প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল-এর দু’টি কবিতা
চক্রব্যুহ
আমি নাচতে নাচতে পেরিয়ে এসেছি
আমার সেই মায়াময় গ্রাম;
একদিন আমার শৈশব,যৌবন ধারণ করেছে সে
কত অত্যাচারে ছিঁড়ে দিয়েছি
তার বুকের ঐশ্বর্য ফুল,ফল,গাছের লতা পাতা!
আর যেসমস্ত পাখিরা নাচতে আসত
গান করতে করতে হেঁটে যেতো পথের উপর
তাদের উপর নির্দয় গুলতির আঘাত ছুঁড়েছি কত!
মনের উঠোন জুড়ে তারা এখন উপহাস করে।
একটা পাগলিকে দেখতাম রাতের আনাচকানাচে,
মনের ভিতরে একটা প্রকট ভয় জাগাতো।
দিনের পর দিন ঠাম্মার রাক্ষস খোক্ষসেরা
মাথার ভিতরে চাঁড় দিয়ে উঠত কখনো ;
রূপকথার রাজকন্যারা মাঝে মাঝে স্বপ্নে
মনের কোণে জেগে উঠত না তা নয়?
সেসব ফেলে রেখে এসেছি নদীর বারান্দা জুড়ে।
আর আমার শৈশবের নাড়ীকাটা আঁতুড়ঘর;
বাবার আদরের দুধ দেওয়া লালিগাই
অতুল বুড়োর ডাক পড়ানোর সেই পাঠশালা
মায়ের গা মোছানোর নির্ভার সেই আঁচল
দাদা দিদির সাথে মাছ ধরতে যাওয়া
নদীর চরে কেটে কেটে রাখা ডোবাজুলি
বন্ধুদের সাথে খেলতে যাবার সেই প্রিয় মাঠখানা
সব ফেলে রেখে এসেছি দিগন্তের ওপারে।
কেমন এক ইট,কাঠ,পাথরের জঙ্গল
আমাকে প্রলুব্ধ করে রেখেছে!
অভিমন্যুর মতো চক্রব্যুহ হতে
বার হতে পারছি না আল!
ছুঁয়ো না
ছুঁয়ো না তোমার ওই হাত
আমি অচ্ছুৎ হতে চাইছি এখন;
এখন এই পোড়া পৃথিবীতে
দিন বড়োই খারাপ!
আমার হাতও তুলে রেখেছি
ওইযে সীমারেখার উর্ধ্বে।
বিকিকিনির বাজার,মাজার,মন্দির
দরগা হতে গুরুদোয়ার
আর আর আছে যত ধর্মীয় স্থান
বিভেদের প্রাচীর সব ভেঙে দিতে হবে।
তোমার ওই হাতখানা কালাপাহাড় করো
উর্ধ্বে তুলে ধরো বারবার,
শুধু আমি অচ্ছুৎ আমাকে ছুঁয়ো না আর;
আর সব ছুঁয়ে দাও।
বিভেদ ঘুচিয়ে ভেঙে পড়ুক ধর্মীয় বেড়াজাল
এক হয়ে সব হোক একাকার
তারপর আমি ছুঁয়ে করে নেবো
একেবারে আমারই মতো আমারই দলে।
প্রবীর রঞ্জন মণ্ডল
দঃ২৪পরগনা
পশ্চিমবঙ্গ,ভারত
-
ছড়া ও কবিতা
-
14-11-2020
-
-