আমিনুল ইসলামের কাব্যভাবনায় নদী - মিল্টন বিশ্বাস
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কবি আমিনুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর।তাঁর বেড়ে ওঠা রাজধানীর বাইরে গ্রাম, উপশহর ও শহরে।বাল্যকাল থেকে লিখতে শুরু করলেও তাঁর গ্রন্থসমূহের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বিলম্বে।তাঁর প্রধান কাব্যগ্রন্থসমূহ হলো- তন্ত্র থেকে দূরে (২০০২), মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম (২০০৪), শেষ হেমন্তের জোছনা (২০০৮), কুয়াশার বর্ণমালা (২০০৯), পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি (২০১০) স্বপ্নের হালখাতা (২০১১), প্র্রেমসমগ্র (২০১১), জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার (২০১২), শরতের ট্রেন শ্রাবণের লাগেজ(২০১৩), কবিতাসমগ্র(২০১৩), জোছনার রাত বেদনার বেহালা (২০১৪), আমার ভালোবাসা তোমার সেভিংস অ্যাকাউন্ট (২০১৫) প্রণয়ী নদীর কাছে (২০১৬), ভালোবাসার ভূগোলে (২০১৭), অভিবাসী ভালোবাসা (২০১৮), জলের অক্ষরে লেখা প্রেমপত্র (২০১৯), বাছাই কবিতা (২০১৯)। কাব্যের বিচিত্র সুর, সংগীত ও ব্যঞ্জনার পরিসরের বাইরেও আমিনুল ইসলামের ছড়া গ্রন্থ দাদুর বাড়ি (২০০৮), ফাগুন এলো শহরে (২০১২) রেলের গাড়ি লিচুর দেশ (২০১৫)এবং প্রবন্ধ গ্রন্থ বিশ্বায়ন বাংলা কবিতা ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০১০) গুরুত্বপূর্ণ রচনা। সরকারি চাকরিজীবী হলেও আমিনুল ইসলামের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য কবিতা। বাল্যকাল থেকেই তিনি আত্মনিয়োগ করেছেন কাব্যচর্চায় এবং নিজের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে বাংলা কবিতায় তাঁর আত্মপ্রকাশ বর্তমানে অভিনন্দিত।
২.
আমিনুল ইসলামের কাব্যভাবনায় প্রেম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বলা যায়, আমিনুল ইসলামের কাব্যবিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে প্রেম।তিনি প্রেমের ভেতর দিয়ে জীবন ও জগতকে দেখতে চেয়েছেন।“আমার ভালোবাসা- জলের জীবনচক্র/ মেঘ হয়ে- বৃষ্টি হয়ে- জল হয়ে/ বারবার আছড়ে পড়ে তোমার স্রোতের শরীরে।” (কীর্তনখোলার ঢেউ/ জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার) এভাবেই আমিনুল ইসলাম সমসাময়িক কাব্যস্রোতের অনেকটা বিপরীতে প্রেমের কবিতা লেখেন। তাঁর প্রেমের কবিতাগুলো প্রচলিত প্রেমের কবিতার চেয়ে কিছুটা আলাদা। একবিংশ শতাব্দির উঠোনে দাঁড়িয়ে অতোটা রোমান্টিক হওয়ার সুযোগ নেই, যুক্তি তো নেই-ই। সেজন্য তাঁর প্রেমের কবিতা নিছক প্রেমের কবিতা হয়ে থাকেনি। প্রেমের কবিতায় আমিনুল ইসলাম স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দিয়েছেন। অনুরাগের ছোঁয়ায় তাপিত হয়েছেন তিনি। অন্তরঙ্গ অনুভূতির স্পর্শে প্রাণিত তাঁর কাব্য। মূলত নিছক প্রেমের কবিতায় আবদ্ধ থাকেননি তিনি। নর-নারীর লীলালাস্য নেই সেখানে। প্রেমের ভেতর সংঘাত সংকট আছে। অন্তর্লোকে আছে বেদনা, জীবনতৃষ্ণা তীব্র হয়ে উঠেছে। প্রচণ্ড সংবেদনায় সবকিছু উথলে উঠেছে কবিতায়। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রেমের পরিধি থেকে তা ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোকজ্ঞান ও লৌকিকজীবনে প্রসারিত। বিষয় ভিন্ন বলেই ভাষিক জগৎ ভিন্ন তাঁর। গঠন সৌষ্ঠব ব্যতিক্রমী। জীবনের জয়গান করেন প্রেমের দায়বদ্ধতায়। প্রেম জীবনের বাস্তব আকাঙ্ক্ষায় অবিনাশী রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। আর্তনাদ থাকলেও তা আনন্দে উদ্ভাসিত। অসম প্রেমের দৃশ্য আছে কোনো কোনো কবিতায়। আছে অসহায় প্রেমিক প্রেমিকার