু যখন ফের বাক নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পরে আমি অনুর বাড়ি ছেড়ে শহরের অপর প্রান্তে আমার ছোট বাড়িটাতে চলে যাই।
আমি সত্যি এখনো তোমাকে ভালবাসি। জানি না ঐ দিনগুলোতে কেন আমি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আমি তোমাকে গালমন্দ পারলেও ভুলে গেছি পরক্ষণেই। এটা আমার স্বভাবের সাথে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িয়ে ছিল। হয়তো এতগুলো বছর কাছে থেকেছো তাই তোমার অভাবটা তখন বুঝিনি। কিন্তু যে বারোটি বছর তুমি আমার নিকট থেকে দূরে থেকেছো সে বারোটি বছরের প্রত্যেকটি দিনই আমি তোমাকে মিস করেছি। টাকা পয়সা গাড়িবাড়ি কিছুই চাই না আমার। এলোমেলো জীবনটা কি আবার আমরা ঢেলে সাজাতে পারি না?
অনু তোমার বৈপরীত্য আচরণ আমাকে মুগ্ধ করলেও এখন আর এক সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা একে অন্যকে বুঝতে অনেক দেরী করে ফেলেছি। তোমার ছেলে বিয়ে করে নতুন বৌ ঘরে আনলো। সব ঠিকই আছে। আগের মতো। আমার লাগানো মাল্টা গাছ দুটো, লিচু গাছটি, সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন বকুল, গন্ধরাজ, টগর গাছগুলো যেমন করে বেড়ে উঠেছে তেমনি বেড়ে উঠেছে তোমার ছেলেরা। তবে বকুল তলার সান বাঁধানো বেঞ্চটায় তোমার সাথে বসা হয়নি কখনো। যখন ওটা লাগাই তখন তোমার সাথে বাস করলেও আমরা দুজন দুমুখ হয়ে শুতাম। অনু রাতের আঁধার আরো বাড়ছে। বাড়ছে রাতের গভীরতাও। বাম চোখটায় এখন অনেক কম দেখি। আসি বলেই আর পেছন না ফিরে হাটতে থাকি আমি। রাতের আাঁধারের মতো আমার চিন্তার গভীরতাও বাড়তে থাকে। অনু আর কতক্ষণ ক্ষণিকালয় নামক বাড়ির গেটে দাড়িয়ে ছিল?
ইকবাল কবীর রনজু
পাবনা, বাংলাদেশ
-
গল্প//উপন্যাস
-
30-10-2020
-
-