অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
বিকাশ চন্দ'র দুটি কবিতা

আত্ম তর্পণ
মাটি জানে তার গভীরে জড়িয়ে শেকড়ের প্রাণ 
উপরে ফুল ফল পাতায় ছড়িয়ে গাছেরা নীলিমা ছুঁয়ে 
চতুর্দিকে জল জমিন পাড়া জুড়ে জীবন যাপন 
কুড়িয়ে বাড়িয়ে আনন্দ যতটা তারও পরে জমে কষ্ট শোক 
ফলে ফুলে তখনও গোপন জন্ম কুঁড়ি মুখ 
কোথাও দুলে ওঠে জীবন সাধনা আনন্দ আলোক। 

ভিটে মাটির যত কথাকলি জীবনের টানে 
সকল প্রাণের বৃক্ষ জানে অযথা অকাল মৃত্যু 
শিরায় শেকড়ে শত ঝুরি বোঝে জীবনের ঘ্রাণ 
ভগবান জানে ঈশ্বরের অসুখ কুঁড়ে ঘরে গর্ভগৃহে 
দুঃখ সুখ জানে সূর্য আমার সুজন আমার 
জমিন আসমান বোঝে প্রত্যাহিক আলোর আজান। 

জীবনদাতাও কখনও হারায় নিরাময় হীন শোকে 
তিনি শুনেছিলেন তিনবার নামাজ পড়ার ডাক 
ত্রিসন্ধ্যা আরতি তুলসীতলা মণি পুজো শস্যময়ী শ্লোক 
প্রাণের ঈশ্বর জানে না কখন নেভে সিঁথির আলোক
গ্রাম নগর জানে অহেতুক অবজ্ঞায় বিলীন কতক জীবন 
উৎসর্গ সময় জানে মগ্ন স্থপতি অসহায় আত্ম তর্পণ। 

দ্রোহ কাল মানুষে সবুজে
দেয়ালের লেখা গিলে খায় শ্যাওলার অসুখ 
দিন রাত্রি হেঁটে চলে প্রতিদিন সূর্যাস্ত জানে 
শরীর জুড়ে এখন সাপটে দিগন্তের অভিমান 
ঘরের দরজায় এখনও মায়ের গন্ধে স্নান 
শরীর জুড়ে আশ্চর্য পিতৃসত্তা আঙুল ছোঁয়া সুখ। 

বহু বার ভেঙেছে শরীর জানে অবাক গাছের ছায়া 
অন্ধকার সময়ে কপাল ছুঁয়েছে ঈশ্বর চুম্বন 
স্মৃতির আনন্দ বোঝেনি যুগল স্নিগ্ধতা 
তবুও যন্ত্রণায় শিরায় রক্তফুলে কঁকিয়ে ওঠে ----মাগো
জীবনের ভেতরে কত ইচ্ছে বর্ণ ময় হয়ে ওঠে অমৃত উৎসবে। 

অনেক অক্ষর ছিল নিথর শব্দের মতো আলোময়
একইব্রকম ছড়িয়ে প্রতিদিন অরব আত্মার জলছবি 
বাঁয়ে ডাঁয়ে রাস্তাগুলো এঁকেবেঁকে মন্দিরে শ্মশানে 
কেউ কেউ বোঝে অগোচরে বেড়ে ওঠে মানুষ দেবতা অসুর 
নিথর শব্দময়তায় সৃষ্টি বোঝে কুঁড়ি ফুল পরাগ আয়ু। 

সকল প্রশ্নের মতো অদ্ভুত জন্ম বোঝে বীজের অঙ্কুর 
কাদামাটি জলের শরীর ছুঁয়ে জাগে রোদ সোনা ধান
কোন শূন্যে ভাসে ঈশ্বর জন্ম জানে কী শালিক চড়ুই সকাল 
ক্ষিধেরা হিসেব কষে কষ্টের ভেতর রক্তফুলে অসুস্থতা 
বাউলে বাতাসে শরীর জুড়ে দ্রোহ কাল মানুষে সবুজে। 

বিকাশ চন্দ 
কুমারপুর, কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর, 
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।