জীবন। গবেষক-প্রাবন্ধিক সরকার আবদুল মান্নান মূল্যবান অভিমত ব্যক্ত করেছেন: ‘‘প্রেমের কবিতার একটি প্রথাগত রূপৈশ্বর্য ও বিষয় বৈভবের সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে। বিচিত্র অনুষঙ্গে মানব-মানবীর লীলালাস্যই সেখানে মুখ্য। আমিনুল ইসলাম মোহন প্রেমের এই প্রথাগত আখ্যান রচনা করেন না। সংঘাতময় জীবনের বিচিত্র ক্ষতকে তিনি তুলে ধরেন জীবন-প্রেমিকের বিস্ময়কর অন্তর্লোক থেকে। ফলে নারী নয়, পুরুষ নয়, আটপৌরে প্রতিদিন নয় বরং এসবকিছু নিয়েই সৃষ্টি হয় তাঁর প্রেমের কবিতার প্রবল জীবন-তৃষ্ণা। প্রচণ্ড এক সংবেদনার মধ্যে কবি আমিনুল ইসলামের কবিতা প্রাণময় হয়ে ওঠে। এই সংবেদনা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রেমের সীমা অতিক্রম করে যায় অবলীলায় এবং ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোকজ্ঞান ও লোকজীবন তাৎপর্যপূর্ণ সফলতায় ধরা দেয় কবির প্রেমভাবনার অবয়বে। ফলে পাল্টে যায় পরিচিত ডিকশন, প্রবল প্রতাপান্বিত ফর্ম। আর সেই বিচূর্ণ কবিভাষার সমাধিস্থলে গজিয়ে ওঠে আমিনুল ইসলামের প্রেমের কবিতার নতুন এক ভাষিক জগৎ, স্বতন্ত্র এক গঠনসৌষ্ঠব। জীবনের প্রতি গভীর মমত্ববোধ আমিনুল ইসলামের কবিতার অন্তর্গত শক্তি। ফলে সমকালের বিচিত্র দুর্দৈবের মধ্যেও তাঁর কবিতায় মূর্ত হয়ে ওঠে অবিনাশী জীবনের গান। বোধের এই সততা ও দায়বদ্ধতায় আমিনুল ইসলামের প্রেমসমগ্র হয়ে ওঠে জীবনসমগ্র Ñআর্তনাদের মধ্যে আনন্দিত উত্থান।’’(আমিনুল ইসলামের কবিতা: প্রকৃতির দ্বৈরথে জীবনের পাঠ/ সরকার আবদুল মান্নান)
আমিনুল ইসলাম নীতিগতভাবে প্রগতিশীল বাম রাজনীতিকেই সমর্থন করে এসেছেন। এজন্য প্রেমের কবিতায় ঢুকে পড়েছে কবির অনুধ্যানের রাজনৈতিক চিত্রকল্প, একান্ত অনুভূতি রঞ্জিত হয়ে উঠেছে নবতর উপমার রঙে। সে কারণে তাঁর অধিকাংশ কবিতা ভাব ও ব্যঞ্জনায় বহুমাত্রিক বা মাল্টি-ডাইমেনশনাল।
৩.
আমিনুল ইসলাম তাঁর আত্মজৈবনিক লেখা ‘আমার কবিতা লেখার পেছনে’ শিরোনামের গদ্যে নদীর কথা দিয়ে সর্বান্তে অনুভূতিমালা সাজিয়েছেন। নদী তাঁর কাব্যভাবনায় স্থায়ী প্রভাব রেখেছে। একাধিক গ্রন্থের নাম নদীর নামে কিংবা নদী শব্দ রয়েছে অসংখ্য কবিতায়।‘মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম’ (২০০৪) এবং ‘প্রণয়ী নদীর কাছে’(২০১৬) দুটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। কবি জলের সন্তান, চরাঞ্চলে জন্ম। এজন্য তিনি বলেছেন, “যে কোনো অর্থেই আমি জলের সন্তান- কোনো জনমে জলদাস ছিলাম কি না জানি না। নদী আমার জন্মদাত্রী থেকে খেলার সাথি হয়ে প্রথম যৌবনে প্রেমিকার স্থান দখল করে। ভরাবর্ষায় আমি তরঙ্গায়িত পাঙ্গাশমারীর বুকে গাঙচিলের মতো ঝাঁপ দিতাম আর স্রোত ও ঢেউয়ের দোলায় ভেসে যেতাম মাইলের পর মাইল। বহুবার নাকানিচুবানি খেয়েছি, তবে কখনো সে আমাকে মাঝগাঙে ডুবিয়ে মারেনি। পরবর্তীতে ইটসিমেন্টের পাষাণ উঠোনে বসে পাঙ্গাশমারীকে নিয়ে স্মৃতিকাতর কবিতা লিখেছি। নদী আমার ব্যক্তিগত জীবনে, আমার স্বপ্নের উঠোনে এবং আমার কাব্যভাবনায় প্রায় স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে আছে। নদী নিয়ে আমি প্রায় স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্ন দেখি। নদী সিরিজে আমার অনেক কটি কবিতা আছে। পাঙ্গাশমারী নদীকে নিয়ে লেখা আমার একটি কবিতার কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি:
“অথচ এই তো সেদিন- আমি সবে উত্তীর্ণকৈশোর,
তুমি জলের যুবতী ডেকে নিতে উন্মাতাল
যৌবনের প্রথম শিহরে (মনে আছে!) উড়িয়ে দিয়ে
ভরাবুকে ঢেউয়ের আঁচল! ভুলে ডাঙার ভ্রূকুটি
ঝাঁপ দিয়া জলে কতদিন ভেসে গেছি নগ্নবক্ষ গাঙচিল!
