অটোয়া, রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
শরীর, সমাজ ও ব্যাধি: একটি তৃতীয় বৈশ্বিক সন্দর্ভ - জয়প্রকাশ মণ্ডল

     ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম পৃথিবীতে লন্ডন স্কুল ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিষয়টি সামনে আনে। এর পূর্বে জনস্বাস্থ্য, সংক্রামক ব্যাধি, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সেভাবে সমাজ তথা রাষ্ট্রে আমদানি হয়নি। যদিও ভারতে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমলে ১৭৬৪ সালে মেডিকেল সার্ভিস চালু হয়েছিল, কিন্তু তা মূলত ভারতীয় ক্লাইমেট তথা জলবায়ুর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে আগত ইংরেজ কর্মচারীদের কি ধরণের রোগের শিকার হতে পারে, তার জন্য মুশকিল আসান করাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে ভারতীয়রা সেই গবেষণায় একেবারে বিধেয় ছিল। ১৮৬০ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর রোগের গবেষণার ক্ষেত্রে যে জীবাণুতত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন, তা থেকে মূল রোগের জীবাণু শনাক্ত করা এবং সেই অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগের জ্ঞান চিকিৎসাশাস্ত্রের মূল দায়িত্ব হয়ে ওঠে। এর প্রায় ৪ দশক পরেই ১৮৯৮ সালে প্র্যাট্রিক ম্যানসন, যাকে ট্রপিক্যাল মেডিসিনের জনক বলা হয়, শেতাঙ্গরা কিভাবে নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে সুস্থ স্বাস্থ্যে উপনিবেশ স্থাপন করতে পারে, তার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। সুতরাং তখন থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়, ইতিহাস কেবল রাষ্ট্রের হাতে আইন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সেনাবাহিনী প্রভৃতি নানান অস্ত্র তুলে দেয়নি বরং রাষ্ট্রের একটি বিরাট আধুনিক অস্ত্র হল শরীরবিদ্যা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভিত্তিতে জনস্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করা।
     ইতিহাসের একটি পরিসংখ্যান কেবল ভারতীয় ক্ষেত্রে প্রামাণ্য হয়ে রয়েছে। যা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কাছে অত্যন্ত শ্লাঘা এবং হৃদকম্পন অবস্থার ন্যায়। কারণ ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে যে মহাবিদ্রোহ ঘটে, তার মহড়া থেকে ওই সময় পর্যন্ত যত ইউরোপীয় সৈন্য ও অফিসার অকালে প্রাণ দিয়েছেন, তাদের মৃত্যুর কারণ যুদ্ধ হেতু নিতান্তই কিঞ্চিৎকর। ৯৪ শতাংশ ইংরেজ সেনা ও অফিসারের ভয়ানক মৃত্যু ঘটেছে কলেরা, ম্যালেরিয়া, অজানা জ্বর, লিভারের সমস্যা, রক্ত আমাশা প্রভৃতির প্রকোপে (রামাসুব্বান, পাবলিক হেল্থ, ২০)। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে মারাঠা শক্তির বিরুদ্ধে জমায়েত করা ব্রিটিশ সৈন্য এক সপ্তাহের মধ্যে ৭৬৪ জন কলেরায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়। ১৮৬৪ সালে ভারতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২ লক্ষ ২৭ হাজার। অসুস্থ ও মৃত্যুর জন্য সেই সংখ্যা ৮২ হাজারে এসে দাঁড়ায় (গৌতম ভদ্র, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, নিম্নবর্গের ইতিহাস, ১৬৩-৬৪)। সুতরাং সেইসময়কার সরকার রাষ্ট্রের শর্ত পালনে যথার্থ সহায়ক ছিল না, তেমনি উপনিবেশের মানুষগুলোর প্রতি ন্যূনতমও স্বাস্থ্যের নজর দেয়নি। পরবর্তী সময়ে ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ব্যবস্থা ক’রে মূলত ইউরোপীয় শেতাঙ্গ শরীরকে নিরোগ রাখার পথে হেঁটেছে। সেখানে উপনিবেশের অজ্ঞ, অগা, অসচেতন মানুষগুলো কোন ছার ছিল।
     প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা, ক্যান্টনমেন্ট প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল? যেমন ধরা যাক, কলকাতার দমদম ক্যান্টনমেন্ট। আসলে ক্যান্টনমেন্টের জন্ম সাম্রাজ্যবাদী যুগে হলেও এগুলির অবস্থান সব শহরের লাগোয়া। সেখানে থাকে মূলত সেনাবাহিনী। তাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, স্বাস্থ্যরক্ষা ও নীরোগ থাকার প্রক্রিয়াকে বহাল রাখার জন্য এই ব্যবস্থা। যা আজও বজায় রয়েছে। মূলত সাধারণের শরীর থেকে এক প্রকার ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে রাখা।
     একথা সত্য যে, দেশে কোনো বড়ো খেলা-অনুষ্ঠান হলে ভিড়কে সুশৃঙ্খল ও সংযত করার জন্য দেশের রাষ্ট্রীয় সরকার নানা ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থা করে। যথা - ডাক্তার, ওষুধ, পানীয় জল, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী দল, বাঁশের বেড়া, দড়ি, টেম্পুরারি পায়খানা, মাইকে ঘোষণা প্রভৃতির বড়ো ফিরিস্তি থাকে। এক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ-পরিচ্ছন্নতার নানান ভাবনা কাজ করে। কিন্তু বুর্জোয়া সভ্যতা মানুষের স্বাস্থ্যকে যখন কৃষক, আদিবাসী, শ্রমিক, ভিক্ষুক, বস্তিবাসী, গ্রামবাসী নানান শরীরে ভাঙে এবং তাদের মাধ্যমে সমাজে অসংখ্য ভোগবস্তুকে তার শরীর তৈরি করে, সেখানে ধনতান্ত্রিক ব্যবসায় স্বাস্থ্য পত্রিকার দারুণ বিপণন ঘটে থাকে। কিন্তু এই মানুষগুলোর কোন কাজে আসে বা সেই জ্ঞান এই মানুষগুলোর কাছে কিভাবে পৌঁছবে, তার দায়িত্ব রাষ্ট্র কতটা নিচ্ছে বা নিয়ে থাকে। বরং স্বাস্থ্যকে অস্ত্র বানিয়ে নিম্নবিত্তের শরীরে খুব কম ব্যবসা করা যায় না! কিছু ব্যায়ামের, গাছগাছালির, জড়িবুটির চিটে বই ফেরিওলার মাধ্যমে সমাজের নিম্মতর অর্থনীতির অংশের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জোগাড় থাকে বটে, কিন্তু আখেরে তার মধ্যে সাধারণ লোকাল হাসপাতাল সম্পর্কে ভীতি, অনীহা, নিজেদের জ্ঞান দিয়ে হাসপাতালের জ্ঞান পরীক্ষা ও কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার অংশকে বহাল ক’রে রোগগ্রস্ত শরীরকে যতদিন পারে জব্দ রাখার চেষ্টা করে। আর সেই চেষ্টার বিফলে কোনো একদিন ধর্মের ঈশ্বরের কাছে দন্ডগত মানতের দড়ি বেঁধে শহরমুখী চিকিৎসাকেন্দ্রে নিরাময়ের বুকভরা আশা নিয়ে ছুটে যায়। আর গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠে বর্হিবিভাগের দিগন্তরেখা পর্যন্ত লাইন দেখে। তারপর তো ডেট আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে কতদিন পেরিয়ে যাবে, তা তো বর্তমান রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশের হাতে নাশবন্দী। সুতরাং বুর্জোয়া রাষ্ট্র বারবার প্রমাণ করে, সব শরীর বা সকলের শরীর এক নয়। কিন্তু তারা কি বোঝে, সেই রাষ্ট্রের একচেটিয়া ভোট দেওয়া নাগরিক তাঁরা। অথচ আমরা জানি সংক্রামক ব্যাধি আসলে, সব শরীরকে চিকিৎসা দিতে না পারলে রাষ্ট্রের জীবনে আশঙ্কা বাড়বে। সংক্রামক ব্যাধি শুধু যে গরীব সাধারণের কুঁড়ে বা বস্তিতে আঁটকে থাকবে। এমন তো নয়, ফলত রাষ্ট্র তখনই চিন্তায় পড়ে যায়। আরেকটি সমাজকে নিয়ে। যেখানে শরীরগুলি দুর্বল, স্বল্প আয়ভুক্ত এমনকি সেখান থেকে খুব বেশি পুঁজি আসেনা। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই (অন্যান্য অধিকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র অবাধ্য হলে সাধারণ মানুষ তার কতটা বোঝেন) সকলের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার গুণিতকে জনস্বাস্থ্য বা সরকারী স্বাস্থ্য / দেশীয় স্বাস্থ্য নির্মাণের পরিকাঠামো বানায়।
     পরাধীনতার কিছু ফল তো ভোগ করতে হয়। সেখানে পরাধীন জাতির মানসিক ফূর্তি ততটা উজ্জ্বল থাকে না। সেই জাতির ফেস্টিভ্যাল থাকে ঠিকই, কিন্তু সেই ফেস্টিভ্যালের মধ্যে স্বজাত্যবোধ যেমন বেশি থাকে, তেমিন বেশি থাকে সংকীর্ণতা। আবার তার মধ্যে মানসিক উজ্জ্বলতা যেমন কম থাকে, তেমনি কম থাকে সর্বজনীনতা। এই প্রশ্নও স্বাধীন তৃতীয় বিশ্বে কম নেই। কারণ আমরা আর কতটা মানিয়ে নিতে পেরেছি আদিবাসী সংস্কৃতি ও ভাবনাকে। এককথায়, আমরা ইউরোপের ক্লাসিক্যাল ভাবনাকে যতটা বেশি আপন করে নিয়েছি, ততটা কম আপন করেছি আদিবাসী প্রাচীনতম ক্লাসিক্যাল ধরণকে। আবার একথাও বললে অত্যুক্তি হবে না, দেশ বিশেষে সংখ্যালঘুর ক্লাসিক্যাল কাঠামোকে তার চেয়েও কম আপন করতে পেরেছে। যতটা আপন হয়েছে ব্যক্তিবিশেষে, ততটা আপন হয়নি দেশ বা সার্বিক জাতি হিসেবে। এককথায়, প্রতিটি রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে অধিবাসীদের দ্বারা, আদিবাসীদের দ্বারা নয়। যেমন উপনিবেশিক আমলে কোথাও থেকে আসা মানুষের দ্বারা, সেখানে ভূমিপুত্ররাতো পরাধীন। সুতরাং যারা আপন নয়, তাদের রোগব্যাধি, স্বাস্থ্য, পুষ্টি নিয়ে কতটা দরদ দিয়ে ভাবা যাবে। বরং তাদের দ্বারা বা তারা মাধ্যম হয়ে কিভাবে রোগ ছড়িয়ে দিচ্ছে, দিয়েছে কিংবা রোগের আতুরঘর হয়ে আছে, তা প্রচার করার