অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
এবিএম সাহাব উদ্দিন এর দু’টি কবিতা

তোমার কাছে যাইনি
তুমি সবুজ পত্রপল্লব হয়ে ছায়াব্যষ্টিত করে রাখবে আমাকে
এমন ঠুনকো প্রত্যাশা নিয়ে আমি তোমার কাছে যাইনি,
কেবল সবুজের ভালোবাসাও আমাকে তোমার কাছে টানেনি, 
কারণ আমি জানতাম আজ যে প্রগাঢ় সবুজ, 
আগামী শীতে সে নিশ্চিত ঝরে যাবে, বৃন্তচ্যুত হবে অবলীলায়।
পত্রপতনের ভয় আমার কখনো ভালো লাগেনি।

শৈশবে শীতের ঝরাপাতা দেখে মনটা কেমন যেন হাহাকার করে উঠতো, 
সেই তখন থেকেই সবুজের নির্দয় পতনে আমার সমূহ ভয়।
আমি ডালপালা ধরে ঝুলবো বলে দোলনা যাচিনি।
ভালোবাসার শিহরণে দুলবো দোলাবো, হঠাৎ দুলে উঠে ডাল ভেঙ্গে চলৎশক্তি রহিত হবে 
আমার পরিণত অণুভূতিগুলো তাতেও সায় দেয়নি কখনো, 
ডালে বাঁধা পাখির নীড় যতোটা নির্ভার
তেমন নির্ভরতা আমি কখনো যাচিনি।

স্বপ্ন দেখেছি মৃত্তিকার গভীরে প্রোথিত স্বপ্রাণ শক্ত শেকড়
ভালোবাসার অসম্ভব শক্তিতে আঁকড়ে ধরে যে বেঁচে থাকে পরম বিশ্বাস আর নির্ভরতায় 
যার মাতৃসম অতুল প্রেমে ভালোবাসা গীত হবে সর্বক্ষণ।
আমি সেই শেকড়ের সন্ধানে কাটিয়েছি একটা পূর্ণ যৌবন,
পাতা ঝরে যাবে, ডাল ভেঙ্গে যাবে; 
তবু শেকড় রয়ে যাবে আজীবন গভীর মর্মমূলে ভীষণ আপন।  

শ্রমিক 
নিজেকে বাঁচার যোগ্য করতে প্রমাণ করতে পৃথিবীর কাছে, বেঁচে আছি
একদিন খুজেঁ পেলাম একটি আসন,
ক্ষুদ্রতর হলেও অতি গুরুত্ববহ।
এ আসনে স্থায়ীত্বের মাত্রাও বেশ সুদীর্ঘ
আর তাই আমার আসন সুদীর্ঘ সময়ের দেহর্স্পশে
ক্রমাগত ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়, ক্ষয়ে যায় কলমের নীর, চোখের সূর্য, জামার আস্তিন,
দেয়ালে ঘড়ির কাঁটার টিক্ টিক্
আমার ম্রমের ঘামের গন্ধে মিশে
আমাকে সারাক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখে। 

আমার কাজের স্থান যেন সদা উদ্ধত শিং বেপরোয়া গন্ডার, 
আমি তাতে এক ভাগ্যহীন, ক্ষীণপ্রাণ, মান অপমানহীন ক্ষুদ্র শ্রমিক।
সকালে ঘুম থেকে উঠে জোটে প্রাতরাশ
হয়তোবা দুটো শুকনো রুটি অথবা বাসি ভাত,
তারপর ঝটপট পৌঁছে যাই কাঁটায় কাঁটায় 
সংসারের হালখাতা ছেড়ে অফিসের সামস্ত সভায়।

সস্তা ছিন্ন পোশাকে আবৃত রুক্ষ চুলে 
প্রায়শঃ চিনতে পারিনা আমি আমাকেই।
জানিনা এ কেমন বেঁচে থাকা, শুধু জানি বাঁধা পড়ে গেছি
অক্টোপাসের থাবার নিচে অসহায়
আমি এক পরাজিত ক্রীতদাস।

যে শুধু কেড়ে নেয় নিত্যদিন আমার স্বপ্ন,
বাসনায় জাগ্রত ভাবাবেগ, ভালবাসার কোমল পরশ,
বেদনার্ত দীর্ঘশ্বাস; আমি তার কেউ নই।
অথচ আমার রক্ত বেচে তুমি সাজাও মধ্যাহ্নভোজ, 
নিদ্রা যাও শীতাতপ ঘরে কোমল শয্যায়।

পেট্রোল নয় বরং আমার রক্ত জ্বালানী ট্যাংকে পুরে
তুমি স্বগর্বে ছুটে যাও সর্বশেষ ফ্যাশনের পাজেরো চড়ে।
জীবনের সমস্থ শক্তি ক্ষয় করে নিখুঁত রেখেছে যে তোমায়,
লাভ-ক্ষতির সুক্ষ হিসেবে স্ফীত হলো সঞ্চয়, স্থাবর সম্পদ
হিসেব মিলেনি শুধু আমার ব্যর্থ জীবনের সুখ দুঃখ আর
 নিত্যকার হাসিকান্নার। 

এবিএম সাহাব উদ্দিন। বাংলাদেশ