অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২ মে, ২০২৪
চাষা - মুতাকাব্বির মাসুদ

মাফ করে দে না ভাই
চাষা ছিলাম-চাষাই থাকি
পোয়াতি মাটির সোঁদা গন্ধ ছাড়া আমার চলেই না!
ঐ মাটির ভেজা শরীর আমার মায়ের ছায়া
চোদ্দপুরুষের পায়ের ছাপ!
বয়সী আঙুলের ফাঁকে জল ভেজা
পঙ্কিল মৃত্তিকায় মাখানো দগদগে ঘন ঘায়ের গন্ধ
আমাকে আমার পূর্বপুরুষ চিনতে শেখায়
ঐ যে ঈশানের ভাঙ্গা জানালা
এখানে আমার পূর্বপুরুষের লাঙ্গল, জোয়াল
আর মই - বাঁশের নিড়ানি
পাশেই খড়ো ঘর-ঢেঁকির চাতাল
চারপাশে কেমন এক মনকাড়া অহংকারী গন্ধ
আমার মায়ের!
আমি চাষার পোলা!
পেঁকো-কাদায় মাখামাখি জীবন খুঁজি
ছন-নেড়ার চবুতরে
কুয়াশায় ভেজা শিশিরে কিংবা মসৃণ দুর্বাঘাসের শরীরে
নারকেলের ছোবড়ায় পাকানো দড়ির ঝুলানো কুর্তায়
আমার সেই কিষাণী চোদ্দপুরুষের ছায়া!
আমি চাষার পোলা!
আমি আমার পূর্বপুরুষের সাথে থাকতে চাই
যখন দিবসের প্রথম আলো ফজরের আজান মাখে গায়
কুয়াশায় ভিজেভিজে উঁকি মারে পুবের দিগন্তে
তখন নামাজ শেষে রক্তে স্পন্দিত হয়
সুরমাই রঙের আঠালো মাটির গন্ধ
আমাকে করে বিমুগ্ধ-বিভোর!
আর দলেদলে চাষারা ছুটে
জল বিছানো খানাখন্দভরা অমসৃণ আলপথে
যেনো মাঠ তাঁর জীবিকার পালকি
বুক তাঁর মাটির দলা!
আমি চাষার পোলা!
নগর সভ্যতা আমাকে টানে না
এখানে গাঁয়ের মানুষের মতো আমাকে
কেউ চেনে না!
এ নগরে মানুষের চেয়ে কুকুরের মূল্য বেশি
হাভাতে মানুষ মরে-কুকুর মরে না!
আমিতো দেখেছি উজান সকালে
কুকুরের মুখে ছিটিয়ে দেয়া খাদ্য
দেখেছি নিরন্ন-বিবস্ত্র বঞ্চিত মানুষের হাহাকার!
খাবার চেয়ে ধনাত্মক আশ্বাস মেলেনি কখনো
বলতে পারিনি গাঁয়ের কোথাও কি তোমার বাড়ি?
এ নগরে -
কিষাণের গন্ধ নেই
গাঁয়ের গন্ধ নেই
সকাল থেকে দুপুর,দুপুর থেকে সন্ধ্যা
সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের উরসে মমতার চাদরে
উজাগর মায়ের গন্ধ নেই!
নেই আজন্ম মাটির সাথে আমার চির সখ্যতার
সেই সোঁদা গন্ধ!
কোথাও পাইনি চাষার হৃদয় কুঁড়ে
ফলানো ফসলের গন্ধ !
এ নগর মাটি ছেড়ে উচ্চতায় গিয়েছে বহুদূর
আমি রোজ ভোরে কিংবা দিনের শেষে
মাটির সানকিতে আমার মনোরম পূর্বপুরুষের অহংকারী ছায়া দেখি
আত্মচেতনায় তীব্র অনুপ্রাণনে।

মুতাকাব্বির মাসুদ । শ্রীমঙ্গল, বাংলাদেশ