অটোয়া, শনিবার ২৭ জুলাই, ২০২৪
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় - সুনির্মল বসু

রাবর পিছনে হাঁটা অভ্যেস আমার, সবার উপরে সিনেমায় ছবি বিশ্বাসের ডায়লগটা খুব মনে পড়ে, ফিরিয়ে দাও আমার বারোটা বছর। আমার ঘুরিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, ফিরিয়ে দাও আমার ছোটবেলার দিনগুলো। 
কি আশ্চর্য মুগ্ধতা নিয়ে যে বেঁচে ছিলাম, আজ ভাবলে মুগ্ধ হয়ে যাই, নিজেকে অতীতের সীমানায় হারিয়ে ফেলি।
আসলে, সেই বয়সে সবকিছুর মধ্যেই অদম্য কৌতূহল থাকতো, সব কিছুর মধ্যেই আনন্দ নেওয়ার মানসিকতা ছিল।
সংসারে অভাব দারিদ্র ছিল, সেই বয়সে অতসব বুঝিনি। বাড়ির সামনে বিশাল বাঁশ বাগান। দিনের বেলায় ভৌতিক অন্ধকার। সে দিকে তাকালে, মন এক রহস্যময় জগতে পৌঁছে যেত। ডানদিকে সর্ষেক্ষেতের মাঠ। 
তারও ডানদিকে গাব গাছের জঙ্গল। গাছ থেকে পাকা গাব কাকু পেড়ে নিয়ে আসতো। দারুন খেতে। পরে বুঝেছিলাম। কাকু আমার চেয়ে বয়সে সামান্য বড়। আমরা একসঙ্গে স্কুলে যেতাম। কাকুই প্রথম আশফল, ফলসা, লিচু, জামরুল গাছের খবর জানাতো। 
দীর্ঘ তাল গাছ থেকে কচি তালশাঁস নামানো হলে, বন্ধুদের সঙ্গে খাবার সময় কাকু আমাদের ডেকে নিয়ে যেত। মনে আছে, কাকুর বন্ধু রতন রায় বলেছিল, ভাইপোরাই তো সব খেয়ে ফেলছে। তারপর লজ্জায় আর খেতে পারিনি।

ভাই বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। কিন্তু আমার আগে আমার দিদি ছিল। তাঁর নাম সুলেখা।মা মাঝে মাঝেই ওর গল্প বলতো, বলতো তাঁর মতো সুন্দর তোরা কেউ হোসনি। ও মাত্র একুশ দিন বেঁচে ছিল। আমি কিন্তু বরাবর ওকে খুব মিস করি। ও বেঁচে থাকলে, ওর আজ একাত্তর বছর বয়স হোত। দিদি আমার চেয়ে একবছরের বড়।
ও থাকলে, আমার সমস্যা গুলোর কথা ওকে বলতে পারতাম। বড় হবার চাপ আমার উপর থেকে ওর ঘাড়ে যেত।
হালকাভাবে এই কথাটা বললেও, আমার যে দিদি নেই, এই কষ্টটা আমাকে খুব বেদনা দেয়।

আমার পরে আমার দুই বছরের ছোট ভাই। সংসারের অভাব কাকু, আমি আর আমার ভাই হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলাম। পড়াশুনায় ভাই-বোনদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ছিল আমার ভাই। পরীক্ষার হল থেকে আগে আগে বেরিয়ে আসতো, অথচ সর্বোচ্চ নম্বর পেত। অভাবের দিনে রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে দুভাই কতদিন বৃষ্টিতে একেবারে স্নান করে গেছি।
মল্লিক বাড়িতে অন্নপূর্ণা পুজো হোত। ওরা খৈ মুড়ি-মুড়কি দিত। ভিখারিদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে দুজনে মুড়ি-মুড়কি নিয়ে আসতাম। পরে মা জেনে গেলে, দুজনে বকা খেয়েছিলাম।
আমার ভাই ছোটবেলায় খুব দুরন্ত ছিল। একদিন ওকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শেষে দুপুরবেলায় দেখা গেল, ও খাটের নিচে বসে ডিম ভাঙছে। খুব দুরন্ত ছিল বলেই, বাড়ির সামনের পুকুরে একবার পড়ে গিয়েছিল, মা ভালো সাঁতার জানতেন, ঝাঁপিয়ে পড়ে ওকে জল থেকে তুলে আনেন। সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্যটা ভুলতে পারিনা।
সেই দৃশ্যটা আমার মাথার মধ্যে চিরকালের জন্য গাঁথা হয়ে আছে।
আমার বিয়ের পর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, নিজের ভালো মন্দ বোঝার। বড় ছেলে, দাদা গাধা। নিজের জন্য কিছু করো।

