অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কৃষকরা নিজের প্রাপ্য সম্মানটুকু পায়নি

বটু কৃষ্ণ হালদারঃ   কৃষক শব্দটি সংজ্ঞা নানা বিধ এরিক উলফ এর ব্যাখ্যায় কৃষক হল চাষী বা আবাদকারী। যাদের অস্তিত্ব চাষাবাদের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে এ সংজ্ঞা প্রকৃতপক্ষে অসম্পূর্ণ কেননা এতে ভূমিহীন শ্রমিকদের বাদ দেওয়া হয়। বাংলার ভূমিহীন শ্রমিকরা সবসময়ই ভূস্বামী এবং শোষণের অন্যান্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেদেরকে কৃষক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এখানে যা গুরুত্বপূর্ণ হলো কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো এক বা একাধিক শ্রেণী যখন নিজেদেরকে কৃষক বলে পরিগণিত করে এবং রাজনৈতিক কারণে কৃষক সম্প্রদায় সঙ্গে নিজেকে এক করে চিহ্নিত করে তখন তাদেরকে কৃষক হিসেবে পরিগণিত করা উচিত। তাদেরকে ধনী মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র এই তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। সাধারণত তালুকদার, রায়ত, এবং নিম্ন রায়তরা যথাক্রমে উপরোক্ত তিন শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে। আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ব্রিটিশরাজ প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে সাধারণ বাঙালিদের মধ্যে বিশেষত মধ্যবিত্ত অভিজাত শ্রেণীর মুসলমান জনগণের দুর্দশা নেমে আসে পলাশীর যুদ্ধ এবং তার পরপরই দ্রুত কতগুলি প্রশাসনিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন একটি নতুন ভূসম্পত্তির মালিক এবং পেশাজীবী অভিজাত শ্রেণীর জন্ম নেয় অন্যদিকে সাধারণ মুসলমান জনগোষ্ঠী ও অভিজাত শ্রেণী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ভূমিব্যবস্থা সম্পত্তির অধিকারী মুসলমানের ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। উনিশ শতকের শেষ অংশে ও বিশ শতকের প্রথম অংশে কৃষক রাজনীতির মূল লক্ষ্য ছিল জমিদার মহাজন ত্রিমুখী ক্ষমতা ও আধিপত্য থেকে নিজেদের মুক্ত করা। তবে ব্রিটিশ রাজত্বের প্রায় প্রথম একশত বছর উপনিবেশিক ব্রিটিশ চাই অধিকাংশ কৃষক এর দৃষ্টিতে প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত ছিল। এর মূল কারণ ছিল সরকারের জমিদারি ব্যবস্থার প্রসার ও নীলচাষের স্বার্থরক্ষাকারী কার্যকলাপ যা কিনা প্রত্যক্ষভাবে কৃষকদের স্বার্থের পরিপন্থী ছিল। ভারত উপনিবেশের বুকে ব্রিটিশদের কার্যকলাপ কৃষকদের চক্ষুশূল হয়ে উঠতে থাকে। ব্রিটিশদের চরম অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ধীরে ধীরে কৃষক সম্প্রদায় আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়। এমন বহু আন্দোলন আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো সিপাহী বিদ্রোহ।
     ভারতীয় সেনা যারা মূলত সিপাহী নামে পরিচিত ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তারা যে বিদ্রোহ করেছিল তা মূলত ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। ১৮৫৭ সালে উত্তরপ্রদেশের মিরাট জেলার বিজরৌল নামের একটি গ্রামে প্রায় ৮৪টি গ্রামের হাজার হাজার কৃষক মাঠ ছেড়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। কৃষকদের স্বাধীনতা আন্দোলনে উজ্জীবিত করেছিলেন কৃষক নেতা শাহ মাল। "দ্যা খাকি রিজাল্লাহ" নামক বইয়ে রবার্ট  হেনরি ওয়ালেস ডানলপ লিখেছিলেন "ওই জেলার মানুষদের রাজা নাকি আমাদের বিজয় হচ্ছে তা নিয়ে এক ধরনের উত্তেজনার মধ্যে ছিলেন"। তৎকালীন সময়ে তিনি সেখানকার সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা ছিলেন। বিদ্রোহের সময় রবার্ট হেনরি ওয়ালেস ডানলপ ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। বিদ্রোহী শাহ মাল ছিলেন অসম্ভব রকমের একজন সাহসী কৃষক নেতা। তিনি সে সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করতেন এবং দিল্লিতে বিদ্রোহীদের কাছে সেই অস্ত্র পাঠাতেন। বিদ্রোহের সময় তার নেতৃত্বেই যমুনা নদীর ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে দিল্লিতে ব্রিটিশ হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে মিরাটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ১৮৫৭ সালের জুলাই মাসে কৃষক নেতা শাহ মালের নেতৃত্বে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কৃষক তলোয়ার হাতে লড়াই শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেনাদের বিরুদ্ধে। অথচ ব্রিটিশ দের কাছে ছিল অশ্বারোহী,পদাতিক বাহিনী ও আর্টিলারি রেজিমেন্ট। ওই যুদ্ধে প্রাণ হারান শাহ মাল।
     শাহ মালের এই বিদ্রোহের ঘটনা ব্রিটিশদের কাছে "ভুঁই ফোঁড়" ব্যক্তির ঘটনা যে কিনা হঠাৎ করে এক গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এমনকি ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ঘটনার সাধারণ বর্ণনায় যেখানে বলা হয় সিপাহিদের উত্তর ভারতের সাবেক শাসকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল সেখানে শাহমান এর নেতৃত্বে এই কৃষক আন্দোলন তেমন গুরুত্ব পায়নি। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সাধারণ কৃষকদের অবদান ইতিহাসে কেমন ভাবে তুলে ধরা হয়নি। ভারতের সাংস্কৃতিক বিষয়ক ইতিহাসবিদ সুমন্ত ব্যানার্জি তার বই "ইন দা ওয়ে ক অফ নকশাল বাড়িতে" লিখেছেন- "১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশই ছিল উত্তর ভারত জুড়ে হাজার হাজার কৃষক দের বিদ্রোহ"
     ইতিহাসবিদ মিস্টার ব্যানার্জি আরো বলেন- "তৎকালীন বুর্জোয়া ইতিহাসবিদদের কারণে সেসব কৃষকদের কথা চাপা পড়ে গেছে"। তবে এই উক্তি অস্বীকার করার কোন কারণ থাকতে পারে না। কারণ আমাদের ভারতীয় ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রকৃত বিদ্রোহীদের ইতিহাস, ও প্রকৃত দেশপ্রেমিকরা রয়ে গেছে যবনিকা পর্দার আড়ালে। ১৮৫৮ সালের ব্রিটিশদের তথ্য অনুযায়ী জানা যায় সেই সময়ে মিরাটের গ্রামে কিভাবে ব্রিটিশরা আক্রমণ করেছিল রোমহর্ষক সেই ঘটনার কথা।"বড় বড় গ্রাম গুলো দখল করে ফেলা হয়েছিল, অন্যায় ভাবে  বহু মানুষকে নিহত করা হয়, প্রায় ৪০ জনকে জীবিত অবস্থায় কারাবন্দি করা হয়। পরে এদের সবাইকে ফাঁসি তে ঝুলানো হয়। এমন তথ্য দিয়েছিলেন ইতিহাসবিদ ও লেখক অমিত পাঠাক।
     ব্রিটিশরা তৎকালীন সময়ে যে গ্রামগুলোকে দখল নিয়েছিলেন তাদের নাম দিয়েছিলেন "বাগি"। গ্রাম গুলো দখল নেওয়ার পর শুরু হয় ব্রিটিশদের অত্যাচার। "সত্যি কারের বিদ্রোহ হয়েছিল ভারতবর্ষের গ্রামাঞ্চলে", বিবিসিকে এমন তথ্য দেন ইতিহাসবিদ অমিত পাঠাক। তিনি আরো জানান, "দুঃখের বিষয় হলো ওই গ্রামগুলোতে বিদ্রোহীদের পরিবারের যেসব সদস্য গুলো এখনো বসবাস করছে তাদের বেশিরভাগ খুব গরিব। অত্যন্ত দুঃখ দুর্দশার মধ্যে তাদের জীবন কাটছে"। দিল্লিতে যখন সিপাহী বিদ্রোহের অবসান ঘটলো তখন বিদ্রোহীদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয়, এবং তাদের জমিজমা বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরে সেগুলো নিলামে তোলা হয় এবং যারা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অনুগত ছিল তাদের মধ্যে সেইসব জমিজমা ভাগ করে দেওয়া হয়। এমনটাই ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান কারী কৃষকদের দুর্দশার নিদারুণ ইতিহাস। তবে এমন বহু আন্দোলন আছে যা আজও ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়নি। দেশের জন্য নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করেও তারা কেন ইতিহাসের পাতায় স্থান পেল না তা নিয়ে রয়ে যাচ্ছে প্রশ্ন চিহ্ন।