ইচ্ছে হলে নিতে পারতে ভাসিয়ে অকূলে
ওই অষ্টাদশীর জলাবর্ত তোমারও তো ছিল
আর আশৈশব আমিও তো জলপাগলই ছিলাম!”
(পাঙ্গাশমারী/ জলের অক্ষরে লেখা প্রেমপত্র)
নদীবর্তী কৃষক পরিবারে আমার জন্ম। আমার সহপাঠী ও খেলার সাথিরাও তাই ছিল। সকল প্রকার কৃষিকাজ স্বহস্তে করার সহজ অভিজ্ঞতা আমার অতীত ভান্ডারকে ভরে রেখেছে। নৌকোর মাঝি, মাঠের রাখাল, সকলেরই সহসাথি ছিলাম আমি।”
নদী তীরবর্তী প্রাচীন জনপদও কবিকে প্রাণিত করেছে। বিশেষত মহানন্দার পাড়ে গড়ে ওঠা প্রাচীন জনপদ সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ইতিহাস নিয়ে অতুলনীয় ঐশ্বর্যের অধিকারী, অথচ আমাদের সাহিত্যে তার ছবি প্রায় অনুপস্থিত। এই বেদনার উপলব্ধি তাঁকে ‘মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম’ কবিতাটি লিখতে উৎসাহী করে। যার সমাপনী ঘটেছে খেদোক্তির মতো চরণ দিয়ে, “আমাদের একজন অদ্বৈতমল্ল নেই, থাকলে আমরাও পেতাম/ কালের স্রোতে মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম।” অনুরূপভাবে রংপুর অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাহিত্য-সংস্কৃতির নিকট অতীত, তার বর্তমান দৈন্য ও দারিদ্র তাঁকে ব্যথিত করেছে। তিনি লিখেছেন, ‘তিস্তার কোল ঘেঁষে মাঘ’-এর মতো প্রতীকধর্মী সমাজমনস্ক কবিতা। আবার নওগাঁর আত্রাই-নাগর নদীর আদর তাঁর চোখে মুগ্ধ গভীর দৃষ্টির প্রলেপ এঁকে দিয়েছে। তিনি মুগ্ধ উচ্চারণে বলে উঠেছেন-
“শরৎ ছুঁতে চায় হেমন্ত; আমনের ক্ষেতে আঁচল উড়িয়ে
ভোরের হাওয়ায় ভাসে বাংলাদেশ।
আত্রাইয়ের জল এসে আলতো হাতে ধুয়ে দেয় তার প্রত্নরাঙা পা।”
(ভোরের হাওয়ায় ভাসে বাংলাদেশ/ মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম)
৪.
নদী আমিনুল ইসলামের কাছে মায়ের মতো। সে তাঁর প্রথম যৌবনের খেলার সাথি এবং প্রেমিকাও। মনের দিক থেকে তিনি পুরোপুরি প্রকৃতি-লগ্ন। ফারাক্কা বাঁধের অভিশাপে সেই নদী আজ ধু-ধু বালুচর। মূলত নদী প্রসঙ্গ এবং বরেন্দ্রভূমিতে জীবনযাপনের নানা আবহ তাঁর কবিতায় বারবার এসেছে। আমিনুল ইসলামের কবিতায় প্রকৃতি এসেছে নানাভাবে, নানাপর্যায়ে, ভাবের আবেগে এবং দ্বৈরথেও। প্রকৃতির এক প্রধান রূপকার হচ্ছে নদী। আমাদের তৃষ্ণা, অভিমান ও কান্না বারবার ছুটে যায় নদীর কাছে। নদীর সঙ্গে মানুষের নাড়ির যোগাযোগ আছে বললে ভুল বলা হয় না। নদী এক প্রিয় বিষয় কবিদের। কবি নিজেই বলেছেন, নদী নিয়ে অনেকগুলো কবিতা লিখেছেন তিনি। ‘শেষ হেমন্তের জোছনা’ কাব্যগ্রন্থে বেশ কয়েকটি কবিতা নদীকে নিয়ে। তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থের নামকরণও নদীকে ঘিরে ‘মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম’ । ‘কুয়াশার বর্ণমালা’ বইয়েও ঠাঁই পেয়েছে বেশ কটি নদীর কবিতা। খানিকটা উদ্ধৃত করা যাক নদীর কবিতা থেকে-
“...যে আমগাছের তলায়
আমার নাড়ি পোতা, শৈশবের এ নদী সেখানে সঙ্গোপনে
সন্ধ্যাজল দিয়ে আসে; আমের পাতা শিশুর গালের
মতো হয়ে এলে জলের পাঠ নিতে ব্রীজের ওপর
দাঁড়িয়ে আছি বাতাসে মেলে দেয়া- আরব্য-
উপন্যাসের পাতার মতো গড়িয়ে চলেছে ঢেউয়ের
পর ঢেউ পুরো পাঠ নেয়ার আগেই উল্টে যায় পাতা।
দু’একটি মোটাদাগের শিরোনাম ছাড়া টুকে রাখা
যায় না কোনো বিবরণ। নর্তকীর ঘুঙুর আর সদাগরী
জাহাজের ছাপ স্পষ্ট হলেও প্লাবনসদৃশ একটা ছবি
দ্রুততায় দৃষ্টির অগোচর হয়েছে। অবাক করার
মতো ব্যাপার এই যে জলপুস্তকের ভেতর হতে
বিচ্ছুরিত শুকনো ফুলের সুবাস ভরে তুলেছে সিক্ত
বাতাসের শরীর, নদী দু’পাড়।”(নদী-দুই/শেষ হেমন্তের জোছনা)
নদীর যেমন নানা রকম খেলা থাকে জলের শরীর নিয়ে বাতাসের তালে, দু’পাড় আর বালুচরের সঙ্গে, নদীর যেমন বহুদূরের পরিভ্রমণ ও বহু ইতিহাসের গোপনকে ধারণ করা ঐশ্বর্য থাকে, তেমনি সেইসব পাঠকে রপ্ত করার মতো করে এই কবিতাটিও গ্রহণ করেছে শব্দের সুসজ্জা। অনুভবের রঙ, উপমা, চিত্রকল্প দিয়ে অতীত ও বর্তমানকে অর্থময়ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি এই কবিতায়। প্রকৃতির ক্যানভাসে কবি সময়ের বহুমাত্রিক ছবি এঁকেছেন কিন্তু চূড়ান্ত অর্থ রহস্যমন্ডিত রয়ে গেছে। ‘স্রোত ও ঢেউ-তিন’ শিরোনামের কবিতাটি এর পাশাপাশি উদ্ধৃত করা যেতে পারে-
“গন্তব্য উজানে জেনে
ঢেউয়ের পিঠে সওয়ার হওয়া
গন্তব্যের কাছাকাছি যখন
থেমে গেছে হাওয়া
এখন একান্ত অনুনয় শুনে
হেসে ওঠে স্রোত।”(স্রোত ও ঢেউ-তিন/ কুয়াশার বর্ণমালা)
আমিনুল ইসলামের কবিতায় নদী শুধু নদী থাকে না। নদী হয়ে ওঠে ঘটনার সমীকরণ, নদী হয়ে ওঠে জীবনের আরেকরূপ, নদী হয়ে ওঠে নারী। কিন্তু হৃদয়ের অর্ধেকটা নদীকে দিয়ে দিলেও বাকী অর্ধেকটা কবি রাখতে চান প্রকৃতির অন্য সুন্দর জিনিসগুলোর জন্য। স্বদেশের প্রতিটি নদী যেন তাকে মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে রাখে, বৃক্ষের সুশীতল ছায়ায় তিনি অনেক দগ্ধতাকেই ভুলতে পারেন। কিছু দেখা, কিছু শোনা মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা তার কবিতায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে, গৌরবের অতীত হয়ে উঠেছে রোমাঞ্চকর বর্তমান। সেখানেও আছে নদী।
“...মনে আছে প্রতিজ্ঞার মতো মাথায় বাঁধা
লাল গামছা, পরনে নিত্যপ্রস্তুতির মতো লুঙ্গির মালকোচা
কিংবা হাফপ্যান্ট, কাঁধে স্টেনগান আর বুকে লুকিয়ে
দেশপ্রেমের গ্রেনেড, পড়ন্ত বিকেলে নৌকায় আসতেন
তীরহারা সেই ঢেউসাগরের নবীন মাঝিরা: নজরুলভাই-
আমজাদচাচা, সামাদকাকা-ইসমাইলমামা, ওমরভাই এবং
আরও অনেকেই। তারা সকলেই ছিলেন তরুণ টগবগে এবং
অকুতোভয়; এখন বুঝি তাদের কেউ কেউ ছিলেন ‘বিদ্রোহী’
কবিতার নায়ক; তাদের বেয়াড়া চুল হতে বেরিয়ে আসতো
ছাত্রজীবনের ঘ্রাণ। কাজের বাহানায় বের হয়ে তাদের একনজর
দেখে নিতেন গেরস্তঘরের বউয়েরাও; আমরা আন্দাসা আর
চালভাজা দিয়ে আসতাম বৈঠকের কাছে বাঁধা ভালোবাসার নৌকায়।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথেসাথে তারা উধাও হয়ে যেতেন
অকূল প্লাবনে সঙ্গে নিয়ে নৌকামার্কা হৃদয়, হৃদয়ভর্তি নৌকা।
রাতের অন্ধকারে গুড়িয়ে যেতো দূরে কোথাও কোনো
রাজাকার-ক্যাম্প, কিংবা দালালের আস্তানা, অথবা মহানন্দায়
অস্ত্রবোঝাই শত্রুজাহাজের গলুই। কোনো কোনো বার
মুক্তিযোদ্ধারা সাঁতার কেটে উঠে আসতেন সফল ভোরের মোহনায়;
তাদের ক্ষুধার্ত চোখেমুখে ফুটে থাকতো রাতজাগার ছাপ,
আর পরবর্তী অপারেশনের বাজখাই প্রতিজ্ঞা।”
(আমার মুক্তিযোদ্ধা হতে পারা না পারার গল্প/ জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার)
আরো কিছু উদ্ধৃতি দিচ্ছি যেখানে নদীর কীর্তিনাশা রূপ বর্ণিত হয়েছে-
ক)
‘‘হাঙর-গ্রাসিত গাঙচিলের মতো
এখন তুমি মহা-আগ্রাসীর পেটে
হে আমার জন্মসুতোর লাটাই
মননের উৎসভূমি- টিকলীচর!
আর অধম আমি জন্মের ঋণ নিয়ে
অক্ষম দূরত্বের আঙিনায়
ফলে তো আজ নিজেই ঠিকানাহীন
অঘোষিত উদ্বাস্তু ফেরার।
যে মাটিতে নাড়ি পোতা
যে ধুলো স্বপ্নের কণা দিনে দিনে
আমার শৈশব ঘিরে
কল্পিত স্বর্গের মতো রচেছে প্রাসাদ
আজ তা অনস্তিত্বের সোনা।”
(পদ্মার পাড়ে বসে/ মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম)
খ)
“ভাঙতে ভাঙতে পলিময় পয়স্তি
ত্যক্ত উঠোনে তাই তো নবান্ন;
ঢেউ হানো- এপারে চর জাগে
আমার পূর্বপুরুষ নদীবাসী ছিলেন
তাই বারোমাসের ভাবনাও বাসি।
দেখে যাও--সোনালি দানায় ভরে
গেছে ঘরদোর। তবু জমে আছে
কতিপয় বেয়াড়া বিচালির গোড়া;
চৈতের খৈলানে এবার বহ্নুৎসব।”
(স্রোতের ভাঙন চরের উৎসব/ শরতের ট্রেন শ্রাবণের লাগেজ)
৫.
প্রকৃতিময়তায় আমিনুল ইসলাম নদীবিধৌত টিকলীরচর গ্রামের কথা বলেছেন। পদ্মা নদীতে বিলীন গ্রাম খুঁজে ফিরেছেন। এখনও ভিটেমাটি হারা মানুষের দীর্ঘশ্বাস শোনেন তিনি। আগেই বলা হয়েছে, নদী তাঁর কাছে মায়ের মতো। খেলার সাথি। ফারাক্কা বাঁধের জন্য নদী ধূধূ বালুচর। তাঁর কাব্যে নদী প্রসঙ্গ দিয়েই বরেন্দ্রভূমির জীবনযাপন এসেছে। আর প্রকৃতির প্রধান রূপকার হিসেবে নদী এসেছে অসংখ্য কবিতায়। কবির তৃষ্ণা, অভিমান, কান্নার স্বর ধ্বনিত হয়েছে কবিতায়। নদী ও মানুষের অদ্বৈত সম্পর্কের রূপও আছে। ‘শেষ হেমন্তের জোছনা’ কাব্যের কয়েকটি কবিতা নদী নিয়ে। ‘নদী- দুই’ (শেষ হেমন্তের জোছনা) শৈশবের নদীর সঙ্গে কবির নাড়ির সংযোগ ব্যাপ্ত, যেখানে স্মৃতি টেনে আনে তার রূপের পাঠ নেবার জন্য। নদীর জলে ভেসে চলা পাতার সৌন্দর্যে উদ্বেল কবি। নদী তাঁর কাছে ‘জলপুস্তক’ যার ভেতর থেকে বিচ্ছুরিত হয় ফুলের সুবাস। জলের শরীর, দুপাড়ের বালুচর, তার বয়ে চলা বহুদূরের পথ, ইতিহাসের গোপন অলিন্দ নদীর ঐশ্বর্য হিসেবে খ্যাত। প্রকৃতির ক্যানভাসে নদী রহস্যমন্ডিত হয়ে পাঠকের কাছে আত্মপ্রকাশ করে। ‘স্রোত ও ঢেউ-তিন’ (কুয়াশার বর্ণমালা) কবিতায় নদী ঘটনা নিয়ে হাজির হয়েছে। জীবনের ভিন্নতর রূপ দেখা যায় এখানে। নদী মানে নারী। এজন্য হৃদয়ের অর্ধেক নদীকে এবং বাকিটা প্রকৃতির সৌন্দর্যকে দিতে চান কবি।
প্রেমের কবি হিসেবেও আমিনুল ইসলাম নদীর মতো বহমান অনুভবে মাতোয়ারা। এজন্য তাঁর প্রেমানভূতির কথায় নদী এসেছে। কবির হৃদয়ে অন্তরঙ্গ অনুভূতির ধারা নিশুতি বসন্তরাতের নদীর মতোই নিয়ত প্রবহমান। সে নদীতে কখনো চর জাগে, কখনো ঢেউ; কখনো শুকায়, কখনো বা নবধারা এসে তাকে বেগবান করে তোলে। এ নদী শুধু আনন্দের উচ্ছল-ধারায় নয়, একইসঙ্গে চোখের জলের গভীর-স্রোতও। তাঁর বুকের মাঝে এক চির-অচেনা বিরহী-আত্মার বসবাস। তিনি প্রায়শ নজরুলের গান উদ্ধৃত করেছেন: “মোর অন্তরে বহে সদা অন্তঃসলিলা অশ্রু-নদী / সেই যমুনার তীরে করো তুমি লীলা নিরবধি।’’ কবির স্বদেশ প্রেমের কবিতায় নদী আছে। এদেশের প্রতিটি নদী তাকে মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে রেখেছে। আবার মুক্তিযুদ্ধের কবিতায় নদী এসেছে। ‘আমার মুক্তিযোদ্ধা হতে পারা না পারার গল্প’ (জলচিঠি নীল স্বপ্নের দুয়ার)- এ আছে :
“তীরহারা সেই ঢেউ সাগরের নবীন মাঝিরা।
আসতেন পড়ন্ত বিকেলে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে
তারা উধাও হয়ে যেতেন/ অকূল প্লাবনে-
সঙ্গে নিয়ে নৌকামার্কা হৃদয়-, হৃদয়ভর্তি নৌকা”
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নদীর সূত্রে জীবন্ত হয়ে উঠেছে এভাবেই। কবি বারবার ফিরেছেন শৈশবের স্মৃতির কাছে। অতীত পৃথিবী কেবল নয় বর্তমান জগত আছে সেই স্মৃতিতে। আর তিনি প্রতিদিনকার জীবনের গল্প বলেছেন নদীর কাছে। প্রেম-প্রকৃতি মিলেমিশে একাকার হয়েছে। মিথ হিসেবে এসেছে ‘নূহের নৌকা’ মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ, ধ্বংস ও হত্যার চিত্র সূত্রে। সময়ের সংকট উন্মোচনে তাঁর এ ব্যবহার তাৎপর্যবহ। কবির কবিতায় নদী এসেছে নারীর প্রসঙ্গে যৌবনের উপস্থাপনায়; রুচি মনন বুদ্ধির প্রাখর্যে যা অনন্য। আলাদা তিনি এখানে। মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির আর্তি যেখানে মূলসুর। কবি আত্ম অভিজ্ঞতায় সমকালীন জীবন সংলগ্ন। ‘বাবার খাটে শুয়ে’ কবিতায় নদী আছে, ‘জলশূন্য নদীর খোলস’ -এর প্রতীকে।আবার আখ্যানধর্মিতার মধ্য দিয়ে কবি নদীর প্রসঙ্গ এনেছেন।‘ঘোড়া ও রাজকন্যার গল্প’ কবিতাটিতে আছে পরিবেশ, প্রকৃতি, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য চিত্র। একটি অংশ স্মরণীয়-
“উপসংহার রঙের একটি পাঞ্জাবী-
কবি তাতে নিজহাতে নক্ষত্রের বোতাম লাগিয়ে জড়িয়ে নেন গায়ে;
অতঃপর দিগন্তমুখি হাঁটতে হাঁটতে বিকেলের রোদের মতো
মিলিয়ে যান উদ্ভাসিত নদীর মোহনায়।”
(ঘোড়া ও রাজকন্যার গল্প/ শেষ হেমন্তের জোছনা)
আমিনুল ইসলামের ‘শেষ হেমন্তের জোছনা’ কাব্যের নামকবিতায় পরাবাস্তবতায় অভিব্যক্ত হয়েছে গভীর বক্তব্য। এখানেও নদী আছে ভিন্নার্থে।
“বায়ুস্পর্শে পর্ণমোচীর পাতায় হলদে শিহরণ;
নন্দিনীর কোমরে হাত দিতে দেখি:
নদী নেই,
পার্কের খালে ঘুরে মরে রাতেলা অস্তিত্ব;
হয়তোবা মৌসুমও এসে যায় মেনোপজে!
আর শ্যামলীকে চাঁদকানা করবে-
এমত প্রকল্পে
উত্তরের হাওয়া ওড়ায় লাল ইটের গুঁড়ো।
তবু এই ঘোরলাগা সন্ধ্যায়
জোছনা কুড়োবো বলে
‘সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে’
মাইক্রো-ক্রেডিটের মতো মন বিছিয়েছি।’’
(শেষ হেমন্তের জোছনা, শেষ হেমন্তের জোছনা)
এখানে অসংলগ্নতার মধ্যে খোঁজা হয়েছে অর্থময়তাকে, বিশৃঙ্খলতার মধ্যে শৃঙ্খলাকে। যা এক আশাবাদে উচ্চকিত ‘‘সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে/ মাইক্রো-ক্রেডিটের মতো মন বিছিয়েছি।’’তাঁর কবিতায় জাতীয় ভূগোলের পাশাপাশি সংমিশ্রিত হয়ে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক ভূগোল, মিথ ও ইতিহাস।‘বেহুলার ভিটা’র (জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার) মতো কিংবদন্তিমূলক কবিতায় আছে নদীর কথা।
“মহাকালের বুকে ধূসর আঁচলে আবৃত স্তন
স্তন হতে চুয়ে নামা দুধ
ঝরনার মতো মিশে যায়
কালের করতোয়ায়
সেই জল পান করে দুইতীরে বেড়ে ওঠে শিশুরা
তাদের পরনে ইস্কুল-ড্রেসের মতো ভালোবাসার ইউনিফর্ম।”
(বেহুলার ভিটা/ জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার)
দেশবিদেশ ভ্রমণ অত্যন্ত সুফলদায়ক হয়েছে কবির জীবনে। তিনি বরিশালের স্মৃতি নিয়ে লিখেছেন, ‘কীর্তনখোলার ঢেউ’; কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত দেখে মুগ্ধ বর্ণমালায় লিখেছেন ‘ভোরের কুয়াকাটায়’। ‘স্বপ্নের হালখাতা’ কাব্যগ্রন্থে ‘পিছিয়ে যাওয়া মানুষ’ শিরোনামে কবিতাতে অস্ট্রেলিয়া-ইন্দেনেশিয়া-মালেশিয়া-ফিলিপাইনস-ভারত ভ্রমণের উপরে বর্ণিত অভিজ্ঞতার ছোঁয়া আছে। করতোয়া নদীর প্রসঙ্গ এসেছে সেখানেও।
“আমি ঘুরি পথে ও প্রান্তরে;
সিডনির ব্লু মাউন্টেনে
কৃষ্ণকায় আদিবাসি সাইমনকে দেখে
মনে হয়েছিল-
পুরোনো পুঁথির মতো গায়ে তার পরিচিত ঘ্রাণ;
যেন সে আমারই সেই আদিবংশধর-
শিমুলের ফুল গুঁজে চেয়ে থাকতো
শবরীর চুলের খোঁপায়;
তুফানের ঢেউ লেগে নৃতাত্ত্বিক তরীখানা
পর্বতের কোল ছেড়ে
ভিড়েছিল একদিন করতোয়া তীরবর্তী বৃক্ষের পাড়ায়।”
(পিছিয়ে যাওয়া মানুষ/ স্বপ্নের হালখাতা)
এভাবে মহিমান্বিত অতীত কাব্যিক প্রসাধনে উন্মোচন করেছেন আমিনুল ইসলাম। ‘মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম’ কবিতায় দেখা যায় এই নদীর আরশীতে মহাজীবনের জলচ্ছবি দেখেছেন কবি। তুর্কী সেনাদের মাঝিশূন্য ঘাটে এসে উপস্থিত হয়ে মাটিতে চুমো খাওয়ার কথাও লিখেছেন তিনি। আবার বিশ্ব পর্যটনে বের হয়ে কবি নদীর কথা বলেন অকপটে। যমুনা পার হয়ে এসে প্রাচীন নগরের ঠিকানা খুঁজে পান তিনি। শহরের কোল ঘেঁষে বিস্তীর্ণ বন্দর ছিল, সেখানে নোঙর করত বিদেশি জাহাজ। এভাবে ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি’ কবিতার নামকবিতায় নানা প্রসঙ্গের অবতারণা হয়। অন্যদিকে ‘কুয়াশার বর্ণমালা’য় নদীর এক ভিন্নতর রূপ উন্মোচন হতে দেখা যায়।
নদী চিত্রণের বিশেষত্ব থেকে দেখা যাচ্ছে, স্পন্দমান আবগের ভূগোল, দেশজচেতনা, লোককাহিনি ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সৌন্দর্যে আপ্লুত আমিনুল ইসলাম একজন আধুনিক কবি। তিনি মাতৃভূমির ইতিহাস খননে মিথিক জগতে ভ্রমণ করেছেন তবে এসব ক্ষেত্রে তাঁর রোমান্টিক চেতনা সর্বদা আত্মপ্রকাশ করেছে। আসলে আমিনুল ইসলাম আমাদের প্রকৃতি এবং বিপুল জনসমষ্টির জীবনধারার অভিজ্ঞতাকে কবিতায় ব্যবহার করেছেন।
৬.
আমিনুল ইসলাম ‘একমুখী’ লেখক নন, তিনি কবিতায় বৈচিত্র্য সন্ধানী। তিনি বেশ কিছু গদ্যরচনা করেছেন। গদ্য রচনায় তাঁর যে কাব্যচিন্তার স্বাক্ষর মুদ্রিত হয়ে আছে তাঁর কবিতায় সেই কাব্যজিজ্ঞাসা জারিত হয়েছে। কিন্তু কবিতার বিষয় ও রচনাশৈলিতে তিনি একদিকে যেমন কলাকৈবল্যবাদী অন্যদিকে তেমনি শিল্পের একধরনের উপযোগিতায়ও বিশ্বাসী। আবার সাহিত্যে দেশকাল-সচেতনতার পক্ষে তাঁর অবস্থান। মূলত আধুনিক কবিতায় বিষয়ের সর্বগ্রাহিতার স্বীকৃতি ধ্বনিত হলেও আমিনুল ইসলাম তর্কাতীতরূপে শিল্পসৃষ্টি প্রক্রিয়ায়- কেমন করে জীবন রূপান্তরিত হয় শব্দে ও ছন্দে বন্ধে, অপসৃয়মাণ মুহূর্তগুলি স্থায়িত্ব পায় কোনো না কোনো শিল্পরূপে সেই রহস্যের অন্তঃপুর স্থিত। উপমা, রূপক, প্রতীক, চিত্রকল্প রচনায় তিনি নানা পর্যায়ের কাব্যগ্রন্থে হয়ে উঠেছেন প্রাণোজ্জ্বল পারঙ্গম স্রষ্টা। চিত্রকল্পের ব্যঞ্জনায় পুরাণের অন্তঃগ্রন্থনে ও প্রতীকের তাৎপর্যে তিনি বাংলাদেশের কবিদের কাব্যজিজ্ঞাসার পরিবৃত্তে অনন্য। কবি আমিনুল ইসলামের কবিতায় মধ্যবিত্ত ও শহুরে জীবনের পাশাপাশি গ্রামীণ জনজীবনের কথকতা শিল্পিত রূপ পেয়েছে তাঁর সমকালীন অনেক কবির চেয়েই প্রাগ্রসর বোধ ও বিশ্বাসে- এ কথা স্বীকার্য। আমিনুল ইসলামকে বিশিষ্ট কাব্য পাঠকরা বলেছেন ইতিহাস, ঐতিহ্যের কবি, চিত্রময়তা ও প্রতীকী কবি, সমাজসচেতনতার কবি, মৌলিক কবি। কারণ তিনি বিষয়বস্তুকে আত্মস্থ করে কলম করেছেন স্বীয় মননশীলতায়। আমাদের মতে, কবি আমিনুল ইসলাম সংবেদনঋদ্ধ মানুষ। কবি বাস্তবজীবনকে তুলে ধরেন জীবনের মর্মে প্রবেশ করে। আপাত উপরিস্তর পরিহার করে হয়ে ওঠেন লক্ষ্যাভিমুখি।
মিল্টন বিশ্বাস । বাংলাদেশ
(লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, email-writermiltonbiswas@gmail.com)
-
নিবন্ধ // মতামত
-
09-07-2020
-
-