অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪
টিকে থাকার অহংকার - দেওয়ান সেলিম চৌধুরী

দিনে দিনে মানুষ এগিয়ে যায়, সীমাহীন সম্ভাবনার দ্বারে
ফেলে আসে অতীতের সব স্মৃতি, পাওয়া না পাওয়া, অন্ধকারে।
জীবন সায়াহ্নে এসে, স্মৃতিতে ভাসে, টিকে থাকার সব অহংকার
ছোট বেলায় আমার দেখা আমাদেরই সংসার।
মায়ের হাতে একাছিল বিশাল সংসারের ভার,
তারমাঝে এতগুলো ছেলেমেয়ে, কত আব্দার।
বাবার জীবনে দারিদ্র আনেনি কোন অহেতুক অভিমান
জীবন নিয়ে বাবার হিসাবও ছিল, নিতান্তই মহান।
এই পৃথিবীতে নিয়ে আসা একটাই প্রাণ
দিয়ে যাও যতটুকু দেয়া যায়, সঞ্চিত জ্ঞান।
ঘরের মাঝে যাদুঘর ছিল, ছিল দূর্লভ পাঠাগার
মানুষকে আলো দেয়ার যত বিচিত্র জোগাড়।
শুধু মা একা, জ্যামিতির কাটার মত, নির্ভুল অংক কষে কষে
আগামী সকালের হিসাব হতো, ঘুম ভেঙ্গে বিছানায় বসে।
মনে পরে চারিদিকে অঝোর বৃষ্টি, মাসখানি হয়ত বা আষাঢ়
হঠাৎ কিছু না বলে মেহমান এসেছিল, গোটা তিন চার।
মাটির চুলোতে আগুন ধরাতে, ধোঁয়ায় অন্ধকার 
কাঠ, বাঁশ, ছন, বন, ভিজে গিয়ে সব একাকার
এর মাঝে থেমে থেমে বাবার চিৎকার
এতটা সময় লাগে? কি হলো তোমার?
দারিদ্র দিয়েছিল একটাই গুণ, সহ্য করার
দাতে দাত চেপে, চোখ মুছে, শান্ত থাকার।
গরীবের ইতিহাস আগাগোড়া ব্যদনায় ভরা,
সর্বক্ষেত্রে জড়িয়ে থাকা, কখনো আষাঢ় কখনো খরা
জীবনের কোন মাসেই আসে নাতো কাঙ্খিত সুখ
তারমাঝে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, অসুখ বিসুখ।
অনেক কাছ থেকে দেখিয়াছে যারা, দারিদ্রের মুখ
তারাই জেনেছে কেবল, কাকে বলে জীবনের বঞ্চনার শোক।
আমার মায়ের মত পৃথিবীর শত প্রান্তে আছে যত মাতা
মাথার উপরে নেই যাদের ভরসার মজবুত ছাতা
আজো যাকে অশ্রু ঝড়ায়, মাটির উনোনের ধোঁয়া
দিগন্তের এপার থেকে, কবিতা দিয়ে তাদেরই চরণ ছোঁয়া।

দেওয়ান সেলিম চৌধুরী
অটোয়া, কানাডা