সুমন বনিক-এর তিনটি কবিতা
সবকিছু চলে যাচ্ছে ইঁদুরের দখলে
ঘরের ভেতর ইঁদুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ
রাতে যখন শুবারঘর আঁধারে ডুব দেয়
তখন নেংটি ইঁদুর যেনো পাখা মেলে উড়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে।
দূর পাহাড়ের চূড়ায়;যে ঈগল চোখের কোঠরে শিকারের ছক আঁকে ক্ষণে ক্ষণে
ঘাতক ইঁদুর ফন্দি আঁটে মনে মনে।
সুচতুর ইঁদুরগুলো রেকি করে ঘরময়
আমার গতিবিধির ভাষা মুখস্ত করে
কখনো তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে প্রকাশ্যে
বিদ্রোহ করে কিংবা বিদ্রূপ করে আমাকে।
ইঁদুরের সুচাগ্র ধাঁরাল দাঁতের কসরতে
ক্ষত বিক্ষত হয়--
জীবনানন্দ রবীন্দ্রনাথ কিংবা রফিক আজাদের
ভালোবাসার মলাটবদ্ধ বই
খামচে খেতে চায় মননের শুভ্র কানন।
ঘুমের সলিলে ভাসতে ভাসতে যখন অচৈতন্য শয্যাসঙ্গী
ওর নিথর দেহের গন্ধ শুঁকে শুঁকে
হামলে পড়তে চায় সুঠাম বক্ষের মাঝখানে
শালা বেহায়া ইঁদুর--
যে বাগানের মালি হয়েও প্রাণ ভরে
ফুলের সুবাস নিতে পারিনি
বজ্জাত ইঁদুর সেখানেও ভাগবসায়।
ঘরে ঘরে ইঁদুরের উপদ্রব
দেশে দেশে ইঁদুরের আগ্রাসন
পৃথিবীটা একদিন ইঁদুরের দখলেই যাবে নাকি!
শাদাকালো রংধনু
সেদিন বিকেলে ঝমঝম বৃষ্টি শেষে
অনঙ্গ মেঘ রোদের আলিঙ্গনে নিমগ্ন, অতপর
মেঘের প্রাচীর ভেঙে রোদ হেসেছিলো।
ধনুকের মতো একটি রংধনু
আমাদের মাথার উপর ছাতা মেলে ধরলো
আমরা সেই ছাতার নিচে,নিজেদের সঁপে দিলাম।
ছাদে জমে থাকা বৃষ্টির জলে
পা চুবিয়ে চুবিয়ে রাজহংসের মতো হেঁটেছিলাম
রংধনুর গা বেয়ে অবিরল রং ঝরছিলো
তোমার দেহ জুড়ে
চোখে-মুখে সে-কী হোলি উৎসব!
সাত রঙের সাতটি স্বপ্ন বোনে
বেঁধে রাখলে শাড়ির আঁচলে
আর আমি, রংধনুটি পকেটে পুরে
ছাদ থেকে নেমে এলাম।
রং নাকি বর্ণচোরা হয়--বুঝিনি সেদিন।
এক রঙের সঙ্গে অন্য রং মেশালেই
মৌলিকত্ব হয় লীন
তেমনি তুমি হারালে বর্ণময় ভালোবাসার সতীত্ব।
মৌচাক এবং মৌমাছির রসায়ন
মধুরচাক নিয়ে বসেছিলে মধুকরী
মৌমাছির লোভাতুর দৃষ্টি
মৌচোরের ছোটাছুটি
সবকিছুই ছিলো মনোরঞ্জনের
উৎকৃষ্ট উপাদান।
কামনার সেই গহীন বনে
ছিলাম নিষিদ্ধ আরণ্যক।
রসনালুপ্ত শুকনো মৌচাকে
আজকাল শুধুই উচ্ছিষ্ট মাছিদের ওড়াউড়ি।
তবুও কেউ কেউ টর্চলাইট হাতে নিয়ে
মাছি তাড়াতে ব্যস্ত।
সুমন বনিক। সিলেট
-
ছড়া ও কবিতা
-
06-11-2020
-
-