অটোয়া, বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
ভালো আছি, ভালো থেকো - সুনির্মল বসু

     স্বপ্নলীনার সঙ্গে দেখা বিশ বছর বাদে।
     আসলে, অফিসের একটা প্রোজেক্টের কাজ দেখতে সমুদ্রনীলের এখানে আসা, কাজ দেখার পর, এখানকার চীফ ইঞ্জিনিয়ার শুভব্রত চৌধুরীর অনুরোধে তার বাড়িতে আসতে হোল, ওকে। স্বপ্নলীনা যে শুভব্রতের স্ত্রী, তা জানা ছিল না, সমুদ্রনীলের।
     স্মৃতিতে ধাক্কা, সেই স্বপ্নলীনা, সমুদ্রনীলের অতীত।
     পরিচয় পর্ব সারা হোল। স্বপ্নলীনার মধ্যে কোনো জড়তা নেই। সমুদ্রনীল স্বাভাবিক হোতে পারছে না।
     স্মৃতি পিছু টানছে। ভার্সিটিতে একসঙ্গে পড়ত ওরা। সমুদ্রনীল তখন গল্প লিখত। স্বপ্নলীনার বাবা বেঙ্গল ল্যাম্পের ডিরেক্টর। ফিয়াট চড়ে ক্লাসে আসতো ও। যথেষ্ট সুন্দরী ও, কাউকে পাত্তা দিত না। সেই মেয়ে যেচে আলাপ করেছিল, সমুদ্রনীলের সঙ্গে।
     আমি তো বন্ধন রায়ের প্রেমে পড়ে গেছি।
     বন্ধন রায়, ওর‌ গল্পের হিরো।
     বন্ধুরা বলেছিল, ঐ মেয়ে তোর সঙ্গে যেচে আলাপ করেছে, চল্, রাখালদার ক্যান্টিনে খাওয়াতে হবে।
     সেই প্রথম আলাপ।
     তারপর বসন্ত কেবিনে, কফি হাউসে কতবার কত কথা হয়েছে, কত অসংখ্যবার। রাতে গোলদীঘির পাড়ে বসে চাঁদের আলোয় দুজনে জ্যোৎস্নায় ভিজেছে কতদিন।
     স্বপ্নলীনা অতীতের কথা তোলে নি, সমুদ্রনীল  নীরব থেকেছে। মিষ্টি ও কফি খেয়ে, ও বেরিয়ে পড়ে।
     বিকেলে পার্টিতে আবার দেখা। শুভব্রত রিসেপশনে ব্যস্ত।
     স্বপ্নলীনা আজ দারুন সেজেছে।
     কাছে এলো, সমুদ্রনীলের।
     আবার দেখা হোল,
     তাই তো,
     কুড়িটা বছর পার,
     জীবনটা তো রাজধানী এক্সপ্রেস,
     হুম্,
     সেসব দিন মনে পড়ে,
     পড়ে, না মনে পড়লেই ভালো,
     শুধু শুধু পুরোনো ক্ষতে হাত,
     দোষটা কার,
     কারো নয়, দোষটা ভাগ্যের,
     বিয়ে করেছো,
     প্রেমহীন বিয়েতে আমার বিশ্বাস নেই, তাছাড়া, সময় পাই নি,
     নিজেকে আর কত কষ্ট দেবে,
     বলতে পারবো না,
     আমি কিন্তু অপেক্ষা করেছিলাম,
     জানি, আমার পায়ের তলায় তখন কোনো জমি ছিল না,
     আমার বাড়ি থেকে দেখাশোনা চলছিল, হয়েও গেল,
     সেই রাতে আমি কলকাতা থেকে পালিয়ে সোজা ধানবাদ,
     খুব কষ্ট হয়েছিল সেদিন তোমার,
     পুরুষের অক্ষমতা তুমি বুঝবে না,
     আন্দাজ করতে পারি,
     ভালো হয়েছে, কেউ নেই, কারো জন্য ভাবনার ঢেউ নেই,
     তুমি সুখী হয়েছো, লীনা,
     দেখে কি মনে হয়,
     দেখে বোঝা‌ যায় নাকি,
     চলে যাচ্ছে বেশ,
     মিষ্টার চৌধুরী তো যথেষ্ট সফিস্টিকেটেড মানুষ,
     তা ঠিক, তবে কি জানো, বিয়ে একটা অভ্যাস, একটা দায়বদ্ধতা, এই নিয়ে বেঁচে থাকা,
     আমার মনে হয়, তোমাকে পাই নি বলে, তুমি আমার কাছে রোজ আসো, যখন তোমাকে দেখি না, তখন তোমাকে আরো বেশি করে দেখি,
     কাজের সূত্রে আসো না এখানে,
     না, ভাগ্য যা দেয় নি, তা আমি ঘুরপথে পেতে চাই না,
     তুমি বদলে গেছো,
     হবে হয়তো,
     আমার তো সব মনে পড়ে, আমি তো ভুলেই ছিলাম, তুমি এসে সব ওলোট পালট করে দিলে,
     এই ভালো, ঐ দিনগুলো জীবনের ওয়েসিস, স্মৃতি নিয়ে বাঁচো,
     তুমি পারো,  আমি পারি না,
     কখনো ঝরা ফুলের গন্ধ শুঁকেছো, দেখবে, সেখানে ভালোবাসার সুগন্ধ আছে, আমাকে ভুলে যেয়ো, লীনা।
     ততক্ষণে পার্টিতে ঘোষনা শোনা গেল, মিষ্টার এ্যান্ড মিসেস চৌধুরী,  প্লীজ, কাম অন স্টেজ।
     সমুদ্রনীল চেয়ে দেখলো, ওরা দুজন এগিয়ে গেল। ভালো লাগছিল,  ওদের দুজনকে।
     ভালো থেকো তোমরা, ভালো হোক তোমাদের, স্বপ্নলীনা,  আমি আর তোমার কাছে আসবো না, তোমার আমার অতীত দিনের স্মৃতির মধ্যে বেঁচে থাকবো, স্মৃতির পরমায়ু যে অনন্তকাল। আমি আর তোমাকে বিরক্ত করবো না,  আমি ভালো আছি স্বপ্নলীনা,  তুমি ভালো থেকো।

সুনির্মল বসু। পশ্চিমবঙ্গ, ভারত