অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
শ্রাবণের ধারার মতো - সুনির্মল বসু

বৃষ্টি ধোয়া সকাল, কদম ফুলের ঝিরিঝিরি সুগন্ধ,
জানালায় অরণ্য পাখির গান, দূরের নদীতে জেগেছে ভালোবাসার বান,
আমার কবিতার পাতা বাতাসে ওড়ে, সকালে উঠেছি কোন্ ভোরে, ফুল ফুটে আছে আমার দোরে,

এ বাতাস ভালোবাসার কথা বলে, যদিও জানি,
এ নয়তো মধুমাস, তবুও প্রজাপতি ওড়ে, এ্যাকোরিয়ামে সাঁতার কাটে রঙিন মাছ,
কে যেন বলে, কেউ আসবে, কেউ আসবে এ সকালে, কেউ আসবে এই শ্রাবণ দিনে,
মরুভূমিতে বৃষ্টি নামবে,

মনে পড়ে, এ কৃষ্ণচূড়ার দিনে অনুরাধা চলে গেছে অন্য যুবকের সাথে, 
অতীত কি ভালোবাসার কথা  আর মনে রাখে,
বসন্ত দিন হারিয়েছি জীবনের বাঁকে,
সেদিন জীবন ছিল ভরা নদী, কত তার ঢেউ,
আমরা দুজন ছাড়া,
সে কথা জানে না তো কেউ,
নদী তীর হাইওয়ে কফি খানা সাক্ষী তার, 
বিগত সময় কাঁদে, কবিতার পাতা বাতাসে উড়ে যায়,

আমার শব্দেরা সমুদ্র নদী বন্দর পেরিয়ে পর্বতমালার মাথা ছাড়িয়ে দূর দেশে যায়, পাইন বনের মাথা ছাড়িয়ে, দেবদারু ঝাউবন পেরিয়ে আমার কবিতারা আলোকবর্ষের সীমানায় যায়,

স্বপ্নগুলো, কান্নাগুলো, পরাজয় গুলো আমার পিছু নেয়, কবিতার শব্দেরা নদী ও দিগন্তরেখা পার হয়,
ভালবাসার আকাশ খোঁজে, কবিতা ছাড়া কে আর আমাকে বোঝে,

অনুরাধারা জীবনে আসে, জীবন থেকে জীবনে হারায়, যেন মৌসুমী মেঘ, আলো দেয়, ছায়া আনে,
বুঝিনি কখনো সে জীবনের মানে, আমার কান্নারা সব জানে,

আজও তো জানি,ওর শাড়ির আঁচলে লেগে থাকা চোরকাঁটা বলে দেয় হারানো ভালোবাসার মানে,
অতীত সর্বক্ষণ শোনায় সব, আমার কবিতা সব কথা জানে,

অথচ অনুরাধা, তোমার জন্য একদিন দুরন্ত দুপুরে সবুজ মাঠে দৌড়, ভোরের আলোয় তোমার জন্য পদ্ম তোলা, তোমার জন্য বিকেলে কফি খানায় উড়িয়েছি সিগারেটের ধোঁয়া,
কত স্বপ্নময় বিকেল, নিয়ন আলোর নীচে হেঁটে গেছি কত দুরন্ত রাজপথ,

আজ আমি একলা হাঁটি, আমি যাই, আমার কবিতা যায়, আমি যাই, আমার ভালোবাসা যায়,
শিমূল বন কাঠবাদাম গাছ দুলে ওঠে, রাতের চাঁদ জ্যোৎসনা ভেজায়, আকাশের তারারা সান্ত্বনা দেয়,
গাছেরা চুপিচুপি কথা বলে,

নদী বলে, কতজন আমাতে ময়লা ফেলে, আমি কি মনে রাখি,
আয়, নতুন করে বাঁচবার মত বাঁচি,

আমি পড়ে যাই, ধূলো ঝাড়ি,
আলোকবর্ষ পেরিয়ে ইউক্যালিপটাস গাছের মাথা ছাড়িয়ে অনন্ত আকাশ খুঁজি, পেয়ে যাই জীবনের মূল্যবান পুঁজি,
আমার কবিতার বাগানে ফিরে আসি, বহু যত্নে ফুল ফোটাই, আমার কবিতার বাগানে কত কত প্রজাপতি গঙ্গা ফড়িং ওড়ে, আমি পৌঁছে যাই অলৌকিক ভোরে,

আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামে, আমি ভিজে যাই,
ঢেউয়ের মতো কথামালা আসে, কবিতার নদী বয়ে যায়,
আমি তখন শ্রাবণ দিনে বৃষ্টিপাতের কথা লিখি,
শ্রাবণের ধারার মতো আমার কবিতার খাতায় শব্দেরা ঝরে পড়ে।

সুনির্মল বসু
নবপল্লী, বাটানগর
দক্ষিণ 24 পরগনা, কলকাতা