অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪
গোলাপী চাঁদ - অরিজিৎ পাঠক

ই দেখো নেমেছে গোলাপী রঙের চাঁদ।
নেমেছে পুকুর পারে, অশত্থ ডালে, পিচঢালা রাস্তার ওপর।
অনিঃশেষ অন্ধকার কেবল ছুঁয়ে যেতে চায় কামুক দৃষ্টিতে
উদ্ভিন্ন যৌবনা চাঁদের  শরীর –অবসন্ন ব্যর্থ মনোরথে।

কতদিন অনিকেত জোৎস্নায় বসে এই চাঁদ গল্প শোনাতো আমায়,
গল্প শোনাতো অচিনপুরের কোনো এক রূপকথার দেশের,
যেখানে কৌটো বন্দী পড়ে থাকতো রাক্ষসের প্রাণ,
যেখানে হাত বাড়ালেই ঝরে পরতো নিরন্তর জৌলুসে ভরা রাশি রাশি মুক্তোকণা।
আর প্রতিদিন গল্পগুলো শেষ হতো এক অনাবৃত জিয়ন কাঠিকে ছুঁয়ে,
চিত্রপটে আঁকা মোহাবিষ্টতার অভিজ্ঞান পত্রের মত।
সেই গল্প শুনতে শুনতে আমাদের বাড়িটাও বড় হয়ে উঠতো..অনেকটা বড়ো।
এতটাই বড়ো যে সেই বাড়ির ছাদে দাড়িয়ে
সহজেই ছুঁয়ে ফেলা যেত ওই রূপোলী চাঁদের নিটোল চিবুকখানা।

এই জন্ম পার হয়ে নবজন্ম পেলে, পাখি হব।
ডানা মেলে উড়ে বেড়াব অনেক শতাব্দী জুড়ে।
যে শতাব্দী গুলো বিগত হয়নি এখনও, জমা পড়েনি ইতিহাসের পাতায়,
পাখি হয়ে উড়ে বেড়াব সেই সব জাতিস্মর শতাব্দীর
এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত জুড়ে।
উড়তে উড়তে মেঘেদের চাদর সরিয়ে একদিন ঠিক পৌঁছে যাব
আকাশের  মধ্যিখানে দাড়িয়ে থাকা সীমাহীন চাঁদের কাছে।
চাঁদ, তুমি সেদিন বসতে দেবে তো আমায় তোমার কলংক আঁচল পেতে?
স্নান করিয়ে দেবে তো তোমার অপরিমেয় জোৎস্নায়?
যে জোৎস্নায় মুড়ে রাখা আমাদের এজন্মের অফুরন্ত ইতিবৃত্ত.. গল্পকাহিনী!
চাঁদ, তুমি সেদিনও আবার গোলাপী হবে আমার জন্যে?
নেমে আসবে মাটির ওপর, আবার?
তোমায় জড়িয়ে ধরে আমিও নেমে আসবো,
আবার গ'লে পড়বো – বুড়িয়ে যাওয়া পক্ককেশ পরিচিত পৃথিবীর বুকে।
আরেকবার পা ফেলবো মাটিতে,
ডানা ঝাপটিয়ে খুঁটে খাবো মাটির স্নেহের গন্ধ, পড়ে থাকা শস্যের কণা।
চাঁদ  সেই দিন তুমি আমায় ভালোবাসবে?
পাখিজন্মে তুমি আমার প্রেয়সী হবে? সখা?... চির সখা?

হয়তো খেয়ালী চাঁদ বিস্মৃত থেকে গেছে পূর্ব জন্মের কথা
হয়তো সেদিনও কোনো পুরুষালি হাতের ছোয়ায়
ভীরু প্রেম জেগেছিল মনে
সেদিনও কি এমন ভাবেই চাঁদ গোলাপী হয়েছিল লজ্জায়, কামনায়, অকাতর  প্রেমে?
যেভাবে এখনও অনন্ত প্রেম কুঞ্জবনে
গোলাপী আভায় পালক স্পর্শ ছড়ায়, ভালোবাসা ঢেলে দেয় অজানা প্রেমিকের গায়ে।

জানি না এখন সে কোন প্রেমিকের অভিসারে,
জেগে থাকে সুনয়নী চাঁদ... জেগে থাকে সারা রাত –গোলাপী আস্তরণে।

অরিজিৎ পাঠক। উত্তর চব্বিশ পরগনা