অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
ওরা আছে - সৌমেন দাস

....বোষ্টম

সূর্য ওঠার আগেই লেগেছে গ্রহণ! 
ডায়োডের আলো জ্বলে উঠেছে প্রাসাদে প্রাসাদে। সমাজ অন্ধকারে ঢেকেছে! 
সেই অন্ধকারেই ওরা কাজ করে!

ওরা কাজ করে অন্ধকার খনিতে।
সংসারের হাল ফেরাতে! 
এই কয়লা কালো অন্ধকার মুছে-
ওদের শিক্ষার আলো আনার ছিলো খবর! 
কিন্তু তা হয়নি!
কোনো কালো বাবু তাঁর কালো টাকার-
কালো কারবার বাড়াতে তা হ'তে দেয়নি! 
বরং সেই অন্ধকার খনির নীচেই,
ওদের শৈশবের দিয়েছে জ্যান্ত কবর! 

ওরা কাজ করে-
কোনো হোটেলে বা চায়ের ঠেকায়। 
এই সময়ে লাগামহীন জীবনে খোলা মাঠে,
ওদের খেলতে যাওয়ার কথা ছিলো! 
সেটা হয়নি!
পরিবর্তে: "ছোটু" ব'লে ডেকে-
আধখাওয়া বিড়ির টুকরো ধরিয়ে দিয়েছি আমরা! 
আর নিজের ছেলের জন্য,
লাইন দিয়েছি ভালো ভবিষ্যৎ গড়বো ব'লে! 

ওরা কাজ করে, আপনার আমার আঙিনায়। কিছুটা টাকা, আর উচ্ছিষ্ট কিছু খাবার আশায়! 
ওদের সভ্যতার হাল ধরবার কথা ছিলো, 
সেটা আমরা হতে দিইনি!
কেড়ে নিয়েছি ওদের স্বপ্ন দেখার ঘুম! 
ওদের অসভ্য ক'রে রেখে,
নিজেদের আখের গুছিয়ে চলেছি।

ওরা কাজ করে নামিদামি সব শপিং মলে। 
এই সময়ে ভালো পোশকে,
বাবার হাত ধরে ঘোরবার কথা ছিলো!
তা ওরা পাইনি!
বরং ওদের চোখের সামনে-
ছিনিয়ে নিয়েছি সন্তানের ভালো পোশাক! 
আর কিছু ব্যবহৃত পুরানো পোশাক,
দিয়ে ভেবেছি দানবীর কর্ণেরও বড় ভাই! 

হা হা.. কি ভাবছো,
আমরা আধুনিক, আমরা সম্ভ্রান্ত? 
আসলে আমরা অপগণ্ড, অহংকারের উন্মত্ত খেলায় দিশেহারা! 
একবার আকাশের দিকে চোখ মেলে দেখো, 
কতো শিশুর নিষ্পাপ হাসি কটাক্ষ করছে! 
বাতাসের সুরে ভেসে আসছে নিন্দার অট্টহাস্য! 
মাটির বুক চিরে বেরিয়ে আসছে ঘৃণাভরা আর্তনাদ! 
পাপের কলস পূর্ণ করেছি আমরা।
ওরা তা বয়ে নিয়ে চলছে! তবে আর কতদিন! 
যেদিন থেমে যাবে ওরা? সেদিনই ঘটবে মহাপ্রলয়! 
সেদিন তুমি আমি খুঁজবো বাঁচার পথ...
একটু আশ্রয়....

সৌমেন দাস 
বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ
ভারত