মাধ্যমে ক্ষমতাশালী জাতির যেমন সন্তুষ্টি আছে, তেমনি অন্যের হীনতাকেও সামনে আনার কৌশল থাকে। এর দ্বারা আর যাই হোক না কেন, দ্বিতীয় অংশের মূর্খামি, নিরক্ষরতা, অসচেতনতা, অশিক্ষিত, অজ্ঞতা, কুসংস্কারগ্রস্থতা তুলে ধরে তার হীনত্ব ও নীচত্ব প্রমাণ করা যায়। এমনকি তুলে ধরা যায়, তার অনাধুনিকতা তথা সভ্য সমাজের অনুকূল তারা ততটা নয় ব্যাখ্যা করা যায়। এইভাবে আর যাই হোক আধুনিক রাষ্ট্র কখনো সর্বজনীন জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। এক্ষেত্রে অবশ্য তখনি বিড়ম্বনা তৈরি হয়, যখন কলেরা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ের নোবেল করোণার মতো (কোভিড-১৯) মহামারী থাবা বসায়। উপনিবেশিক শাসনকালে ভারতীয়রা চিকিৎসা পেত কোনো মানবাধিকারে নয়। ভারতীয় দেহকে চিকিৎসা দিয়ে রোগশূন্য করতে না পারলে ইউরোপীয় শরীর তথা জীবনের আশঙ্কা বাড়তো, তাই চিকিৎসার বহর। করোণার সময়কালে ভারতীয় রাষ্ট্রের তেমনই জোগাড় কি উদাহরণ হয়ে দেখা দিচ্ছে না? উপনিবেশিক আমলে শ্বেতাঙ্গপাড়া, নেটিভপাড়া আলাদা ছিল। কিন্তু সংক্রামক ব্যাধি এলে গরীব মানুষের বস্তিতে যে আটকে থাকবে তেমন তো কথা নেই। ফলে চিকিৎসার বহর গড়েই তুলতে হয়।
     উপনিবেশিক রাষ্ট্রের অবশ্য একটি যুক্তি নির্মাণ করা ছিল। উপনিবেশিক সরকারের ভয় ছিল চিকিৎসার প্রচার চালাতে গিয়ে ধর্ম নিয়ে টানাটানিতে আবার না একটা ১৮৫৭ ফিরে আসে। সেই অভিজ্ঞতাও তাদের ছিল। বম্বে প্লেগকে কেন্দ্র করে চিকিৎসা দিতে গিয়ে নেটিভদের দারুণ রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু এখন প্রশাসনে বসে থাকা অনেক ব্যক্তিই বেফাঁস মন্তব্য (ছক কিনা বলা যাচ্ছে না) রাষ্ট্রের অন্য জুলুমের প্রসঙ্গকে সামনে আনছে। কমিউনিটির শ্রেণিবিভাজনে গোষ্ঠীকে ভাগ করতে গিয়ে সমাজকে ভেঙে ফেলছে। রাষ্ট্র কি কারোর সমাজচ্যুত করতে পারে ? এমন হতে থাকলে রোগের সাথে ধর্মের হাত ধরে জীর্ণ পচাগলা সরকার ধরাশায়ী হতে কতক্ষণ। সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র নিজের বাঁচার প্রয়োজনে জনস্বাস্থ্যের জন্য যেটুকু না করলেই নয়, সেটুকুতে নজর দিত। শরীর চেতনার সঙ্গে মানসিকতার এই সংঘাতে রোগ বিলুপ্ত হোক আর না হোক, সমাজের শরীরে সংক্রামক ব্যাধি যে প্রবেশ করছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর সাথে অবিশ্বাসের ধর্মীয় সংকেত রাজনীতিকে আগামী দিনে যে আরও বেশি করে ব্যবহার করবে, তা নিয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে ? সুতরাং জনস্বাস্থ্য থেকে গণস্বাস্থ্য ভোগবাদী রাষ্ট্রে যেমন বাণিজ্যিক শিল্পায়নকে ভালো করে সরবরাহ করবে, তেমনি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অবিশ্বাসের চোরা স্রোতকে জিইয়ে রাখবে, বলাবাহুল্য।
