অটোয়া, শুক্রবার ৯ মে, ২০২৫
হীরা ঠাকুর - আশিস চক্রবর্তী

     মাস খানেক হলো বড়ুয়ার সাথে সাক্ষাৎ নেই। পুজোর ছুটির সাথে অতিরিক্ত কিছু ছুটি নিয়ে  ও দেশের বাড়ির উদ্দেশ্যে রহনা দিয়েছে। দিন পনের আগেও কুরিয়ারে ওর কারেন্ট হিন্দি ভাষায় লেখা খসড়া আমার কাছে এসে পৌঁছেছিল। ওগুলোরই অনুবাদ ক্রিয়া চালাচ্ছি। অবশ্য ফোনে কথা হয়েছে দু একবার সেও ওই লেখা সংক্রান্ত। আজ কেন জানিনা সকাল থেকেই আমার লেখকবন্ধু বড়ুয়ার জন্য মনটা বড়ো অস্থির হয়ে উঠেছে। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সবেমাত্র শরীরে ঝিমুনি এসেছে এমন সময় ডোরবেলের শব্দ। এমন অবেলায়  উঠে গিয়ে ডোরবেলের শব্দের সাড়া দিতেও কেমন জানি আলস্য আসে। দরজা খুলে দেখি বড়ুয়া। আমি তো রীতিমত অবাক। বড়ুয়া আমাকে সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো- কি চমকে দিলাম তো?
     আমি বরাবরই আমার হিন্দি ভাষী বন্ধু বড়ুয়ার সমস্ত কথাবার্তা পাঠেকর স্বার্থে বাঙলাতেই তুলে ধরি। আমি দরজা বন্ধ করে এসে ওর পাশে বসে হাসি হাসি মুখ করে বললাম- তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না, আজ সকাল থেকে  তোমার কথা মনে করছিলাম।
     তারমানে তোমার টেলিপ্যাথির জোর আছে বলছো!- বললো বড়ুয়া।
     ওসব অলৌকিক ক্ষমতার কথা আমি বলতে পারবো না। যেটা সত্যি সেটা বললাম। তারপর কোথা থেকে হঠাৎ আগমন? দেশের বাড়ি যাওনি?
     বড়ুয়া বেশ আরাম করে বসে বললো- গিয়েছিলাম। কিন্তু দু এক দিনের বেশি থাকতে  পারিনি।
     তারমানে! এতদিন ছিলে কোথায়?  অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম আমি।
     বড়ুয়া প্রশ্নটা এড়িয়ে অন্য প্রসঙ্গ তুলে বললো -সব বলবো। সে অনেক ব্যাপার। আগে তোমার কাছে একটা ইতিহাস জানবার আছে।
     জিগ্যেস করলাম- কি জানতে চাইছো?
     বড়ুয়া বললো- তোমাদের এই সোনার বাংলায় দীর্ঘ দিনতো রাজা বাদশাহরা শাসন করেছে। তাদের ধন রত্নের তো কমতি ছিলনা। ওসবের লোভেই তো বারবার আক্রমণ চলেছে বাংলা তথা ভারতবর্ষের ওপর। সে সবই কি লুঠ করে নিয়ে যেতে পেরেছিল নাকি এখনো কোথাও লুকিয়ে আছে?
     বড়ুয়ার এধরণের প্রসঙ্গ উৎক্ষেপণ আমার অদ্ভুত লাগলো। বললাম - তুমি লেখক মানুষ। লিখে আর চাকুরী করে দিব্বি তো আছো। আবার এসবের পিছনে ধাওয়া কেন?
