অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
স্বপ্নপথের যাত্রী - মুতাকাব্বির মাসুদ

     সোনার সাথে খাদ মেশালেই খাদ সোনা হয়না! প্রদীপের আলোয় অন্ধকারের সাময়িক অবসান হয় ঠিক!তা চিরকালীন নয়! পুনঃ দিবসের শেষে রাত! প্রদীপ সরালে অন্ধকার অন্ধকারই থেকে যায়! অকৃতজ্ঞ অন্ধকার ভুলে যায় আলোর দীপ্তি!
     জ্ঞানীর সাথে নির্জ্ঞানের ছবি থাকলেই নির্জ্ঞান জ্ঞানী হয়ে যায় না! অভিজাতের সাথে অনভিজাত হাঁটলেই অভিজাত হয়ে যায় না। অভিজাতের একটি মানবিক মন ও মননের প্রয়োজন। নির্জ্ঞানের যেমন তা নেই- তেমনি তথাকথিত অভিজাতেরও তা নেই। গুণের তুলনায় তারা সমান সমান। প্রকৃত অভিজাত কে আমার জানা নেই! তবে এর একটা ধ্রব আছে- আছে দর্শন! আলো একটা ধ্রুব নিয়ে চলে। সে নিজেই যেমন বিভার সম্পূরক অংশ ; সেক্ষেত্রে অন্ধকারকে তাড়িয়ে দেয়াই তার ধর্ম। অন্ধকার নিজে আলোকিত হয় না। তার জন্য প্রয়োজন আলো। কিন্তু অন্ধকার তা মানে না। তার উদ্ধত উচ্চারণ: 'দেখ আমি যেমন ছিলাম তেমনই আছি। আলো আমাকে হটাতে পারে না। তুলনায় আমার শক্তি বেশি। বাতাসে প্রদীপ নিভে যায়। অন্ধকারকে হারিয়ে দেয় এমন শক্তি কারো নেই! জ্ঞানের গরিমায় তুমি অন্ধ, আভিজাত্যের অহংকারে তুমি অন্ধ, ততোধিক সম্পদের অহংকারে তুমি অন্ধ! জন্ম-থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তুমি অন্ধকারেই হাঁটছো! আমি কোথায় নেই? ' আলো কী জানে এ অকৃতজ্ঞ অন্ধকারের এ উদ্ধত যত ইতিকথা?
     খাদ সোনায় মিশে গেলেও সোনা-সোনাই থেকে যায়। সোনা থেকে খাদ(alloy) অপসারিত হলে কেবল অপ্রয়োজনীয় ময়লায় পরিণত হয়। খাদ কখনো সোনা হতে পারে না! জ্ঞানীর সংগ নির্জ্ঞান ছাড়লেও যা-না ছাড়লেও তা। তার ধনাত্মক কিছু গ্রহণ করার ক্ষমতা নেই! সে আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে না। ক্রমাগত হালকার উপর ঝাপসা মেরে অপরের কাঁধে ভর করে নিজেকে জ্ঞানী ভেবে সময় পার করে। বস্তুত রাষ্ট্রের, সমাজের বিদ্যমান অসংগতির ভেতর সে সময়ের অদৃশ্য শক্তিকে 'ব্লাকমেল' করে অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে। অন্ধকার একটি শঠ,ধূর্ত ও নির্মম বর্ণচোরা 'ব্লাকহোল'!  এটি একটি ভয়ঙ্কর তামাসা! সেও জানে-তার যাত্রা অন্ধকার থেকে। সুতরাং অন্ধকারের কখনো আলো সয় না। সে সময় সময় বহুরূপী! জীবনকে টেনে নেয় এক করুণ পরিণতির দিকে!
     সুতরাং বিখ্যাতর পাশে নিজেকে দাঁড় করিয়ে বা ছবি তুলে কল্পনায় বিখ্যাত হওয়া একটি 'ইউটুপিয়া' মাত্র! তার চেয়ে যার যার অবস্থানুযায়ী নিজেকে যেকোনো বিষয়ে বিখ্যাত করে গড় তোলার প্রয়াস থাকা ভালো! জ্ঞানী সাজার দরকার নেই। চারদিকে এতো ভণ্ড-জ্ঞানীরাও ভণ্ড হয়ে যাচ্ছে। তার চেয়ে যার যেটুকু জ্ঞান,মনন-মেধা রয়েছে তার সঠিক চর্চা ও পরিশীলিত অনুশীলন প্রয়োজন। জাতি গঠনে,  একটি নতুন আলোকিত প্রজন্ম তৈরিতে বেশি কিছু লাগে না!
     প্রয়োজন অনৃত,  শঠতা, আর জীবনবিমুখ শিক্ষা থেকে তাদের আগলে রাখা। আর কিছু নাপারা গেলেও অন্তত একটি সঠিক জীবনমুখী শিক্ষা, ন্যায়পরায়ণতা, ও ততোধিক মানবিকতা আর মানবতার সরল পাঠে-আলোকিত ধারায় দীক্ষিত করার মন্ত্রটুকু দিতে পারলেই চলে।আর আমরা পেয়ে যাবো সৎ,নিষ্ঠায় বলিয়ান একটি আলোকিত স্বপ্নপথের যাত্রী। আমরা হবো তাদের গর্বিত অংশীদার!

মুতাকাব্বির মাসুদ। শ্রীমঙ্গল, বাংলাদেশ