বনসাই বিলের ধারে মরণ যন্ত্রণায় কাতর নাদান বালিহাঁসের ডানায় দেখেছি বিদায়ী রোদের রক্তাভ বিষণ্ণ হাসি! ঘর ফেরা চড়ুইর চঞ্চুতে দেখেছি অজস্র কথার নহরপাখিরও আছে ঝরনার মতো চঞ্চল কিছু শব্দিত ভাষাকোল ঘেঁষা বালিয়াড়ির নদিত চোরাই বুকে চোরাবালিরও কিছু দুঃখ থাকে ছুঁইতেমড়া লজ্জাবতীর মতো। দূরে পড়ন্ত রোদের সুগন্ধি মেখে পরিযায়ী রাজহাঁস কুমারী ডানার ভেতর তুলে রাখেগোধূলির সেই প্রাকৃত রোদের ওম সাথে মেখে নেয় বনসাই বিলের ধবল-কাজল জলের কিছু উন্নিদ্র দুখের ছড়ানো- ছিটানো আবির। কোকিল সন্ধ্যা!ভেসে আসে কাঁসার বদমেজাজি শব্দের বেওয়ারিশ সুর পাখির মগেজেও অন্ধ গুহার আঁধার নামে লাওয়ারিশ কুকুরগুলো সন্ধ্যার কালো চোখে ভয়ে ভয়ে একসাথে কোরাসের মতো কর্কশ গলায় শব্দ তুলে। তাদেরও ভাষা আছে শব্দহীন বর্ণ ছাড়া এক অদ্ভুত বিপন্ন ভাষা!মানুষ বুঝে না সে ভাষা! বনসাই বিলের চপল জলপিপির ঠোঁটে রূপোলী মাছের লাশদিনের শেষে চোরাবালির আঁচলে একফালি রোদের টুকরো নিয়ে ঘর ফেরে স্বজনহারা বিধবা ডাহুকী কণ্ঠে তার রোদমাখা যক্ষার ছাউনি তবুও রুগ্ন ডানায় প্রেমের তর্জমা নিয়ে হলুদ জোছনায় বিলের জলে জীবনের শেষ গোসল সারতে চায়! আমি দেখেছি নিশাবসানে রাত যখন ঘুমিয়ে পড়েদূরে বনদেবীর বাড়ির পাশে পাহাড়ের গা ঘেঁষে কালো তেনার মতো তাঁর ক্লান্ত শরীরখানা এলিয়েতখন গোটা কয় নক্ষত্র এসে পাহাড়ের কানেকানে রাতের জঠরে ওম নেয়া উদার অভিমানি স্বপ্নহীন রুগ্ন আকাশের কথা বলেনক্ষত্রেরও একটা ভাষা আছে শব্দহীন সংগীতের মতোমানুষ বুঝে না সে ভাষা! আমি দেখেছি সন্তান হারা বিপন্ন শকুনের চোখে মমতার জল ; শকুনের কান্নারও একটা ভাষা আছেমানুষ বুঝে না! পাখি বুঝে-বুঝে মানুষের ভাষাবনসাই বিলের জলের ভাষা। একদিন আমিও পাখি হবোমিশে যাবো দূর আকাশেলুকবো কালো মেঘের ধূম্র ছায়ার আড়ালেআবারো ভেসে উঠবো সাদাসাদা ঘোড়ার মতো কিংবা শ্বেত বরফে নকশা কাটা কালোকোলো যমদূতের মতোসেখানে ভাসবো পলায়মান পাখির মতো বেদনা ক্লান্ত আকাশে-নীল চাদরে!একদিন হয়তো নেমে আসবো আবারো বনসাই বিলের ধারেপাহাড়ের মতো রাতের কারচুপি আঁধারে ঐ দূরের নক্ষত্রকে সাথে নিয়ে আকাশের পিঠে হেলান দিয়ে ঘুমবো মৃত্যুহীন ঘোঙ্গট পরা মৃত্যুর মতো যেখানে আমি জন্মাইনি কোনোদিন! মুতাকাব্বির মাসুদ। শ্রীমঙ্গল
Ashram Bengali Magazine, Ottawa