     আহা বল না- জেদ ধরলে বড়ুয়া।
     বললাম- খানিকটা ইতিহাস ঘটলেই এই জবাবটা তুমি পেতে। আমাকে আর প্রয়োজন হতোনা। আগেকার দিনে জমিদার বলো আর রাজা বলো তারা বিভিন্ন কায়দায় নিজের সঞ্চিত ধন এদিক ওদিক লুকিয়ে রাখতো পড়েছি। কোনো সংকেত বা কঠিন ধাঁধার মাধ্যমে  ধনরত্নের নকশা আঁকা থাকতো। তার উদ্ধার করতে পারলেই চলে আসবে হাতের নাগালে। এখনো শোনা  যায় অমুকের পূর্ব পুরুষ নাকি মাটি খুঁড়ে সোনার টাকা পেয়েছে। এরম দেশ বিদেশে অনেক ঘটে। শুনেছি নাকি হিটলার ওএসবের খোঁজে মজে ছিলেন। এখন তুমি যদি বলো ঠিক কোথায় কোথায় সঞ্চিত আছে! তার খবর আমি অন্তত তোমাকে দিতে পারবো না।
     --হুম বুঝলাম। তবে এই ধরণের গুপ্তধন নয়। এসব তো বাড়ির বয়স্কদের মুখে হামেশাই শোনা যায়। জ্ঞানের পরিধিটাকে আর একটু বাড়াও বুঝলে। আরো একটু গভীরে যাও। রাজা বাদশাহ ছাড়াও যখের ধন ও তো আছে। এই যেমন -ষোড়শ সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে পর্তুগিজ হার্মাদ বাহিনী বাংলার দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে ব্যাপক লুঠতরাজ চালিয়ে ছিল। সে কথা বাংলার ছড়া গানেও পাবে। জলে ভাসমান বাণিজ্যিক জাহাজ দেখলেই তারা মুহূর্তের মধ্যেই আক্রমণ আর হত্যা লীলা চালিয়ে ধনরত্নের ভান্ডার লুঠ করত। কিন্তু ওরা জলেই সীমা বদ্ধ থাকেনি। আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ে বাংলার উপকূল অঞ্চলে, অত্যাচার আর লুঠের ভয়ে মানুষ জন উপকূল অঞ্চল ত্যাগ করে পালাতে থাকে। সেই সব পরিত্যক্ত অঞ্চল ধীরে ধীরে জঙ্গল আর বাঘের ও অন্যান্য জীব জন্তুর আস্তানা হয়ে পড়ে যেটাকে এখন সকলে সুন্দরবন অঞ্চল বলে জানে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অবিভক্ত বাংলা থেকে সমস্ত লুঠের ধন কি তারা দেশে নিয়ে যেতে পেরে ছিল? ঐতিহাসিকরা বলছে না পারেনি। কারণ ব্রিটিশ সরকার বাংলা দখলে নিলে সে সবের অনুসন্ধান চালিয়ে ছিল। কিন্তু পায়নি কিছুই। তবে সব গেল কোথায়?  নিশ্চিত লুক্কায়িত আছে বর্তমান এই দুই বাংলার কোনো এক জায়গায়।
     আমি একটু চোটে গিয়ে বললাম - কি ব্যাপার বলতো, তুমি এতোদিন ঘাপটি মেরে হঠাৎ আজকে গুপ্তধন নিয়ে পড়লে। এব্যাপারে হঠাৎ ইন্টারেস্ট। মাটি খুঁড়ে কোনো হাঁড়া টারা পেলে নাকি।
     বড়ুয়া খানিক তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো- মাটি খুঁড়ে পুরোনো সোনা দানা পেলে তেমন আশ্চর্য হতাম না। কিন্তু তোমার আমার জানার বাইরে আরো নানান রকমের গুপ্তধন আছে, বুঝলে। যে গুপ্তধন এর খোঁজ আমি পেয়েছিলাম, তার কাছে শত রাজার গুপ্তধন ও নস্যি।
     --বড়ো মাপের নেশা টেশা করে ঘরে ঢুকেছো নাকি। আজকে কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যরকম ঠেকছে তোমাকে। সাহিত্যিক বড়ুয়া আজকে তুমি নও। ভেতরে কি চেপে রেখেছো বলোতো?
