অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
গোলাম কবিরের একগুচ্ছ কবিতা

১)  পরাজয়েই জয়ী

 ভালোবাসতে বাসতে আমি  
 বারবারই হারতে শিখেছি, 
 অনায়াসেই হেরে গিয়ে 
 আবারও ভালোবাসতে চেয়েছি! 

 এভাবে বারবারই হেরে গিয়ে 
 যখনই কাঁদতে চেয়েছি, 
 পারিনি কান্না করতে বরং ভীষণ 
 অট্টহাসি হেসে চোখের জল ফেলেছি!

 মানুষ বুঝলো আমি তো সুখেই আছি, 
তাই হয়তো হাসতে পারছি অমন করে!

 বিধাতাকে ধন্যবাদ জানাই এভাবে 
 হেসে ওঠার শক্তি দেয়ার জন্য! 

ভালোবাসার জন্য একটা বছরের মধ্যে 
 ৩১৩টা রাতই কেটে গেছে অনিদ্রায়! 
 রক্তজবা চোখের খবর নেয় নি কেউ! 

 রাতের আকাশ আর জেগে থাকা 
 শহরের নিয়নলাইট এবং ঘরের
 দেওয়ালে হেঁটে বেড়ানো টিকটিকিরা 
 জানে সে কথা, আর কেউ না জানুক!

জোনাকির আলোর মতো বুকের গহীনে   
 ভালোবাসার আলো জ্বেলে দিয়ে 
 স্বপ্নের সোনা রোদের আলোয় 
 ঝলসে যেতে চেয়েছি বারবারই 
 কিন্তু আমার স্বপ্নগুলো অকালেই 
 কাঁঠাল মুচির মতো ঝরে পড়েছে,  
তলিয়ে গেছি অপ্রেমের গহীন আঁধারে!  

তবুও আমি ভালোবাসতেই ভালোবাসি, 
ভালোবেসে হেরে গিয়েও 
বারবারই ভালোবাসি, 
আমৃত্যু ভালোবাসা নামের এক
 দুরারোগ্য অসুখে ভুগতেই ভালোবাসি!

২)  শুধু তুমিই থাকলে না 

 সমুদ্র দেখে এতো ভয় 
 পাবার কী আছে? 
 ওটা তো আমার বুকের 
 মধ্যেই খুঁজে পেতে পারো! 

 এই যে বিশাল আকাশ দেখছো, 
 তা দেখে কখনো কী মুগ্ধ হও নি? 
 এই বুকের গহীনেও লুকিয়ে আছে 
 জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া হৃদয়ের
 কষ্টে নীল হয়ে থাকা সুনীল আকাশ!

 পাথুরে পাহাড় দেখে অমন 
 থমকে দাঁড়ালে কেনো? 
 ওটা তো আমার হৃদয়কে 
 অনুবাদ করে দেখলেই পারো!

 ভালোবাসা না পাওয়ার বেদনায় 
 বুকের মধ্যে পাথুরে পাহাড় জমে
 কেমন মসৃণ কালো পাথরের মতো
 নির্বাক চেয়ে থাকা অসীমের পানে 
 এই আমিই তো তা-ই! 

 নদীর নিরবধি বয়ে যাওয়া দেখে 
 তুমি আশ্চর্য হয়ো না 
 কারণ ওটাও এই আমিই তো! 
 যার বয়ে চলা নিরন্তর 
তোমার দিকেই প্রত্যহ।

 মৃত্তিকার বুকে এতো 
 জোরে হাঁটো কেনো? 
 কষ্ট লাগে না তোমার? 
 তোমার উপেক্ষা আর অবহেলা 
 পেয়ে পেয়ে এখন সবকিছু 
 সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করে 
 আমিও মৃত্তিকা হয়ে গেছি! 

 এখানে সমুদ্র আছে, আছে পাহাড়, 
 আছে বয়ে চলা নিরবধি নদী, 
 আরও আছে ঐ সুদূরের 
 নীলাকাশ এবং মৃত্তিকাও! 
 শুধু তুমিই থাকলে না!

৩)  যতোবারই মনে করি

 যতোবারই মনে করি ভুলে যাবো,  
 ততোবারই ফিরে ফিরে 
 আসো তুমি অম্লান স্মৃতির পাতায়! 

 যতোবারই মনে করি ভুলে যাবো, 
 ততোবারই তুমি ফিরে ফিরে 
 আসো উতরোল নদীর ঢেউয়ের মতো! 

 যতোবারই মনে করি আর মনখারাপ
 করবো না তোমার কথা মনে পড়লে, 
 ততোবারই অশ্রু লুকিয়ে মুছে ফেলি! 

 যতোবারই মনে করি তোমার স্নেহস্পর্শ 
 পেতে আর কখনোই অস্থির হবো না
 প্রবল তৃষ্ণায় ছটফট করতে থাকা
 বিনিদ্র একাকী নিবিড় রাতের আঁধারে,  
 ততোবারই কেনো যে এতো অমন
 ছটফট করি অর্বাচীন বালকের মতো!

 যতোবারই মনে করি আর কারো কণ্ঠে
 বাবা ডাক শুনে ঈর্ষান্বিত হবো না,  
  ততোবারই নিজের কাছে দেয়া
 প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে ঈর্ষান্বিত হই! 

 যতোবারই মনে করি তোমাকে ভুলে
 গিয়ে খুব বেশি ভালো থাকবো, 
 ততোবারই ভালোথাকা দূর থেকে
 দেখা মরুভূমির বালিয়াড়ির ধূধূ শূন্যতা 
  দেখে তৃষ্ণার জল ভেবে ভ্রম করি! 

 যতোবারই মনে করি এপ্রিল মাস 
 আসলে ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো  
 ছিঁড়ে ফেলবো যেনো তোমার চলে 
 যাওয়া দিন মনে না পড়ে, 
 স্মৃতির খেরোখাতায় শোকের ছায়া 
 তখন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে!

 গোলাম কবির
ঢাকা, বাংলাদেশ