অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
বাংলা ছোটগল্পে জাতির পিতা - ড. ফজলুল হক সৈকত

৯৭৭ সালে, যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতি থেকে অন্তরালে, যখন বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা পর্যন্ত নেই কোথাও, এমন প্রতিবেশে একুশে ফেব্রয়ারির সকালে বাংলা একাডেমির কবিতা পাঠের আসরে ‘আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি’ কবিতায় কবি নির্মলেন্দু গুণ প্রকাশ্যে উচ্চারণ করলেন বঙ্গবন্ধুর নাম। বললেন- ‘সমবেত সকলের মতো আমিও গোলাপ ভালোবাসি/ রেসকোর্স পার হয়ে যেতে যেতে সেইসব গোলাপের একটি গোলাপ/ গতকাল আমাকে বলেছে,/ আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি/ আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।’ চারদিকে তখন কানাকানি, গুঞ্জন। কথাশিল্পী ও শিক্ষাবিদ আবুল ফজল, তৎকালীন সামরিক সরকারের উপদেষ্টা, লিখলেন ‘মৃতের আত্মহত্যা’ নামের একটি গল্প। এটিই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত প্রথম গল্প। 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহিত্যের উপাদান হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে ১৯৭৫-এ তিনি নিহত হলে সাহিত্য তাঁর প্রভায় আলোকিত হতে থাকে। কথাসাহিত্যে বঙ্গবন্ধু চরিত্রটি জায়গা করে নিতে থাকে আপন বৈশিষ্ট্যে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত আবুল ফজলের দ্বিতীয় গল্প ‘ইতিহাসের কণ্ঠস্বর’-এ বঙ্গবন্ধুকে মানবিক ও বীর-পুরুষের ভূমিকায় হাজির হতে দেখা যায়। এই গল্পটি অতি-প্রাকৃত ঘরানার। এতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্ষুধিত পাষাণ‘-এর স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। মেহের পাগলাকে এখানে পাওয়া যায় তার সংলাপসহ। তফাৎ যাও, তফাৎ যাও। সব ঝুট হ্যায়’- এই বাক্যমালার মধ্য দিয়ে লেখক ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গকে বাঁচিয়ে তুলতে চান নতুনরূপে। গল্পটিতে জেদি ও স্বপ্নবাজ এক চাচার চোখে প্রবল প্রতিপত্তিবান ভাতিজা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর রূপায়ণ দেখতে পাওয়া যায়। রাজনীতিবিদ মুজিবের জীবনে কোনোদিন রাজনীতি‘ না-করা চাচা-চরিত্রটি কীভাবে গল্পের ভেতর দিয়ে ভাজিতার বিরাটত্ব, তাঁর প্রাসঙ্গিকতা, ধীরে ধীরে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু পুনর্প্রতিষ্ঠা, ধানমণ্ডির বাড়িতে পুনর্বাসন- এসব প্রসঙ্গকে পাঠকের সামনে হাজির করেন, তা রীতিমতো দেখবার বিষয়। গল্পকার জানাচ্ছেন- ‘দুনিয়ার বুক থেকে হারিয়ে গেলেই কি সবকিছু সব সময়ের জন্যে হারিয়ে যায়!’ - গল্পের ক্যানভাস ৩২ নম্বর। পুরো একটা মরা-বাড়ি কীভাবে বেঁচে ওঠে, তার বিবরণ এই গল্প। বর্ণিত চাচার কল্পনায় জানাচ্ছেন গল্পকার- ‘ভাইপোর ধানমন্ডির অত বড় বাড়িটা খালি পড়ে আছে, খাঁ-খাঁ করছে। আমার তো আর মরণের ভয় নেই। সরকারের অনুমতি নিয়ে আমিই কেন ঐ বাড়িতে থাকি না! বাড়িটা অন্তত আবাদ থাকুক। কোনোদিন যদি নাতনি দুটি ফিরে আসে, তারা অন্তত বাপের ঘরে উঠতে পারবে। দিতে পারবে বাতি।’ প্রসঙ্গত গল্পে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাও উপস্থিত থাকেন। একটা পাঠ নেওয়া যেতে পারে- ‘ভাগ্য, দুটি মেয়ে দেশের বাইরে ছিল। বংশে বাতি দিতে তারাই শুধু বেঁচে আছে। সব আল্লাহর মর্জি। আল্লাহ তুমি রহমানুর রহিম, কুল্লু শাইয়ূন ক্বাদির, সব অসাধ্যকে তুমিই পারো সাধ্য করতে।’- এক সময়ে শেখ মুজিবের দুই কন্যা দেশে ফিরবেন, পিতার ভিটায় আশ্রয় পুনর্প্রতিষ্ঠা করবেন, হত্যার বিচার করবেন, সব ভয় জনমন থেকে দূর করবেন, সে আশাবাদ এই গল্পের ক্যানভাসে এঁকেছেন আবুল ফজল। তাঁর সেই আশাবাদ আজ সফল হয়েছে। গল্পটিতে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর দাফন-দৃশ্য, দাফনের পূর্বাপর টুঙ্গিপাড়ার জনজীবন, ধানমন্ডির বাড়ির ভুতুরে-অবস্থা এবং শেষত এক হত্যা-রক্তহীন এক সুন্দর দেশনির্মাণের স্বপ্ন। গল্পটির অতি-প্রাকৃত আবহ এবং আশাবাদকে ইঙ্গিত করে এমন দুটি উদ্ধৃতি এখানে হাজির করা যেতে পারে-
১। মনে হয় কারা যেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কোনো কোনো রাতে শুনতে পান পায়ের শব্দ, দাপাদাপি ও ছুটাছুটির শব্দ, হাসির খিলখিল আওয়াজও। তার মধ্যে চুড়ির রিনঝিন, টুংটাং শব্দ।; 
২। মেহের আলী কি চিরজীবী, না চিরন্তনের প্রতিনিধি? না আবহমান ইতিহাসের এক অবিনশ^র কণ্ঠস্বর? যে কণ্ঠস্বর বলে চলেছে হত্যা থেকে, রক্ত থেকে তফাত যাও, তফাত যাও।’

সূর্য-দীঘল বাড়ীখ্যাত সাহিত্যিক আবু ইসহাকের ‘মৃত্যু-সংবাদ’ গল্পটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নতুন বাংলাদেশের সরকারের দায়িত্ব- বিশেষ করে সংবিধান তৈরি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মহান মযুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, ভিনদেশি প্রচার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু-সংবাদ প্রচার, ষড়যন্ত্রকারীদের উত্থান এবং প্রসঙ্গত চেতনার মৃত্যুর কথা উঠে এসেছে এখানে। গল্পে বর্ণিত তাসাদ্দুক নামের এক আইনজীবী, যে-কিনা মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনে অবস্থান করছিল, করাচিতে চাকুরিরত তার বাঙালি বন্ধু আফতাবের কাছে লেখা এক চিঠিতে জানা যায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার সমর্থনের কথা। তাসাদ্দুক লিখছেন- ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্যে আগামীকালই রওয়ানা হচ্ছি। আমার এ চিঠি তোমার কাছে পোঁছাবার আগেই আমি কলকাতা পৌঁছে যাব। শোষক হানাদারদের কবল থেকে জন্মভূমিকে-মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতে হবে।’ গল্পের বর্ণনা থেকে অনুমান করা যায়, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি আর ভূখণ্ডের মুক্তি প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছিল। 

