অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
আমি নন্দিনী - সুশান্ত কবিরাজ

ভ্য শহর থেকে অনেক দুরে.... 
বিস্তৃর্ন এলাকা জুরে, পর্বত সম মৃত্তিকা ঘিরে শ্রমিকের শ্রমকে আড়ালে ফেলে 
অভ্র ভেদি চিমনি তুলে...   
রাস্তা ইমারত বাড়ি গঠন হয় যাতে...
হ্যাঁ আমি বস্তি বাসিনী, আমি বাবার আদুরে কন্যা নন্দিনী... 
আমি সেখানেই করি কাজ।

নিজের খুন্নি বৃত্তিকে চরিতার্থ করতে
এসেছি জীবনের সব লাজ লজ্জাকে ছেড়ে পরনে আমার কোনো বাহারি পোশাক নেই
মুখে লিপস্টিক বা শরীরে নেই কোনো সাজ.. তাতে কি? তাতে নেই কোনো লজ্জা কোনো লাজ সারা দিন ধরে পরিশ্রম করি।
তোমরা তো সভ্য নগরবাসী
তোমাদের যে সুখের অট্টালিকা....
আমি তো তার ইট গড়ি 
আমি খেটে খায়।

আমার হাতে গড়া ইট গুলোর সাথে আমার জীবনের অনেক মিল  ................. 
সারা দিন ধরে কয়লার আগুনে পুড়ে ইট গুলো শেষমেস হয় শক্তঝামা....
আর আমি সূর্যের আলোতে কয়লার কালো তে পুড়ে পুড়ে হয়ে উঠেছি শ্যামাঙ্গিনি শ্যামা..........
কিন্তু পার্থক্যটা হলো ইট গুলো তো
সারাজীবেন একবারই পোড়ে
পোড়ার পর দেয়ালের গাথনি পায়...
পায় প্লাসটার, পায় রং ।
আর আমি তো সারা জীবনে পুড়ি বার বার... প্রতিদিনে পুড়ি সূর্যের আলোতে
কয়লার কালোতে ...
আবার প্রতি রাতে খিদের জ্বালাতে জঠরের 
আগুনে পুড়ে প্রতিদিন হারায় জীবনের সব ঢং ।
শুধু আমি না আমার মতো পোড়ামুখী শ্যামারা প্রতি দিনই পোড়ে,প্রতি রাতেও পোড়ে
জীবিত অবস্থায় পোড়ে নির্লজ্জ হয়ে আবার মৃত্যুর পরে পোড়ে লজ্জাহীন হয়ে শশ্মানে.. জীবন থেকে দূরে সরে সরে..........…...

তবু ইট তো সারা বছর পোড়ে না .......
আবার যখন বর্ষা নামে বন্ধ হয় রাবনের ঝিল, ইট পোড়া, বন্ধ হয় চিমনি আর চিমনির ধোঁয়া কিন্তু পোড়া ভালে....
আমাদের পোড়া তখনও চলে৷       
মালিকের কামনার রসে পুড়ি
কাজের অভাবে অমাদের সর্বনাশ
আর বাবুদের স্বভাবদোষে পৌষমাস।
গরিবের পেটে যতই লাগে খিদের আগুন
সুবিধাবাদী বাবুর মনে জাগে কামনার রঙিন ফাগুন।
শুরু পূর্ণিমা,শ্যামলি, শ্যামার  মতো মেয়েদের বাবুর রঙিন বিছানায়  শোয়া
বাবুদের রাতের যত্ন নেওয়া
তবু ও তো পেট ভরে না...............…..........

সারাদিন মাটি কাটি,কাদা বানায়, ইট তৈরী করি কিন্তু কি অদ্ভুত ইটের ছাচে আমার নাম থাকে না নাম থাকে কোম্পানির
নাম থাকে বাবুর মেয়ের
নয়তো বাবুর আদুরে বৌয়ের
আসলে, শ্রমিকরা তো নাম হীন ঠিকানাহীন শুধুই শ্রমিক।

কেউ রাখেনা আমাদের হদিস
আমরা মৃত্যুর আগে ও যেমন বেওয়ারিশ
পরেও তেমনি সমান বেওয়ারিশ
কেউ করেনা আমাদের না পাওয়ার সুপারিশ।
তবু রোজ আমি,শ্যামলি, মনিকারা
কাক ভোরে কাজে আসি
বাবুদের ভালোবাসি।

সুশান্ত কবিরাজ
কালনা, পশ্চিমবঙ্গ