অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
হোসেইন আহমদ চৌধুরী-র কবিতা

(এক)
নবান্নের মৌসুমটা আগেভাগে আসুক

স্বৈরিণী রাতের সাথে প্রেম হলে মেজাজী দিনের
চরাচরে নেমে আসে ঘাতক সময়,
নিরন্নের পেট তখন চৈতের চৌচির জমিন।

জলপাই রঙ শাড়ি শোভা পায় বণিকের দোকানে
ভাঁজ খুলে কে করে শ্রমের অপচয়!
লোলুপ চোখ ফাঁকে দেখে কৃষাণীর গতর।

প্রতীক্ষার চাতক দৃষ্টি বাঁধা থাকে শস্যের মাঠে
জাগে না যে ক্লিষ্ট শরীর, আহত মন
কৃষক-কৃষাণীর রাত কাটে দুপাশ ফিরে।

নবান্নের মৌসুমটা এবার আসুক আগেভাগে
কৃষকের পেশীগুলো উঠুক নড়েচড়ে
ভরপুর তৃপ্তিতে কৃষাণীর রাতগুলো কাটুক।

(দুই)
কমবেশি সকলেরই গল্প আছে

কার গল্প নেই! কমবেশি সকলেরই তো গল্প আছে

কাঠের চুলায় রাঁধুনির হাত পোড়ানোর গল্প আছে
ভিখিরির খালি থলির বেশুমার গল্প আছে
গল্প আছে সধবার তৃপ্তির, বিধবার নিঃশ্বাসের।
ধনাঢ্যের বর্ণাঢ্য জীবন, নিরন্নের শূন্য পাতের গল্প
আরো আছে মধ্যবিত্তের ভণ্ডামির ক্লেশিত গল্প।

এদিকে, ধর্মজীবীর কুর্তার বাঁঝা পকেটও
গর্ভবতী হয়, গল্প শোনায় সুখ সঙ্গমের
ওদিকে, কর্মজীবীর চুপসে যাওয়া পেটের গল্প
মাথা কুটে আশার কবাটে, চাবিহীন তালায়।

কারো গল্পের আকাশে দিনরাত সুখের কপোত উড়ে
কারো গল্পের উঠোনে আবার ঘুঘু চরে বারোমাস।

ইদানিং পুরো পৃথিবীটা তস্করের ভাস্করের
আমলার কামলার, প্রেমিকের শ্রমিকের
বেপারির ফড়িয়ার, সাধু আর অসাধুর
গল্পে গল্পে সয়লাব, তেলে জলে একাকার!

গল্প তো সকলেরই আছে, শুধু তোমার আমার
গল্পটা ঝুলে আছে ক্লীব সময়ের কার্নিশ ধরে।

(তিন)
ক্ষিধেটুকু জিইয়ে রেখো

ক্ষয়িষ্ণু জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে এলাম

এখন বেয়াড়া ইচ্ছেগুলো ফেরারি হয়ে
চৈতালী ধুলি হাওয়ায় উড়ে যাক
শুকনো পাতার মতন
কামনার গিঁটগুলো আলগা করে নাও
চলে যাক সর্পিল পথ ধরে
পাথুরে অভিমান জমুক চোরাবালি বিবরে

টুকরো টুকরো সুখের মৃত্যু...
জীবন তো ছুঁয়েছে নক্ষত্রবিম্বিত রাতের শরীর

শুধু জিইয়ে রেখো আমাকে পাওয়ার ক্ষিধে টুকু।

(চার)
আত্মগত পংক্তিরা

শকুনি সময় দিয়ে যায় জীবনের পাঠ
নিত্যপণ্যের শরীর চুমে আগুনের ঠোঁট
সামর্থ্যের ঘোড়া এখন হাঁটু ভেঙে ঘুমায়।

প্রাপ্তির কচ্ছপ আজ বাঁচা-মরার সন্ধিক্ষণে
হাসপাতালের আইসিইউ বেডে, কোমায়।

আত্মগত পংক্তিরা নিচ্ছে আত্মহননের স্বাদ
নিঃশ্বাসের সময়টুকুও ঘরত্যাগী প্রায়
বুকের জমিন জুড়ে শ্মশানের নীরবতা।

যেটুকু শুদ্ধাচার দেখি, সবটাই মেকি
বদমায়েশির আগুনে পুড়ে সভ্যতার চিতা।

(পাঁচ)
পৃথিবীর শেষ গ্রামে

এই আমি পৌঁছে গেছি পৃথিবীর শেষ গ্রামে
বৈশ্বিক গাঁয়ের অলীক পথ দুপায়ে মাড়িয়ে,
এখন হেমলকের পেয়ালায় চুমুক দেয়ার পালা
শুধু অপেক্ষা, একটি মুখাপেক্ষী রাতের...

হোসেইন আহমদ চৌধুরী
বিয়ানীবাজার, সিলেট
বাংলাদেশ