     কুসংস্কার কোন যুগে ছিল না, আর কোন সমাজে এখনও নেই! কলেরা বসন্ত দৈব-দুর্বিপাকের হাত ছেড়ে জীবাণুতত্ত্বের বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে বটে। যারা অনেক বেশি আধুনিক তারাও তো জীবন পরিচালনায় কিছু কিছু সামাজিক কুসংস্কারকে প্রশয় দিয়ে ভালো থাকার রাস্তা খুঁজে নেয় না কি ? এর জন্য কি কেবল নিম্নবর্গেরই দায় নিতে হবে। আসলে আধুনিকতার জ্ঞান দিয়ে অন্যকে যাচাই করার নামে নিজের বিজ্ঞাপনকে চাপিয়ে দেওয়া একটা প্রচেষ্টা কোথাও তো দাঁড়িয়ে আছে। যাইহোক, ব্যক্তির প্রতি রাষ্ট্রের ব্যবহার, বিশেষ ব্যক্তির প্রতি রাষ্ট্রের ব্যবহার, ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রের ব্যবহার, গোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্রের ব্যবহার, ব্যবহৃত বস্তুর প্রতি রাষ্ট্রের ব্যবহার যদি রাষ্ট্র ও এলিটের ঔদার্য ও মাহাত্ম্যকে প্রতিষ্ঠা করে তাহলে, সর্বোপরি মানুষের তো বিশ্বাস কমে, সেখানে রাষ্ট্রের সর্বজনীনতা কি করে প্রকাশ পেতে পারে! তাই সুখ, দুঃখ, অসহনীয় মর্মবেদনাকে নৈতিক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে কিংবা ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে অথবা পাশে দাঁড়ানোর হাব-ভাব দেখানো - এমনই সব ভঙ্গিমা আর যাই হোক, কোনো সরকারকে মহান করলেও রাষ্ট্রকে কখনো মহান করে তোলে না, কারণ রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা ও ফর্ম আগামী দিনে ইতিহাসের নীরিখে বিচার্য হবে যে। তাই দিন থাকতে রাষ্ট্র দায়িত্ব নিক গণ-অসুখের, যেমন করে দায়িত্ব নেয় ব্যক্তি তার গৃহের।

তথ্যসূত্র:
১) কুমার, অনিল (১৯৯৮), “মেডিসিন অ্যান্ড দ্য রাজ: ব্রিটিশ মেডিকেল পলিসি ইন ইন্ডিয়া ১৮৩৫-১৯১১”, নিউ দিল্লি: সেজ পাবলিকেশন্স
২) ক্রপ, নিগেল, আর. রামাসুব্বান (১৯৮৫), “ মর্টালিটি টোল অব্ সিটিজ - ইমার্জিং প্যাটার্নস অব্ ডিজিস ইন বম্বে”, ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি, ভলিউম-২০, ইস্যু ২৩, ৮ জুন
৩) ভদ্র, গৌতম, পার্থ চট্টোপাধ্যায় (২০১২), “নিম্নবর্গের ইতিহাস”, কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স
৪) মহিউদ্দীন, হেলাল (২০১৯), “রাষ্ট্রের রোগ চিনবেন কিভাবে”, প্রথম আলো, ১৯ জানুয়ারী, 
৫) রামাসুব্বান, রাধিকা (১৯৮২), “পাবলিক হেল্থ এন্ড মেডিকেল রিসার্চ ইন ইন্ডিয়া: দেয়ার অরিজিনস এন্ড ডেভেলপমেন্ট আন্ডার দ্য ইম্প্যাক্ট অব ব্রিটিশ কলোনিয়াল পলিসি”, সারেক রিপোর্ট, সেডিশ এজেন্সি ফর রিসার্চ কর্পোরেশন উইথ ডেভেলপিং কান্ট্রিজ
৬) সমাদ্দার, রণবীর (২০২০), “স্বাস্থ্য ব্যবস্থাতেই হোক রাষ্ট্রের প্রধান মনযোগ”, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১২, মে
৭) হ্যারিসন, মার্ক (১৯৯৪), “পাবলিক হেল্থ ইন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া: অ্যাংলো ইন্ডিয়ান প্রিভেনটিভ মেডিসিন ১৮৫৯-১৯১৪”, কেম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস

জয়প্রকাশ মণ্ডল। পশ্চিমবঙ্গ, ভারত