নির্মল ভৌমিক এর কয়েকটি কবিতা
বিদ্রোহী কবি
অসত্য,অন্যায়ের বিরুদ্ধে
বারবার জেগে উঠেছ তুমি,
বারবার জেগে উঠেছে
তোমার কলম ও চেতনা শক্তি।
তোমার কলমের কালি
হৃদয়ের ধ্বনি
শক্ত করেছে ভীতুর তর্জনী,
তুমি কবি,জনমানসের প্রেরণার কবি।
যখনি দেখেছ দুয়ারে দাঁড়িয়ে
কাঁদিছে ভুখারি,
কাঁদিছে অসহায় নরনারী
কলমে এনেছ তুলে তুমি
প্রতিবাদের তরবারি।
মানুষে মানুষে নাই কোনো ব্যবধান
তোমার কণ্ঠে শুনেছি সেই গান,
তুমি গলিয়েছ হৃদয় যত ছিল পাষাণ,
তোমার শব্দবাজিতে
সাহসের জোয়ারে
ছুটে এসেছে তাগড়া তাগড়া জওয়ান।
তুমি কবি,নিপিড়ীত মানুষের কবি
তোমার কলমের আচঁড়ে
উঠেছে বিদ্রোহের প্রতিধ্বনি,
কেটে গেছে জাতির বুকে নেমে আসা
দূর্বিপাকের কালো কালো রজনী।।
আদি-অনাদিকাল সাক্ষী
তোমার মতো করে কেউ কখনো
কলমে উঠাইনি বিদ্রোহের
গগনবিদারী শব্দ বোমার বিস্ফোরণী।
চামার,মেথর,কুলি,কামিনী
সবার তুমি কবি,
বাবুদের অত্যাচার,নিপিড়ন
শব্দবাণে ম্লান করেছ ইতিহাস সাক্ষী।
কবি তুমি,বিদ্রোহী কবি
ভয় করোনি কারাবন্দী,
ভয় করোনি জেল জুলুম আর শাসন,
শক্তহাতে কলম ধরে তাই
লিখেছিলে আনন্দময়ীর আগমন।
ব্যথিতের ব্যাথায় ব্যথি তুমি
ধরেছ তার মুঠি,
দূর্যোগের শত কালো রাত্রে তাই
ভড়কে মরেনি!
বিদ্রোহী কবি তুমি,
ভীতসন্ত্রস্ত জাতির কাণ্ডারী,
যুগে যুগে তুমি ও তোমার কবিতা
ভীরুকাপুরুষের বুকে জ্বালাই
সাহসের হোমাগ্নি।।
এমন নির্যাতনের দিনে
এমন অমানবিক নির্যাতনের দিনে
কণ্ঠে যদি না উঠাই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর
কলমে যদি না উঠাই কালির আঁচড়
সত্তা বিসর্জ্জন দেওয়া মানুষ আমি,
অন্তর যে অনুর্বর,পাথর!
এমন অমানবিক নির্যাতনের দিনে
কাপুরুষের মতো যদি মুখ লুকাই ঘরের কোণে
মানবিক পৃথিবী মরে যাবে,
দাঁত কেলিয়ে বর্বর,অমানুষের দল
যুগ-যুগান্তর মানবতাকে পদতলে যাবে পিষে !
এমন অমানবিক নির্যাতনের দিনে
বুক ফুলিয়ে যদি না দাঁড়াই
নিজেকে যদি যোদ্ধা না সাজাই
মূল্যহীন মানব জীবন,
বিবেকবুদ্ধি চেতনা শক্তি বৃথা রবে পড়ে!
এমন অমানবিক নির্যাতনের দিনে
নিজেকে যদি ব্যস্ত রাখি ফুলশয্যা,খানাপিনায়
আত্মকেন্দ্রিক জীবন আমার,
নিজেকে কখনো করিনি নিবেদন
মানবসেবার শুদ্ধ,সুন্দর পঙক্তি মালায়!
এমন অমানবিক নির্যাতনের দিনে
নিজেকে যদি আড়াল রাখি মৃত্যু ভয়ে
পূর্বপুরুষের কলঙ্ক হব,
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পরম্পরায় আমাকে দেবে
ঘৃণাতুর নিন্দার তীর ছুঁড়ে!
এমন অমানবিক নির্যাতনের দিনে
বাহুতে বল বুকেতে সাহস নিয়ে আমাকে দাঁড়াতে হবে
অত্যাচারীর খড়গ সম্মুখে,
আমাকে দাঁড়াতে হবে
রক্ত নিয়ে হোলি খেলার দাঁত ভাঙা জবাব দিতে!!
আবার
আবার জমে উঠুক শিশুপার্ক
জমে উঠুক খেলার মাঠ,
জীবন আনন্দে ভরে উঠুক প্রাণ।
আবার খুলে যাক প্রিয় বিদ্যাপীঠ
খুলে যাক মন্দির মসজিদ,
খুলে যাক লৌহ কপাট,সুর সঙ্গীত।
আবার ফিরে আসুক প্রাণোচ্ছল সুদিন
মুছে যাক ঋণখেলাপী,
মুছে যাক অসত্য,অসুন্দর,কুঋণ।
আবার উৎসব আয়োজনে
মুখরিত হোক
সকাল,সন্ধ্যা,দুপুর
মুখরিত হোক বধুর পায়ে
সুরের নুপুর।
আবার হেসে উঠুক আমাদের পৃথিবী
আবার একসাথে হাতে হাত রাখি,
দূর হোক মহামারি।।
নির্মল ভৌমিক
নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
-
ছড়া ও কবিতা
-
27-05-2021
-
-