একগুচ্ছ অণুকবিতা - বিমল মণ্ডল
১.
চোরা শাসন
প্রতিদিন সকাল হয় যা ভূগোল মেনে
প্রতিদিন খেলার পুতুল সাজি শাসন ঘরে
প্রতিদিন চুরি হয় আমার মন ও বুদ্ধি জেনে
প্রতিদিন চোরা শাসন ত্রাসে যাই যে মরে।
২.
বাক্যমালা
তুমি কেবল শোনাতে রাজি তোষণ বাক্যমালা
তোমার পায়ে খাঁটিউর্দি পরে প্রণামও করে
আইন - শাসক হাতে হাতে পরে সোনার বালা
চেয়ে দেখে সাবাস নীতি বাক্যমালার সংসারে।
৩.
বৈঠক
বেশ কিছু বাড়ি আছে যেখানে প্রতিদিন বৈঠক বসে
বেশ কিছু মানুষ আছেন যেখানে প্রতিদিন সেজেগুজে আসেন
বেশকিছু কথা আছে যেখানে সুন্দর শৈলীতে বলা যায়
তাঁরা শাসকের আড়াল- আবডালে বিজ্ঞাপনে রয়।
৪.
সংজ্ঞা
রাস্তার মাঝে ফেস্টুন হাতে টিভির পর্দায় ওঠে ভেসে
বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা মেনে পথে নেমেছে এসে
যোগ্যতার আসন শূন্য অধিকারে বুদ্ধিজীবীর প্রসঙ্গ
সংজ্ঞার নামাবলী গায়ে নিয়ে পথের মাঝে দেখায় রঙ্গ।
৫.
প্রতিশ্রুতি
তোমার আসার পথে অজস্র শাদা প্রতিশ্রুতি
একটা শিশুও জানে তার মানসম্ভ্রম
তোমার শুরু ও শেষ সুকৌশলে মিথ্যে নীতি
শিশুটি অনাহারেও মাকে করে প্রণাম।
৬.
হিসাব
পশ্চিমে সূর্য রোজ অস্ত যাবে; খেয়ালহীন
অমাবস্যা, পূর্ণিমা আসে প্রকৃতির নিয়মে
তোমার হিসাব শুধু নিজের চোখের সামনে
একদিন তুমি সাজানো ঘরে থাকবে মূল্যহীন।
৭.
কূপমণ্ডূক
বড়ো ঘর, অলস আড্ডা
হিসাবহীন বন্ধু-স্বজন
মুখে শ্রাদ্ধ, দড়ি একটা
কূপমণ্ডূক, কথা শুকনো।
৮.
খাবার আর খবর
চেনা মানুষ এপার থেকে খাবার নিয়ে যায়
অচেনা মানুষ ওপার থেকে খবর নিয়ে আসে
খাবার ও খবর; মাঝখানে সুললিত নদীতে ভাসে
দু'পাড়ে ভাবলেশহীন ক্লান্ত মানুষ অপেক্ষায় বসে রয়।
৯.
মগজ যখন পচে
কেউ বোকা নয়, বোকা বানাই কায়দা করে
হিসেব করে এক-দুই - তিন... দলে দলে
শরীরগুলো ক্লীব সমাজে দাঁড়িয়ে তামাশা সারে
বিবেকহীন মগজ যখন পচেঃ সগৌরবে খেলে।
১০.
সন্দেহ
সন্দেহের শরীর ডোবে সন্দেহের শরীরে
অন্ধকারে ঝড় ওঠে সন্দেহের আকাশে
শরীর থেকে শরীর খুলে সাজানো সংসারে
আপন মনে সময় যায় সন্দেহের বাতাসে।
১১
চলে গেল সময়
রোজ রোজ ঘরে বাইরে সীমাহীন ভয়
একটা বছর প্রকাশ্যে শুধু চোখের জল
তুফান ভরা মহামারি আর আমফানের ফল
একটু না বাঁচিয়ে চোখের সামনে চলে গেল সময়।
১২.
পা চালিয়ে
একটু হোঁচট খেলে সময় ডিঙিয়ে চলে
চারিদিকে বদলের পালা চলছে হৈ হৈ করে
প্রত্যন্ত কোণা থেকে পা চালিয়ে গতকালের গ্রাম
কসমেটিক স্বপ্ন দেখে টাকা কামিয়ে আরাম করে।
১৩.
খেটে খাওয়া মানুষের গল্প
সারাদিন কোনও কাজ নেই তবুও রাস্তার ব্যস্ততা বাড়ে
দুপুর ঘুমোয় বিকেল হাঁটে সন্ধ্যায় তাসের আসরে আড্ডা
সারারাত টিমটিম ঘুমে ব্যয়ভার স্বপ্নের চিৎকারে
ঠাণ্ডা আগুন সংসারে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদছে ঘরে।
১৪.
মূল কাহিনি
গোটা কাহিনিটি সাজানো আছে সমাজে
যেভাবে আমরা আদান প্রদান করি বাঁচার কায়দায়
মূল কাহিনি ভুল থাকলেও সেভাবে সাজাই নিজে
আমি রক্ত চাটতে শিখেছি মূল কাহিনির শেষ পর্বে।
১৫.
ফিরে দেখা
নব পরিচয় ছাড়পত্র একটি বছর
কঠিন অসুখ শরীরে ইতিমধ্যে
মারণ লড়াই প্রতিক্ষায় সুখ সংসার
নতুন আলোর ঝরনায় সুদিনের গন্ধে।
১৬.
শব্দ ঘরনি
আমি আমার শব্দের কাছে আহার নিদ্রা সারি
ডাকাডাকি করে তোমাকেও সেই সন্ধির মিলনে
শব্দের নাব্যতার মাঝে আমিও বিশ্রাম করি
যেখানে আমার জীবনের সাথে তুমিও শব্দ ঘরনি।
১৭.
কয়েক টুকরো সাক্ষী
আমার আভ্যন্তরীণ জীবনের সাথে
মরমিয়া মলমের প্রলেপ বুলিয়ে
ঝরে পড়ে অব্যক্ত কাব্য কষ্ট
মেঘগুলো নেমে আসে কয়েক টুকরো সাক্ষী রেখে।
১৮.
আমার শৈশব
পাড়াজুড়ে কাদা মেখে স্মৃতিতে আমার শৈশব
রোদ্দুর জীবন ধুলোতে মাখামাখি পশ্চিমা বাতাস
ঘরের মেঝেতে খড়ের ধোঁয়া উড়ে যায়
মা বুকে চেপে ধরে রাখে আমার শৈশব।
১৯.
ভিজে যাই
করুন চোখে রোদ ঘরে কৃষকের আড্ডা
আকাশ জুড়ে আলোর মাঝে গোপন অন্ধকার
নিরিবিলি ভেজা উঠানে অনুভবে যন্ত্রণার
সাদা জোছনা ধোয়া রাতে ভিজে যাই।
২০.
রঙ
চেয়ে আছে মেঘ রঙ
শাসনভার সূর্যের দায়
বিবস্ত্র পথে অসময়ে রেওয়াজ
আকাশ জুড়ে ফাগুনের মহান সাজ।
বিমল মণ্ডল
কাঁথি
পূর্ব মেদিনীপুর
পশ্চিম বঙ্গ
ভারত
-
ছড়া ও কবিতা
-
27-03-2021
-
-