নির্মম আর্য বেদনা - মুতাকাব্বির মাসুদ
আমার কবিতায় মানবিক শব্দরা লাশ হয়ে পড়ে থাকে কেউ রাখেনা খবর!
আমার কবিতায় নন্দিত প্রেম, মুগ্ধবচন-নিমগ্ন দগ্ধ শরীর, আগুনের কাফন নিয়ে নিস্তব্ধ নিথর
কেউ চেয়েও দেখেনা!
আমার কবিতায় নেংটা শহর উদোম বুকে
শশিপ্রিয়ার দীঘল চুলে সধবার প্রেতাত্মা নিয়ে ঘুরে
কেউ দেখেও দেখেনা!
আমার কবিতায় যৌবতী ভেনাসের বিবস্ত্র শরীর;
জাহান্নামের আগুনে বসিয়াও পুষ্পের হাসি হাসে
ভেসে যায় কালানলে আগুন জলে
নিশীথের নিলাজ অতিথি সুন্দর বেহুলা
নরম- কোমল, নন্দিত কম্পিত যৌবন
ফেরি করে অহোরাতি
কতিপয় ভয়ঙ্কর শাখামৃগের ঘরে
কেউ রাখেনা খবর!
আমার কবিতায় শহর এক বিলাসী বেশ্যা পল্লী
আমার কবিতা বিত্তশালী শয়তানের হেরেম
আমার কবিতায় এখন আঁশ ওঠা বেওয়ারিশ কুকুরের
সিফিলিস বিচরণ!
নীল ইটের লাল শিরায় অহল্যারা জোনাকের জঘনে
পুঁজিবাদের কৃত্রিম ঢেউ তুলে পাঁচ তারকার দালানে;
লাওয়ারিশ কুকুরের গোপন মিলনে
দূরে আমার একাকী পৃথিবী নিঃশব্দ নির্বাক
জন্ম থেকে একাই পথচলা!
শহরের ঐ আকাশচুম্বী বহুরূপী দালানে তথাকথিত বিলাসী ড্রইংরুমে আ্যাকর্ডিয়ানে ভেসে আসে
জীবন-বেদনের রূঢ়-নিঠুর অনার্য সুর
নির্মম আর্য বেদনায়
কালের মহাধ্বনি স্পন্দিত হয় রাতের গভীরে
আরো দূরে মন্দিরে
বিবসনা রাতের ক্ষয়িষ্ণু আঁধার মুখ লুকোয় কাঙ্গালি বেশ্যার অস্ফুট অনঘ শরীরের বাঁকে!
আমার কবিতার অশ্বগন্ধারা গলির মোড়ে
নিয়নের আলোয় আঁধার গিলে খায়
বেশরম পেঁচার সহবাসে!
আমার কবিতায় একসময় তারার মেলা ছিল,
নিরুপম বিশুদ্ধ পৃথিবী ছিল,
দিনের আলোয় অমায়িক দ্যুতি ছিল,
চাঁদের শোভা ছিল,
প্রেম ছিল,প্রাণ ছিল,ভালোবাসা ছিল,
নিশিকালে আদরী রাতের চুম্বন ছিল,
জোছনার মায়া ছিল;কৃষ্ণপক্ষ ছিলনা কখনো
ছিলনা সোডিয়ামের বিকৃত অন্তর্বাস!
একদা আমার কবিতায় তিলোত্তমার স্বপ্ন ছিল,
ছিল সাতপুরুষের মায়াবী নদীর ঢেউ
এখন শুধু বিপন্ন নদীর শ্বাস!
এখানে এই শহরে গলির মুড়ে খুশি ছিল
ডাহুকের জলভেজা পালকে
এখানে এখন নষ্টা ঝিঁঝিঁর মাতাল সুর
ভূতের আঁধার নামে কুমারী সন্ধ্যার বেতস শরীরে
রাতের রুগ্ন ঠোঁটে কুষ্ঠ খেলে নাগিন আঁধার ফণা তুলে নিরীহ কোকিলের ঠোঁটে!
কোকিলের লাল চোখ থেকে লাল বরণে
লিখতে চাই আমার কবিতা-উদ্ধৃত পরিকীর্ণ সময়ে
ভয়ঙ্কর বৈশ্বিক সভ্যতার সংকটে পরিবৃত
মানুষের নিরন্ন জীবনের বিপন্ন পাণ্ডুলিপি!
মুতাকাব্বির মাসুদ। বাংলাদেশ
-
ছড়া ও কবিতা
-
21-07-2021
-
-