অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪
আমাকে একটি কথা দাও - পুলক বড়ুয়া

গো সঞ্চয়িতা ওগো সঞ্চিতা

আমি তো আমাকে ফিরিয়ে নিইনি
আমি তো আমাকে গচ্ছিত রেখে এলাম
তোমার কথার এলবামে থেকে গেলাম 
তোমার কথামতো
তোমার অন্তঃস্থ-বহিঃস্থ উচ্চারণগুলো 
বরাবরই  আমার খুবই প্রিয়
আমি তোমার অমূর্ত অক্ষরের প্রতিবেশী 
আমি তোমার মনোনীত শব্দের 
অভিধানোত্তর দ্যোতনা
আমি তোমার বাক্যের অনিবার্য উত্থান
আমি তোমার স্বগত কথার স্বরলিপি-শিখন 
আমি তোমার একটি কথার ব্যাকরণ
আমি তোমার না-বলা বাণীর অনুরণন
এই যে লেখাপড়াশোনা— এ-তো এক—
অপ্রকাশিত পুঁথি হাতে পাওয়ার 
আগেই তোমার কাছে শেখা
যে অব্যক্ত গ্রন্থটি খুলে আমি
একটি কথাই শিখবো
একটি কথাই জানবো
একটি কথাই ভাববো
একটি কথাই বুঝবো
একটি কথাই লিখবো
একটি কথাই পড়বো
একটি কথাই বলবো
তার অনেক আগেই
অনেক অলব্ধ কথার সমাহার সেই
অপ্রস্তুত অথবা প্রকাশিতব্য গ্রন্থ পাঠের পূর্বেই
তুমি আমাকে শুধু তার একটি কথাই দাও
বীজের মতো আমি তাকে হৃদয়ে বুনবো
বীজের মতো আমি তাকে আত্মায় পুষবো
বীজের মতো আমি তাকে বুকে আগলে রাখবো
তুমি আমাকে সেই একটি কথাই দাও
তুমি আমাকে সেই কথাটিই দাও
কলমে নিয়ে আমি তাকে মনে জুড়ে এক 
চমৎকার চারাগাছ করে তুলবো
অনুরাগে-সোহাগে
বিকশিত করে তুলবো কুসুমিত করে তুলবো
সুরভিত হবে সে সুশোভিত হবে সে
ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হবে সে 
কথাটি কথামালা হয়ে 
মর্মশোভা-মনোমণিমালা হয়ে নিরহঙ্কার অলঙ্কার হয়ে
তোমার অঙ্গ থেকে আমার অঙ্গে বেজায় বেজে যাবে 
আমাকে আলিঙ্গন করবে সে
আমাকে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছায়-ভালোবাসায়
নিবিড় হয়ে সিক্ত হবে আত্মনিবেদনে মশগুল হবে
কথাহীন আমি ভেসে যাব
কথাহীন কথার স্রোতে আমি ভেসে যাব
কথাহীন কথার স্রোতে আমি তোমার কাছে পৌঁছুবো
কথাহীন কথার স্রোতে আমি তোমাকে জাগাবো
কথাহীন কথার স্রোতে আমি তোমাকে দেখব
কথাহীন কথার স্রোতে আমি তোমাকে শুনবো
কথাহীন কথার স্রোতে আমি ছুটে যাবো
কথাহীন কথার স্রোতে ইচ্ছেগুলো থাক ইচ্ছেমতো 

রঙ যেমন তুলি ছুঁয়ে, জড়িয়ে
সাধের কথারা, স্বাদের কথারা
ইজেলের মতো তোমার বাহুডোরে
তোমার বুকের ক্যাম্পাসে-ক্যানভাসে
তোমার ওষ্ঠের প্রসাধন-সাধন হয়ে শুয়ে …

কথাগুলোর একটি প্রদর্শনী করো

সবচেয়ে সুন্দর কথাটি সবচেয়ে প্রিয় কথাটি
একান্ত কথাটি
আমি নিতে চাই
আমাকে উপহার দিও
জানি, তোমার কোটরে লুকিয়ে রাখা
চিরকুটের মতো ঐ গভীর গোপন কথাটি ঠিকানা চায় 
জানি, দুই পাহাড়ের মতো বুকের খাঁজ থেকে 
তুলে আনা সদ্য তোলা অশরীরী আশরীর
ভাঁজ করা আশু কথাটি নিজেকে নিভাঁজ 
সটান ধীরে সুস্থে মেলে ধরতে চায়
হাতের মুঠোয় মুষ্টিবদ্ধ উক্তিটি ছোট্ট 
একটি পাখির মতো ছটফট করছে
তুমি তাকে প্রমুক্ত করো
তোমার কথাকে আমার বার্তা কক্ষে—বাগযন্ত্রে 
ঢেলে দাও, আমি তার মৌলিক আস্বাদ নেব
শব্দের চে' দ্রুত, আলোর চে' তড়িৎ
তোমার মনের মৌনাবেগ, সবেগ হৃদয় 
আপাদমস্তক সঞ্চালন করো সর্বাঙ্গে পাঠিয়ে দিও 
আমার পানপাত্রে ঢেলে দিও

আমার বুকপকেটে তোমার দেয়া সুগন্ধি 
রুমালের মতো ম ম 
করবে তোমার সত্তার সুধা—তোমার  সমগ্র কথারা—
কথামুখ, কথাসমগ্র

আমাকে অথবা আমার মাথামুণ্ডু-করোটি—আমার বেবাক কথার কারখানা
তোমার স্বাগত কথার ফাঁকে ফাঁকে 
আমার পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত হারিয়ে যাবে 
তোমার অধরের অক্ষরের গান
কোনো কথার কথা নয়
তোমাকে স্বাগতম—আমি 
আমার একটি বেপরোয়া কথা 
তোমার বোমার মতো কালো খোঁপার কুন্তলে
অথবা  কালো গোলাপের মতো কৃষ্ণ-খোঁপার পাপড়ি-দলের 
মাঝখানে ভাঁজে ভাঁজে গুঁজে দেব
তোমার বুকসমান অথবা বুকের মাপে
আমাকে একটি কথা দাও ।

ওগো সঞ্চয়িতা ওগো সঞ্চিতা
আমাদের মাঝখানে জমে আছে অনেক কথা
দুজনের মাঝখানে জমে আছে অনেক কথা
খোড়লে জমে আছে অনেক কথা

বছরের প্রথম দিনটির মতো 
বছরের শেষ দিনটির মতো 

আমাকে একটি কথা দাও
আমাকে শুধু একটি কথা দাও !

পুলক বড়ুয়া । বাংলাদেশ 
Email : pulak.next@gmail.com