অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
তাজ ইসলাম এর তিনটি কবিতা

কৃষকপুত্র
কাপড় শুকানোর দড়িতে মা
লাউয়ের কচি ডগার মত
সতেজ একটা সকাল মেলে দিয়েছেন
বাতাসে গরম ভাতের
ধোঁয়া ভেসে বেড়ায়
শুকনো মরিচের পোড়া ঝাঁঝ
আর বাতাবী লেবুর ঘ্রাণ নিতে
আমরা গোল হয়ে বসি।

পলিপূর্ণ ভূমিতে বাবা
রোপন করেছেন কৃষিজীবি দুপুর 
উঠোনে বৈশাখের বিকাল
হেসে গড়াগড়ি খায়
মাঠের সোনালী ধান
তার নতুন অতিথি। 

আমার কোন গামছা নেই
মায়ের ছিঁড়া ওড়না মাথায়  বেঁধে
বাবার পিছে ছুটি
আমার বাবা সোনালী ফসলের জনক। 
গর্বে গর্বে  বুক আকাশ ছোঁয় 
জাতীয় পরিচয় পত্রে লিখে দেই
আমি কৃষকপুত্র তাজ ইসলাম। 

চুপচাপ শুয়ে থাকি
মিও মাঝে মাঝে হতে চাই
বিদ্রোহী গোলাপ
ইচ্ছে হয় দ্রোহের প্রতাপে  ফেটে
রক্তিম পাঁপড়ি মেলি।

ইচ্ছে করে বিস্ফোরিত গ্রেনেড হই
উড়িয়ে দিই প্রথাগত জঞ্জাল। 

তারপর রাতের পালংকে
জোসনার চাদর গায়ে
চুপচাপ শুয়ে থাকি। 

কেননা
যে ফুল বাতাসের আন্দোলনে
খুব বেশি নড়ে
তারা অচিরেই ঝরে পড়ে।
ঝরে পড়া তাদের নির্মম নিয়তি।

ভয়
মাথায় ঝুঁটি ওয়ালা মোরগ
লাল ডোরা কাটা মোরগ
এবং অন্যান্য ছোট ছোট মোরগ
খুব আগ্রহভরে জানতে চায়
এখন কুক কুরু কুক করে
মুখর করনা কেন সোবহে সাদেক?
দুর্বা ঘাস  খুঁটতে খুঁটতে
রাতা মোরগ বলে "ভয়ে"।

বসন্তের একখন্ড রোদ এসে
হাসতে হাসতে বসে আমের মুকুলে
নারকেল গাছ থেকে উড়ে এলো
ছায়াচ্ছন্ন এক বুড়ো বিকেল
গোলাপের সুবাস এলো
এলো ভ্রমরের গুঞ্জরণ
নুপুর বাজাতে বাজাতে এলো
চৈত্রের প্রথম প্রহরের প্রেম 

মাতবর বাড়ির উঠোনে
সবাই বসে আছে শালিশে গোল হয়ে 
বসন্তকে মধ্যমণি করে।
এখনো কোকিল আসেনি,
শিমুলের ডালে কোকিল কুহু ডাকতেই
সমস্বরে সবাই বলে ওঠে
তুমি আসনি কেন?
কোকিল জড়োসড়ো হয়ে
কুহু কুহু স্বরে বলে 'ভয়ে'।

সহসা সাহসের গ্লাস কাত হয়ে
ভয়ের পানি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে
টেবিলে।
ভীতসন্ত্রস্ত সবাই ছুটতে ছুটতে
হারিয়ে যায় রাতের কোটরে।

কেবল একজোড়া চোখ তাকিয়ে দেখে
পোকা আহার রত টিকটিকির মত
ভয়ের আজদাহা গিলে খায়
সাহসী পাখিদের সকল উড়াল।

তাজ ইসলাম
কবি, ছড়াকার, সাহিত্য সমালোচক
ঢাকা, বাংলাদেশ