আমি মা-বাবার কষ্ট নিজের চোখে দেখেছি। বাবার সামান্য আয়। অথচ প্রতিটি দায়িত্ব কর্তব্য তিনি যথাযথভাবে পালন করেছেন।এ নিয়ে কোনো দিন মায়ের কাছে অভিযোগ শুনিনি। সবাইকে খাওয়ানোর পর মা কি খেতেন, কোনদিন জানতাম না।
সন্ধ্যেবেলায় ঠাকুরমা উঠোনে মাদুর পেতে আমাদের পড়াতে বসাতেন। আকাশের চাঁদ আকাশের অসংখ্য তারা সাদা দুধেল জ্যোৎসনার মধ্যে কবিতা পড়ার স্মৃতি আজও মনে আছে। আহা, কি স্বপ্নের দিন। লক্ষ টাকা দিলেও, সেই দিনগুলো কেউ আর আমাকে ফিরিয়ে দেবে না।
তাই একা একা সুখে থাকার ছবিটা কোন দিনই আমার কাছে কাঙ্খিত ছিল না। তাই তথাকথিত স্বার্থপর মানুষদের সুখ আমাকে কখনো প্রলুব্ধ করে নি।
মানিক মিস্ত্রির মাটির ভাড়া বাড়ি ছেড়ে আমরা নিজেদের নতুন বাড়িতে এলাম। বহুকষ্টে মা-বাবা এ বাড়ি করেছিলেন। ঠাকুমা রাতে ছাতু খেতেন। সে বড় অভাবের দিন।তার ভাগ পেতাম আমি আর ভাই। ঠাকুরমা ভাইকে খুব ভালোবাসতেন। ঠাকুমা যেদিন মারা গেলেন, সেই প্রথম আমি নিজের চোখের সামনে প্রিয়জনকে হারাতে দেখলাম।

ঠাকুরমার শ্রাদ্ধ আমি করেছিলাম। আমার শৈশবের স্মৃতিতে আমার বাবার পিসিমা, আমার ঠাকুমা চারুশীলা মিত্র আজও অমর হয়ে আছেন। প্রসঙ্গত বলি, আমার বাবা তাঁর মাকে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে হারিয়েছিলেন। এই ঠাকুমা বাবাকে মানুষ করেন।তাঁকে বাদ দিলে, আমার শৈশব স্মৃতি বারো আনা মুছে যায়।
দিন বদলালো যখন, তখন ঠাকুমা নেই। আমি তাঁর জন্য কিছু করতে পারিনি।