     এরপর বড়ুয়া কোনো রকম ভূমিকা না করেই বললো- গিয়েছিলাম অন্ধ্রপ্রদেশ, হীরা ঠাকুরের দর্শনে।
     হীরা ঠাকুর? সে আবার কে? নতুন দেবতার আমদানি হয়েছে নাকি? - জানতে চাইলাম আমি।
     - সে তুমি ঠাকুরও বলতে পারো, সাধু সন্ন্যাসীও বটে আবার ম্যাজিসিয়ানও বলতে পারো। জীবন্ত সম্পদ বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। সব মিলিয়ে একটা তালগোল পাকানো ব্যাপার।
     --তোমার কোথায় যা ইঙ্গিত পাচ্ছি বেশ আকর্ষণীয় লোক। তার খোঁজ পেলে কোথায়?
     -- এবারের পুজোর ছুটিটা নষ্ট হয়ে যায়নি, বুঝলে হে। ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে উঠলে জানতে পারি আমার জ্যাঠা মশায় সপরিবারে গিয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশ বেড়াতে। সেখান থেকে ফোনে জানান হীরা ঠাকুরের কথা আর তার আলৌকিক ক্ষমতার কথা। মন কিছুতেই মানতে চাইলো না। হাতে সময়ও ছিল অনেক। লেখা গুলো তোমাকে কুরিয়ার করে দিয়ে বেড়িয়ে পড়ি। জ্যাঠা মশায়রা যে হোটেলে উঠছেন ওখানেই গিয়ে উঠি। সন্ধে বেলা কৃষ্ণা নদীর ধারে নাকি ওই হীরাঠাকুর দর্শন দেন। অপেক্ষায় বসে রইলাম। সূর্য তখনডুবু ডুবু। নদীর জলে নিভন্ত আলোর ছটায় চারিদিক কেমন যেন একটা রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করেছে। মাথার ওপর দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি বাসায় ফেরার তাগিদে পাখা ঝাপটিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। চারিদিক শান্ত। যেন অন্য এক পৃথিবী। মনের ভেতর কৌতূহল নিয়ে বসে রয়েছি। হঠাৎ দেখি নদীর একে বারে কিনারে  এক জটা জুটো ধারী সন্ন্যাসীর আবির্ভাব। মুহূর্তের মধ্যেই এলাকা ভরে গেল মানুষের উল্লাস আর উৎসাহে। এয়োতি মেয়েরা সব ছুটে এসে বাবাজির পায়ে সিঁদুরের কৌটা ঠেকিয়ে মাথায় ছুঁয়ে নিচ্ছে। ভিড় ঠেলে অল্প ভেতরে গিয়ে দেখি একটা হাড় জিরজিরে কঙ্কালসার সাধু গোছের মানুষ কৌপিন পরে পদ্মাসনে বসে রয়েছে এক হাত তার নদীর জলে ডোবানো। চোখ দুটি বন্ধ। মুখমণ্ডলে বিরাজ করছে চরম প্রশান্তি। ওই মৃদু আলোতেও তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যেন স্পষ্ট দেখা যায়। একটা আলোর রেখা বলতে পারো। গায়ে  তেমনি দুর্গন্ধ। স্থানীয় কয়েকজনকে  জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি সাধু মহারাজ নাকি চির মৌনব্রতে আছেন। ইশারায় কথা বলেন। চারিদিকে হইহই হুলুস্থুল ব্যাপার, এ ওর গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। শুধু মাত্র কাছে পৌঁছানোর জন্য। একপ্রকার লড়াই লেগে যাওয়ার সামিল। সাধু সন্ন্যাসীর কাছে আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য কাছে ঘেঁষতে সবাই চাই। তা বলে এমনি মারামারি আর গুঁতোগুতি জীবনে শুনিনি, কিন্তু তা দেখলাম। সকলের এরম আচরণ কেন, অন্য এক পাশের লোককে জিজ্ঞাসা করতেই উনি সকলকে ধাক্কা দিতে দিতেই বললেন - আপনি নতুন এসেছেন?
     --হ্যাঁ কেন?
     --বাবাজির যার প্রতি করুনার দৃষ্টি পরে, তাকে দেন মহাপ্রসাদ । সে প্রসাদ একজনই প্রাপক। ওই প্রসাদ দেয়া হয়ে গেলে উনি স্থান ত্যাগ করেন। সে  প্রসাদ নেবার প্রতিযোগীতা চলছে। তাইতো একে ওপরকে পিষে মাড়িয়ে আগে যেতে চাইছে।
     মহাপ্রসাদের মাহাত্ম্য কত খানি এদের লড়াই দেখলেই একটা অনুমান করা যায়। বাবাজির সঙ্গে কিছুই নেই। শুন্য হাত। লোকজনের মধ্যে কাউকে ফল ফুল  মিষ্টান্ন বা কোনরূপ অন্নভোগ আনতে দেখলাম না। তাহলে প্রসাদ আসবে কোত্থেকে? এসব ভাবছি, পরক্ষনেই দেখি এক বিরাট দেহি  ভক্ত বাবাজি বাবাজি বলতে বলতে ভিড় ভেঙে  সকলকে ছিটকে সন্ন্যাসীর দিকে ধাবিত হচ্ছে। সেই ভিমকায় এর ঠেলায় লোকজন ছিটকে এদিক সেদিক গিয়ে পড়ছে। আমিও সামনের একজনের কুনুয়ের গুঁতো খেয়ে ব্যথায় আর্তনাদ করে সটান গিয়ে পড়লাম একেবারে বাবাজির পায়ের গোড়ায়। বাবাজি চোখ খুলে সেই নদীতে ডোবানো হাতটা আমার কপালে ছুঁইয়ে আমার হাতে একটা নুড়ির মতো শক্ত পাথর গুঁজে দিয়ে উঠে পড়লেন। তৎক্ষণাৎ যে যেদিকে পারলো সরে পড়লো। রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যেতেই উনি হনহন করে অন্ধকার এ মিলিয়ে গেলেন। কেউ পিছু নিলে একটা সাবধানীসূচক  হাতের ইশারায় নিষেধ করলেন। আমি ব্যাপারখানা কিছু বুঝলাম না। লোকজন আমার দিকে আড়ি পেতে তাকিয়ে ফিরে যেতে থাকলো। হাতের মুঠিতে পাথরটিকে চেপে ধরে একটু আলোর খোঁজে কাছেই মন্দিরে ছুটলাম। সামান্য নদীর নুড়ি কাঁকর নিয়ে মানুষের হট্টগোল এর শেষ নাই। এরই বা কি মাহাত্ম্য থাকতে পারে!! সাত পাঁচ ভেবে মন্দিরের জ্বলমান প্রদীপের সামনে পাথরটা মেলে ধরতেই চমকে উঠলাম। আমার সর্বাঙ্গে একটা ঢেউ খেলে গেলো। আমি ধপ করে সেখানে, নির্বাক, নিথর হয়ে বসে পড়লাম।
     এখানেই বড়ুয়া খানিক বিরতি নিলো। আমি সেই ফাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম কি ছিল ওই পাথরে?
     বড়ুয়া বললো- একটা হীরে। আনপলিশড হীরে।
     এটা কি করে সম্ভব, সেও আবার হয় নাকি?-- বললাম আমি।
     এরপর বড়ুয়া পকেট থেকে হীরেটা বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। তারপর বললো- একদম অরিজিনাল, আমি যাচাই করে এনেছি।
     আমি যখন নেড়ে চেড়ে হীরাটা পরীক্ষা করছি, বড়ুয়া বললো- সেই মহাপ্রসাদ নিয়ে হুড়োহুড়ি আর হীরে ঠাকুর নাম করনের  ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে।
     সাধু বাবা কোনো মহারাজের সম্পত্তি টম্পত্তি পেয়েছে নাকি যে এরম অন্ধকারে ভেলকি দেখিয়ে হীরে বিলোচ্ছে। এও তো হতে পারে, এসব বুজরুকী করে মানুষের কাছে পূজিত হতে চাইছে- দেবতা হতে চাইছে। পরে ভক্তদের কাছে সুদে আসলে তুলে নেবে!! --বললাম আমি।
     আমার প্রশ্নের উত্তরে বড়ুয়া বললো- এরম ভাবিনি তা নয়। কিন্তু তারও সমাধান একটা পেয়েছি। এরম সন্ন্যাসীর হীরে বিলানোর খবরটা মিডিয়ার কাছে যেতেই সমস্ত এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়লো। প্রচার লাভ করতেই বাবাজির আর দর্শন পাওয়া গেলো না। সাধুর এরম হঠাৎ উধাও হওয়াতে পন্ডিত মানুষেরা প্রথমটা  ভন্ড সাধু হিসেবেই তাকে প্রতিপন্ন করে। কিন্তু বাবার মহাপ্রসাদ প্রাপ্ত ভক্তগনের কাছে আসল হীরে দেখে বিশেষজ্ঞদের টনক নড়ে। তারপর কৃষ্ণা নদীতে কত ডুবুরি নামলো, নানারকম কৌশল প্রয়োগ করেও এক রতি হীরক বিজ্ঞান সেখান থেকে তুলে আনতে পারেনি। অথচ নদীর কিনারে হাত ডুবিয়ে সাধু মহারাজ দিব্যি হীরা তুলে যাচ্ছিলেন। বিজ্ঞান শেষটাই তোমার মতোই একটা জবাব দিলো। নিরাশা একটা আসলো। বেশিক্ষণ সঙ্গ পেলাম ওই অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী মানুষটার। যে কিনা মুহূর্তের মধ্যে জলে হাত ডুবিয়ে হীরার মতো মূল্যবান জিনিস সংগ্রহ করতে পারে তার পরনে সামান্য কৌপিন, শীর্ণ চেহারা!! সাধারণ কোনো সাধু সন্ন্যাসী তিনি নন। তবে মন এতো সহজে মেনে নিল না। অনেক শুনছি, খবরে পড়েওছি কোন এক দেশের নদীর স্রোতে স্বর্ণর গুঁড়া বয়ে আসে, সেখানকার অধিবাসীরা সারাদিন নদীর জল ছেঁকে  সেই সব সংগ্রহ করে। সেরমই কিছু একটা যদি এক্ষেত্রে ঘটে!! জিজ্ঞাসু মনের কৌতূহল নৃবিত্তির জন্য ইতিহাস এবং ঐ নদীর ভৌগোলিক অবস্থান ঘেটে যা জানলাম তাতে আশ্চর্য এর বাঁধ ভেঙে পড়লো। সমস্ত শরীরে ঝাঁকুনি দিয়ে মাথার ভেতরটা বোঁ বোঁ করে উঠলো।
     আমি জিজ্ঞাসা করলাম - কি এমন জানলে?
     বড়ুয়া বললো- একসময় অন্ধ্রপ্রদেশ হীরার জন্য বিখ্যাত ছিল। বিশ্বের বিখ্যাত দশটি হীরার সাতটি ওখান থেকেই পাওয়া গিয়ে ছিল। অনেক কাল আগে কৃষ্ণা নদীর অববাহিকায়  হীরার খনিগুলি অবস্থিত ছিল। কোহিনুর, হোপ ডায়মন্ড প্রভৃতি হীরাগুলি ওই সমস্ত খনি থেকেই পাওয়া যায়। এক সময় নদীর গতি পথ পরিবর্তন হয়, সেই সঙ্গে খনিগুলির সলিল সমাধি ঘটে। তারপর নদীগর্ভে অনেক অনুসন্ধান এবং খনন কার্য চালিয়েও খনিগুলির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
     তারমানে? কি বলতে চাইছো তুমি? -জিজ্ঞাসা করলাম আমি।
     বড়ুয়া খুব শান্ত গলায় উত্তরে বললো- হীরা ঠাকুরের নদীর জলে হাত ডুবিয়ে হীরক প্রাপ্তি স্রেফ বুজরুকী বলে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

আশিস চক্রবর্তী। ভারতবর্ষ