‘নেয়ামতকে নিয়ে গল্প’তে সৈয়দ শামসুল হক এমন এক নেয়ামতের কথা বলেছেন যে-কিনা আগে থেকেই কোনো ঘটনা সম্পর্কে বলে দিতে পারতো। কিন্তু সে বঙ্গবন্ধুর হত্যা বিষয়ে কোনো পূর্বাভাস দেয়নি। অবশ্য অভিজ্ঞজনদের মন্তব্য হলো- নেয়ামতকে যেহেতু এই বিষয়ে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করেনি, তাই সে কিছু বলেনি। এই ধারণার অন্য একটি মতও আছে- জিজ্ঞেস না করলেও নেয়ামত জীবনে দু-একটি জরুরি বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেছে। তাহলে প্রশ্ন হলো - বঙ্গবন্ধুর হত্যা সম্বন্ধে কেন সে কিছু বললো না? সে যদি আগে থেকে সতর্ক করতো, তাহলে জাতির পিতাকে এভাবে মরতে হতো না। এই গল্পে বর্ণিত বঙ্গবন্ধু-প্রেমিক মোতাহারের কথা সে-রকমই। গল্পের ভাষ্য এরকম: ‘তুমি যদি এতই জানতে, জানতে না বঙ্গবন্ধু খুন হবেন? তবে তুমি সেই কথাটা কেন আগে বলো নাই? কেন তুমি দেশবাসীকে বলো নাই? তবে আমরা জানতাম, আমরা সাবধান হতাম।’ গল্পকার সৈয়দ হক এই কাহিনির ভেতর দিয়ে জানিয়েছেন এক চরম সত্যকথা, তা হলো- ‘জানতেন শেখ মুজিবুর রহমানও স্বয়ং, তাঁকে জানানো হয়েছিল বহুবার, কিন্তু তিনি সাবধান হননি, তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি যে তাঁকে কেউ হত্যা করতে পারে এই বাংলাদেশে।’ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্রমে ক্রমে জমে-ওঠা বিদ্রোহ ও প্রতিবাদের চিত্র আছে বর্তমান গল্পে। গল্পকার লিখছেন- ‘পৃথিবীর নৃশংসতম রাজনৈতিক হত্যার ঘটনায় শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে যখন নিহত হয়েছিলেন, যখন তার প্রতিবাদ করতে কেউ আঙুল তোলেনি, পথে নামেনি, কথা বলেনি, তখন আমাদের মোতাহার জলেশ্বরীতে, সে তখন মেট্রিক পাশ করে কলেজে পড়ছে, বিস্ময়কর এক কাণ্ড করে বসে, সে জলেশ্বরী থেকে কিছু তরুণকে নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হয় মুজিব হত্যার প্রতিবাদ ও অবৈধ সরকারকে প্রতিরোধ করার ডাক দিয়ে; মোতাহারের কল্পনা ছিল পথে প্রতিটি জনপদ থেকে তরূণেরা তার এই মিছিলে শামিল হবে এবং শেষ পর্যন্ত কয়েক লক্ষ তরুণের মিছিল নিয়ে তারা ঢাকার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে;’ সমকালীন এই বাস্তবতার ভেতরের কঠিন বাস্তবতাও তুলে ধরেন গল্পনির্মাতা সৈয়দ হক। মিছিল নিয়ে বেশিদূর এগোতে পারিনি মোহাতার, গ্রেফতার হয়ে জেলে যায় সে। ক্রম বরফ যে গলতে থাকে, ধীরে ধীরে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে থাকে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় গল্পটিতে। একটি উদ্ধৃতি থেকে বক্তব্যটি স্পষ্ট হবে - ‘জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার তাকে কারাদণ্ড দিলেও, সেই জিয়াউর রহমানই সংসদ নির্বাচনের আগে অনেক রাজবন্দির সঙ্গে মোতাহারকেও ছেড়ে দেন, এ-জাতীয় কারাবাস আর এরকম মুক্তির সঙ্গে আমরা এখন খুবই পরিচিত, আমরা মোতাহারকে মিছিল করে কাঁঠালবাড়ি নিয়ে আসি।’

‘জাদুকরের মৃত্যু’ গল্পটিতে স্বপ্নহীন, অহংকারহীন জাতির ভাগ্যে কীভাবে স্বপ্নময়তা, স্নিগ্ধতা ও ইতিবাচকতা প্রবেশ করে, বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাবের ভেতর দিয়ে, তা তুলে ধরেছেন হুমায়ুন আজাদ। বাঙালির জীবনে খুশি, আনন্দ, বাঙালির ঘরে ঘরে কৃষি ও প্রকৃতির উদার উপাদান, বাঙালির জীবনে চিন্তা ও ধ্যান, ‘না-দেখা ভবিষ্যতের সোনালি রঙ’- এই সবকিছুই এসেছিল বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বলে; তাঁর আগমনের সাথে সাথে বাংলাদেশের ‘দিকে দিকে ঘটতে থাকে বিচিত্র স্বপ্নের ঘটনা; আর স্বপ্নই হয়ে ওঠে আমাদের বাস্তব। গল্পকার বর্তমান কাহিনিতে বাঙালি জীবনে শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতি ও প্রাসঙ্গিকতার প্রখর উজ্জ্বলতাকে এভাবে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। তিনি জানাচ্ছেন বাঙালির বঙ্গবন্ধু-পূর্ব জীবন-পরিসরের কথা- ‘অনেকদিন আমরা কোনো স্বপ্ন দেখিনি। আগে দিবাস্বপ্ন দেখেই আমাদের দিনের অর্ধেক কাটত, কিন্তু বর্বররা আসার পর ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখাও আমাদের স্থগিত হয়ে যায়। আমাদের চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এমন শূন্য চোখে কোনো স্বপ্ন জন্ম নিতে পারে না; আর দিবাস্বপ্ন দেখার জন্যে দরকার যে-কল্পনাশক্তি, প্রয়োজন যে-কামনা, তা আমাদের বুক থেকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। এমন প্রতিবেশে বাঙালির জীবনে পরিবর্তনের হাওয়া নিয়ে হাজির হন এক জাদুকর - তার নাম শেখ মুজিব। নানা বিপ্লব ও সংগ্রামের ভেতর দিয়ে, স্বাধিকারের-অধিকারের দাবি ও প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে তিনি ক্রমাগত ম্যাজিক তৈরি করতে থাকেন। বাঙালির জীবনের ধারা ও রঙে নতুন দোলা লাগিয়েছিলেন তিনি। গল্পকারের ভাষ্য- ‘সেই জাদুকর আমাদের গরিব পাড়াগাঁয়ে, বিষণ্ন শহরে, উশকোখুশকো মাঠে, বিবর্ণ বনে বনে জাদু দেখাতে লাগল। সাড়া পড়ে গেল দেশ জুড়ে। তার জাদুতে ঝিলিক দিয়ে উঠতো রহস্য ও বিস্ময়, শোভা ও স্বপ্ন ও আরও অনেক কিছু; আর আমরা ব্যাকুল বালকের মতো দাঁড়িয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখতাম তার জাদু।’ এই জাদুকরকে বারে বারে জেল ঘাটতে হয়েছে- জনজীবন থেকে অদৃশ্য হতে হয়েছে মাঝে-মধ্যেই। তারপর আবার দৃশ্যমান হয়েছে তার জাদু। অতঃপর এলো এক ভয়াবহ সময়- সংবাদ এলো- জাদুকরের দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যে-জাদুকর নিয়ে এসেছিল ‘মধুর, মহান, শিল্প রহস্যময় ধ্বনি’, তার মৃত্যু হয়েছে বর্বরদের হাতে। তার মৃত্যু পুনরায় বাঙালিকে স্বপ্নহীন-আচ্ছন্নতার দিকে নিয়ে যায়। ১৯৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজে নেমে আসে আরেক অভিজ্ঞতা। সেই সময়ের বিপন্নতা ও মৃদু আশাময়তার কালকে চিহ্নিত করেছেন গল্পকার এভাবে- ‘জাদুকরের কথা খুবই গোপনে, বলত কেউ কেউ; তার কথা মনে হলে তার বুকে গেঁথে থাকা ছুরিকাটিকে মনে পড়ত আমাদের। কোথা থেকে এসেছিল সেই জাদুকর, যে আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিল? স্বপ্নের মতো সত্য আর সত্যের মতো স্বপ্ন দেখানোর জন্যে সে আবার কবে আসবে?’

মানবিকতা, বিশ্বস্ততা, আন্তরিকতা আর নির্ভরতার অপর নাম যেন বঙ্গবন্ধু। অন্তত বাঙালির জন্যে এ-কথা সত্য। সেই সত্যটাই গল্পকার রশীদ হায়দার ‘শেষটাই সত্য’ গল্পের মাধ্যমে পাঠককে জানান দিতে চেয়েছেন। খোকা ওরফে শেখ মুজিবের ওরফে লুৎফরের ছেলের লাশ যখন গ্রামে আসে হেলিকপ্টারে করে, তখন তাঁর ছেলেবেলার খেলার সাথীরা, গ্রামবাসিরা, গ্রামের মসজিদের ইমাম কীভাবে গ্রহণ করেছিল, তার বাস্তবতা এই গল্পের বিষয়বস্তু। শেখ মুজিবের মৃত্যু সংবাদ, লাশের আগমন, লাশ দাফন না করে পুতে ফেলার চিন্তা, সেনা সদস্যদেরকে জানাজা করতে রাজি করানো, কঠোর নিরাপত্তায় অল্পকিছু লোকের সমাবেশে জানাজা অনুষ্ঠান ও দাফনের চিত্রাবলি এখানে সারি সারি করে সাজানো আছে। ‘গ্রামের বহু লোকের লাশ টেনেছি, কিন্তু এত বড় লাশ, এত ওজনের লাশ টানি নাই’- টুঙ্গিপাড়ার রজব মোল্লার এই উক্তিতে মিশে আছে বঙ্গবন্ধুর বিরাটত্ব- তাঁর মহত্ব। কিন্তু এই বিরাট মানুষটিকে সপরিবারে মেরে ফেলার মধ্য দিয়ে ‘শেখের বংশ নির্বংশ করতে’ চেয়েছিল প্রতিপক্ষ। কী দুর্ভাগ্য জাতির পিতার! লেখক জানাচ্ছেন- ‘হায় রে ভাগ্য, যার একটি অঙ্গুলি হেলনে গোটা জাতি যেখানে জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল, সেখানে তাঁরই জানাজায় মাত্র বিশ-পঁচিশ জন মানুষ।’ গল্পের শেষে কাহিনিকার একটি কাল্পনিকতা সৃষ্টি করে জাতির পুনর্জাগরণের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ব্যাপারটা এরকম- ‘কবরে চারজনের হাতে লাশ নামিয়ে, শুইয়ে, উত্তর দিকে মাথা ও পশ্চিমে মুখ ঘুরিয়ে দিতেই ঘটে গেল সেই অভাবনীয় ঘটনা। মুজিবের লাশ নড়ে উঠেছে। আর্মি অফিসার আর ছয়জন মিলিটারি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছিল মুজিবের লাশের দিকে, তারা আতঙ্কে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বলে, লাশ ! লাশ! লাশ নড়ছে?’ এরপর গল্পে দেখা যায় মুজিব উঠে দাঁড়ায়, অফিসার ও সিপাহীরা এ দৃশ্য দেখে দৌড়ে পালায়, আর মুজিব বলছেন- ‘আমার বাড়িতে ওরা প্রথম এল, কিন্তু কিছু না খেয়েই চলে গেল?’ গল্পকার রশীদ হায়দার মুজিবের বড়ত্ব, মানুষের প্রতি তাঁর মমতা-আস্থা ও ভালোবাসাকে তুলে ধরেছেন এই চিত্রকল্পের মধ্য দিয়ে। গল্পকার তাঁর পাঠকের মনে জাগাতে চেয়েছেন প্রত্যাশা-স্বপ্ন আর এক আচ্ছন্নতা। প্রসঙ্গত একটি গানের কথা মনে করা যায়- ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই।’ যেন বঙ্গবন্ধু জেগে উঠছেন, বেঁচে আছেন, দাঁড়িয়ে আছেন অটল- এমনটা কল্পনায় রেখে বিরাজ করতে চান গল্পকার; জাগিয়ে রাখতে চান পাঠকের মনে শেখ মুজিবের অস্তিত্ব। 

‘সেগুন কাঠের নাও’ গল্পে শরীফ খান ২০০৯ সালের কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দেখিয়েছেন শেখ মুজিবের অস্তিত্ব। ৭০-এর নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট, ২১ বছর রাষ্ট্র-পরিচালনা থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দূরে থাকা, শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের শক্তি, নৌকার ঐতিহ্য ও বৈঠার সামর্থ্য তুলে ধরেছেন। বাংলার সুন্দরবন, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, শের-এ-বাংলা একে ফজলুল হক প্রভৃতি প্রসঙ্গের অবতারণা করে গল্পকার শেখ মুজিবের শক্তি ও সৌন্দর্যকে হাজির করেছেন। ‘তোমাদের যার যা আছে, তা-ই নিয়ে প্রস্তুত থাকো’- ৭ মার্চের ভাষণের এই অংশের তাৎপর্য বর্তমান গল্পের প্রেক্ষিতবিন্দু। গফুর মৌয়াল এই ঘোষণাকে মাথায় রেখে তার হাতের বৈঠা নিয়ে নেমে যায় যুদ্ধে। আর এই বৈঠা দিয়েই সে দূর করতে হায় মৌলবাদের প্রভাব। প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তার এক সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন আছে এই গল্পে। একটা উদ্ধৃতি দিচ্ছি- ‘স্বাধীনতা এসেছিল। স্বাধীনতা চলেও গিয়েছিল। গফুর মৌয়াল মৌয়ালই রয়ে গিয়েছিল। সে মনে করত, আবারো স্বাধীনতা আসবে তার সেগুন কাঠের বৈঠা বেয়ে।’  

গ্রামের এক সাধারণ বর্গাচাষি রতন মাঝি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর ভালোবাসা তার মনে। বড় আশা করে দেখা করতে আসে নেতার সাথে। সাথে নিয়ে আসে নিজের হাতে করা কালজিরা ধানের চিড়া। কিন্তু নেতার বাড়ির সামনে থেকে গ্রেফতার হয়। গল্পের প্রেক্ষাপট ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট- যে রাতে নেতা মারা যান। হ্যাঁ, পাঠক ‘নেতা যে রাতে নিহত হলেন’ গল্পে ইমদাদুল হক মিলন এই রতন মাঝির কাহিনি লিখেছেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের নেতার বাড়ির আশে পাশে ঘোরাঘুরির সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় সে। হাতে পোঁটলায় চিড়া। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রতন জানায়- ‘বাড়ির নামায় এক চিলতে জায়গায় কালিজিরে ধান হয়েছিল। খুব অল্প হয়েছিল। পোনে দু’সেরের মতো চিড়ে হয়েছে। চিড়েটা সাহেব নেতার জন্য নিয়ে এসেছি। নেতা একমুঠ মুখে দিলে জীবন ধন্য হয়ে যাবে আমার। আমি সাহেব নেতাকে বড়ো ভালোবাসি। গরিবের ভালোবাসা! নেতাকে কেমন করে জানাবো! ম্যালা দিনের স্বপ্ন ছিল তাঁকে একবার সামনে দাঁড়িয়ে দেখবো।’ কিন্তু রতনের সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। যে রাতে রতনকে পুলিশ হাজতে দেয়, সে রাতেই নিহত হন নেতা। গল্পকার জানাচ্ছেন পাঠককে, সে-কথা- ‘ভোরবেলা কী রকম একটা গুঞ্জন উঠল থানায়। কী রকম একটা ছুটোছুটি।’ সকালে পুলিশ অফিসার রতনকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশ অফিসারের জবাবিতে জানান দেওয়া হচ্ছে নেতার নিহত হওয়ার খবর, রতনকে বলছেন তিনি- ‘নেতা কাল রাতে নিহত হয়েছেন। আমরা খবর পেয়েছি। তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ লোকজন, নেতার আদর্শে বিশ্বাসী, একই রাজনীতি দীর্ঘদিন করেছে এমন কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করে নেতাকে হত্যা করেছে। তোমার ওপর আমি অবিচার করেছি, ভাই। যাও, বাড়ি যাও।’ এই গল্পে আছে বিশ্বাসের প্রতি অবিশ্বাসের কাহিনি আর মানুষের সরলতার প্রতিচ্ছবি। 

জাকির তালুকদারের ‘পিতৃপরিচয়’ গল্পটি যুদ্ধশিশু-বিষয়ক। পাকিস্তানি সেনাদের অন্যতম অপকর্ম হলো মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা অসংখ্য বাঙালি নারীকে ধর্ষণ করেছে। তারা ছিল কেউ কিশোরী, কেউ যুবতী, কেউ-বা মধ্যবয়সী। লোকলজ্জায় বেশির নারীই এই অত্যাচারের কথা স্বীকার করেনি। এদের মধ্যে যারা দুর্ভাগা, প্রকৃতির নিয়মের কাছে দায় স্বীকার করে যারা গর্ভে ধারণ করেছিল পাক-ধর্ষকের বীর্য-বারতা, তারা গর্ভধারণের দায় নিয়ে পিতৃপরিচয়হীন সন্তানের জননী হয়েছে। অনেকে এই যন্ত্রাণার দায় ধারণ করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। যদিও ইতিহাসের পাতায় ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের কথা লিপিবদ্ধ, তবু মনে হয় এই সংখ্যাটি আরো অনেক বেশি- ভয়ানকভাবে বেশি। যাইহোক, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্তির পর, বিজয়ের আনন্দের কোনো ভোরবেলায় জন্ম দুলালের। ফকির আলি নামের এক গ্রামীণ ভিক্ষুক, যে কি-না পরবর্তীকালে দুলালের নানা বলে পরিচিত, তার বাড়িতে জন্ম লাভ করে দুলাল। লেখকের বর্ণনায় দুলালের জন্মকথা- ‘যুদ্ধফেরত মানুষ বাড়ি ফিরে দেখে ঘর নেই, আছে শুধু মুঠো মুঠো ছাই। সেই রকম সময়ে এক সন্ধ্যায় ফকির আলি ভিক্ষে করে তার ঘরে ফিরে দ্যাখে বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে আছে এক পাগলি। কোনো কথার উত্তর দেয় না। নিজের মনেই বিড়বিড় করে। কেঁদে ওঠে হাউমাউ করে। হেসে ওঠে খলখলিয়ে। খেতে বললে খায় না। খেতে দিলে খানিক খায়, খানিক ছড়ায়। কিন্তু পাগলির গা-জুড়ে মাতৃত্বের গন্ধ। যুদ্ধের বিজয়ে তখন সবার মনই নরম। ফকির আলির তো চিরকালই। মাতৃগন্ধ তখন তাকে আরো উদ্বেল করে। ফকির আলি হাত ধরে ঘরে ঠাঁই দিল পাগলিকে। গাঁ হাতরে ডেকে আনল দাই, আনল মধু, তেল, মালসা ভর্তি আগুন। সারা রাত নির্ঘুম তিনটি প্রাণী।’ তারপর ফকিরের কথা- ‘ভোর বেলাত তুই হলু।’ স্কুলে ভর্তিসহ বিচিত্র কাজে-কর্মে দুলালের বাপের পরিচয়ের প্রয়োজন পরে। কিন্তু কোথায় তার পিতা? কে তার পিতা? অবশেষে দুলালের চোখের রঙ এবং তার মায়ের এই গ্রামে আসার ঘটনার থেকে লোকেরা স্থির করে- দুলাল পাকসেনার অপকর্মের ফসল। একরকম নির্দিষ্ট হয়ে যায় দুলালের পিতৃপরিচয়। কিন্তু, না। গল্পের ক্যানভাস মোড় নেয় অন্যদিকে। সময় গড়িয়ে আসে ১৯৭৫ সাল। রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে প্রবেশ করে নতুন আবহ। গল্পকার জানাচ্ছেন- ‘হঠা’ একদিন গাঁ-জুড়ে চাপা থমথমে আবহাওয়া। কয়েকজন মিলিটারি নাকি মেরে ফেলেছে জাতির পিতাকে। মিলিটারি! সেই খানসেনাদের মতোই ওরা! যেহেতু এ গাঁয়ের মানুষ খানসেনা ছাড়া আর কোনো মিলিটারি চোখে দ্যাখেনি, বাঙালি মিলিটারি যে থাকতে পারে, তা তাদের জানা নেই। মিলিটারি যখন ‘শ্যাখের পুয়াক মারি ফালাছে, তাহলে দেশটা নিশ্চয়ই এখন আবার পাকিস্তান।’ গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা তিনপহরের শেয়ালের মতো সে রাতে গাঁয়ে আওয়াজ উঠল- ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ‘  আর ‘পরদিন সকালে দেখা গেল গাঁয়ের বুড়ো আমগাছে গলায় শাড়ির পাড় পেঁচিয়ে ঝুলছে দুলালের মা’-  এভাবে গল্পকার, কোনো এক যুদ্ধশিশুর পিতৃপরিচয়ের সংকট থেকে, তার পাঠককে নিয়ে যান মা-হারা, নিজভূমে পরবাসী বাঙালির জাতির পিতা-বিষয়ক মহা-বিভ্রমের দিকে। কালের পরিক্রমায়, লোকমানের হোটেলে পেটে-ভাতে কাজ-করা, ২২ বছরের যুবক দুলালের জীবনের বর্ণনার ভেতর দিয়ে জাকির তালুকদার বঙ্গবন্ধু-হত্যাপরবর্তী সময় থেকে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার তথা স্বৈরশাসক এরশাদের পতনকাল পর্যন্ত পরিসরে একটি ‘স্থির প্রজন্ম’কে তুলে ধরেছেন, যে প্রজন্ম ‘ভাবনা-চিন্তা-দুঃখ’ বিবর্জিত। জাকির লিখছেন- ‘এভাবেই বেঁচে আছে একজন দুলাল। তার কোনো উচ্চাকাক্সক্ষা নেই। তারুণ্য বা যৌবনের কোনো চাহিদা নেই। তার শৈশবের কোনো সুখস্মৃতি নেই। তার ভবিষত্যের কোনো ভাবনা নেই। কোনো স্বপ্ন নেই। স্বপ্নভঙ্গের কোনো আতঙ্কও নেই।’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু হীন বাংলাদেশের রাজনীতি- এই দুই চিন্তা ও ধারার একটা সমন্বয় দেখানোর চেষ্টা আছে গল্পটিতে। জনগণের নির্ভরতা এবং অবিশ্বাস ও আতঙ্ক- এই বিপরীতমুখি প্রবণতার কথা প্রকাশ করতে চেয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, লাইগেশন, ভেসেক্টমির কথা তুলে গল্পকার স্বৈর-শাসনের নির্মমতা এবং ফলত এক নপুংসক, ব্যক্তিত্বহীন প্রজন্মকে তথা জাতিকে ইঙ্গিত করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতির বিকাশধারা এতোটাই নড়বড়ে যে, তা সামান্য টোকায় পাল্টে যায়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর বেশকিছুকাল এদেশের মানুষ শেখ মুজিবের নাম মুখেও রিতে পারেনি। তার দলও ছিল প্রায় নিষিদ্ধ। এক সময় অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ইতিহাস ও রাজনীতি চলতে থাকে নিজস্ব ধারায়। গল্পকারের বর্ণনা থেকে খানিকটা পাঠ নেওয়া যেতে পারে- ‘একটু অন্যরকম উষ্ণতা আসে গাঁয়ে। কিছু মানুষ নিয়ে আসে উষ্ণতা। গাঁয়ে দেখা যায়, পাজামা-পাঞ্জাবির ওপর কালো বগল-কাটা সোয়েটারের মতো একটা কাপড় পরে বেড়াচ্ছে কয়েকজন মানুষ। এত দিন নাকি এই গাঁয়ে অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ ছিল এই কাপড় পরা। পঞ্চাশ-ষাট জন জোয়ান ছেলে আর প্রৌঢ় মিছিল বের করে। মুখ বাঁকায় মোজা মেম্বার আর তাদের লোকেরা। লোকমানের দোকানে চা খেতে খেতে ফিসফিস করে পৌঢ় মানুষেরা। তাদের চোখে উত্তেজনার ঝিলিক। কেউ কেউ বলে, আবার ফিরে এসেছে মুজিব কোট। আবার জেগে উঠেছে শেখ মুজিব।’ অণ্ডকোষ হারানো দুলাল, পুরুষত্ব-হারা এক প্রজন্ম, জীবনের কিছুই-না-পাওয়া এক যুদ্ধশিশু দুলাল, অবশেষে এক প্রবল ঘোরের মধ্যে খুঁজে পায় তার পিতাকে। বিভ্রান্ত এক জাতি ফিরে আসে পিতৃছায়ায়। গল্পকার জাকির তালুকদারের বর্ননায়- ‘তৎক্ষণাৎ’ দুলালের মাথায় স্নেহস্পর্শ ঘটে।’-  এই স্পর্শ পিতার স্পর্শ- জাতির পিতার সান্নিধ্য। 

ড. ফজলুল হক সৈকত

ড. ফজলুল হক সৈকত: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বেতার সংবাদ পাঠক, ফ্রেঞ্চ ভাষার প্রশিক্ষক, সাহিত্য-সমালোচক কবি ও গল্পকার।
ঢাকা। বাংলাদেশ।