অটোয়া, বৃহস্পতিবার ১২ জুন, ২০২৫
দূরে কাছে - সুমন্ত দে


ওই যে দূরে দেখছ বট গাছের ছায়ায়,
শিশুটি খেলছে মা কালি মন্দিরের দাওয়ায়।
কি সুন্দর লাগছে, আহা কি অপূর্ব! 
দূর থেকে ভালোই লাগে, কাছে যেও না।

কাছে গেলে, জানতে চাইলে
আজ কি খেয়েছ?
 -এখনো কিছুনা। 
আমি তো একবেলা খাই, কোন দিন আবার তাও জোটে না।
আমার মা বাড়ি বাড়ি কাজ করে;  প্রতিদিন আমরা  খাবার খাই না। 

তোমার মা কাজ করে! কেন তোমার বাবা?
আমার বাবা গতবছর কোথায় যেন চলে গেছেন। 
অনেকে নাকি টাকা পেত, মাঝে মাঝে তাগাদা দিত। 

কাছে গিয়ে, কিছু জেনে, তুমি তখন চিন্তিত।
শিশুটি তখন খেলায় মেতে নিশ্চিন্ত।।

২ 
ওই যে দূরে মঞ্চে উঠে প্রথম পুরস্কার নিচ্ছে,
কি মিস্টি দেখাচ্ছে!
আবার ছেলেটি প্রথম হয়েছে।
দূর থেকেই ভালো লাগে, কাছে যেও না।।

কাছে গেলে, জানতে চাইলে-
কিভাবে প্রথম হলে? কতক্ষন পড়তে?
জানো আমি ডি. পি. এস-এ পড়তাম।
সেখানেই পড়তে চাইতাম, কিন্তু বাবা মারা গেল!
শহর থেকে গ্রামে এলাম। 
গ্রামের বিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। 
ওখানেই তো ফার্স্ট হতাম! 
তুমি তখন ব্যথিত, চিন্তিত।
ছেলেটি হাসতে হাসতে বাড়ির উদ্দেশ্যে মা কে জানাতে।


ওই যে দূরে যুবকটিকে দেখছ সদ্য সে জয়েন করেছে।
ভাবছ আহা কি সুন্দর!
হাহাকারের বাজারে কি ভালো না চাকরি পেয়েছে।

কাছে যেও না আবার বললাম।
কাছে গেলে জানতে চাইলে-
কোথায় তুমি ট্রেনিং করতে? কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলে?
তখন তুমি তার কথা ভেবে কতই না আনন্দিত!

যুবকের এত আনন্দেও মুখটা কেন ভারাক্রান্ত?
জানো, আমার মা না দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত।।


ওই যে দূরে উজ্জীবিত ব্যক্তি,
ভাষণ দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে করছেন দারুন উক্তি।
আহা কি সুন্দর!
কি, যাবে নাকি কাছে?
জানতে চাইবে কেমন করে মন্ত্রী হ'ল? 
না থাক। দূর থেকেই দেখতে লাগছে ভালো। 

সুমন্ত দে
জলপাইগুড়ি, পশ্চিমবঙ্গ