অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা ।। সুনির্মল বসু

ই যে সাঁঝবাতি, বিষন্ন সন্ধ্যায় বাংলা এম,এর ক্লাসে থার্ড বেঞ্চের কোনে বসা লম্বা চুল ছেলেটিকে ‌মনে পড়ে কী,

তোমার ঢেউ ঢেউ কেশরাশি, কাব্যিক চলার ছন্দ দেখে, প্রথম দিনেই বুঝেছিলাম, আমার সর্বনাশ,

মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে আমি, ক্লাস ফাইভের অভিজিৎ মিত্রের বাড়িতে  পেতাম পঁচিশ টাকা,
পড়িয়ে সারা মাস,

তোমার বাবা কোম্পানির ডিরেকটার, ড্রাইভার তোমাকে গাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যেত প্রতিদিন,
চেয়ে থাকতাম তোমার দিকে, যদিও তুমি উদাসীন,

তোমার সঙ্গে আলাপে বন্ধুরা ধন্য হোত, মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে,বরাবর নার্ভাস আমি,
সাহস করে এগুতে পারিনি,

সেদিন শনিবার, সাহিত্য সভা,
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এলেন, আমি তখন কবিতা নয়, গল্প লিখতাম, গল্প পড়লাম,

সাঁঝবাতি তুমি এসে বললে, আমি বন্ধন রায়ের প্রেমে পড়ে গেছি, বন্ধন রায় আমার গল্পের নায়ক,
সেদিন আমি কেঁপে উঠেছিলাম,
বন্ধুরাও অবাক,তোর সঙ্গে যেচে আলাপ করেছে,
একটা করে সিগারেট হয়ে যাক।
এরপর কত বসন্তদিন এলো জীবনে,কত অমল স্বপ্ন ময় দিন, একদিন গেলাম তোমাদের ল্যান্স ডাউন রোডের প্রাসাদে, কোথায় বসবো বুঝতে পারছিলাম না,পিজা খেলাম, গল্প করলাম, দোলনচাঁপা গাছের তলা দিয়ে গেট পেরিয়ে এলাম,

মনে ভাবলাম, আমি ভুল করছি,
এ মনিহার আমায় নাহি সাজে, আমার বাড়ি আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে,

এম,এ পরীক্ষার ছমাস আগে চাকরি পেলাম,
সাঁঝবাতি, তুমি আমাকে অনেকবার চিঠি দিয়েছো, আমি জবাব দিই নি, দূরত্বে থেকেছি,

আজ বাড়ি গাড়ি,সব হয়েছে আমার,
তবু,বিজন সন্ধ্যায়,বাদল দিনে, বসন্তে যখন কৃষ্ণচূড়া গাছে রঙের বন্যা আসে,তখন বড় বেশি তোমার কথা মনে ভাসে, সাঁঝবাতি, খুব মনে পড়ে,

শুনেছি,খিলান গম্বুজ ওয়ালা বড় বাড়িতে বিয়ে হয়েছে তোমার, ভালো, আমি তোমাকে দেখতে চাই না আর, আমার মনে সেদিনের সাঁঝবাতির ছবিটা
আমৃত্যু বেঁচে থাক,

তবু, সন্ধ্যাগুলো আজো কেন যে এত কাঁদায়।

সুনির্মল বসু। নবপল্লী, বাটানগর
দক্ষিণ 24 পরগনা, কলকাতা
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত