অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২ মে, ২০২৪
ঢাকার সিলিং ফ্যান - মুহাম্মাদ শোয়াইব

সুনিপুণভাবে ঢাকার শব্দ ঢাকার কাজ করে সিলিং ফ্যান,
অসমলয়ে রিকশার মধুর ঘন্টা গাড়ির নির্বিকার হর্ণ,

ভিক্ষুকের সুরে ছন্দে ডাক অথবা গান, 
তালে তাল মিলিয়ে ফেরিওয়ালার অসম্ভব দুর্বোধ্য
আহ্বান ও প্রেমিকাদের মতো তাদের,
ফিরে আসা এসে ফের চলে যাওয়া- ঢেকে দেয়।
ঘুম থেকে ওঠার অথবা ঘুমুতে যাবার ডাক 
ঢেকে দেয় সিলিং ফ্যান।
আমাদের প্রকৃতিহীনতায়ও প্রকৃতির একটা যোগ করে সিলিং ফ্যান-
ঘরের মধ্যে কৃত্তিম একটা ঝড় সৃষ্টি করে,
ছোটো একটা পাহাড় চূড়ায় অথবা নৌপথে 
ছোটো খাটো একটা ঝড়ে পড়ার ফিলিং দেয় সিলিং ফ্যান।
রাতে দুলতে থাকা ফুলতে থাকা মশারি 
নৌকোর পালের মতো মনে হয়,
পরিশ্রমী নারী-পুরুষ জলের কোলে ঘুমোয় শিশুর মতো।
বর্ষাকালকে আরো বেশি বর্ষাকাল করে দেয়
আসন্ন শীতকালকে টেনে আনে কাছে
বিদায়ী শীতকালকে যেতে দেয় না,
আর গ্রীষ্মকালের জান সিলিং ফ্যান।

আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণী জীবনের পরম-চক্র এই সিলিং ফ্যান-
চুল শুকোনো কাপড় শুকোনো অথবা খাবার
অথবা শরীর অথবা মাথা ঠান্ডা করে করে চলেছি,
জল শুকোনো ঘাম শুকোনো অথবা অশ্রু
অথবা রক্ত অথবা প্রেম শুকিয়ে শুকনো করে রেখেছি,
আমাদের স্বপ্ন, ঘুম অথবা মৃত্যু এই এক চক্রে ঘুরিয়ে রেখেছি।

একা মানুষের খুবই শক্ত পোক্ত একটা অবলম্বন এই সিলিং ফ্যান-
বন্ধ ঘরে একে  বন্ধ করে
রশি-বন্ধ করা যায়,
বন্ধ রশি ঝুলিয়ে দেওয়া যায়,
নিজের গলায় পরিয়ে নিজেও ঝুলে পড়া যায়-
পৃথিবীর নির্জনতমো অবলম্বন।

মুহাম্মাদ শোয়াইব। মিউনিখ, জার্মানি