কোথায় থামিবে রথ? - দেওয়ান সেলিম চৌধুরী
মদিনার জন্ম ছিল গরীবের ঘরে
চেহারা ভালোই ছিল বিধাতার বরে।
লেখা পড়া শিখে নাই,অর্থের অভাব
মোটামোটি ভালো মেয়ে, শান্ত স্বভাব।
ভাগ্যের পরিহাসে মিলেছিল বর,
আশা করে এসে দেখে সতীনের ঘর।
বিয়েটা হয়েছিল কিছুই না জেনে
নিজের ভাগ্য তাই, নিজেই নিলো মেনে।
সান্তনা ছিল কিছু, স্বামী তার ড্রাইভার জেনে।
অযত্ন-অবহেলায় মদিনার দিনগুলো যায়
সতীনের ঘরে শুধু লাঞ্ছনা পায়।
তবুও স্বামীর ঘরে রয়ে গেল, কি জানি কী বুঝে
হয়তো স্বামীর পায়ের নিচে বেহেশতের খোঁজে।
একদিন বন্ধ হলো, ছিল যত দ্বার
মাথায় পড়িল ভেঙে তালাকের পাহাড়
মদিনা পারেনি দিতে সন্তান উপহার।
জীবন থমকে গেল, শুধু অন্ধকার।
অবশেষে চাকুরি মিলল এক শহরে এসে
ফিরে গেল ভাগ্য তার, চাকরের বেশে।
নিজের সৌভাগ্যকে করে নমস্কার
নিলো চরন ধুলি আশ্রয় দাতার।
কৃতজ্ঞতায় অন্ধ হয়ে ভুলে গেল বয়স বিচার
সেই হতে শুরু হলো দেবার পালা
কাজের মাঝে ভুলে গেল তালাকের জ্বালা।
তক তক, ঝক ঝক বিশ্রামের নেই কোনো পথ
বয়স চলেছে বেড়ে,কখন যে থেমে যায় রথ।
বার্ধক্য নিশান উড়ায়,জীবনের হেথায় হোথায়
কোথায় রাখে কি, মুহূর্তে ভুলে যায়।
চোখে দেখে না আর আগের মত
ঝাড়ু দিলে ধুলা বালি, থাকে কত শত।
মালিক ডাকিয়া বলে শুন মদিনা
এখনো কি আছে মনে, তোমার ঠিকানা?
বয়স হয়েছে অনেক বিশ্রাম খুবই প্রয়োজন
নতুন কাজের লোক, করিতেছি আয়োজন।
মদিনা বুঝে গেল কথাটার মানে
চোখে আসিল জল, ভালোবাসার টানে
তবুও অশ্রুজল করিল গোপন,কেন কে জানে।
এতদিন মিথ্যা স্বপ্নে ছিল অঘাত বিশ্বাস
ভেবেছিলো এ বাড়িতেই পড়িবে তার শেষ নিঃশ্বাস।
সবকিছু বদলে গেল মুহুর্তের মাঝে
বুঝে গেল অশ্রুজল আসিবে না কাজে।
ভোরের সূর্য তখনো হয়নি উদয়
অজানা আশংকায় তার কাপিলো হৃদয়
যা কিছু জমিয়েছিল জীবনের সঞ্চয়
একত্রে বাধিলো সব, নতুন, পুরাতন আর দুর্গন্ধময়।
তাই নিয়ে ক্লান্ত পায়ে পথে হেটে যায়
কিছুতেই পেছনে আর ফিরে নাহি চায়।
যে ঘর, মুহূর্তের মাঝে করে দিল পর
কাঙালের মতো ফিরে দেখা, সেও লজ্জাকর।
বিশাল পৃথিবীতে মদিনা, একেলা চলিছে পথ
হারানো স্বপন, ক্লান্ত চরণ, কোথায় থামিবে রথ?
দেওয়ান সেলিম চৌধুরী। কানাডা
-
ছড়া ও কবিতা
-
08-05-2021
-
-