অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২ মে, ২০২৪
একগুচ্ছ কবিতা - আব্দুল খালেক ফারুক

আহা বৃষ্টি!

চোখের উপর নামলো বৃষ্টি
তোমার ছোঁয়ায় একি অনাসৃষ্টি!
আমি ভিজবো বলে বাড়ালাম দু’হাত
প্রেমের বানে ভেসে গেলো সেই রাত।।
জানালার গ্রিলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো ছায়া
অকারণ অভিমান-সমর্পণে বাড়ালো মায়া,
আর একটু বসোনা-কেন এতো তাড়া-
আমি কী একা নষ্ট হবো-তোমায় ছাড়া?
হাসির তোড়ে উড়ে যায় উদ্বেগ-ভয়
পরাজিত হতে আসোনি-করায়ত্ব জয়,
রাতভর শ্রাবণের উৎসবে মাতোয়ারা দু’জন
সরে যায় শাড়ির আঁচল-মৃদুস্বরে বাজে কঙ্কন।
মেঘ সরে যায়-ডাকে পঞ্চদশী চাঁদ
আমার বুকে বাজে প্রলয় ডঙ্কা-বজ্র নিনাদ,
চোখ থেকে বুকে নামে বৃষ্টি-নি:শব্দে
বৃষ্টিময় রাত জমা থাকে স্মৃতিময় শব্দে।

জীবনযাপন

তুমি আগের মতোই 
তীর্যক বাক্যবাণের চাবুকে
কাবু করে নিপাট আনন্দে দুলে ওঠো; 
মেতে ওঠো অলৌকিক সুখে-
ঠোঁটে ঝুলে থাকে গৌরবর্ণ হাসি
চোখে চন্দ্রের ঝিলিমিলি রোশনাই-
তোমার ঘর্মাক্ত সৌন্দর্য ভিজে দেয়
তৃষ্ণার্ত দু’চোখ।

তুমি আগের মতোই
টিপ্পনীর দাঁড়ি-কমায় সাজাও
অনুরাগের পঙিমালা
ঘোরতর গৃহিণীর বেশে
হেঁসেলে কাটাও সন্ধ্যা-রাত। 
পাঠদানের কোলাহলে কাটাও
সূর্যকরোজ্জ্বল দিন।
মাষ্টারিটা এতদমই পছন্দ
ছিলনা তোমার; মাষ্টারকেতো নয়ই-
অথচ কী বিপুল বিষ্ময়!
তুমিও লেখালে নাম সে পেশাতেই। 

দশক পেরিয়ে গেছে-
এখনও আমার চোখের নোনাজল
ভেজাতে পারেনা কারো কম্পিত ঠোঁট-
উন্মাদ ঝর্ণা ভেজাতে পারেনা 
কারো অবিন্যস্ত শাড়ির আঁচল;
এখন নির্ঘণ্টের ঘেরাটোপে 
বন্দী সকাল-দুপুর-রাত।
এখন বিদেশ বিভূঁইয়ে ঘুরে বেড়ায়
পলাতক প্রেম-
বুক ভাঙা অভিমান প্রলয়ংকারী দীর্ঘশ^াস,
আমি বারুদের সাথে করি নিত্য বসবাস।

ফ্যান্টাসি

আমি তোমার ঘুমের ভেতর
হেঁটে বেড়াই স্বপ্নের মতো,
অনন্ত অম্বরে তোমাকে ব্যপ্ত দেখি
নীল চোখের সমুদ্রে ভাসাই
প্রেমের সাম্পান।
বাজুবন্দ-জড়োয়া সজ্জিত
সামনে দেখি এক অগ্নিদেবীকে;
তোমার হাসির গিটারে যখন
টুং টাং সুর,
আমার ভেতর তখন বেহাগ-ভৈরব
নিজেকে আবিস্কার করি
তোমার কোমল বাহুর মুগ্ধ আলিঙ্গনে
আমি তোর গ্রীবায় খুঁজি তখন
সুখের নাগোরদোলা-আনন্দ আশ্রম।
হে নারী-
তুমি কি কেবলই ফ্যান্টাসি?
নাকি কবির শব্দরাজির শিল্পীত সৌরভ?
মগ্ন বসন্তে কেবলই কল্পনার ফানুস?

বৃন্দাবনে কৃষ্ণলীলা

তোমার প্রেম তপোবনে
আমি বনোয়ারী, খুঁজি আশ্রম;
তোমার বুনো হৃদয়ের 
আদিম উষ্ণতায়
বিগলিত হবো আমি সফেদ সমুদ্র।
কতকাল আর চষে বেড়াবো 
বৃন্দাবনে, একাকি-
অভয়াণ্যের নিরন্ধ আঁধার ভেঙে
তুমি এসো ব্রজেশ্বরী- 
জোস্নার উজ্জ্বলতা গায়ে মেখে
সুডৌল যুগল নিয়ে দাঁড়াও তুমি
নিঃশ্বাসের কাছাকাছি:
অত:পর-
এক ঝাঁক বুনো কোকিলের 
কোরাস গীতে মোহিত হয়ে
আমরা দু’জন মেতে উঠবো
গোপন লীলায়। 

বিবর্ণ শিলালিপি

যদি ইচ্ছে হয়-
আমার ঘুমের বাগানে এসে 
ফোটাও সতেজ পাপড়ি;
আমার মনের গহীনে
একবার ঢু মেরে দেখো-
সেখানে তরঙ্গিত এক সফেদ বিশ্বাস
আমার হৃদয় খুঁড়ে দেখো,
সেখানে খোদিত এক বিবর্ণ শিলালিপি
তার নাম-
ভালোবাসা।

আব্দুল খালেক ফারুক । কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশ