চিঠি - মুহাঃ হাবিবুর রহমান
প্রিয় পাঁপড়ি...
শরতের স্নিগ্ধ সকালে কাশফুলের শুভ্রতায়তায় মোড়ানো একরাশ প্রীতি ও শুভেচ্ছা তোমার মন ছুঁয়ে যাক এমনি প্রত্যাশায় আজকের এই ছিন্ন পত্র-ভাবনার মিশ্রনে শব্দে গড়া পত্র বিলাশ। আশা করি মনের মাধৃরী মিশিয়ে সবটুকু মনোযোগে অধমের পত্রখানি পড়বে এই বেলা। বরাবরের মতো ভাষার গাথুনি দিয়ে তোমার লেখার ন্যায় আমি শব্দ বিন্নাস করতে পারিনা। শুধু জানি যা বলি যেটুকু লিখি অন্তরের মমতায় বুকের মধ্য থেকে উৎসারিত আবেগ মেশানো ভালোবাসা-আমি তোমার মাঝে দিয়েছি বিসর্জন। গ্রহন করে আমাকে ধন্য করবে জানি! সে বিশ্বাস আমার আছে।
আমি এটাও জানি এই লেখা তোমার ক্ষুধিত তপ্ত মনকে শীতল করবে। ভাবাবেগের নিষ্ঠুর আঘাতে কম্পমান দৃষ্টির আড়ালে বেহাল চিন্তা গুমরে মরে, বিরহের শ্যন্যতা চোখের নোনা জলে মিশে একাকার হয়ে মিলে যায় দিগন্তের শেষ খেয়ায়। পুষ্পিত যৌবনের উচ্ছল কামনায় মনের গভীরে জন্ম নেয়া বিপরীত দেহের প্রতি মধুময় টান অস্বীকার করতে পারোনা এক মহূর্তের জন্য হলেও। আমাকেও পারোনা সরাতে তোমার ভাবনার চিলেকোঠা থেকে। সে জন্য বারবার ফিরে আসো বুকের গভীরে, বলো ভালোবাসি ভালোবাসি জীবনের থেকেও বেশি। আর আমার অবস্থা তথৈ বচ...
গতকাল রাতে তোমাকে স্বপ্নে দেখলাম। খোলা চুলে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে বিমুগ্ধ চিত্তে দেখছো নীলাকাশ। ঝাঁক বাঁধা বলাকারা ডানা মেলে দূর নীলিমায় যাচ্ছে হারিয়ে। তোমার শরীর থেকে ঝরছে লোবানের মিষ্টি গন্ধ-(যে টি আমার ভীষণ পছন্দ) গোলাপী ঠোটের ভাঁজে মিলনের আহবান। সবটুকু শক্তি দিয়ে চাইলাম ধরতে তোমার হাত। ঘুমের মধ্যে বিহব্বল চিত্তে এলোমেলো ভাবনার তৃষিত পারাপার, ধরতে চেয়েও পারলাম সে ব্যর্থতা আমার চির কালের। তবুও শান্তনা মাঝে মধ্যে তোমার লেখা পাই, কিছুটা হলেও তৃপ্তি আসে, পূর্নতার জোয়ারে ভাসে মন। আজ কাল কেউ আর পত্র লেখেনা। সে দিন দেখলাম ডাক বিভাগের চিঠির বাক্সটি দেয়ালের গায়ে পড়ে অলস সময় কাটাচ্ছে। বড় মায়া হলো বেচারা বাক্সটির জন্য।
আসছে শীতে নাকি করোনা নতুন করে বিস্তার লাভ করতে পারে সেই চিন্তায় কিছুটা বিচলিত গ্রামের মানুষ। কিছু দিন আগে ঘূর্নি ঝড় আম্পানের প্রভাবে নদী ভাঙনে এলাকার বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হয়ে যায়। নোনাজলের আক্রমণে সর্বস্তরের মানুষ গুলির সে কি দুরাবস্থা। এখনো সে ক্ষত চারিদিকে। করোনা এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগের ছোবলে বিধ্বস্ত জনপদে এখন নিরন্ন মানুষের হাহাকার। স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি, সমাজ সেবক সেই সব মানুষের জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ করে চলেছেন। উপকূলের ভাঙা বাঁধ গুলি বাঁধতে তারা জনতার কাতারে কাধে কাধ রেখে কাজ করেছেন। রোদে কাদায় একাকার হয়ে নোনা পানিতে ভিজেছেন। বিশেষ করে তরুন উদীয়মান জননেতা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলন, সমাজ সেবক শিক্ষাবিদ মাওলানা একরামুল কবির, ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবুর ছবি তুমি টিভির পর্দায় দেখে থাকবে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে প্রতিকূল এই সময়ে নিত্যপন্য দ্রব্যের উর্দ্ধমূখী বাজার দর, অপরদিকে কাজের স্বল্পতা নিম্ন আয়ের মানুষগুলো চোখে সর্ষে দেখছে। পাঁচ বেলা বিধাতাকে ডেকে বলি-“ক্ষুধাতুর মানুষ গুলোকে বাঁচাও, এই জনপদে আর-ঝড় জলোচ্ছাস-নদী ভাঙন দিও না”।
এই দ্যাখো আবেগে পড়ে তোমাকে কষ্টের কথা লেখা শুরু করলাম। তুমি কিছু মনে করোনা। এই লেখা যখন তোমার কাছে লিখতে শুরু করেছি তখন অনেক ব্যস্ততা আমাকে তাড়া করে চলেছে। আমার জীবনের স্বপ্ন পূরনের কাছা কাছি একটা সময় পার করছি। আমি তোমাকে সেকথা নাইবা বললাম। তবে কথা দিলাম সুদিন যদি আসে তবে নিশ্চয় তোমাকে জানাবো। আমার সকল দুঃখ সুখের কাব্য গ্যাঁথা জানার অধিকার তো তোমার আছেই।
তোমার আগের চিঠিতে তুমি জানতে চেয়েছিলে বাড়ির পাশের বিলে এবারের শরতে ধান ক্ষেতের ফাঁকে কুচ বক আর পানকৌড়ির আনাগোনা আছে কিনা? মরামরা খালের জলে শাপলারা দল বেঁধে তাদের সাদা দল মেলে শোভা বর্ধন করেছে কিনা? সত্যি বলতে কি তোমার লেখা পাওয়ার পরেই সেই অতীতের স্মৃতি মাখা সময়টা মনে পড়ে যায়। আমি বিলের ধারে সেই ধানক্ষেতের সবুজ অরন্যে শাপলার মেলায় ঘুরতে যাই। কিন্ত তোমাকে ছাড়া যে শূন্যতা, তার অন্তনির্জাস বুকের মধ্যে হাহাকারের মাতম তোলে। সেই দিনের কথা মনে করে শুধুই কষ্ট বাড়ে। আমাদের স্মৃতি ময় অতীত আজ রং বদলিয়ে বিবর্ন, বিধ্বস্ত, প্রান্তর। সময়ের সাথে মানুষেরা ভোল পাল্টায় ক্ষনে ক্ষনে। সবার মধ্যে মন আছে কিন্ত সে মনে মায়া মমতার মতো বিষয় গুলি একবারেই তলানিতে। এর মধ্যেও (হাতে গোনা) কিছু মানুষ একবারেই যে বিবেকবর্জিত-মায়ামমতা শূন্য মনুষত্বহীন তা বলা যাবে না। মনে হয় তাদের মহানুভবতায় পৃথিবী টিকে আছে। সম্প্রতি তাদেরই একজন সুহৃদ আসাদ ভাইয়ের অসুস্থতায় এলাকাবাসীর অশ্রুসজল প্রার্থনার ভাষা তোমাকে আপ্লুত করবে। তুমি সুদূর সাত সাগর তেরো নদীর ওপারে থেকে কান পেতে শুনবে সে প্রার্থনার মর্মধ্বনি। তুমি জানতে চেয়ে ছিলে খোলপেটুয়ার তীরে ভরা জোস্নার রাতে জোয়ারের পানির উচ্ছল শব্দ শুনতে আজও কি পূর্ণিমার রাতে দাড়াই? কালে ভদ্রে দাঁড়াই বই কি! তবে সাথে তুমি থাকনা। থাকে আমার আদরের ছোট সোনা। তাকে ঘিরে আমার অনেক মায়া, আশা-স্বপ্নের জাল বোনা। সে কথা তোমাকে অন্যদিন অন্য ভাবে জানাবো কথা দিলাম। তবে এটুকু বলি- আমার লেখা পূর্নিমা দর্শন কবিতাটি পড়লে তুমি কিছুটা অনূভব করতে পারবে। (কবিতাটি কানাডা থেকে প্রকাশিত ‘আশ্রম বিডি’তে ছাপা হয়েছে। আমি তোমার জন্য এখানে সংযোজন করলামঃ
।। পূর্নিমা দর্শন।।
মাস শেষে পূর্নিমার রাতে
কিংবা একদিন পরে...
গোধুলীর অন্তীম লগনে যখন, ছোট্ট হাতটি ধরে বেরিয়ে পড়ি-
খোল পেটুয়ার তীরে,
খেয়া ঘাটের সিড়ি বেয়ে ঢুকে যাই অনেকটা গভীরে,
ঘরে ফেরা মানুষের ব্যস্ততা-খেয়া মাঝির হাকডাক, শুন শান নীরবতা ভাঙে।
পাখীমারা গ্রামের সব থেকে উচু গাছটার মাথায় লাস্যময়ী চাঁদ জাগে তার রুপের ডালি খুলে,
ছোট্ট হাতটি তখনও শক্ত করে ধরা থাকে...।
দক্ষিনের উত্তঙ্গু বাতাস ছুটে আসে সাথে নিয়ে জোয়ারের জল কলকল ধ্বনি
শূন্য নদীর পেটে নোনা জল ভরে,
স্রোতের টানে থরথর কাঁপে সোনালী ঢেউয়ের নাচন।
ইতোমধ্যে চাঁদের হাসি ছড়িয়ে যায়
রাত্রির সমস্ত শরীর জুড়ে।
খেয়া ঘাটের সব চেয়ে নিচু সিড়ির ধাপটা ডুবতে ডুবতে জলমগ্ন শাপলার মতো
ডুব সাঁতারের খেলায় মাতে।
পায়ের পাতা নোনা জলে ভেজে-রোমাঞ্চটা সেখানেই,
নদীর বুকে জোয়ারের বান-চাঁদ তখন মধ্য আকাশ ছুঁই ছুঁই,
লাস্যময়ী রমনীর উচ্ছল হাসি বিমুগ্ধ রাত্রির বাসরে
বাসন্তী স্বপ্ন মাখা মাধবীর রং।
বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বলি শাওন পাখি
খোল পেটুয়া ভরে গেছে জলে
চাঁদ এখন মধ্য গগনে চলো ফিরে যাই ঘরে...
কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেনা। পুনশ্চ শিঘ্রই তোমার স্পর্শ মাখা একটি পত্র পাওয়ার প্রত্যাশা করতেই পারি। আজ আর নয়, অন্যদিন অন্যভাবে তোমার ডাক শুনতে চাই! আমিও হয়তোবা তোমাকে রাঙাবো-সাজাবো কোনো কাব্যিক আহবানে। ভালো থেকো, ভালো থাকবে চিরদিনের মতো করে, তোমার ইচ্ছে মতো...।
ইতি
তোমারী সুজন
মুহাঃ হাবিবুর রহমান
নওয়াবেঁকী, সাতক্ষীরা
-
গল্প//উপন্যাস
-
28-10-2020
-
-