ভাইয়ের পর আমার বোন মনার জন্ম। বেশ মনে আছে, পায়ের উপর পা তুলে কেমন অদ্ভুত ভাবে ও মাটির বারান্দায় বসে থাকতো। আমাদের অভাব তখন চরমে। দুধ খাওয়ানোর পয়সা নেই। সামান্য দুধে জল মিশিয়ে মা ওকে খাওয়াতেন।
আরো অনেক পরে আমার ছোট ভাইয়ের জন্ম। বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ওর নাম কি রাখবি। আমরা তখন রেললাইনের পাশ দিয়ে বাড়ি ফিরছি। ইতিহাসে স্কুলে সম্রাট অশোক পড়া হচ্ছিল।
আমি অশোক নামটার কথা বললাম। বাবা ওই নামটাতেই সায় দিলেন। ছোট বোন মনুর জন্ম আমাদের নতুন বাড়িতে। ছোট বোনের জন্মের পর ধীরে ধীরে আমাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়।
ও আসার পর আমাদের অভাব সে অর্থে ছিল না।পুজোর সময় বাবা তাঁর কাকা কাকিমা, আমাদের বাড়ির সবার জন্য নতুন জামা-কাপড় আনতেন। বাটার জুতো মাথার কাছে রেখে ঘুমোতাম।
শরৎকালের আশ্চর্য মাদকতা থাকতো বাতাসে, চারদিকে একটা পুজো পুজো গন্ধ, বাবা নিজে গিয়ে দমদমে তাঁর কাকা কাকিমাকে কাপড়চোপড় দিয়ে আসতেন।
আশ্চর্য হয়ে আজ ভাবি, সামান্য আয়ে কিভাবে বাবা এতসব করতেন। দুটো বোনের বিয়ে, ভাই, ছেলেপুলেদের মানুষ করে, বাড়ি করে কি করে তিনি সবার ভবিষ্যৎ গড়ে দিয়ে গেলেন।

পরবর্তীকালে আমি তিন দশকের ওপর শিক্ষকতা করেছি। ইদানিং সম্ভ্রান্ত মাইনে ছিল। তবু কী আশ্চর্য ক্ষমতায় বাবা-মা এতো দায়িত্ব পালন করেছেন, চুপ করে বসে যখন ভাবি, তখন কোনো কারন ছাড়াই চোখে জল আসে।
পুজোর সময় বাবা আমাদের মুসলমান ওস্তাগার দের বাড়িতে নিয়ে যেতেন নতুন জামা কাপড়, কিনবার জন্য। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমি খালি বলতাম, আমার বেল্ট লাগানো প্যান্ট চাই।এখানে বাটা ব্রিজের উপর বিশাল গেট তৈরি হতো।
আলোয় আলোয় ভরে যেত চিরপরিচিত বাটানগর।
মৃৎশিল্পী রাখাল পাল নিউল্যান্ডের ঠাকুর বানাতেন। বাটা পুজো প্যান্ডেলের ঠাকুর বানাতেন মৃৎশিল্পী শম্ভু পাল অথবা মধুসূদন পাল। জোর কমপিটিশন থাকতো।

চারদিকে ফ্যামিলি কোয়াটার। পুজোর ছুটির আগে কোয়ার্টারের মাসিমারা বলতেন, তগো স্কুল ছুটি পড়ে নাই। মায় বাপে কেমন আছে।
একটা ঘটনা মনে পড়ে। খুব ছোট আমি। ভোর বেলায় কুয়াশা ঢাকা সকালে কাকু খবর নিয়ে এলো, কাল রাতে ও পাড়ার একটা বউ একটা নেকড়ে বাঘ মেরেছে। পাড়ার সবাই দেখতে যাচ্ছে। কাকু আমাকে দেখাতে নিয়ে গেল। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম দেখতে।আর একবার ওপাড়ার একজন বৃদ্ধ লোক খুব আফিঙ খেতেন। রাতে নঙ্গী বাজার থেকে বাজার করে আসার সময়, তাঁর পায়ে কিছু একটা কামড়ায়। অন্ধকারে বাঁশ বনের মধ্যে তিনি কিছু বুঝতে পারেন নি। পরদিন সকালে দেখা যায়, রাস্তার এপার ওপার জুড়ে একটা সাপ মরে পড়ে আছে।

ছোট্টবেলার ছোট্ট ছোট্ট স্মৃতি আজও মনের মধ্যে আশ্চর্য আনন্দময় জগতের দরোজা খুলে দেয়। রেললাইনের পাশে এক ধরনের আশ্চর্য হলুদ ফুল ফুটে থাকতো। গাছের পাতায় কাঁটা থাকতো। কি সুন্দর দেখতে। ওই ফুলগাছ এখন আর দেখিনা। পুকুর পাড়ে কাঠবাদাম গাছ কাঠঠোকরা পাখি এসে বসতো, জলের উপর দিয়ে মাছরাঙ্গা পাখি উড়ে যেত, বিকেলের দিকে ঢাউস ঈগল এসে বসতো তাল গাছের মাথায়। বর্ষার দিনে মোড়ল কাকু মান কচু হাতে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসতেন। লক্ষী পূজোর দিন পুরনো বাড়িতে ঠাকুর মশাই অতি বৃদ্ধ বয়সে আমাদের বাড়িতে পুজো করতে আসতেন।
আজও স্পষ্ট তাঁর মুখ মনে করতে পারি আমি। খুব ভালোবাসতেন আমাদের।নতুন বাড়িতে আসার পর পুজোর আয়োজন বেড়েছে। বহু মানুষ এসেছেন পুজো উপলক্ষে। অনেক মানুষ এলে ভালো লাগে। মা একার হাতে সব সামলাতেন। বাড়িতে জলের ব্যবস্থা ছিল না। দূর থেকে জল আনতেন মা। পাশের পুকুরে কাপড় কাচতে যেতেন। খেতে খেতে তার কত বেলা হয়ে যেত। অথচ, কখনো মুখের হাসিটুকু মিলিয়ে যেতে দেখি নি। কোনদিন কোন অনুযোগ অভিযোগ করেননি। এসব কথা ভাবলে, কোন কারণ নেই, শুধু দুচোখ জলে ভরে যায়।

তাই আলাদা থাকার স্বর্গসুখ আমি পাইনি। কোনদিন তা চাইও নি। এ ব্যাপারে আমার দুঃখ নেই। বেশ আছি, ভালো আছি। খুশিতে আছি,
উজ্জ্বল ভালোলাগার স্মৃতিতে বাঁচি।
নতুন বাড়ি যখন হয়, তখন আমার মা এ বাড়ির জন্য খোয়া ভেঙেছেন। বাবা কাজের পর ওভারটাইম খেটে এসে বারান্দায় মাদুরে শুয়ে পড়তেন। ঠাকুমাকে দেখেছি, তাঁকে সেবা করতে, হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে।
সেবার আমাদের রান্না ঘরের চালে প্রচুর লাউ ফলেছিল। রোজ ডাল ভাত খেতাম, লাউ দিয়ে। যেদিন আলুর দম হোত, সেদিন যেন মাংসের গন্ধ পেতাম।
হায়ার সেকেন্ডারি পাস করে কলেজে গেলাম। ছোটবেলায় বাবাকে খুব ভয় পেতাম, ভালোবাসতাম খুব। মুখে কখনো বলতে পারিনি। সেই আমার বাবা কলেজে যাবার পর, আমার বন্ধু হয়ে গেলেন। আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু। আমার জন্য কি না করেছেন। ঘুড়ি বানিয়ে দিতেন, সাইকেল চালানো শেখালেন, তখন কলেজে যাচ্ছি। ছুটির দিনে সাবান দিয়ে স্নান করিয়ে দিতেন।
বাবার একটা কথা আমি ভুলতে পারিনা। বলতেন, গরীব হওয়া বড় পাপ। মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে বলতেন, আজ যদি কেউ আমাদের বাড়িতে এক হাঁড়ি রসগোল্লা নিয়ে আসে।
দিনগুলো সব বদল হয়ে গেছে। চাইলে আমি এখন  বাবার ইচ্ছে গুলো পূরণ করতে পারি। অথচ, সারা জীবন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়তে লড়তে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত তিনি, আমাদের এই সুদিন বেশিদিন দেখে যেতে পারেননি। আসলে, দেবার সময় চলে গেলে, দেওয়া আর হয়ে ওঠে না।
সংসারে চারদিকে যখন ভাঙ্গনের খেলা চলছে, তখন আশ্চর্য মুগ্ধতা নিয়ে আমি আজও আমার ভালোবাসার পৃথিবীর কথা ভাবি। মা বাবার শিক্ষা, বিবেকবোধ, মানবিকতা, সব বাড়ি থেকে শিখেছিলাম।বাবা গুরুসদয় দত্তের কবিতা কাপড়ের উপরে লিখেছিলেন, মা সেটা সুতোয় বুনেছিলেন। দেওয়ালে টাঙানো সেই ছবিটা, আজও আমার বড় ভালোবাসার।
লেখা ছিল,
মানব জনম নহে সুখ ভোগ তরে, কঠিন দায়িত্ব আছে মাথার উপরে, দুঃখ যদি পাই, কিবা খেদ তায়, কর্তব্য সাধিতে যেন এ জীবন যায়।
নতুন বাড়িতে আসার পর, নতুন বন্ধু হলো, নতুন খেলার মাঠ, ফুটবল খেলা, বৃষ্টি ভেজা দিনে জলে ভিজে খেলা, কোন কোন দিন মল্লিক বাগান থেকে আখ চুরি করা, অন্যের গাছ থেকে নারকেল পাড়া,মাঠ থেকে কড়াইশুঁটি চুরি করে বন্ধুরা মিলে ভাগ করে খাওয়া। বেশ কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। কলেজ জীবন শেষ হলো। দুটো টিউশনি ভরসা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। বাবার উপর আর্থিক চাপ বাড়ছিল। টিউশনি চাইতে গেলে, লোকে বলত, তরে তো কেউ চিনে না।
বাবা একা আর চালাতে পারছিলেন না। ঊনিশ বছর বয়সে কাকু বাটার চাকরিতে ঢুকলো। এমএ পরীক্ষার চারমাস আগে আমি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ পেলাম। আমার মেজো ভাই তার আগেই একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজে ঢুকে গেছে।
বাবা দাঁড়িয়ে থেকে দুই বোনের বিয়ে দিয়েছেন। আমাদের প্রত্যেককে প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন বাবা-মা। যে ভালোবাসা, ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে এই বাড়ি তাঁরা ভালোবাসার বাড়িতে পরিণত করেছিলেন, আমার কোনো ভাই বোন সেই ভালোবাসার বাঁধন ছেড়ে বেরিয়ে যায় নি। এই বাড়ির প্রতিটি ইটের গায়ে আমার বাবা-মা, ঠাকুমা, কাকু, পিসির স্মৃতি রয়ে গেছে, কোনো প্রলোভনে আমি তো ছেড়ে যেতে পারি না, পারিনি, পারবোও না।
এমন দিন নেই, এমন সময় নেই, যখন তাদের কথা ভাবি না, মাঝে মাঝে ভাবি, কিছুই তো হারায় নি, কিছুই তো হারায় না, শেকড়বাকড় সুদ্ধ যে ভালোবাসা তোমরা দিয়ে গিয়েছো, এই বিপুল ভালোবাসা ছেড়ে আমি একক সুখ খুঁজতে যাবো কেন, আমি কি এত বড় আহাম্মক।
দিনের পরে দিন যায়। রাত আসে, ভাবনা আসে। জানালার কাছে শুয়ে আমি আকাশ দেখি। দূর আকাশের তারার ভিড়ে আমার বাবা, আমার মা, আমার কাকাকে খুঁজি। মনে মনে বলি, তোমরা কেউ হারিয়ে যাও নি। তোমাদের আমি হারিয়ে যেতে দেবো না। যখন চাইবো, তোমরা আমার কাছে এসো। ভুল ত্রুটি হলে শুধরে দিও।

সুনির্মল বসু
নবপল্লী, বাটানগর,
দক্ষিণ 24 পরগনা, 
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।