গরীবের ভালোবাসা - দেওয়ান সেলিম চৌধুরী
সমস্ত বিবেকবান, কাটিলো আবুলের কান,
পাপ ছিল মস্ত বড়, পর্বত সমান।
আবুলের স্ত্রীর ছিল বক্ষে ব্যথা
বলিল না মুখ খুলে কি লজ্জার কথা।
শশুড় শাশুড়ি ঘরে, বুঝিতে না পারে
অযত্ন অবহেলায় ব্যথা শুধু বাড়ে।
স্ত্রী তাঁর হয়ে নিরুপায় স্বামীকে শুধায়
আমাকে নিয়ে চলো শহরে কোথায়।
শহরে আসিয়া দেখে করিয়াছে ভুল
কোথায় যাইবে তারা নাহি পায় কুল।
কারো কাছে পায় নাই কোন দয়ামায়া
ডাক্তার মানুষ নয়, পিশাচের কায়া।
টাকার হিসাবে চলে সব লেনদেন,
গরিবের কেউ নেই, নেই গৌরী সেন
পৃথিবীটা ধনীদের, গরিবের নয়
এ সত্য মেনে নিয়ে ভুলে গেল ভয়
ফিরে এলো দুঃখ নিয়ে আপন ঘরে
আরোগ্য লোভিবে হয়তো বিধাতার বরে।
হাতের সমস্ত অর্থ, করিয়া অনর্থ ব্যয়
বাড়িতে ফিরলো তারা, পরাজিতের ন্যায়
হঠাৎ খবর পেল কয়েক গ্রাম দূরে
হুজুর আছেন এক,দেন পানি পড়ে
এ হেন রোগ নাই, ভালো নাহি হয়
এমন হুজুর রেখে কেন এত ভয়?
অনেক স্বপ্নে আবুল, দিলো পথ পাড়ি
ক্ষুধা আর ক্লান্তিতে পৌঁছিল হুজুরের বাড়ি
সমস্ত কাহিনী শুনে হুজুর কহিল হাসি,
এমন রোগ করিয়াছি ভালো,কত রাশি রাশি,
আমার হাদিয়া কিন্তু কালো রংয়ের খাসি।
এ কথা শুনিয়া আবুল মনে মনে ভাবে
অভাবের সংসারে সে খাসি কোথায় পাবে?
তবুও ছাড়েনি আশা, স্ত্রীকে তার বড় প্রয়োজন
অভাবের মাঝেও আবুল করিয়াছে কত আয়োজন।
হঠাৎ পড়িল মনে, মোড়লের ছাগল আছে বিশ খানা
আল্লার নাম নিয়ে, দিল তাতে হানা
শুনিল না কিছুতেই বিবেকের মানা।
হুজুর খুশি হয়ে দিল পড়া পানি
আবুল মহা আনন্দে স্ত্রীকে দিল আনি।
ভোরবেলা ভাঙ্গিলো ঘুম মোড়লের ডাকে
আবুল খুলিলো দরজা ভাগ্যে যাহা থাকে।
শূন্যে উঠায়ে তারে নিয়ে এলো বিচার সভায়
সবাই ছাড়িল হুংকার, শুধু আবুল নিরুপায়।
কেউ করিল জুতাপেটা,কেউ ভাঙ্গিলো লাঠি
মোড়ল স্বহস্তে নিল আবুলের কান কাটি।
লজ্জায় আবুল আর বাহিরে না যায়,
স্ত্রীর পাশে বসে বসে নিজেরে শুধায়
পৃথিবীতে গরীব হওয়া কিযে অভিশাপ
গরীবের ভালোবাসা সেও যেন পাপ।
সবাই লুটিল ফায়দা চিকিৎসকের সাজে
অযথা দিয়েছে ঔষুধ আসে নাই কাজে।
তারাই সমাজে আজ অতি বিত্তবান
শুধু আবুলই হারাল সব,হারালো তার কান।
দেওয়ান সেলিম চৌধুরী। কানাডা
-
ছড়া ও কবিতা
-
26-03-2021
-
-