অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
তুষার ভট্টাচাৰ্য-র কয়েকটি কবিতা

ব্যর্থ কবি জন্ম 
তারপর আকাশ দিগন্তে উড়ে গেলে দুঃখের সব খড়কুটো,
ব্যর্থ কবিজন্ম জেগে ওঠে
ভোরের বকুল, রজনী গন্ধা বাতাসে;
বিবর্ণ পাণ্ডুলিপির পাতায় পাতায়
উঠে আসে কলকল ঢেউ তোলা
পায়ে ঘুঙুর বাঁধা একটা নদী,
আর রাতপরিরা নীরবে শুনিয়ে যায় ভালবাসার গান;
ব্যর্থ কবি জন্ম আবার জেগে ওঠে নতুন স্বপ্ন বুনে। 

শিকড়ের মায়াটান
বীজপত্রের ভিতরে লুকিয়ে রাখি ভাঙাচোরা জীবনের অপূর্ন সব
সাধ স্বপ্নগুলি;
চারপাশে হিমেল শীতার্ত বাতাসে শুনি
হলুদ শুকনো ঝরাপাতার মর্মর গান;
আহত পাখির দু'ডানায় দেখি-
লেগে আছে যন্ত্রণার কত ক্ষতচিহ্ন;
তাই ভাঙাচোরা ব্যর্থ জীবন আমি ধুলো,
বৃষ্টি, বেগুনি রোদ, বরফ, লবনাক্ত সফেন সমুদ্র হাওয়ার আঘাত থেকে,
আড়াল আবডালে লুকিয়ে রাখি বীজপত্রে,
আমার শিকড়ে;
বুকের ভিতরে জমিয়ে রাখা অনন্ত আকাশ কুসুম স্বপ্নগুলি আমি দিয়ে যাবো
শিকড়ের মায়াটানে সন্তানের হাতে। 

ভয় পাইনা
রাত্রির নিঝুম অন্ধকার ডানার আড়ালে অমোঘ মৃত্যুর
পরোয়ানা নিয়ে যে লুকিয়ে থাকে থাকুক
আমি আর ভয় পাই না;
কেননা শৈশবের কাশবন, জল জংলা, খাল বিল, ধূ --ধূ নদীচর পেরিয়ে
আমি দুরন্ত পায়ে
একছুটে চলে যাই - মাঞ্জাকাটা  ভোকাট্টা
রঙিন ঘুড়ির পিছনে;
আমার হাতে ধরা থাকে রোদ্দুরের
বর্শাফলক,
আমাকে মারবে কে? আমি তো
আজন্ম এক প্রেমিক বাউল ,
যে ক্ষ্যাপার মতন খুঁজে বেড়ায় 
ওই দিগন্তের আকাশতলে
ভালবাসার এক  খিড়কি দুয়ার। 

হৃদয়ের চৌকাঠে 
হেমন্তের ঝরা পাতা - আমি রাত্তির হিমেল বাতাসে  শুধু চলে যাবার পদ শব্দ শুনি,
শৈশবের কলরব মুখরিত  নদীর জলে  ভেসে যাওয়া
কত  মানুষের শব দেখি,
অন্ধকারে মৃত জোছনায় জোনাকির কান্না ধ্বনি  উড়ে আসে
নিরালা দুয়ারে জানালায়,
তবে  সবকিছু  ছেড়ে ছুঁড়ে আমারও নীরবে  কী চলে যাবার সময় হল
একাকী ওই দূরে তিন ভুবনের পারে নিরুদ্দেশ যাত্রায়?
বিপন্ন হৃদয়ে  অলীক মৃত্যুর শিহরণ জেগে উঠলেই
আমি সন্তানের রৌদ্র ধোওয়া মায়াবী  মুখ দেখি,
আর তখনই বেঁচে থাকার অনন্ত বাসনা জেগে ওঠে হৃদয়ের চৌকাঠে। 

তুষার ভট্টাচাৰ্য
মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