অটোয়া, রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
হ্যাপি নিউ ইয়ার - মোবারক মন্ডল

নিশি অবসান, পুরাতন বর্ষ হল গত, মহাকালের অমোঘ নিয়মে ইতিহাসের পাতা থেকে বিদায় নিল আরেকটি বছর। শুরু হল ইংরেজি নতুন বর্ষ ২০২১ সালের প্রথম দিন। আনন্দ-বেদনা, সাফল্য-ব্যর্থতা, আশা-নিরাশা, প্রাপ্তি-প্রবঞ্চনার হিসেব-নিকাশ পেছনে ফেলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাই আগামী দিনের নতুন স্বপ্নে সোনালি প্রত্যাশার পাখা মেলে।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায়-
‘বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও,
ক্ষমা করো আজিকার মতো,
পুরাতন বর্ষের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।' 
আমাদেরও প্রত্যাশা পুরনো বছরের যত ব্যর্থতা-বেদনা, হতাশা-নিরাশা এমনি করে ক্ষয় হোক আবর্ত আঘাতে। 

আমার মোটামুটি জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে ইংরেজি বর্ষের শুরু নিয়ে, Happy New Year নিয়ে মাতা মাতি দেখে আসছি। বাংলা নববর্ষ এখানে অনাদুরে ইয়াতিম। আমরা এমন বাঙালি বাংলা নববর্ষ কোন দিনে আসে সেটা অনেকেরই অজানা থাকে। আগে বাংলা পৌষ মাসকে কেন্দ্র করে পৌষাড়ি বা চড়ুইভাতি হত। আমাদের গ্রামের ভাষায় পৌষ মাসের চড়ুইভাতিকে পৌষাড়িও কেউ বলে না। সবাই পিকনিক বলে।

থাক সেসব কথা। তখন ডিসেম্বর আসলেই বইয়ের দোকানগুলো গ্রিটিংস কার্ডে উপচে পড়তো। কার্ড কেনার জন্য মাস দুয়েক আগে থেকেই পরিকল্পনা করতাম। হাত খরচের টাকা জমাতাম, যেন ভালো গ্রিটিংস কার্ড কিনতে পারি। পকেটের অবস্থা অনুযায়ী কার্ড বেছে নেওয়া ছিল কঠিন কাজ। আর্চির গ্রিটিংস কার্ড সব থেকে রুচিকর ও স্টাইলিশ ছিল। কিন্তু পয়সার অভাবে আর্চির কার্ডে হাত দিতে পারতাম না। অনামি ব্রান্ডের কার্ড পছন্দ করতাম। একবার গিয়ে হতো না। কারণ মাথায় থাকতো, কার্ড যাকে পাঠাচ্ছি, সে যেন কার্ড দেখে খুশি হয়ে এক পাক নেচে নেয়, তারপর শোকেসে যত্ন করে রেখে দেয়, বা অন্তঃত লুকিয়ে রেখে দেয়। কল্পনা করতাম কার্ড পেয়ে প্রিয় মানুষটির আনন্দে উচ্ছসিত মুখটি। দুই তিনবার গিয়ে বাছাবাছি শেষে বেশ কয়েকটি কিনতাম। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের জন্য ভিন্ন রকমের পছন্দ। এমনও হয়েছে, গতকাল দেখে এসেছি কিনবো বলে,পরের দিন গিয়ে দেখি বিক্রি হয়ে গেছে। তবে চেষ্টা হতো যাকে পাঠাব তার যেন পছন্দ মত হয়।

সেই কার্ডের দিন গেছে। কার্ড এসেছে হোয়াটস আপ। উৎসব আসার আগে থেকেই বিনে পয়সায় ডিজিটাল গ্রিটিংস কার্ড। সবকেই পর পর একই রকম। কেউ আবার সকলকে দেওয়া যায়, এমন করে নিজের নাম দিয়ে বানিয়ে শত শত বন্ধুকে এক ক্লিকেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ওই বাস্তবের গ্রিটিংস কেনা ও পাওয়ার মধ্যে যে অপার্থিব আনন্দ, তা হারিয়ে গেলেও হোয়াটস আপ, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম খারাপ কি? সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখে। আর প্রিয় মানুষ, বন্ধু বান্ধবদের শুভেচ্ছা ভালোই লাগে। তা যেমনই হোক।

তাই আল্লাহর দেওয়া সবদিন এক হলেও, কিছু কিছু দিনকে গুরুত্ব দিয়ে উৎসবে মেতে ওঠা একদিক দিয়ে ভালোই। মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে। জীবনের এক ঘেয়েমি কাটে। অবসাদ কাটে। নতুন করে উম্মাদনা নিয়ে, প্রাণোচ্ছল হয়ে কাজে ফেরা যায়। নতুন করে স্বপ্ন দেখা যায়। শপথ নেওয়া যায়। আবার এই দিনগুলোকে কেন্দ্র করে সম্পর্ক গুলোও ঝালিয়ে নেওয়া হয়। হোক ডিজিটাল গ্রিটিংস। তাও তো শুভেচ্ছা বার্তা। এই বা কম কি?

যদিও সফল মানুষরা এইসব বিশেষ দিনকে পাত্তা দেন না। তাঁরা নির্দিষ্ট কোন দিনকে মাইল ফলক হিসেবে দেখেন না। তাঁরা তাঁদের কাজ করেন কাজের আনন্দে, স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার আনন্দে।
আমি আম আদমি। বিশেষ বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে উৎসব আমার ভালো লাগে না। আমি প্রতিদিনই উৎসবে বিশ্বাসী।
তাই সকলকে Happy New Year! শুধু নতুন বছর নয়, বাদবাকি জীবনটা ভালো কাটুক। মন খারাপ গুলো হারিয়ে যাক। মন ভালো হোক। প্রতিটা মুহূর্তকে উপভোগ কর।

মোবারক মন্ডল
করিমপুর, নদীয়া