     আবার ১৮৭২_৭৩ এর দশকে সিরাজগঞ্জ ও পাবনা বিদ্রোহ ছিল স্থানীয় জমিদার কর্তৃক খাজনা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল সহিংসতা এবং রাজনৈতিক চরিত্রের কেননা জমিদারি প্রথা বিলোপ করা আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল না। তারা এইসব জমিদারের কাছে অনায্য খাজনা থেকে রেহাই চেয়েছিলে ন। নৈতিক অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে এদের অস্তিত্ব তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। যেহেতু সরকার সহিংস আন্দোলনের বিকল্প হিসেবে অহিংস ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে ছিল এবং কৃষকদের শান্ত করার উদ্দেশ্যে তাদের জন্য অধিক অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।
     ভারত বর্ষ নদীমাতৃক দেশ হওয়ার ফলে, কৃষি কাজের মধ্যে দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধশালী করে তুলেছে কৃষকরা। কৃষকরা তাদের যথাসাধ্য শ্রম দিয়ে যুগের পর যুগ ভারতবাসীর মুখে অন্ন তুলে দিয়ে আসছে। জনগণের মুখে খাদ্যের যোগান দিয়ে হাসি ফোটানো কৃষকদের চাপা কান্না রয়ে গেছে হৃদয়ের অন্তরালে। কারণ কৃষকরা সঠিকভাবে তাদের শ্রমের মূল্য পায়নি এই দেশে। কখনো অতি বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট, আবার খরাতে সময় মত চাষ আবাদ না করতে পেরে ঋণের ভারে জর্জরিত কৃষক দের আত্মহত্যার ঘটনা এদেশে নেহাত কম নয়। আবার কখনো ভালো ফসল হলেও কৃষকরা বাজারে তেমন দাম পায় না। এমন ঘটনা আজ বোধহয় কারোর অজানা নয়। তবুও সব কিছুকে মেনে নিয়ে হাসিমুখে নতুন করে বাঁচার আশায় স্বপ্ন দেখেছে বারবার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পদদলিত হয়েছে। বহু কৃষক পরিশ্রমের মূল্য পায়নি বলে কৃষি কাজ ছেড়ে ভিনদেশে পাড়ি দিয়েছে। আমাদের দেশের কৃষকদের জীবনের অবস্থা ঠিক প্রদীপের মত। প্রদীপ যেমন উপরের অংশ আলোকিত করে, নিম্নাংশে আঁধারে ঢেকে থাকে। আমাদের দেশে বিড়ি সিগারেট কারখানার মালিক, আড়তদার, জোয়ারদার, ব্যবসায়ীদের সন্তানরা ঠান্ডা গাড়ি চড়ে, দামি স্কুলে পড়ে, বহু টাকা অপচয় করে বিদেশে পড়তে যায়, আর অন্নদাতা কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জনগণের মুখে সর্বদা হাসি ফোটাতে ব্যস্ত থাকে। তারা আজও চাষির ছেলে চাষি হবে এই শ্লোগান দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেনি। আবার কখনো নিজেদের পরিবারের মুখে দুই বেলা ঠিকমত অন্ন তুলে দিতে পারে না, দামি স্কুল তো দূরের কথা, সরকারি স্কুলে পড়ানোর ক্ষমতা তাদের থাকে না, এমনকি লজ্জা নিবারণের জন্য একটু দামি পোশাক তাদের গায়ের জোটে না। সেই কৃষকদের আত্মহত্যার ইতিহাসটা এদেশে আজও প্রচলিত। এই দেশে মেহুল চোকসী_ ৫৪৯২ কোটি,  রামদেব_ ২২১২ কোটি,  বিজয় মালিয়া_ ১৯৪৩ কোটি টাকা ঋণ মুকুব করা হয়, কিন্তু কৃষকদের হাজার টাকা ঋণ মুকুব করার কথা ভাবেনি কোন সরকার। তারওপর বিজয় মালিয়া, নীরব মোদির মতো এমন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি দেশের কোটি কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যায়, সাধারণ জনগণের সহায়-সম্বলহীন আস্থা ব্যাংকগুলো দেউলিয়া ঘোষণা করেন, আর তার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে, ব্যাংকে জমানো পুঁজিতে সুদের হার কমিয়ে চলেছে সরকার। সাধারণ জনগণের মাথার ওপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে, তার সাথে সাথে দৈনন্দিন জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি করেই চলেছে। স্বাধীনতার পর থেকে আজও "গরিবি হটাও" স্লোগান বর্তমান সমাজে খুবই প্রাসঙ্গিক। একের পর এক  সরকার পরিবর্তন হয়েছে, পালা বদল হয়েছে, কিন্তু বদলায়নি কৃষকদের ভাগ্য। দেশের নেতারা ভোটের সময় নানান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কৃষকদেরকে স্বপ্ন দেখিয়েছে, স্বপ্ন পূরণ করার মত দুঃসাহস কোন সরকার দেখায়নি। আমাদের দেশের জনগণ প্রচণ্ড গরমে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়, বোমাবাজি করে, গুলির লড়াইয়ে মেতে উঠে নিজেদের প্রাণ বলি দেন, আর রাতারাতি ভাগ্য বদলে যাওয়া নেতারা ঠান্ডা গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ায়। সেই ঠান্ডা গাড়ির চাকার তলায় পিষে মরে ভোটদাতা সেই জনগণরা। আবার নিজেদের স্বার্থে রাতারাতি দল বদল করা নেতার সংখ্যা কিন্তু এই ভারতবর্ষে কম নয়। এসবের মাঝে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার শুধু যাঁতাকলে পিসে মরে। শুধু তাই নয় স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই ভারতবর্ষে এখনো "জারোয়া" নামক উলঙ্গ জনজাতি দেখা যায়। বিদেশ থেকে লোকজন পয়সা দিয়ে সেই উলঙ্গ জনজাতিকে দেখতে আসে ভারতবর্ষে, এ আমাদের দেশের চরম লজ্জা ছাড়া আর কি হতে পারে। যে দেশের সরকার উলঙ্গ জনজাতিদের প্যান্ট জামা পরিয়ে সভ্য করে তুলতে পারেনি, সেই দেশে প্রতিনিয়ত কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটনা যে শুধুমাত্র নিছক তা বলা বাহুল্য।
     গ্রীস্মের পর বর্ষা, বর্ষার পর শীত, এমনিভাবে কালের নিয়মে ঋতুচক্র ঘটতে থাকে। তারি মাঝে কৃষকরা মাঠে যায় মহানন্দে চাষ করে। লকডাউন এর জেরে যখন সমগ্র বিশ্ব গৃহবন্দী, চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কারণ পরিবারের মানুষজন গৃহবন্দী, পেট কিন্তু লকডাউন নয়। ঘরবন্দী মানুষগুলোর খাবারের চাহিদা বাড়বে, তাই চাষীদের ছুটি নেই। কৃষিকাজ হল চিরস্থায়ী ব্যবস্থা। তাসের ঘরের মতো নুইয়ে পড়ে না কৃষি ব্যবস্থা। কিন্তু এবার বাঁধ সাধলো উমপুন। যে সময়ে চাষিরা ব্যস্ত খারিফ শস্য তোলার কাজে, সে সময় হানা দিল বিধ্বংসী উমপুন। উমপুনের বিধ্বংসী তাণ্ডবে সর্বশান্ত চাষীরা। মাঠের শস্য মাঠেই রইল কিন্তু তা জলের তলায়। কার্যত চাষি ভাইদের শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়ে গেল উমপুন। বর্তমানে ফসলের চাহিদা অনুযায়ী, ভালো দাম পাওয়া যেত, তাই উমপুনের ধাক্কায় ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়াতে কৃষক দের দুঃখ হচ্ছে না, তাদের দুঃখের প্রধান কারণ হলো এই সময় তারা সাধারণ জনগণের মুখে সময়মতো ফসল তুলে দিতে পারবে না বলে। তাই এবার সরকার কৃষকদের কথা ভাবুক। কারণ এতদিন যাবৎ কৃষকরা এই দেশের কথা ভেবে এসেছে, সাধারণ জনগণের কথা ভেবে এসেছে, তাই সরকারের উচিত এই চরম দুঃসময়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো। তা না হলে আগামী দিনে বহু কৃষক পরিবার অভিমানে চিরতরে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে, আর তার দায় কিন্তু বর্তাবে শুধু সরকারের উপর।
(তথ্য সংগৃহীত)

বটু কৃষ্ণ হালদার, কবর ডাঙ্গা, কলকাতা