অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
কবিতাগুচ্ছ - সৌম্য ঘোষ

১) পরাশব্দ 
বেদবতী স্বরলিপির মাঝে মিছিল করে আসে/
যেসব  দাঁড়ি-কমা
তাদের কোন আগুনের গল্প নেই
বিপর্যস্ত ভালোবাসার গা বেয়ে
গড়িয়ে পড়ে শোকার্ত শিলা,
পরাশব্দে ডুবে থাকা এক উলঙ্গ পথযাত্রী/
সারারাত হেঁটে যায় 
সময়ের পদচিহ্ন দেখে দেখে...

আমার কোন রতি নেই, নেই কোন দ্রোহ/
মেঘের শবদেহ বয়ে বেড়ায়
অভিমানী চাঁদ।।

২) বনজ্যোৎস্না
হন অরণ্যের মতো যে রাত্রি আসে
তার নিশুতি আলো
বনজ্যোৎস্নার আবেগ চুম্বন করে।
রমণশিশির ঝরে সারারাত্রি,
একটা মেঠোচাঁদ পাবো বলে
এক একটা সন্ধ্যা খুব একা হয়ে থাকি/
মুহূর্তের প্রহর গুনি, সেও এক সহবাস

প্রাচীন অরণ্যের ঝরাপাতার অবিরাম শব্দে প্রগাঢ় স্তব্ধতায়
বিষণ্ন তীর্থযাত্রীর মতো 
বিলাপ সঙ্গীতে
ভোর হয় শান্তিনিকেতনে!
রাতের আকাশ থেকে খসে পড়ে রাতের কুসুম!

নিজের ভেতর ডুবে আছি শব্দে-নিঃশব্দে/
সময় আঁকড়ে ধরে।।

৩) স্মৃতিস্মারক
সূর্যপথ অনুসরণ করে এতটা এসেছি /
কোনো পদচিহ্ন পড়েনি পথে
সূর্যাস্ত কি রেখে গেল কিছু 
স্মৃতিস্মারক!
জোৎস্নায় ভিজে যাওয়া নদী ঝাউয়ের বনে কুড়িয়ে পাওয়া পাখির পালক!
গোধূলিস্বরে
মৃত্যুকে করেছিলে আবৃত্তি
কবিতার মতো...
এই বিষণ্ন স্বরলিপিসমূহ
তবে কার কাছে রেখে যাবো।।

৪) পাতা
যে পথে পাতারা একা উড়ে যায় স্মৃতিচিহ্নহীন,
যে পথে জীবন একা ভ্রমণ করে
মাটি ও মানুষের গান বেঁধে, শব্দহীন অজানায়  একা হতে হতে.. ;সেপথেই
মেঘনাভি ছুঁয়ে মর্মমূলে যায় জলের সারেঙ।
প্রতিটি মানুষের কিছু নিশুতি রহস্য থাকে
ছায়া নেমে আসে জলের মন্দির থেকে!
কতটা ক্ষরণ হলে বিরহ গাঁথা সন্ধ্যা প্রদীপের মতো নিস্পৃহ ছায়ায় খোঁজে নিঃশব্দ শব্দের শিশির পতন।
ধ্বংসের মধ্যে যা জ্বালিয়ে রাখে প্রার্থনাগৃহের
স্নিগ্ধ স্বপন।।

৫) ছায়া
বেলার ছায়ারা জানলা পেরিয়ে
ঘরে এলে,
আঁধার নামে বিষাদ-দুপুরে
মহাকাশে নিরুদ্দিষ্ট অন্তরীক্ষের নাবিক,/
ঘাসফুল না ছুঁয়েই উড়ে যায় প্রজাপতি/
পূরবী রাগিনী সুরে আসন্ন অন্ধকার
শূন্য করে দেয় জনপদবী,
না-লেখা কবিতাটি জোনাকি হয়ে
উড়তে থাকে আবছায়াময়।
ভালো লাগে সৃজনের অন্ধকার
ঘুমের সান্ত্বনা ভুলে জেগে থাকি
বেদনার গহ্বরে।।

সৌম্য ঘোষ
হুগলী, পশ্চিমবঙ্গ